পাঠ ভাবনা : বিতংস — ওয়াহিদা নূর আফজা

প্রচলিত অর্থে রিভিউ বলতে যা বুঝায় আমার এই লেখাটি ঠিক সেই কাতারে পড়বে না। আবার কেউ যদি একে বিজ্ঞাপনমূলক ফরমায়েশী লেখার দলে ফেলে দেন তা হলেও আমি আপত্তি করবো। কারো উপন্যাস নিয়ে যখন আলোচনা মূলক কিছু লিখবো তার উদ্দেশ্যে প্রচারণা থাকবে না এমন আশা করা যায় না। তবে এই লেখাটি আমার কাছে মোটেও ফরমায়েশী নয়। বরং ভালো লাগার জায়গা থেকে স্বপ্রণোদিত লেখা।এত কিছু শুরুতে বলে নেয়ার কারণ হলো এই বইটি আমি পুরোটা পড়ি নি। তবে এই উপন্যাস জন্ম নেয়ার সাথে খুব সামান্য জায়গা থেকে হলেও জড়িত ছিলাম বলেই হয়তো এর মধ্যে আমার নিজের অধিকারবোধ কাজ করে অজান্তেই। তাই বই বিষয়ে কিছু বলার চাইতেও বইয়ের সাথে আমার সৌহার্দের গল্পের বয়ানটুকু আগে করে নেই।

বইয়ের লেখক ওয়াহিদা নূর আফজা শান্তা আপার সাথে আমার পরিচয় মূলত ক্যাডেট কলেজ ব্লগ সূত্রে। তার কিছু লেখা পড়া তা নিয়ে কথা বলার সূত্র ধরেই কোন কারণে আমার পাঠক সত্তার উপর উনার ব্যাপক আস্থা জন্মে। অথবা বলা যায় ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি আমাকে ফেসবুকে কথা প্রসঙ্গে এই বইটির কথা বলেন। এবং আমি বইটি পড়ে পাঠকের জায়গা থেকে মূল্যায়ন তাকে দিতে পারি কিনা তা জানতে চান। পাঠ্য বই ব্যতীত কোন পড়ার ব্যাপারেই আমার কখনো না ছিলো না। তাই সানন্দের সাথেই রাজি হই। আপা আমাকে অল্প কিছু অংশ পাঠান। সত্যি বলতে দ্বিধা নেই বইটির ব্যাপারে খুব বেশি উচ্চ ধারণা নিয়ে পড়া শুরু করি নি। তাই পড়ার পরে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গৎবাধা অ আ ক খ এর বাইরে কিছু বলতে পারি নি। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমার প্রথম দিককার ফাঁকিবাজি মূল্যায়ন হয়তো লেখক চোখ এড়িয়ে যায়। তাই হয়তো তিনি আরো একটু অংশ আমাকে পড়বার সুযোগ করে দেন। উপন্যাস এগুবার সাথে সাথে মনে হয় লেখা গভীর হয়। আর প্রেক্ষাপটের দরুণ আমি বেশ আকৃষ্ট হই। এর পরের বারে নিজেই পরের অংশ গুলো চেয়ে নেই। সময় যতই এগুতে থাকে উপন্যাসটি আমাকে বেশ আকর্ষণ করতে থাকে চুম্বকের মতো। পরের দিকে যা হতো আমি মোটামুটি এক বসায় পড়ে ফেলতাম এবং আমার ভাবনা গুলো সাথে সাথে নোট করে পাঠাতাম। সময়ের সাথে সাথে চরিত্র গুলোকে আমার কাছে খুবই জীবন্ত মনে হয়েছে প্রাণবন্ত বর্ণনা শৈলীর জন্য। উপন্যাসের এক তৃতীয়াংশ পড়ে তার উপরকার লেখনীর দুর্বলতা কিংবা আমার কাছে অস্পষ্টতার বয়ান পেসহ করেছি ধাপে ধাপেই। লেখক আমার মতামত বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বলেই হয়তো এই উপন্যাসটির প্রতি আমার অধিকার বোধ।

