প্রসঙ্গ সিসিবি : আত্মসমালোচনা ও অগ্রগতি ভাবনা এবং সিসিবি সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবনা

হাঁটি হাঁটি পা পা করে সিসিবি তিন বর্ষ শেষ করে পদার্পন করলো চতুর্থ বর্ষে। স্বপ্নময়ী কিছু তরুণ তরুণীর স্বপ্নে একেবারে ছোট পরিসরে শুরু হয়েছিলো যার পথচলা সময়ের আবর্তনে বেড়েছে তার পরিধি। কিছু বড় ভাইদের এগিয়ে আসা আর সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সিসিবির বিকাশ হচ্ছে ক্রমশই পূর্ণাঙ্গ ব্লগের দিকে। তাই শুরুতে যা ছিলো কেবলই স্মৃতিচারণমূলক লেখার সংকলন আস্তে আস্তে তাতে সমাবেশ ঘটেছে নানা স্বাদের নানা ধরণের লেখার । সিসিবিকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে আসার পিছনে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম কাজ করেছে নাম উল্লেখ করে আর ছোট করলাম না, তাদের সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই ক্যাডেট কলেজের সোনাঝরা দিন ফিরিয়ে এনে “অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ” উপহার দেবার জন্য। তবে সিসিবির অগ্রগতি আর তার ভবিষ্যত নিয়ে কিছু ভাবনা চিন্তা আর সিসিবি সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবনা পেশ করার জন্যই আমার এই ব্লগের অবতারণা। উল্লেখ্য , আমার এই পোস্টটি একদিকে সিসিবির পাঠক হিসাবে আমার নিজস্ব কিছু মূল্যায়ন , অন্যদিকে সিসিবির সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে আত্মসমালোচনা ( হ্যা সিসিবির সবকিছুকে নিজের মনে করেই) আর সিসিবির পদক্ষেপ সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবনার যোগফল। সিনিয়র জুনিয়র সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এ ব্যাপারে তাদের মূল্যবান দিয়ে আমাদের সিসিবির এগিয়ে চলাকে আরো গতিশীল করবেন।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, ২০০৯ সালটা সিসিবির জন্য যতটুকু সম্ভাবনাময় ছিলো, ২০১০ এ এসে তা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। এ দায়ভার সিসিবির সদস্য হিসাবে সবার সাথে আমিও নিতে প্রস্তুত। সিসিবিতে মানসম্পন্ন লেখা আসার হার হ্রাস পাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ। তবে তারপরেও সিসিবির ঝাণ্ডা উঁচু করে রেখেছে আমাদের যুদ্ধাপরাধী বিচার আর্কাইভ। তার জন্য অবদানকারী সবাইকে আমার স্যালুট রইলো।সিসিবির লেখার মান সংক্রান্ত এহসান ভাইয়ের পোস্টটার একটা ইমপ্যাক্ট ছিলো ২০০৯ এর মাঝামাঝি এসে। সেটা আবার শেয়ার করলাম নতুন পুরান সব ব্লগারকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।

সত্যিকার অর্থে আমি মনে করি, বয়স হিসাবে তিন বছর বিকশিত হবার জন্য যথেষ্ট সময়। এবং ব্লগ হিসাবে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে সিসিবি মোটামুটি জায়গা করে নিচ্ছে। বিডিআর ঘটনা, নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের কাছে সিসিবির লেখা গুলো লিংক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক সহ ভার্চুয়াল অনেক মিডিয়াতেই। আর তার মাঝে বপিত হয়েছিলো মূলত সিসিবির স্ফুরণের বীজ।কেননা আমি মনে করি, যত বেশি আমাদের লেখাগুলো মানুষের হাতে হাতে পৌছাবে ততো বেশি সিসিবির এক্সপোজার বাড়বে। আর দেশে দেশের বাইরে ছড়িয়ে থাকা অনেক ভালো ভালো ব্লগার সিসিবির ব্যাপারে উৎসাহী হবেন। আর ভালো ভালো ভালো ব্লগারের নিয়মিত অংশগ্রহন সিসিবির গুণগত মানকে বাড়িয়ে নিবে খুব দ্রুত।

