যৌথ প্রয়াস (অনুবাদ কবিতা)

সে বুদ্ধি আঁটে, আমি সাহস দেই।
সে শেখায়, আমি শিখি।
(এভাবেই) আমরা কাজ করি।

সে মাপ নেয়, আমি চেরাই।
সে ধরে, আমি ছিদ্র করি।
(এভাবেই) আমরা বিনির্মাণ করি।

আমরা যোগাই, আমরা গজাল ঠুকি।
আমরা পালাবদল করি, করে সরি।
আমরা (একে অপরের) প্রশস্তি করি।

মূলঃ Moira Cameron
অনুবাদঃ খায়রুল আহসান

কবি পরিচিতিঃ কানাডার টরন্টো তে জন্ম হলেও,

বিস্তারিত»

নক্ষত্রবাসী

ছোটবেলায় বাবা অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরতেন।
হাতমুখ ধুয়ে উঠোনে রাখা একটা ইজী চেয়ারে
গা এলিয়ে তিনি আমায় ডেকে নিতেন।
আমি তার পেছনে দাঁড়াতাম,
তিনি মুখে মুখে ইংলিশ ট্রান্সলেশন ধরতেন,
পাটিগণিতের আর্যা ধরতেন,
মুখে মুখে অংক কষাতেন,
আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন,
ওরিয়ন, গ্রেট বীয়ার, পোল স্টার, আরো কতো কি!

সেই থেকে আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল,

বিস্তারিত»

পথ হারানো শিশুর মতন

সুখে দুঃখে যাকে খুঁজি,
সে তো আছে আমাতে ডুবি,
রক্তধারায় শিরায় শিরায়
মগজে মননে,
শয়নে স্বপনে,
তবু তারে খুঁজি অবচেতনে।

ব্যথা বেদনায় তারেই খুঁজি,
নিশীর আঁধারে, দিবার আলোতে,
নিদ্রা সজাগে, মন্দ ভালোতে,
হাসির ঝিলিকে, অশ্রুজলে।
এক পথ হারানো শিশু যেমন
মাকে খোঁজে, চোখের আড়ালে!

ঢাকা
১২ জুন ২০২০

বিস্তারিত»

করোনাকালের পংক্তিমালা

১.
কর্ণ লতিকা বর্গা দিয়েছি ঝুমকো দুলের কাছে
কর্ণ কুহরে ইয়ারফোনের মোহর,
রোদ চশমায় চোখ ঢেকে রেখে আমি
ভুলে যেতে চাই ক্রান্তিকালের প্রহর.

২.
গাণিতিক থেকে জ্যামিতিক হয়
সংখ্যার ধারাপাত,
অন্তর্জালে কমেন্ট বন্যা
প্রলয়ে বালির বাঁধ.

৩.
কালো মেঘ দেখে প্রত্যাশা আঁকি
কালবোশেখের প্রলয়,
হয়তো ভাসাবে প্রবল বাতাসে
এই যে দুঃসময়.

বিস্তারিত»

~ বকুলের ঘ্রাণ ~

মধুমাসে মৌ মৌ ফুল গন্ধের সাথে
বাতাসে উড়ছে ধবধবে এপ্রোনের খুঁট
ঘরের ভিতর টুকরো মেঘের ভেলা
যেনো খুঁজে পেয়েছে
সংসারে ফেলে যাওয়া তার
অতল স্মৃতির ঘাটে বাঁধা অমূল্য পল্টুন
পড়ার ঘরে আধো আলোয় নিস্তব্ধ ছেলেটার
উড়ুক্কু বইয়ের পাতায় খেলা করে শুধু
নিস্পন্দ নিথর বাবার ঘুমন্ত মুখ
টিপয়ে সাজানো ফুলদানি খানি
ফাঁকা গল্পের আলপনা ভেবে
এক মনে ধরে থাকে দেবযানী
শেষ চুম্বনের গন্ধ তখনও তাজা
কপোলে তার যতোই ভাসুক
শেষ দেখা না হবার অব্যক্ত বেদনা

