দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু এলোমেলো চিন্তাভাবনা – ২

আওয়ামীলীগ দেশকে আবার ঠিক কবছরের জন্য নেত্রিত্ব দিতে যাচ্ছে ?? কেন এই মুহূর্তে বিএনপির আশু ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখা যাচ্ছে ?? কিছু বাস্তবসম্মত চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করলাম। আওয়ামী সেট আপ নিয়েও কিছুক্ষন ভাবলাম । দেখা যাক ।।

নেতারা গুহাবাসী হওয়ায় এবং সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় দলটি এই মুহূর্তে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তৃণমূল সংগঠনের সাথে যোগাযোগ না থাকায় একদিকে যেমন তারা কঠোর সরকার বিরোধী আন্দোলন জমাতে না পারছে, সেই সাথে নেতা কর্মীদের আস্থাও হারাচ্ছে। একই সাথে জামাত শিবিরের জন বিরোধী নাশকতার ব্লেম ও তাদের ওপর বর্তানোয় পাবলিকের মরাল সাপোর্টও ঠিকমত পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় বিদেশি চাপ কিংবা এক্সট্রিম লেভেলে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের আশায় বসে থাকা ছাড়া আপাতত তাদের আন্দোলনে উৎসাহী বলে মনেও হচ্ছে না। এই মুহূর্তে সেটা কতোটুকু লজিক্যাল বা বাস্তবসম্মত ? এখন সেই প্রসঙ্গে আসি ।

আওয়ামীলীগের সবসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সাথী প্রতিবেশী ভারত। যে কোন সময়ে এখনো পর্যন্ত তারা লীগকে ১১০% সাপোর্ট দিয়ে আসছে, এখনো দিচ্ছে। বলতে গেলে তারাই লীগের হয়ে সব ধরনের দুতিয়ালি চালিয়ে যাচ্ছে । ভারতকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, সব দেশই চায় প্রতিবেশী দেশের সরকার তাদের এলাই হিসেবে থাকুক, অপনেন্ট হিসেবে নয়। পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের এলাই কারা থাবে সেটা ঠিক করাও আমাদেরি দায়িত্ত, অন্য কারও নয়।

পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে এটমিক পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর কাজ চলছে, হিউজ এমাউন্টের আর্মস ডিল হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনা তার ছেলে জয়কে নিয়ে গিয়েছিলেন ডিল করতে। এই ডিল তার জন্য কতোটা গুরুত্তপুরন ছিল সেটা এ থেকেই বোঝা যায়। রাশিয়া যে এই সরকারকে সমর্থন দেবে তা আগে থেকেই তাই অনুমিত। চীনের সাথে নাকি সাবমেরিন কেনার ব্যপারে কথাবার্তা চলছে । মনে হয়না চীন এই সরকারের ব্যাপারে নাক গলাবে।

আসি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ন এখন একটা কাগজের বাঘ। হুঙ্কার গর্জন আগের মতই আছে কিন্তু নখ-দন্ত আর নাই। ইওরোপের কারেন্সি এখন জার্মানি । তারপরও ঐতিহাসিকভাবেই ব্রিটেনের মুল্যায়নকে গুরুত্ত দেয়া হয়। কিন্তু তারা কতখানি সরকারবিরোধী স্টান্স নেয় তা এখনো দেখার বিষয় । হয়ত তারা তাদের সামন্ত প্রভু আমেরিকার জন্য এখনো অপেক্ষা করছে । এখানেই মুল ‘বৈদেশিক তৎপরতা’র রুট নিহিত ।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই তা দিয়ে আমেরিকার কোন কিছুই যায় আসে না, তারা দেখবে তাদের স্বার্থ। তারা ২-৪ বছরের জন্য প্ল্যান করবে না, করবে ২০-৫০ বছরের জন্য। তাদের দরকার টিকফা চুক্তি, তাদের দরকার ডিপ সি তে একটা পোর্ট/বেজ। এশিয়ার এই নিউ ভাইটাল জোনে চিন-ভারতকে কাউন্টার করার জন্য এর কোন বিকল্প তাদের নেই। হাসিনা সরকার এই ‘ইলেকশা’নের কারনে অনেক বেশী ভলনারেবল, কেন সেটা ব্যাখ্যা করার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমেরিকা যে এই সরকারকে চাপ দিয়েই তাদের সবচেয়ে বেশী স্বার্থ আদায় করতে পারবে, তা তারা জানে । আর এই মুহূর্তে ভারতের সাথে এম্নিতেই কূটনৈতিক জটিলটা চলায় ‘বাংলাদেশ’ ইস্যু নিয়ে আবার তারা ভারতের মুখোমুখি হবে বলে মনে হচ্ছে না । আর ‘আমেরিকা’ ও জাতিসংঘ তো একই মায়ের পেটের ২ ভাই ! জাতিসংঘ নিয়ে কিছু না বলি। যাহা আমেরিকা বলিবে তাহাই জাতিসংঘের ‘দার্শনিক’ ভাষ্য !