এক তৃ্তীয়াংশ পড়ে কোন উপন্যাসের সামগ্রিক মূল্যায়ন মোটামুটি অসম্ভব। তবে আমার পাঠের নিরিখে আমি যা বলবো এটার এক তৃতীয়াংশ পড়বার পরে এর পরবর্তী ডেভেলাপমেন্ট কী হতে পারে তা আমাকে ভাবিয়েছে বেশ। সেজন্য অবশ্যই লেখক প্রশংসার দাবি রাখেন। এবার একটু গোড়ায় ফিরে গিয়ে সমালোচনা করবার চেষ্টা করি। বিতংস নামকরণটি ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে এটা তর্কসাপেক্ষ হয়েছে তবে নামটি যে দাঁত ভাঙা হয়েছে সে ব্যাপারে টর্কের অবকাশ নেই। বিতংস শুনেই যে কেউ ভুরু কুঁচকে তাকাবেন। এর শাব্দিক মানে হলো জাল। গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে একাত্তরের সময় কিশোরী থাকা মফস্বলের এক কিশোরীর চোখ। তার কিশোরী চোখে দেখা হয়েছে একাত্তর পরবর্তী সামজিক বাস্তবতাকে, তার ভার্সিটি লাইফের মাঝ দিয়ে দেখা হয়েছে মধ্য আশি কিংবা এরশাদ পতন সময়কার ছাত্র রাজনীতিকে। আর নব্বই পরবর্তী তার চোখে উঠে এসেছে প্রবাস জীবন (আপাতত হয়তো তাই প্রতীয়মান হয়)।

উপন্যাসের ফরম্যাটে অভিনবত্ব হলো আলাদা প্রতিনিধিত্ব তিনটি সময়ের কিছু অংশ শুরুতে অল্প করে দেয়া হয়েছে। যা পাঠককে ক্ষণিকের জন্য হলেও ধাঁধার মাঝে ফেলে দেবে। তিনটি সময়ের কমন প্রজেকশন যে মূলত একটা চরিত্র তা ফুটে উঠে উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। পাঠক হিসাবে আমি প্রথ অংশ টুকুর মাঝ দিয়ে গিয়েছি। একাত্তর পরবর্তী এদেশের সামাজিক জীবনের উপর আলো ফেলে খুব বেশি সাহিত্য কর্ম এদেশে হয় নি। লেখক সেই সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনা গুলোকে তুলে আনবার চেষ্টা করেছেন মূলত সাধারণ মানুষের জীবন চরিতের মধ্য দিয়ে।
সত্তর দশকের সময়কার ঐতিহাসিক নানা ঘটনা, সামজিক সমস্যা , কষ্ট , সাম্প্রদায়িকতার বিষ, মানুষের অবক্ষয় সবকিছুই অল্প বেশি করে বিস্তার লাভ করেছে এই ভাগে। লেখক তার উপন্যাস লেখার মোটিভেশন হিসাবে বেছে নিয়েছেন মূলত আমাদের দেশের নারী পাঠকদের। বই পড়ার অভ্যাস প্রায় হারিয়ে ফেলা পাঠকদের কাছে টার বই পৌঁছবে কিনা সেটা ভবিষ্যতের কাছে তোলা থাক, তবে যদি পৌঁছায় তবে তা নারী পাঠকদের কাছে আবেদন রাখতে পারবে বলে মনে হয়। কারণ গল্প লেখার ধাঁচ খুবই সিনেমাটিক স্টাইলে হৃদয় গ্রাহী করবার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে যখন কোন বিশেষ পাঠক শ্রেণীর কথা চিন্তা করে উপন্যাস লেখা হয় সেটা অন্যান্য পাঠক শ্রেনীর কাছ থেকে দূরে সরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেটা অল্প বিস্তর এই উপন্যাসের জন্যও সত্যি। তবে অন্যান্য পাঠকরাও উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া থেকে খুব বেশি বঞ্চিত হবে না। উদাহরণ হিসাবে যেমন বলা যায় গল্পের নায়িকা সর্ব গুণে গুণান্বিতা নায়কও তেমন তখন আমার কাছ এই বোধই এসেছে গণমানুষের কথা অনুপস্থিত। এ যেন রাজা রাজরা দের গল্প। তবে এক সময় বোধ করেছি রাজা রাজরা দের গল্প হয়েও তা আসতে আসতে বিস্তার করেছে গণমানউষের মাঝে। কিংবা একটা সময় পড়ে এসে রাজা রাজরা রাও মিশে গেছে গণ মানুষের স্রোতে। বেশ ভালো লাগলেও কিছু কিছু খুঁত চওখে পড়েছিলো। যেমন ইনফরমেশন আর কাহিনীর ব্লেন্ডিং একটু ছাড়াছাড়া মনে হয়েছিলো। মানে কিছু অংশ পড়ে মনে হয়েছে কেবল তথ্য দেয়ার জন্য বলে যাওয়া হচ্ছে ।লেখক অবশ্য পরে সেটা নিয়ে কাজ করেছেন। উপন্যাসের শক্তির দিক বলতে হবে কাহিনীর বাস্তব মুখীতা। লেখিকা কিছু কিছু জায়গায় লেখার মাঝে ব্যাক্তিগত ভাবে আবেগাক্রান্ত হয়েও সমকালীন বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে পিছু পা হন নি। আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভালো বোধ করেছি সেটা হলো লেখকের সততা ও পরিশ্রম। তথ্য উপাত্ত গুলোর জন্য তাকে কাজ করতে হয়েছে পড়ালেখা করতে হয়েছে উপন্যাস পড়তে গিয়ে পরতে পরতে তা অনুভব করেছি। তার সাথে রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি নির্মোহ থাকবার চেষ্টা করেছেন।

