এক বালকের যুদ্ধ-স্মৃতি

স্মৃতির পাতা থেকে বলছি। এটি এমন সময়ের স্মৃতি যা আমার মনে থাকার কথা নয়। এটি এমন সময়ের গল্প যখন বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বড়-বড় হেডলাইন তৈরি হচ্ছিল। এই হেডলাইনগুলোর কথা আমি জীবনে আরো অনেক পরে জেনেছি। জেনেছি সেই গৌরব-গাথা যার গল্প মানুষ মনে করবে আরো হাজার বছর ধরে। গৌরবের পাশাপাশি এ এক ব্যর্থতার গাথাও। এই গৌরবকে মনে না নিয়ে, আলোর পথে না এসে কিছু মানুষ মানবতার চেহারায় কালিমা লেপে দিয়েছিল।

সময়টা ছিল উনিশশ’ একাত্তর সাল। আমার বয়স তখনো পাঁচ হয় নি। একাত্তরে আমি কেবল ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকে ক্লাস ওয়ানে উঠেছি। এতো বছর পরে, সব ঘটনাগুলো আমার মনে নেই; এক সুতোয় গাঁথতে আমি পারবো না। তবে কিছু ঘটনা খাপছাড়া মনে আছে যেগুলো মনের ভেতর সাজিয়ে আমি তখনকার একটি ছবি তৈরি করতে পেরেছি।

আমরা থাকতাম ঝিনাইদহ নামে একটি ছোট্ট উপশহরে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে বাবা শিক্ষকতা করতেন। ক্যাডেট কলেজ শহর থেকে প্রায় দেড় মেইল উত্তরে। আমি তখন জেনে গেছি যে যুদ্ধ চলছে। বসন্ত প্রায় শেষ। একদিন সকালে দেখি বাবা একটি শাবল হাতে তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে,গেট লাগিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পাকিস্তানি আর্মির সাথে যুদ্ধ করতে। বলে গেলেন তার সহকর্মীরাও সঙ্গে যাচ্ছেন। পাকিস্তানি বাহিনী কলেজের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ করতে-করতে এগিয়ে আসছে। ওদিকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট। ক্যাডেট কলেজ তাদের লক্ষ্য।

কিন্তু এক ঘন্টা পরেই তিনি ফিরে এলেন। পরনের কাপড় ভেজা। তিনি বললেন শাবল নিয়ে একটি মেশিনগানধারী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। বাবাদের সঙ্গে কিছু মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা ছিলেন। তারাই আমার বাবার দলকে সরে যেতে বললেন। কলেজের ভেতর দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে; তার ওপর রাস্তা গেছে। রাস্তার নিচ দিয়ে পানি বয়ে যাওয়ার জন্য বড়-বড় গোল টানেল বসানো। বাবা সেই টানেলের ভেতর ঢুকে প্রাণ রক্ষা করলেন। পাক-আর্মিকে বাংলার যোদ্ধারা এগুতে দেয় নি। তারা পিছু হটে চলে যায়।

পরদিন দেখি আকাশে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান। কলেজের ওপরে চক্কর দিচ্ছে। দু’একটি বোমাও ফেললো। বাবা বললেন সবাইকে মসজিদে আশ্রয় নিতে হবে। মসজিদে তারা বোমা ফেলবে না। বিমানগুলো চলে গেলে, আমাদের মা,বাবার সহকর্মীদের স্ত্রীদের সঙ্গে মসজিদে চলে গেলেন। আমরা দুই ভাই বাবার সাথে পরে রওনা দিলাম। আমার সঙ্গে আমার ভাই যার বয়স তিনও হয়নি। আমি বুঝিনি বাবা মায়ের সঙ্গে আমাদের দুই ভাইকে পাঠিয়ে দিলেন না কেন। দুই ভাই বাবার দুই হাত ধরে মসজিদের দিকে যাচ্ছি ঠিক তখনই আবার বিমানগুলো ফিরে এলো। রাস্তার একপাশে বড়-বড় শুকনো ড্রেন। বাবা আমাদের নিয়ে ড্রেনের ভেতর গিয়ে কচ্ছপের মতো শুয়ে পড়লেন। বিমানগুলো যতবার আমাদের মাথার ওপর আসে বাবা ততবারই আমাদের নিয়ে ড্রেনে শুয়ে পড়েন। বিমান থেকে কোনও বোমাবর্ষণ হল না। প্রায় দশ মিনিট ওড়াউড়ি করে তারা চলে গেল। চলে গেলে আমরা আবার মসজিদের দিকে চললাম। সেখানে পৌঁছে দেখি অনেক মানুষ। কলেজ ক্যাম্পাসের প্রায় সবাই ।

সেখানে পৌঁছানোর কথা আমার মনে আছে, কিন্তু সেখানে কি করলাম, তারপর কোথায় গেলাম মনে নেই। কখন মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলাম তাও মনে নেই। হয়তো পরদিন বা দু’দিন পর আমাদের বাড়িতে ফিরে এলাম।

একদিন দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনের বাড়িতে থাকতেন মুর্শীদ চাচা, বাবার সহকর্মী, বাবাকে বকাবকি করছেন। কলেজ ছেড়ে চলে যেতে বলছেন। আমার বাবার ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মুর্শীদ চাচার বকুনি খেয়ে বাবা ঠিক করলেন ঝিনাইদহ থেকে পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গায় আমাদের গ্রাম কলাবাড়িতে যাবেন। তবে চুয়াডাঙ্গা শহরে যেতে হলে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর ক্যাম্প পার হয়ে যেতে হয়। বাবা সাহস করলেন না। পূর্ব,পশ্চিম ও দক্ষিণে যাওয়ার পথ নেই। সব পাকিস্তানি বাহিনীর কব্জায়। কলেজের আরেকটি পরিবার যাবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়ায়। আমার নানাবাড়িও কুষ্টিয়া শহরে। ঠিক করলেন সেখানে যাবেন। তখনো তিনি জানেন না তার বাবার বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা কেমন আছে।