মায়ের চোখে ভিজেছে প্রার্থনার হাত
স্মৃতির ফলায় যতোটা ছিঁড়ে নিলে
ভেসে ওঠে উপড়ানো বৃক্ষের শিকড়
বল্কলের প্রলেপে প্রলেপে মিশে
গায়ে লেগে থাকে প্রথম চুম্বনে মাখামাখি
সন্তানের অমূল্য ভাপখানি
সেই মাপে ভেঙেচুরে উপচে ওঠে
পাঁজর দাপানো জলোচ্ছ্বাস

শয়ানে গিয়েছে যে ফেলে রেখে পাতলুন
রোজকার হাতে বাঁধা কলম কিংবা ঘড়ি
স্তব্ধ মুঠোফোনে সহস্র কথার বুনন ঘিরে
ছড়িয়ে রাখা সখ্যের সালতামামি
এই যে এতো সব বাগান উঠোন এলো ঘরদোর
এইখানে আজও এলো ভোর
তোমার সিথানে ভেঁজা মাটি জানি
আলিঙ্গনে বেঁধেছে নতুন ডোর

তুমি নিরালায় ফিসফাস
ছুঁড়ে দিচ্ছো না বলা কথার দীর্ঘশ্বাস
সহস্র সংলাপ গাথা অনুক্ত ভালোবাসা
বুকে তুলে রাখা অযুত কলতান
গোনাগুনতিহীন আনন্দ উচ্ছ্বাস দুঃখ বেদনা
সখ্যের দুরন্ত আলাপ
যা কিছু যতনে
তুলে রাখা ছিলো গভীর গোপনে
কখনো কোনো নিরালা দুপুর সন্ধ্যা কিংবা
পড়ন্ত বিকেল জুড়ে
একলা প্রহরে নিমগ্ন গভীর স্বরে
একাগ্রে কাউকে বলবে বলে

কিছু অনুযোগ
খুনসুটির ময়ান মাখা বাখরখানি
চারকোলের তপ্ত আঁচে আঙুল ছোঁয়া
স্পর্শ আঁকা কথার বকুল
যেটুকু জানতো শুধুই দেবযানী
কিংবা ধুন্ধুমার এক ঝগড়া
জমিয়ে রাখা সাতশো গালাগালের মরমী মাখা
ওই অতটুকু শৈশবের চাতালে
হাফ প্যান্টের পকেট ভর্তি মার্বেলে
খুব মারকুটে এক খেলার বিবাদ
গলার সবক’টা রগ ফুলিয়ে তীব্র বিসম্বাদ
মিহি মসলিন একটা সকাল ফালি ফালি করার মতো
তীব্র স্বরে রাগ সপ্তমী সাধার তান
বোনের কিংবা ভায়ের
আম-কাঁঠালের ভাগ-বাটোয়া’

বিস্তারিত»

এই ভালো, তবে এই ভালো….

তুমি একটা কিছু বললেই,
আমি চুম্বকের মত আকর্ষিত হই,
অভিভূত হই, আলোড়িত হই।
তোমার অদেখা মুখটা খুঁজতে থাকি,
চোখ দুটো খুঁজি, চোখের তারা খুঁজি।
আমার কান দুটো অতন্দ্র প্রহরীর মত
জেগে থাকে, শিশিরের শব্দ শোনার মত
তোমার মিহিসুর কন্ঠ শোনার জন্য।

কিন্তু এসব কোন কিছুই যখন হবার নয়,
যখন জানি, এ দু’চোখ তোমাকে
খুঁজে পাবে না,

বিস্তারিত»