সব মিলিয়ে উপন্যাসের পাঠক হিসাবে এক তৃতীয়াংশ পড়বার পরেও এর শেষ জানবার আগ্রহ থেকে অথবা উপন্যাসের প্রতি নিজের অধিকার বোধ থেকেই বই মেলা থেকে উপন্যাসটি সংগ্রহে রাখছি।

প্রাপ্তিস্থান :পার্ল প্রকাশনী

লেখক ওয়াহিদা নূর আফজা কে তার দ্বিতীয় উপন্যাসের জন্য অভিনন্দন। তার চমৎকার লেখক জীবন কামনা করি।

১,৫৮২ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “পাঠ ভাবনা : বিতংস — ওয়াহিদা নূর আফজা”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সিসিবি খুলে প্রথমে আমার নামটা এতো বড় বড় দেখে ভড়কাই গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল কোন গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর দেখলাম যে না ঠিক আছে। এখনও রিভিউটা পড়ি নাই। পড়ার আগে কমেন্ট করছি। খুবই শরমিন্দা লাগতেছে। তোমাকে রাফ-কাট পান্ডুলিপিটা পড়তে দিয়েছিলাম। তুমি যে পড়ে শেষ করতে পেরেছিলে এতেই আমি খুব আনন্দিত ছিলাম। তুমি মানুষটা অবশ্য খুবই সৎ। খারাপ কিছু হলে ছেড়ে কথা বলবা না তা আমি জানি। তাই একটু ভয়ে ভয়ে রিভিউটা পড়বো।
    সামিয়াও পড়েছিল। ওর প্রচ্ছদটা দেখে তো আমি হতবাক। কি আর বলব? যাই হোক না কেন এই বইটাকে আমি অবশ্য সিসিবি প্রজেক্ট হিসেবে দেখি। কারণ সিসিবি না থাকলে আমার লেখা হতো কিনা সন্দেহ। সিসিবির সব এডু, মডু, ক্রিয়েটর, ডোনার, পা্ঠক - সব্বাইকে আমার অনেক অনেক প্রাণঢালা শুভকামনা।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      আসলে খারাপ ভালো ব্যাপার না। আমি মনে করি আমাদের দেশে রিভিউয়ের নামে একটা পিঠ চুলকা চুলকি কালচার চালু হয়েছে। পরিচিত জনদের বই নিয়ে গাল ভরা প্রশংসা দিয়ে তেলতেলে করে ফেলবার প্রয়াস থাকে রিভিউকারদের। আমি নিজে এই কালচার থেকে বের হয়ে আসতে চাই বরাবরই। সেই জন্য হয়তো আমার মূল্যায়ন খুব বেশি বিজ্ঞাপনী হবে না, তবে সাধারণ পাঠক অন্তত বুঝবেন যে আসলে ব্যাক্তিগত পরিচয়ের চেয়ে পাঠক সত্তাই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। আর এতে লেখকদের পাঠকদের ভালো লাগা মন্দ লাগা জানবার সুযোগ তৈরি হয়। তেমনি একাধিক পাঠ এক বিষয়ে রিভিউ লিখলে পাঠকরাই মত বিনিময়ের মাধ্যমে চমৎকার আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

      পোস্টেই বলেছি আমার নিজের অধিকার বোধ থেকেই আমি এই পাঠ ভাবনা টা লিখেছি।

      অন্য দুইটা ব্লগেও এই লেখাটা শেয়ার করেছি মূলত এই উপন্যাসরটার কথা যাতে বাইরের আরো কিছু মানুষ জানে। সেই ব্লগের লিংক ফেবুতে রেখে এসেছি আপনার ওয়ালে।

      ভালো থাকবেন।
      আবারও শুভকামনা।

      জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)
      এই বইটাকে আমি অবশ্য সিসিবি প্রজেক্ট হিসেবে দেখি। কারণ সিসিবি না থাকলে আমার লেখা হতো কিনা সন্দেহ।