আর সিসিবি শুধু যেন একটি ভার্চুয়াল আড্ডার জায়গা না হয়ে বরং একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হয়ে গড়ে উঠে সে প্রত্যাশা আমাদের সবারই। আর সেদিক থেকে চিন্তা করলে শীত বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করার অভিপ্রায়ে যারা প্রাণান্ত কর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের স্যালুট দিয়ে এ কথাও মনে করিয়ে দিতে চাই তাদের এই উদ্যোগ সিসিবিকে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপও।তাছাড়াও নানারকম মানবিক সাহায্যের আবেদনে সিসিবির এগিয়ে আসার ঘটনাও ঘটেছে , যেটাকেও আমি সাফল্যের দিক হিসাবে চিহ্নিত করতে চাই। তবে সিসিবির ব্যানারে গড়ে উঠা এই মানবিক উদ্যোগ গুলোকে আরো প্রক্রিয়াবদ্ধ করার দরকার পড়েছে বলে আমি মনে করি। বেশ আগে জুলহাস ভাইয়ের একটা পোস্টে ঘটে যাওয়া কিছু আলোচনার রেশ ধরেই আমার বক্তব্যগুলো উপস্থাপন করতে চাই। তাই সে পোস্টের লিংকটা শেয়ার করলাম।

আগের দুটো পোস্ট শেয়ার করে চর্বিত চর্বন করার জন্য কেউ যদি আমার উপর বিরক্ত হন তবে আমি তাতে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে সিসিবি সংক্রান্ত আমার অনেক ভাবনাই ঐ দুই পোস্টে প্রতিফলিত হয়েছে বলেই রিপিটেশনে না গিয়ে পোস্ট দুটো শেয়ার করা। এবার জুলহাস ভাইয়ের পোস্টের সূত্র বলতে চাই, সত্যিকার অর্থেই আমরা ভাগ্যবান। আমরা ভাগ্যবান আমরা ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে। যে দেশের একটা বড় অংশ দুবেলা ঠিকমত খেতে পারে না সেই দেশে থেকে ক্যাডেট কলেজ আমাদের সপ্তাহে নিয়ম করে একদিন পোলাও খাইয়েছে। যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক ছেলে টাকার অভাবে ঝরে যায় ক্যাডেট কলেজ আমাদের সেটা বুঝতে দেয়নি। যে দেশে ভালো ছাত্রের নামে একটা বড় অংশ বুকিশ নার্ড উপহার দেয়, সে দেশে ক্যাডেট কলেজ আমাদের দিয়েছে নিজেকে স্ফুরণের সুযোগ। তাই এই দেশের সেই না খেতে পারা লোকটার জন্য যে তার আয়ের একটা অংশ কর দিয়ে আমাদের ক্যাডেট কলেজে পড়ার ব্যয়ভার বহন করেছি তাদের জন্য নূন্যতম কিছু করার দরকার তাগিদ আমাদের মাঝে থাকা উচিত।

আমরা যখন গেট টুগেদার পিকনিকে ব্যস্ত থাকি তখন হয়তো এই দেশেই লঞ্চডুবিতে শোকার্ত হাজার পরিবার কাঁদে। পিকনিক করার ফাঁকেই আমরা তাদেরকে জানাতে পারি অন্তত, তোমাদের স্বজনের লাশের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, তোমাদের কষ্টকে আমলে না নিয়ে আমরা ফুর্তি করি না, বরং আমরাও আছি তোমাদের পাশে। হয়তো আমাদের সেই পাশে থাকা তাদের হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরিয়ে আনবে না, কিন্তু তাদের ক্ষতের উপর সামান্য প্রলেপ তো পড়বে আড় আমরা আত্মগ্লানির থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবো।