এক কুড়ি হাইকু

হাইকু ২০১

পোর্টহোলে চোখ
গোলাপী ডলফিন খেলে
নির্জন সৈকত

হাইকু ২০২

সুপার পিঙ্ক মুন
ঘরে নাইকো চাল ডাল মা
খিদা লাগিচে

হাইকু ২০৩

নিষ্ঠুর এপ্রিল
পূর্ণীমায় কাল ছোপ
স্তব্ধ পৃথিবী

হাইকু ২০৪

তাজ্জব মুঠোফোন
অকাতর জ্ঞান বিতরন
রাজা উজির বধ

হাইকু ২০৫

মুক্ত পৃথিবী
প্রস্থান বা আগমনে
স্পর্শ চাই প্রিয়

হাইকু ২০৬

সরু মেঠোপথ
থেমে থেমে ত্রস্ত পায়
বেজী ফিরে চায়

হাইকু ২০৭

ঘরবন্দী মানুষ
শেষ রাতে পাখি ডাকে
ফুল কুঁড়ি জাগে

হাইকু ২০৮

সঙ্গনিরোধ কাল
নিজ ভাল পাগল বোঝে
গাড়ল তেজপাতা!

বিস্তারিত»

করোনা কালের দুটো লিমেরিক

একঃ ভুলো মন

করোনা ভয়ে ভীত হয়ে ঘরেই বসে আছি,
ঘরের বাইরে বের হবো না শপথ করেছি।
খাচ্ছি দাচ্ছি যখন তখন,
গল্প করছি ইচ্ছে মতন,
গোঁফ দাড়ি যে কাটতে হবে, সেটাও ভুলেছি!

ঢাকা
১৯ এপ্রিল ২০২০

দুইঃ নিষ্ফল প্রচেষ্টা

লকডাউনে আটকে আছি সারাটা দিন ঘরে,
এই সুযোগে লিস্টি করি গভীর চিন্তা করে।

বিস্তারিত»

স্বপ্নিল ধোঁয়া

চায়ের পেয়ালা থেকে
কুন্ডলী পাঁকিয়ে উড়ে যায় কিছু ধোঁয়া
খানিক পরেই মিলিয়ে যায়
শূন্যতায়!

মনের গহীন থেকে
অগোচরে বের হয়ে যায় কিছু ইচ্ছে ঘুড়ি
দীর্ঘশ্বাস হয়ে মিলিয়ে যায়
সপ্তাকাশে।

রঙিন সেই ঘুড়িগুলো
স্বপ্ন হয়ে থিতু হয়ে যায় মেঘের কোলে।
কোন এক শাওন রাতে আবার ফিরে আসে
বৃষ্টি হয়ে!

ঢাকা
০৮ মে ২০২০

বিস্তারিত»

জানুয়ারির হাইকু

হাইকু ১৫২

দুই হাজার কুড়ি
কারসাজি আর বিদূষক
নির্বাসনে যাক

হাইকু ১৫৩

বই আর বউ
অমিলে সৃষ্টির কথকতা
কবিতা ও ব্যর্থতা

হাইকু ১৫৪

ঘন কুয়াশা
রবির পরে মেঘ ছোটে
বাম ডানে উইপার

হাইকু ১৫৫

তুরাগ নদীর তীর
দিনের বেলায় হেডলাইট
ধীর হাইওয়ে

হাইকু ১৫৬

জেগে ওঠা চর
ধ্যান করে বকের দল
মোলায়েম রোদে

হাইকু ১৫৭

জানুয়ারির ভোর
লেপের মাঝে এলার্ম ঘড়ি
বিলাপসম বাজে!