      ইয়ে মানে শান্তাপা, আমাকে কিছু বললেন নাকি? 😀


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার সমালোচনা পড়ার পর ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তাই সাথে সাথে আর ফিডব্যাক দেওয়া হয় নাই। অনেক জায়গায় দ্বিমত পোষণ করছি।

    তুমি লিখেছ মহিলা পাঠকদের কথা ভেবে লিখেছি - এই জিনিষটা তুমি কোথায় পেলে? এক বানিজ্যিক উদ্দেশ্য এবং দুই জনপ্রিয় মার্কা কিছু লিখতে চাইলে তো লা লা লাসভেগাস ধরনের কিছু বেছে নিতাম। এতো কষ্ট করে মানে পড়াশোনা করে লিখলাম শুধু মহিলাদের কথা মনে রেখে? তবে আমি এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছে ছেলেরা মেয়েদের লেখাকে খুব একটা সিরিয়াসলি নিতে চায় না। নিজেদের লেখাকে বাই ডিফল্ট ইউনি জেন্ডার ভাবলেও মেয়েদের লেখাকে শুধু মেয়েদের জন্য বলে মনে করে। তুমি বার বার লেখিকা শব্দটা ব্যবহার করেছো। মহিলা ডাক্তারের কাছে গেলে কি আমরা ডাক্তারনীর কাছে যাচ্ছি বলি?
    তবে রিভিউটা টাটকা লিখকে হয়তো অন্যরকম স্বাদের হতো। তুমি তো আমার পুরা্নো ভার্সান তাও আবার তিন চার মাস আগে পড়েছো। আর এই বইটাকেই আমি একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস বলছি। সুতরাং 'বিতংস' কে এক-তৃতীয়াংশ বললে ঠিক হয় না।
    যাইহোক তোমার সমালোচনার উপর আবার সমালোচনা করলাম। এটা তো আর অন্য জায়গায় করতে পারবো না।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      সমালোচনার উপর সমালোচনা !!! 🙂 বেশ মজা পেলাম কথাটায়।

      যা হোক আমি একটু ডিফেন্ড করার চেষ্টা করি। প্রথমত আমার কাছে আসলেই মনে হয়েছে আমি যতটুকু পড়েছি সেটা ছিলো একটা অংশ। তার পরবর্তী জীবনের অংশ গুলো যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশে আসবে। সেই ভাবনা থেকেই আমার ধারণা ছিলো আমি পুরো উপন্যাস পড়ি নি। ব্যাপারটা কি এরকম যে আমি যে পর্যন্ত পড়েছি সেখানেই শেষ। পরের ঘটনার জন্য আবার সিকুয়েল উপন্যাস আসবে। সেটা যদি হয় তাহলে বলবো আমার জাজ মেন্টে মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। আর টাটকা যতটুকু পড়েছি আমি পছন্দ করেছি। তবে আমি মূলত ফোকাস আগের পড়ার জায়গাতেই রেখেছি এবং সেটা নিয়ে আপনি পরে কাজ করেছেন এমন উল্লেখও করেছি।

      এবার পাঠক বিষয়ক আমার রিমার্কের ব্যাপারে একটু বলি, আসলে আমআর বক্তব্যটা কিন্তু নেগেটিভ ছিলো না যেভাবে আপনি জাজ করেছেন। আমি মূলত আপনার লেখার মোটিভেশন সম্পর্কে বলতে চেয়েছি। বাংলাদেশের মহিলাদের মাঝে বই বিমুখীতা নিয়ে আক্ষেপ আপনার আগের লেখায় পেয়েছি। আর কথা প্রসঙ্গে আপনি বলেছিলেন আপনার পরিচিত কেউ যে বই তেমন পড়ে সে আপনার আগের উপন্যাস পড়ে ইনসপায়ার হয়েছে এটাকে আপনি সাফল্য হিসাবে দেখেছেন। এই ফান্ডামেন্টাল বায়াসের উপর আপনার লেখাটা পড়ার কারণেই হয়তো আমার এই ধারণা চলে এসেছে। তবে আমি কোন মতেই আপনার লেখাকে বানিজ্যিক কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলি নি। সেটা আপনি বুঝে থাকলে খুব সম্ভবত আমি আমার বক্তব্য বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।