আমরা যখন আজ নিজেদের যাপিত জীবনের ছোট ছোট না পাওয়ার হিসাব মিলাতে ব্যস্ত তখনই হয়তো এদেশেই বখাটের ছোড়া এসিড কোন এক মায়াবতীকে উপহার দেয় অভিশপ্ত জীবন, যৌতুক নারী নির্যাতনে আত্মহনন করে কোন নারী, মা হারা অসহায় সন্তানকে ফেলে প্রেমিকার হাত ধরে পালায় কোন লম্পট বাবা। হয়তো আমার একার কোন সাধ্য নেই এদেশের সব মানুষের কষ্ট দূর করে দেবার। কিন্তু আমরা শুরু করি না, কে জানে হয়তো এই ছোট শুরু থেকেই তৈরি হবে বড় কিছু।

আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত সিসিবির জন্য একটা একাউন্ট খোলা। হতে পারে সেটা সিসিবির নামে অথবা আমাদের মাঝে সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশ্বস্ত কয়েকজনের নামে।সেই একাউন্টের কন্ট্রিবিউটর হতে পারবেন যে কেউ, এবং তার জন্য বাঁধাধরা এমাউন্ট ধার্য করা হবে না। শুধুমাত্র কন্ট্রিবিউটররা মেইল অথবা ফোনের মাধ্যমে জানান দিয়ে পাঠানো ও প্রাপ্তির ব্যাপারটা নিশ্চিত করবেন। আর এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময় পর পর সিসিবির ফান্ডের অগ্রগতি কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

সিসিবির ফান্ড গঠন হয়ে গেলে আমাদের কল্যানমুখী কাজ এবং মানবিক আবেদনে সাড়া দেয়া অনেক প্রক্রিয়াবদ্ধ হবে।একজন সাকিব ভাই অথবা একজন শ্রাবণী সমাদ্দারের পাশে দাঁড়াতে পারবো আমরা কোন সময় ক্ষেপন ছাড়াই। তার সাথে সাথে জনকল্যানমুখী কাজগুলো পরিচালিত হতে পারে সুপরিকল্পিত উপায়ে। যাতে কোন কাজ শুরু পর তার ফান্ড নিয়ে ভাববার প্রয়োজন না পড়ে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যেকোন একটি ছোট ভালোলাগাকে স্যাক্রিফাইস করে আমি কিংবা আমরা সবাই কন্ট্রিবিউট করতে পারি সিসিবি ফান্ডে।

বন্যা খরার মঙ্গার এই দেশে আমাদের করার কাজের অভাব নেই । আমরা দাঁড়াতে পারি জীবন সংগ্রামে ধুঁকতে থাকা কোন এক মুক্তিযোদ্ধার পাশে, আমরা দাঁড়াতে পারি এসিডদগ্ধ অসহায় কোন নারীর জন্য, আমরা দাঁড়াতে পারি বন্যা পীড়িত মঙ্গা পীড়িত অথবা শীতার্ত লোকদের পাশে। আমরা দাঁড়াতে পারি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষিত করার কাজে। আমরা দাঁড়াতে পারি শিশু শ্রমের বলি হাজার কচি শিশুদের পাশে। আমি মনে করি আমাদের প্রাণশক্তি আর সদিচ্ছারও অভাব নেই। দরকার শুধু এক পতাকাতলে দাঁড়াবার। আর সিসিবিকে প্লাটেফর্ম করে আমরা এগিয়ে আসতে পারি এই দেশের মেহনতি মানুষের জন্য। যাদের “অনেক কিছু না পাওয়া” আমাদের “অনেক কিছু পাওয়ার” কারণ। তাদের প্রতি ঋণশোধের সামান্য একটু চেষ্টা কি আমরা করতে পারি না?