বিস্তারিত»

ভুলে যেতে হয়

কে কবে কী বলেছিল,
কখন বলেছিল, এসব-
অন্তর কন্দরে রাখতে নেই,
এসব ভুলে যেতে হয়।

কার চকিত চঞ্চল হাসি
আকাশ থেকে এক ফালি
বিজলী প্রভা এনে দিয়েছিল,
সে কথা ভুলে যেতে হয়।

যার কথায় পরাণে প্রথম
নিক্কণের সুর বেজেছিল,
নিস্তব্ধ নীরবতার আচ্ছাদনে
তার স্মৃতি ঢেকে রাখতে হয়।

কার কান্নায় বুকের নদীটা
ক্ষণে ক্ষণে উছলে উঠেছিল,

বিস্তারিত»

অনুবাদ হাইকু

কোবায়াশি ইশার সাতটি হাইকু

এক

শীতল হাওয়া
সব শক্তি দিয়ে ডাকে
ঝিঁঝিঁপোকা

দুই

ঠাণ্ডা বাতাস
পেঁচিয়ে মোচড় দিয়ে
এখানে এলো

তিন

গরমে পর্বতমালা
আমার প্রত্যেকটি ধাপে
আরো দেখতে পাই

চার

চড়ুইপাখির ছানা
পথ ছাড়ো পথ ছাড়ো
ঘোড়া পার হচ্ছে

পাঁচ

গরুর বাছুরটি
গিয়েছে বেড়াতে
শরতের বৃষ্টি

ছয়

সেপ্টেম্বর মাস
ডোরাকাটা কিমোনো
পরেছে আকাশ

সাত

লোভ জাগানিয়া
ধীরে ধীরে তুলতুলে
তুষার পড়ছে

ইয়োশা বুসনের সাতটি হাইকু

এক

হারুসামে ইয়া
মোনোগাতারি য়ুকু
মিনো তো কাসা

বসন্তের বৃষ্টি
কথা বলতে বলতে
চলে যাচ্ছে

দুই

য়ুকু হারু ইয়া
ওমোতাকি বিওয়া নো
দাকি গোকোরো

বসন্তের গমন
চৌতারা বাদ্যযন্ত্র
ধারণের অনুভুতি

তিন

না নো হানা ইয়া
সুকি হা হিগাসি নি
হি ওয়া নিশি নি

ক্যানোলা ফুল
পুব দিকে চাঁদ
পশ্চিমে সূর্য

চার

বোতান চিরিতে
উচি কাসানারিনু
নি সান হেন

বিক্ষিপ্ত পিওনি ফুল
আর জড়ো করে রাখা
কয়েকটি পাঁপড়ি

পাঁচ

ওনো ইরে তে
কো ওডোরোকু ইয়া
ফুয়ু কোদাচি

কুড়াল মেরে
আমি অবাক গন্ধে
শীতের বৃক্ষরাজি

ছয়

ফুজি হিতোতসু
উজুমি নোকোসিতে
ওয়াকাবা কানা

ফুজিয়ামা ব্যতীত
সব কিছু ডুবে গেছে
কচি কচি পাতায়

সাত

য়ুদাচি ইয়া
কুসুবা ও সুকামু
মুরা সুজুমে

বিকালের বৃষ্টি
ঘাস ধরবে না পাতা
গ্রামের চড়ুইপাখি

♦মাতসুয়ো বাসো,

বিস্তারিত»

ডিসেম্বরের হাইকুগুচ্ছ

ডিসেম্বরের হাইকুগুচ্ছ

১২৫

অতলান্তিক সময়
চলতে স্রোতের বিপরীতে
কূলহারা নাবিক

১২৪

এক রত্তি ডাঙা
পালক খুঁটে খুঁটে হাঁস
রোদ কণা মাখে

১২৩

সাদা সজনে ফুল
ফুলিয়ে রোঁয়া বুলবুলি
রৌদ্র মাখে গায়

১২২

উল্টা বিব্রত
আজব প্রজন্ম কহে
সব তোমাদের দোষ

১২১

মলন মলা শেষ
উঠোন ঠুকরে মা মুরগী
ছানাদের ডাকে

১২০

হেমন্তের দুপুর
ছোট্ট দ্বীপে হাঁসের দল
জলকেলি শেষে।

বিস্তারিত»