      জেন্ডার ডিসক্রিমেনেশনের যে অভিযোগ আনলেন সে ব্যাপারে আমি তীব্র আপত্তি জানিয়ে গেলাম। সাধারণ ভাবে ব্লগে মহিলা ব্লগারদের লেখা পরবার ব্যাপারে আমি একটু বেশি খুঁতখুঁতে থাকি -- আমার এই কথা হয়তো আপনার এই ভাবনার পিছনে সমর্থন যুগিয়েছে। তবে আমি মোটা দাগে পুরুষ মহিলা লেখক লেখিকাকে আলাদা ভাবে দেখি না। ছেলেদের জন্য মেয়েদের জন্য এমন কোন বাঁধা ধরা কিছুকে আমি সৎ বলে মনে করি না। আমার ভাবনায় পাঠকের ক্লাসিফিকেশন তার পাঠাভ্যাস, জীবনাভিজ্ঞতা ও ভাবনার গভীরতার মাঝেই। তার কোন ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ নাই।

      লেখিকা শব্দের ব্যবহার ও আসলে আমার মধ্যে এধরণের কোন ভাবনা প্রসূত নয়। তার পরেও আপনি যেহেতু আপত্তি করলেন আপাতত এই (সিসিবির) রিভিউতে ব্যবহৃত সব গুলো সবগুলো 'লেখিকা' শব্দগুলোকে আমি বদলে 'লেখক' করে দিলাম।

      ভালো থাকবেন আপু।

      জবাব দিন
  3. রাব্বী (৯২-৯৮)

    উপন্যাস এবং উপন্যাসের সমালোচক - দুই লেখককেই অভিনন্দন 🙂

    আমারো উপন্যাসটা পড়ার কথা ছিল কিন্তু ইহজাগতিক নানা কারণ দেখিয়ে সফলভাবে কাজটায় ফাঁকি দিয়েছি। সেটা নিয়ে প্রথমদিকে মনে একটু খঁচখঁচ থাকার কথা শুনে শান্তা আপা একটা ঝাড়ি দেবার মনে হয়েছে ফাঁকিবাজিটা জায়েজ এখন।

    'বিতংস' নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রচ্ছদটাও। আমি বইমেলা থেকে নিজে কিনতে না পারলেও আমার পক্ষ থেকে কেনা হবে। আশাকরি একদিন সে বইতে লেখকের অটোগ্রাফও থাকবে।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ওয়াও!
    নামটা আমারো দারুণ পছন্দ হয়েছে।
    রাব্বীর সুরে বলতে পারি, উপন্যাসটা আমারো পড়বার কথা ছিলো বহু আগেই কিন্তু একটু জুত করে যে পড়বো সে অবসর জুটলোনা।
    প্রচ্ছদটাও দারুণ হয়েছে। উপন্যাসটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে, বিদগ্ধজনের নজর কাড়বে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
    আমিন,
    তোমার পর্যালোচনা পড়তে গিয়েও পড়লামনা, আগে বইটা পড়ে নি'।
    সিসিবিতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবার পর বইমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জেনে খুব গর্ব হচ্ছে।

    শান্তাকে ঈর্ষামেশানো অভিনন্দন। পরবর্তী উপন্যাসের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলো নাকি?

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      নূপুরদা, আপনার সমালোচনা আমার এখনও নেওয়ার ইচ্ছা আছে। আমিন পড়া এবং কমেন্ট আমার খুব উপকারে এসেছে। কয়েকটা ঘটনা আমি অন্য দৃষ্টিকো্ন থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। অবশ্য এখনও মনে হয় ঐ জিনিষটা যোগ করতে পারতাম, এভাবে লিখতে পারতাম - ইত্যাদি, ইত্যাদি। পরের উপন্যাসটা তো লেখা আছেই। কিছু যোগ বিয়োগ আর সম্পাদনা করতে হবে। সেটার নাম হবে 'তিতিক্ষা'। প্রকাশক সাহেব নতুন লেখকের লেখা একবারে খুব বেশি আয়তনে ছাপতে চাননি। তাই পুরো উপন্যাসটা দু ভাগ হয়ে গেছে। অবশ্য এদের আলাদা আলাদা বই বলেও চালানো যায়।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)
        প্রকাশক সাহেব নতুন লেখকের লেখা একবারে খুব বেশি আয়তনে ছাপতে চাননি। তাই পুরো উপন্যাসটা দু ভাগ হয়ে গেছে।

        এই প্রকাশক ব্যাডার লাইজ্ঞা আমার বউয়ের ছবিওয়ালা প্রচ্ছদটা গেল না এইবার ~x(


        আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
        ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
        ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
        সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
        ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
        আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

        জবাব দিন
        • রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

          আপা,
          বই কিনপো । অটোগেরাপ নিপো :tuski:


          আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
          ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
          ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
          সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
          ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
          আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

          জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।