আর হ্যা সিসিবির ফান্ডের আরেকটি কাজ অবশ্যই এর সার্ভার এর খরচ বহন করা আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো এডু মডুদের জন্য সামান্য সম্মানী প্রদর্শনও। যাদের অক্লান্ত থ্যাঙ্কসলেস পরিশ্রমের জন্য আমরা আজ সিসিবির এই সুবিধা উপভোগ করছি তাদের জন্য সামান্য এটুকু করার তাগিদ আমি মনে করছি।

পরিশেষে আমি মনে করি, সিসিবিকে একটি প্লাটফর্ম হিসাবে দাঁড়া করানো গেলে এর এক্সপোজার বাড়বে। ভালো ভালো মানুষ এখানে ইনভলভ হবে। আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন সিসিবির মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে জানান দিতে পারবো, এত এত টাকা খরচ করে ক্যাডেট কলেজ চালানো এদেশের জন্য শ্বেতহস্তী পোষা নয়।

সিসিবির শুভানুধ্যায়ী সকল সিনিয়র জুনিয়র ব্যাচমেটদের মতামত প্রত্যাশা করছি।

২,৮৪৫ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “প্রসঙ্গ সিসিবি : আত্মসমালোচনা ও অগ্রগতি ভাবনা এবং সিসিবি সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবনা”

  1. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    পরিশেষে আমি মনে করি, সিসিবিকে একটি প্লাটফর্ম হিসাবে দাঁড়া করানো গেলে এর এক্সপোজার বাড়বে। ভালো ভালো মানুষ এখানে ইনভলভ হবে। আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন সিসিবির মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে জানান দিতে পারবো, এত এত টাকা খরচ করে ক্যাডেট কলেজ চালানো এদেশের জন্য শ্বেতহস্তী পোষা নয়।

    সহমত।বিশেষ করে মানবিক বিষয়ে আমরা এক্টিভ আছি,আরো বাড়বে বলে বিশ্বাস।মানুষ মানুষের জন্য।
    এক্সপোজার বাড়ানোর চেয়েও কর্তব্য পালনকেই ইম্পর্টেন্ট মনে করি।আর কর্তব্য পালন করলে এমনিতেই এক্সপোজার বাড়বে।
    ভাই ও বোনেরা, আমাদের সবার মটো হওয়া উচিত
    কথা নয় কাজ 😀

    জবাব দিন
  2. নঈম (৮৭-৯৩)

    প্রথমতঃ ব্লগের সমৃদ্ধি:
    ১। ব্লগের সমৃদ্ধির জন্য মান সম্মত লেখার প্রয়োজন। মন্তব্যও সেরকম মান সম্মত হতে হবে। এজন্য কিছু ক্যাডেট যারা লেখালেখির জগতে বিচরণ করে তাদেরকে সময় দিতে হবে। এমন ক্যাডেট যদি থেকে থাকে যারা ভিন্ন ব্লগে বা মাধ্যমে লেখালেখি করেন, তাদেরকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
    ২। সার্বিকভাবে লেখকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে করে বিভিন্ন বিষয়ে লেখার ও মন্তব্য করার অনেক ব্যাক্তি থাকবে। তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন, ১/২ জন খেলাধূলার বিষয়ে, ১/২ জন খবর, এভাবে (১) খেলাধূলা, (২) দেশী-বিদেশী খবরাখবর, (৩) সমালোচনা / পর্যালোচনা (চলচিত্র, নাটক, বই, ইত্যাদির), (৪) সাহিত্য (গল্প, উপন্যাস, কবিতা ছাড়াও ভাল প্রবন্ধ, বিশেষ করে সাহিত্য মানের উন্নয়নে, যেমন ভাষারীতি, বানানরীতি, ইত্যাদি বিষয়ে নিবন্ধ), (৫) মন্তব্য (সকল ধরণের), ইত্যাদি দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, চাহিদা পেশ করে লেখালেখি ভাল হয় না সত্য, কিন্তু কেউ লিখতে শুরু করলে অন্যরা তাতে উৎসাহ পেয়ে আরো লেখে বা ভাল ভাল মন্তব্য করে।
    ৩। লেখালেখির জগতে সমৃদ্ধি আনতে বছরে এক বা একাধিকবার সমাবেশ ধরণের কিছু করা যায়। সেখানে মত বিনিময় ছাড়াও, সাহিত্য সেমিনার ও বাৎসরিক পুরুষ্কার আয়োজন করা যেতে পারে। সাহিত্য সেমিনারে ক্যাডেট ও নন-ক্যাডেট উভয় ধরণের সাহিত্যগূণীজনকে ডাকা যেতে পারে।

