পেছনের টানে,ফেলে আসা সুখ আর গানে…..

ক্যান্ডিডেট…ব্যাপারটা প্রথম মাথায় ঢুকল বাসা থেকে আব্বার চিঠি আসার পর…”এখন অনেক গুরুত্বপুর্ণ সময়…এই ফলাফল সবক্ষেত্রে কাজে লাগবে…হাবিজাবি..হাবিজাবি..”পুরাটা অ্যান্টেনার উপর দিয়ে গেলেও শুধু বুঝতে পারলাম সময়টা অনেক গুরুত্বপুর্ন এবং এটাকে কাজে লাগানো দরকার 😉

তখন সবে নতুন ক্যান্ডিডেটস ব্লক পাইসি..সবার মনে মনে চিন্তা..পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সব বাদ..খালি ধুমায়া পড়মু…এমনকি একদিন আড্ডাতেও এই বিষয়ে সবাই ডিসিশান নিলাম।কিন্তু কিসের কি!!!দুইদিন পরেই দেখা গেল একজন বল নিয়ে করুন মুখে ঘোরাঘুরি করছে।দেখা হলেই উজ্জ্বল চোখে বলে,আয় দোস্ত একটু ‘বাইড়াবাইড়ি’ করি।একদিন,দুইদিন..তিনদিনের দিন ভাবলাম…যাই একটু..তবে খালি একটুই…।একজন কিছু বলতে আসায় তাকে বলা হল যে,তাকে ডাকা হয়নি এবং সে ইচ্ছামত তার পড়া পড়তে পারে।ব্যাটা গটগট করে চলে যাওয়ার পর যখন ভাবছি কথাটা বলা ঠিক হল কিনা…ততক্ষনে ও আরও একজন নিয়ে হাজির!!!ওরা দুইজন নাকি দুইটিমে খেলবে!!বেশিক্ষন না…একটু পরেই দেখা গেল করিডোরে এ সেকশন ভার্সেস বি সেকশন খেলার টস হচ্ছে…. :mrgreen:

এইভাবে দিন যায়…সবকিছুই জমে ওঠে…করিডোরের কোনার আড্ডা,রাতের বেলায় বিশাল আয়োজনে বানানো সামান্য চা,বাসা থেকে আনা টিশার্ট পরে ভাবে থাকা,এমপিথ্রিতে ‘যা শোনায়,তাতেই সই’ টাইপের গান শোনা,ধোপাকে দিয়ে আনানো ড্যানিশের কেৌটা সাবাড় করা ..কেবল এককোনায় নেতিয়ে থাকে পড়াশোনা।এরই মাঝে কেউ কেউ অবশ্য বই থেকে খুজে খুজে,”আবুল যখন আম্বিয়াকে মারছিল,মন্তু তখন টুনিকে কোন চোখ দিয়ে চোখ মারছিল”টাইপের অবজেকটিভ ধরে কিংবা অমুক বোর্ডের তমুখ সালের এত নাম্বার অংকটা কেউ করছিস বলে সবাইকে আটকে দেওয়ার বিমলানন্দ ভোগ করত।সে যাক,জীবন তখন মজাই মজা…আড্ডা,খেলা,পানি মারামারি,সারাদিন হাফপ্যান্ট পরে ঘুরা….গেন্জি,মোজা সব যে কোথায় গেল,আল্লাহ মালুম!!ডাইনিং থেকে আসার সময় স্টাফরা মাঝে মাঝে থামিয়ে রুটিনমাফিক নাম লিখে নিয়ে যেত..তাতে আমাদের কি?একদিন অবশ্য একজন বলার চেষ্টা করেছিল এইভাবে..,”স্টাফ,আপনি আমাদের মামার মত.. :mrgreen: বাবা বল্লেও একটা কথা ছিল,কিন্তু মামা!!ফলাফল???স্টাফ তাকে রেখে বাকিদের পাঠিয়ে দিলেন।

প্রতিদিন সকালে উঠি আর হিসেব করি আর কতদিন আছে..তারপর কঠোর সিদ্ধান্ত নেই..যা করার আজই শেষ,কাল থেকে উঠেই… 💡

অবশেষে একসময় আর হিসেবের অবকাশ থাকেনা…মাথার ভিতর গাদাগাদা টেনশন নিয়ে পড়তে বসি,উঠি,আবার বসি,আবার উঠি…ব্রেইনের তখন”ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট সে তরী’ টাইপ অবস্থা…টার্মএন্ড দিতে দিতে পরীক্ষা ব্যাপারটা পাইনসা হয়ে গিয়েছিল,বোর্ড পরীক্ষা ভাবলেই গলা শুকিয়ে আসে,বিভিন্ন ইয়ারের প্রশ্নটশ্ন দেখে আর ঝাঝাল বন্ধুদের রেডিমেট হেল্প নিয়ে একসময় প্রিপারেশন কোনরকমে আধখেচড়াভাবে শেষ হয়।প্রথম পরীক্ষার আগে সবার রুমে গিয়ে দোয়া চাই…কিছু জুনিয়ররা পিত্তি জ্বালানো হাসি দ্যায়..পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে স্যারদের কাছে এবং যার সাথে দেখা হয় তার কাছেই দোয়া চাইতে থাকি…এবং শেষমেশ সামান্য প্রস্তুতি ও বিশাল দোয়ার ভান্ডার নিয়ে পরীক্ষার হলে যাই।পরীক্ষা শেষ হয়…ভাল হইলে ডাইনিং এ গলা ফাটায়া গার্ড ম্যাড্যামের রুপের বর্ননা দেই,আর খারাপ হইলে বোবা।তা দেখে টেবিলের সবারো বোঝা হয়ে যায় পরীক্ষা কেমন হইসে…যাওয়ার আগে টেবিললিডার ছোট্ট করে বলে যায়..’কোন ব্যাপার না’…এরপর হাউজে এসে সমাবেশ হয়..তাতে গালাগালির বন্যা..সাবজেক্টের স্যার এসে প্রশ্ন দেখে যাবতীয় জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলেন…উৎসাহীরা উত্তর মিলিয়ে..আর কেউ কেউ তখনও বলে চলছে,”*** বাচ্চা,**** বাচ্চা”…

