বন্ধু দিবসের ফেসবুক স্ট্যাটাস

[এটি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস। শ্রদ্ধেয় বড়ভাই রাজীব আহমেদ (‘৯০-‘৯৬, বিসিসি) ভাইয়ের অনুরোধক্রমে লেখাটি সিসিবিতে পোস্ট করা হল…]

বন্ধু দিবস 🙁  WTF! মনে হচ্ছে বন্ধু একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্বের মাহাত্ব্য ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে বন্ধু দিবসের উৎপত্তি। বন্ধু দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা বন্ধুত্বের মর্যাদা অনুধাবন করতে পারি। সে যাই হোক, বন্ধু দিবসে বন্ধুত্বের কথা বলি। এই ছোট্ট জীবনে আমি অনেক বন্ধুর সাহচর্য পেয়েছি।

ছোটবেলার পাড়াত বন্ধু, যাদের সাথে আমি খেলতাম। অনেকদিন গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়না, তাই ওদের সাথে দেখা হয়না। তবে মাঝে মাঝে কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা হয়। আমার প্রাইমারী স্কুলের বন্ধুদের অবস্থাও তথৈবচ। আমার সাথে যারা তখন পড়াশুনা করেছে তাদের কেউই ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত আসতে পারেনি। দেখা হলে বুঝি তারা আর আমার আগের বন্ধুটি নেই, আমি যত উপরে উঠেছি তারা ততই দূরে সরে গেছে। নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দেই যে, হয়তো যায়নি বরং আমিই এরকম মনে করি। আসলে তারা সবাই বিয়ে করেছে, ঘরে বউ বাচ্চা আছে। সংসারের নিদারূণ চাপে তারা ছোটবেলার অনেক কথা ভুলে গেছে। সর্বশেষ যেবার গ্রামের বাড়ি গেলাম, দেখেছি তারা আনন্দ করতে ভুলে গেছে। তাদের মতে আমি বড় হইনি, এখনো ছোট্টটিই রয়ে গেছি। আমি বলেছি, দোয়া করিস যেন জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত এমনই থাকতে পারি।

হাইস্কুলে ছিলাম দেড় ক্লাস। খুব ভাল কিছু বন্ধু পেয়েছি সেই স্বল্প সময়েই। আমার বাসার কাছেই স্কুল হবার কারণে তখণকার বন্ধুদের সাথে প্রায়ই দেখা হয়। অনেকের সাথে এখনো যোগাযোগ হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ি। একবার ছুটিতে বাড়ি গেলাম। আমার বাড়ি যেতে বাসে পুরো একরাত লাগে। সকালে বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা করলাম। অল্প দূরত্ব, তখন ৫ টাকা ভাড়া ছিল। বাসার সামনে এসে রিকশাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার নাম, ইমরান কিনা? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে আমাকে বললো সে আমার সাথে হাই স্কুলে সিক্সে পড়তো। ততক্ষণে আমার আম্মু বাসার দরজায় এসে উপস্থিত। আম্মু ওকে বাসায় ডেকে নিয়ে গেল। সকালের নাস্তা করিয়ে এরপর যেতে দিল। আমার হাই স্কুল জীবনের এটাই মনে হয় একমাত্র ঘটণা যাতে আমার আম্মু খুব খুশি হয়েছিল। কারণ ওই অল্প সময়েই আমি স্কুলের সব শিক্ষকের জীবন ধংস করে দিয়েছিলাম। প্রতি সপ্তাহে স্যাররা অন্ততঃ তিনবার আমার বাসায় নালিশ করে যেত। এমনকি হেডস্যার স্কুল ছেড়ে দেবারও দেড় বছর পরে আমাকে একদিন বলেছিলেন, “Black will take no other hue”. স্কুলে যে মার দিত তার উপর নালিশের জন্য বাসায় আম্মুর মারও খেতে হত। ও বাসা থেকে যাবার পরে আম্মু বলেছে, তুই মনে হয় হাইস্কুলে অনেক ভাল বন্ধু ছিলি। নাহলে এই ছেলে তোকে নিয়ে রিকশা চালিয়ে এসে কখনোই পরিচয় দিত না। আসলে আমি ভাল বন্ধু ছিলাম না, কারণ পরিচয় দেবার পরেও আমি আসলে ওকে চিনতে পারি নাই। আমার হাইস্কুলের বেশ কয়েকজন বন্ধু বাসস্ট্যান্ডে দোকান দেয়, আমি গেলেই তাদের সাথে আড্ডা দেই। বাসায় গেলে ওরা আমাকে আবার যাবার প্রেরণা যোগায়।