    দ্বিতীয়তঃ দেশের নিকট ঋণ:
    ১। দেশের নিকট সকল দেশবাসীই কম-বেশী ঋণী। কিন্তু আমরা ক্যাডেটরা বোধহয় একটু বেশী ঋণী। কিন্তু সকল ঋণ শুধু টাকার অংকে পরিশোধ করা যায় না। একটা লেখায় পড়েছিলাম রায়হান আবীরের মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট জগতে নূতন আবিষ্কারের কথা। এটাও ঋণ শোধের একটি পদক্ষেপ / ধাপ।
    ২। ঋণ শোধ সবচেয়ে বেশী হবে তখনই, যখন আমরা আমাদের সর্বোত্তম মূল্যবোধ দিয়ে একটি অগ্রসর জাতি গঠনে সহযোগিতা দিতে পারবো। আমাদের উত্তম সাহিত্য ও মূল্যবোধের চর্চা ঋণ শোধের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পদক্ষেপ হবে।
    ৩। পরিশেষে, একটি ফান্ড গঠন করা যায়। এজন্য একটি নীতিমালা তৈরী করা আবশ্যক। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      সুদীর্ঘ ও সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
      ব্লগের সম্বৃদ্ধির জন্য আপনার পয়েন্টগুলি ভালো লাগলো। তবে ২য় পয়েন্ট প্রয়োগ করার মত যথেষ্ট সাংগঠনিক সমন্বয় আমাদের মাঝে নেই। আবার ব্লগাররা নানা জনে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই আপাতত এই প্রজেক্ট ভবিষ্যতের কাছে তুলে রেখে আমি প্রথম পয়েন্টকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। লক্ষ্য করলে দেখবেন, মানসম্পন্ন লেখা যখন ক্রমাগত এসেছে তখনই ব্লগে ইন্টারএকশন বেড়েছে। আর মানসম্পন্ন বলতে আমি যে শুধু ভারী ভারী লেখার কথা বলেছি তা কিন্তু নয়। আমি মূলত এহসান ভাইয়ের পোস্ট টা এইজন্যই শেয়ার করেছি। মূল ব্যাপার যেটা সেটা হলো বৈচিত্র‍্য। আর ফান পোস্ট আসবেই। তবে সেগুলো যাতে সস্তা ভাড়ামো না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আর যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং লেখালেখির জগতে আছেন অনেক দিন ধরেই তাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ ব্লগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমার কথা এই জায়গাতেই। বর্তমানে শহীদ ভাই, আলীম ভাই , লাবলু ভাই, মাসুম ভাই কিংবা মাহমুদ ভাইদের মত ব্লগার যে শুধু তারাই তা তো নয়। বরং দেশে বিদেশে তাদের মত অনেকেই আছেন যারা সিসিবি সম্পর্কে জানে না। তাদের কাছে সিসিবির খবরন পৌছানোর ক্ষেত্রেই সিসিবির এক্সপোজার বাড়ানো দরকার।
      আর এর লেজ ধরেই পরের কথাগুলো বলা। দেশের কাছে আমরা ঋণী এবং যে যে তার জায়গা থেকে এর জন্য কাজ করে যাবে এতে কোন সন্দেহ নাই। তবে আমার কথা কিন্তু সেটা না। আমার কথা ছিলো সিসিবির ব্যানারে কিছু মানবীয় কাজ শুধু হয়েছে। যেটা একদিকে যেমন দেশের ঋণ শোধে কিঞ্চিত অবদান রাখছে আর অন্যদিকে সিসিবি সম্পর্কে একটা মেসেজ পৌছে দিচ্ছে সবার কাছএ। আমার প্রস্তাবনা ছিলো এই কাজগুলোকে আরো প্রক্রিয়াবদ্ধ করার।
      আর তার সাথে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো সিসিবির মডুদের জন্য কিছু করা। আর এ বিষয়ে পদক্ষেপ কেমন হতে পারে তার একটা রূপরেখা প্রস্তাব করেছি মাত্র এই পোস্টে। এখন এই বিষয়ে বাকিদের মতামত জানতে চাইছিলাম।

      জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আমিন,
    মন্তব্যে কি কি লিখবো তা' ঠিক করে শুরু করতে যাই, কিন্তু আবার বাদ দেই। তোমার এই লেখাটা আমাকে এই এক নতুন ধরণের ঝামেলায় ফেলেছে x-(

    যতদূর বুঝলাম, পোষ্টের মূলকথা সিসিবি এবং দেশের জন্য পজিটিভলি কিছু করার জন্য আবেদন। আমি পুরো একমত। পাশাপাশি পুরান দুইটা নাড়া-দিয়ে-যাওয়া পোষ্ট স্মরণ করানোর জন্যও ধন্যবাদ।

    কিন্তু তোমার এই পোষ্টে লেখার ধরণ আমার কেমন যেন ভালো লাগল না। মানে বলতে চাইছি, ঠিক পারস্যুয়েসিভ মনে হয়নি। কিসের যেন ঘাটতি রয়ে গেছে (এহসান ভাইয়ের পোষ্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বললাম [নিজেকে আঁতেল আঁতেল লাগছে B-) ])।

    তোমার উত্থাপিত দুটো বিষয়ের সাথে পুরো সহমত- সিসিবি এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা। দুটোই বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং এজন্যই এদেরকে নিয়ে আলাদাভাবে দুইটা লেখায় লিখলে পড়ে ভালো লাগত, তোমার বক্তব্যও আরো পরিষ্কাররভাবে উঠে আসতো পাঠকের কাছে জোড়ালো আবেদন নিয়ে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার মন্তব্য এবং সমালোচনা সবসময়ই লেখার নতুন অণুপ্রেরণা।
      এবার পোস্ট প্রসঙ্গে বলি, প্রথমত আপনি যেদুটো পয়েন্টের কথা বলেছেন সেটা একদিকে পোস্টের অন্যতম ফোকাস। তবে মূল ফোকাস ছিলো "কিভাবে " করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা। অর্থাৎ করতে হবে এতে কোন সন্দেহ নাই ,"কিভাবে " করতে হবে সেটাই কথা। তাই লেখাটা খুব বেশি পারসুয়েসিভ হয়ে উঠেনি । কারণ আমি মনে করেছি ক্যাডেট মাত্রই এ দুটো বিষয়ে সচেতন। আর সিসিবিতে আগের আলোচনার ভিত্তেতে তা আড়ো পরিষ্কারভাবে উঠে আসে। এই জন্য সিসিবির লেখালেখির মান এবং দেশ উন্নয়ন ভাবনার পোস্ট দুটি শেয়ার করা।
      আমি দুটো আলাদা বিষয়কে এক করার চেষ্টা করেছি কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে তারা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ আরো অনেক ভালো ভালো ব্লগারের অংশগ্রঃন হলে সিসিবির গুণগত মান দ্রুত বাড়বে। আর মুক্তচিন্তা আলোচনা আরো জমে উঠবে যা আমাদের মত আম কাঁঠাল ব্লগার (পাঠক ব্লগার) দের জন্য খুবই পজেটিভ।
      আর সামাজিক রাষ্ট্রীয় অবদানের কথা এজন্য আসলো যে, গত ডিসেম্বরে সিসিবির পিকনিকে আমরা যখন হৈ হুল্লোড় করি তখনই লঞ্চডুবিতে হাজার হাজার পরিবার কাঁদছে। আমি জানি অনেকেই পিকনিকে যা খরচ করলেন তার ছোট একটা অংশ হলেও দিয়ে ঐ লোকগুলোর পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ বোধ করেছেন। কিন্তু তা হুট করে সম্ভব ছিলো না। আবার অসুস্থ কোন ক্যাডেট এর পাশে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু যখন দরকার পড়লো তখন হ্য়তো সাহায্য করার মতো তেমন কিছু নেই। অথচ আমরা অল্প অল্প করে একটা ফান্ডে সবাই কন্ট্রিবিউট করলে সেটা খুব দ্রুত কাজে নেমে পড়তে পারে।
      আবার শীত বস্ত্র বিতরণের কাজ এখন চলছে । সেটার জন্য ছেলে মেয়েগুলো জনে জনে ঘুরে সংগ্রহ করছে। কাজ থমকে যাচ্ছে মাঝে। কিন্তু যদি স্থায়ী ফান্ড থাকে কাজটা আরো সুশৃংখল ভাবে হয়। আর মানবিক সাহায্যের কাজ আমরা করবো মানবতার খাতিরেই তাতে সিসিবির এক্সপোজার বাড়বে। এক্সপোজার বলতে আমি প্রথম আলোর বন্যার মঙ্গায় দাড়ানো মেকি এক্সপোজার না সেটা আশা করি বুঝাতে পেরেছি।
      আমি সত্যিকার অর্থে জানতে চাইছিলাম কাজটি কিভাবে করা যায় বলে সবাই মনে করেন এবং সবার মতামত ও পরামর্শ।