অবশেষে একসময় পরীক্ষা শেষ হয়,শুরু হয় প্র্যাকটিক্যাল।আড্ডার বিষয় তখন মোড় নেয়,এক্সটার্নাল কোন কলেজের হবে,প্রিন্সিপাল তাকে আগেই একটু সাইজ করে রাখবে কিনা,তিনমাসের ভ্যাকেশনে কে কে পানি খাবে আর কে কে গান গাবে ইত্যাদি ইত্যাদি……কিছু কিছু জুনিয়রের তখন চরম ব্যস্ততা।এই ভাইর তিনটা শিট আকা বকি…এই ভাইর লাষ্ট দুইটা এখনও লিখা হয় নাই…।

পরীক্ষা দিতে যাই..ভাইভাতে কলেজের স্যারের ঝাড়ি মারেই ২৫ নিশ্চিত,এক্সটার্নালের “তোমার আচ্ঞলিক ভাষায় একটা গান গাওতো” এর জবাব খানিকক্ষন চি‍‍চি করে তাকে বাক্যহারা করে দেওয়া,কারও কারও সাথে স্যারের আত্মীয়তা আবিষ্কার হওয়া…এইভাবে প্রাকটিক্যালও শেষ হয়…শেষ হয় আরও অনেককিছুর..বলা এবং না বলা।সুদীর্ঘ ছুটি কেমন যেন অনুভুতি জাগায়..না ভাল,না খারাপ।এলোমেলো অনেক ভাবনা নিয়ে একসময় সবাইকে বিদায় জানাই আর যাওয়ার সময় বলে উঠি প্রতিবারেরই মত….

“দোস্ত ভাল থাকিস,আংকেল আন্টিকে আমার সালাম দিস…..” 😀

৪,০৮৬ বার দেখা হয়েছে

৫০ টি মন্তব্য : “পেছনের টানে,ফেলে আসা সুখ আর গানে…..”

  1. তথ্যউপদেষ্টা আলম ভাই 8) ,এই ভুল তথ্যটা দিসি দুই কারনে,
    প্রথমে দেখলাম,কে ভুলটা ধরতে পারে মানে কে আমার মত ফাকিবাজি না কইরা ঠিকমত পড়ছিল তা চেক করতে .... 😉 এত বছর পরেও আপনার মনে আসে! 🙄 !!অসাধারন...আপ্নে পাস....(যতদুর জানি,মন্তু ও খুব ভালা পোলা আছিল,ও জীবনেও টুনিরে চোখটিপে নাই...ওর নামে অপবাদটা ছাইড়া দিলেন ক্যান ভাই.... 😕 )
    আর ভাই,বল্লামইতো প্রিপারেশন ক্যামন ছিল,এর চেয়ে ভাল আর কি হইব 😥 ..ভাগ্য ভাল কই নাই মুর্দা ফকির আম্বিয়ারে মারতেছিল.... 😡 :mrgreen:

    জবাব দিন
  2. আমার একটা প্রশ্ন আছে সবার কাছে, সবাই দেখি যেমন খুশি তেমন emotion (smiley) দেয়। আমি পারিনা কেন? এর জন্য কি কোনো special character আছে নাকি GUI আছে?

    জবাব দিন
  3. @জিকু,
    লিখতে পারি না কোন কিছু আজ তুমি ছাড়া...... 😆 😆
    সচলে যাওয়ার ধান্ধায় আছি মামা ....... 😉
    @লিংকস 😆
    সিরিজ লিখা শ্যাষ,বাক্সে রাখসি...ছাড়ব,তবে খুব আস্তে আস্তে... 😉
    আর সিরিন্জ নিয়া আসতেসি তোরে পুশ করতে,খাড়া.... :mrgreen:

    জবাব দিন
  4. নাবিলা (৯৯-০৫)

    অনেকদিন পর মন্তু আম্বিয়ার লিখা পড়ে আবেগে ইমুশুনাল হয়ে গেলাম।
    *অবজেক্টিভঃ
    ১। টুনি কয় পা এগিয়ে এসে আম্বিয়া কে মারতে থাকলো?
    *১পা *২পা *১লাফে *আড়াই লাফে
    ২। কার চোখ জ্বলজ্বল করছিলো?
    * ছাগলের *টুনির *মন্তু মিয়ার *মকবুল মিয়ার
    ৩। কার চোখ ছলছল করছিল?
    * ছাগলের *টুনির *মন্তু মিয়ার *মকবুল মিয়ার
    ৪। মন্তু ও টুনি অমুক ঘাটে থেমেছিল কেন?
    *মেলা দেখা *পুতুল নাচ দেখা *নৌকায় সমস্যা ছিল *রাত্রি যাপন

    জবাব দিন
  5. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    ছয় বছরে কলেজ একটুও পাল্টায় নাই...।একেবারে আমাদের সময়ের বিবরণ।নাকি এইটাই ক্যাডেট কলেজ!!!!!
    :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিয়া

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।