আমার পরবর্তী জীবন জুড়ে Barisal Cadet College (BCC). আসলে সেভেন থেকে টুয়েলভ, দীর্ঘ ৬ বছর একসাথে থাকার পরে সবাই সবার বন্ধু হতে বাধ্য। ক্যাডেট কলেজ নিয়ে লিখতে বসলে আর পোস্ট দেয়া হবে না  লিখতেই থাকবো। আমার ব্যাচের ৫০ জন প্রত্যেকে বিভিন্ন ধরণের। প্রত্যেকে আলাদা কিন্তু ছিলাম একই স্বত্বার মত। ক্যাডেট কলেজের বন্ধু, আমরাই আমাদের পরিচয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আসলে বিভিন্ন ধরণের বন্ধু রয়েছে। ২০০৬ সালে ক্লাস শুরুর সময় থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাবার কারনে যেমন ডিপার্টমেন্টের বন্ধু আমার কম, তেমনি অন্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধু আমার অনেক বেশি। এখন অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন স্থানে চাকুরী করে। ফোনে কিংবা ঢাকা আসলে যোগাযোগ হয়।

বন্ধু Sazzad Hossain প্রথমবারের মত আমাদের বলেছে, “যারা একসাথে পড়াশুনা করেছে তারা সকলেই সহপাঠী, কেউ কেউ বন্ধু।” কথাটা আসলেই সত্যি। বন্ধু কিংবা সহপাঠী যাই হোক না কেন, বিপদে কখণো কাউকে ছেড়ে যাইনি। তবে বন্ধুদের অনেক ডিস্টার্ব করেছি, অনেক পেইন দিয়েছি। নির্দিষ্ট একটি দিন বন্ধুদের জন্য রাখার পক্ষপাতী আমি না। বন্ধু দিবস হোক জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ। হাসি আনন্দে ভরে থাকুক আমার সকল বন্ধুদের সারাটি জীবন।

৩,০০৪ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “বন্ধু দিবসের ফেসবুক স্ট্যাটাস”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    :clap: :clap:
    তোমার আনাগোনা এখানে খুবই কম।
    আমি অনুরোধ করবো, ফেসবুকে সম্প্রতি দেয়া কবিতাটাও এখানে দাও।
    লেখাটা খুবই ভালো লেগেছে আমার।

    আরেকটা কথা --- তুমি কি মঞ্চে বা কোথাও অভিনয় করো? প্রোফাইল পিকচারে নূরানী চেহারা দেখে হেভি মেকআপের ইংগিত পাচ্ছি। 😀

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কি লেখলারে ভাই। আঁচড় কেটে গেল। 🙁 প্রাইমারী স্কুলের বন্ধুদের তিনজনের নাম মনে আছে। মাঝে একজনের সাথে প্রায় ১৫ বছর পরে যোগাযোগ হয়েছিল। এরপরে আমার অবহেলায় আবার হারিয়ে গিয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে ক্যাডেট কলেজে যাবার আগের স্কুলের বন্ধুদের সাথে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এদের কেউ কেউ আবার ক্যাডেট কলেজের কমন ফ্রেন্ড। লতায় পাতায় অনেক এলাকায় গিয়েছি আড্ডা দিতে। কাফরুলে থাকা হয় সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিয়মিত ওয়ারী যেতাম আড্ডা দিতে। এখন চিন্তা করতেই অবাক লাগে। আমার মা পর্যন্ত বলতো আড্ডা দেয়ার জন্য একটা মানুষ ঢাকার অপর প্রান্তে বাসে ঝুলে ঝুলে কিভাবে যায়? আমার উত্তর জানা নাই। ওদের সাথে এখনো যোগাযোগ হয়, সেটা ফেইসবুকে। তাও তো যোগাযোগ হয়। জানিনা এই যোগাযোগ ধরে রাখা হবে কিনা।

    সময় সুযোগ পাইলে দুই-চারটা লেখা দিও মাঝে মধ্যে। এত ভাল লিখো অথচ অনিয়মিত, এটাতো আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।