আর এই মুহূর্তে কিংবা অদুর ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কোন সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দিয়েও দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়ান আর্মস-চায়নিজ সাবমেরিন এবং ‘মোর দ্যান এভার’ শান্তিরক্ষা মিশন দিয়ে আওয়ামী সরকার তাদের পুরোপুরি ঠাণ্ডা রাখতে সমর্থ হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সাম্নেও এর ব্যাতিক্রম হবে না ।

কোন দলকে সমর্থন করা বা বিরোধিতা করা নীতিগত ও আদর্শিক কারনে একেবারেই ব্যাক্তিগত ব্যাপার। সবারই এই স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিএনপির মত দেশের একটা প্রধান রাজনৈতিক দলের এই দুরবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। শক্তিশালী একটি বিরোধী দল না থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্র হুমকির মুখে পরে যাবে, সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে যেতে কতক্ষন ! আশা করি বিএনপি তার রাজনৈতিক ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসবে। কিন্তু তার আগে তাদের এই আত্মপলব্ধি করতে হবে যে তাদের এই অবস্থার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী, আর কেউ না । নইলে যা লাউ তাই কদু ।। রেস্ট ইন পিসেস ।।

১,৬৮৩ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু এলোমেলো চিন্তাভাবনা – ২”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    পড়লাম পুরোটা। বেশ ইন্টারেস্টিং। সময় নিয়ে পরে মন্তব্য করবো।

    তার আগে একটু হালকা কথাবার্তা বলে নেই.... আবার ১ম হইছি
    মোকাব্বির ভাই , আরেকবার ট্রাই নিবেন নাকি? (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের এলাই কারা থাবে সেটা ঠিক করাও আমাদেরি দায়িত্ত, অন্য কারও নয়।

    :thumbup:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    শেখ হাসিনা তার ছেলে জয়কে নিয়ে গিয়েছিলেন ডিল করতে। এই ডিল তার জন্য কতোটা গুরুত্তপুরন ছিল সেটা এ থেকেই বোঝা যায়।

    :-B


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    চীনের সাথে নাকি সাবমেরিন কেনার ব্যপারে কথাবার্তা চলছে । মনে হয়না চীন এই সরকারের ব্যাপারে নাক গলাবে।

    :hatsoff:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    তাদের দরকার টিকফা চুক্তি, তাদের দরকার ডিপ সি তে একটা পোর্ট/বেজ।

    :hatsoff:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    আর এই মুহূর্তে কিংবা অদুর ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কোন সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দিয়েও দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়ান আর্মস-চায়নিজ সাবমেরিন এবং ‘মোর দ্যান এভার’ শান্তিরক্ষা মিশন দিয়ে আওয়ামী সরকার তাদের পুরোপুরি ঠাণ্ডা রাখতে সমর্থ হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সাম্নেও এর ব্যাতিক্রম হবে না ।

    :hatsoff:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    কিন্তু বিএনপির মত দেশের একটা প্রধান রাজনৈতিক দলের এই দুরবস্থা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। শক্তিশালী একটি বিরোধী দল না থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্র হুমকির মুখে পরে যাবে, সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে যেতে কতক্ষন !

    :hatsoff:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    অনেক অনেক সুন্দর হচ্ছে বিশ্লেষণ।
    কিপ গোয়িং।
    রাজনৈতিক লেখা ভালো লাগে।
    🙂


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।