      জবাব দিন
  4. রেশাদ (১৯৯৩ -৯৯)

    আমিন, তোমার পরিচ্ছন্ন স্বদেশ ভাবনার সাথে পুরোপুরি একমত। তবে তোমার ভাবনার অন্য অংশ অর্থাৎ সিসিবিকে প্লাটফর্ম করে বৃহত্তর কিছু করার চিন্তা, এই বিষয়টা ভাল সন্দেহ নেই, কিন্তু ঠিক এখনই সিসিবির সেই সাংগঠনিক ও বিন্যাসগত কাঠামো আছে কিনা সে বিষয়ে ভাববার অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয়। তবে তোমার চিন্তাটাকে এখন একটা প্রস্তাবনা হিসেবে বিবেচনা করে একটা লক্ষ্য নির্ধারন করা যেতে পারে, ঠিক কবে এবং কিভাবে সিসিবি বৃহত্তর আংগিকে কিছু করায় সম্পৃক্ত হবে। তবে কোন অবস্থায়ই সিসিবির মূলধারা অর্থাৎ মুক্তচিন্তার বিকাশ ও প্রকাশকে সামান্যতম ব্যাহত করেও কোন প্লাটফর্ম হিসেবে সিসিবির ব্যাপ্তি সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। আর সিসিবির সার্ভার ও ক্যাডেটদের জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্যে তহবিল গঠন করাটা সবার মতামত থাকলে এখনই করা সম্ভব।

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।
      প্রথম কথা হলো সিসিবির সাংগঠনিক বিন্যাস আছে কিনা সেটা ভাবনার বিষয় নয় বরং সিসিবির সাংগঠনিক বিন্যাস কিভাবে করা যায় সেটাই ছিলো আলোচনার বিষয়। আর ভাইয়া সিসিবিকে ডিজিটাল বন্ধুসভা বানানোর কোন উদ্যোগের কথা বলিনি। বলেছি যে কাজগুলো এখন হচ্ছে (বিশেষ করে মানবিক সাহায্য ) সেগুলোকে আরো প্রক্রিয়াবদ্ধ করা।
      অনেক আগে সিসিবিতে লাবলু ভাইকে বলতে শুনেছিলাম, তার এক বন্ধুর প্রতি (আমি ভুল না করে থাকলে শাহীন ভাই), যে সিসিবি শুধু স্মৃতিচারণের জায়গা নয়। এতে ভারী ভারী লেখাও আসে। সেই কথা থেকে আমি অনুমান করতে পারি অনেক বড় ভাইয়ারাই হয়তো সিসিবি সম্পর্কে হালকা ধারণা পোষণ করে এখানে অংশ নিতে আগ্রহ পায় না। তাদের সিসিবি সম্পর্কে ধারণা পালটে যাবে আমাদের ভালো উদ্যোগের মাঝে।
      আর উঁনাদের মত লোকদের নিয়মিত অংশগ্রহনে মুক্তচিন্তার বিকাশের দ্বার আরো সুগম হবে।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।