কিন্তু যাবো কিসে করে? কুষ্টিয়া ২৮ মাইল। যেতে হয় বাসে চেপে। আমাদের হাতে একটা বড় সুটকেস। আমাদের সঙ্গে আরেকটি পরিবার। মোট আটজন মানুষ। রিক্সা পাওয়া গেল দু’টো। সবাই রিক্সা চেপে রওনা দিলাম কুষ্টিয়ার উদ্দেশে। আমি এখনো ভাবি সে দু’জন রিক্সাওয়ালার কথা। কেন যে তাঁরা রাজি হয়েছিলেন আমাদের ঝিনাইদহ থেকে ২৮ মাইল দূরে নিয়ে যেতে।

চারিদিকে শুনশান; কোথাও কেউ নেই। প্রায় আট মাইল আসার পর যখন গাড়াগঞ্জে পৌঁছালাম,দেখি পাকিস্তানি আর্মির অনেকগুলো গাড়ি, ট্রাক এবং জীপ ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় খাদের মধ্যে পড়ে রয়েছে। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তার মাঝেই একটা বিশাল খাদ। রাস্তা খুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক ক্রিকেট পিচের সমান। বাবা বললেন মুক্তিযোদ্ধারা এই গর্ত খুঁড়েছেন যেন পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়িবহর কুষ্টিয়ার দিকে যেতে না পারে। তাঁরা এভাবেই হানাদারদের থামিয়েছেন। বাবা,তার সহকর্মী ও রিক্সাওয়ালা দু’জন রিক্সাগুলো মাথায় করে পার করলেন। আমরা খাদের ভেতর দিয়ে হেঁটে পার হলাম।

তারপর আবারো শুরু হল পথ চলা।

কুষ্টিয়া পৌঁছাতে কতক্ষণ সময় লেগেছিল তা আমার মনে নেই। তবে পৌঁছে দেখলাম একটা ভূতুড়ে শহর। কোথাও কেউ নেই। মজমপুর থেকে ছয় রাস্তার মোড় হয়ে আমার নানাবাড়ির সামনে গিয়ে দেখি বাড়িটা আগুনে পোড়া বাড়ির মতো লাগছে। এ বাড়িতেই আমার মা বড় হয়েছেন। মনে হল বোমা ফেলেছিল পাকবাহিনী। বাড়িতে কেউ নেই। বাবা ধরেই নিলেন সবাই তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। নানার গ্রাম গড়াই নদী পেরিয়ে হাটশ হরিপুর। গড়াই নানার শহরের বাড়ির খুবই কাছে নদী। কিনারে দাঁড়িয়ে বাবা ভাবছেন কি করে পার হবেন। কোথাও কোনও মাঝির দেখা পাওয়া গেল না। এরই মধ্যে কোথা থেকে যেন আমার ছোট মামা ওবায়দুর রশীদ নেন্টু এসে হাজির। মুক্তিযোদ্ধা। শহরেই ছিলেন। আমরা মজমপুর থেকে আসার পথে কাউকে দেখিনি। কিন্তু আমার মাকে দেখে মামাকে কে যেন খবর দিয়েছে। মামা চলে এসেছেন। সঙ্গে একটা সাইকেল ও একজন মাঝি।

ততক্ষণে রিক্সাওয়ালা দু’জন চলে গেছেন। বাবা কত ভাড়া দিয়েছিলেন মনে নেই। তাঁরা ঝিনাইদহ ফিরে গেলেন কিনা তাও জানি না।

হরিপুর গিয়ে দেখি নানার বাড়িটা পুরো একটি বাজারে পরিণত হয়েছে। নানার যেখানে যত আত্মীয়-স্বজন ছিলেন সবাই সে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বড় বাড়ি হলেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। সবার জন্যে জায়গা করতে নানা একটি নতুন দালানও তোলা শুরু করেছেন। সেখানেই শুরু হলো আমাদের বসবাস। এ বাড়িতেই আমাদের এক বোনের জন্ম হয়। বোন যখন মায়ের পেটে নানা বাড়ির বড় বারান্দাকে ঘিরে আমার মায়ের জন্য একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমি থাকতাম বাবার সঙ্গে নতুন ভবনে।

তখন আমি যুদ্ধের তেমন কিছুই বুঝি না। শুধু দেখতাম মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিতে আসতেন। আমার ছোট মামা আসতেন অস্ত্র হাতে তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া করে,তার বাবা আর ভাইদের যুদ্ধের খবরাখবর দিয়ে আবার চলে যেতেন যুদ্ধ করতে। আসলেই আমাদের তাদের অস্ত্র দেখাতেন। সেই প্রথম মামার হাতে মেশিনগান আর হাতে তৈরি গ্রেনেড দেখেছিলাম। ইপিআর বাহিনী আসতেন। তারা দেখতে আসতেন সবাই ভালো আছে কি না। সবাইকে অভয় দিতেন এবং বলতেন ভয় না পেতে। তারা দেশের জন্য যুদ্ধ করতেন। একবার গ্রামে পাকসেনাদের আক্রমণ হবে শুনে সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। কোথায় যেন গিয়ে এক চোরের বাড়িতে অনেকে রাত কাটাই। তখন সে ছিল নামকরা চোর, কিন্তু পাকসেনাদের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল।

একদিন খবর এল বাবাকে রাজাকাররা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইত্তেফাক পত্রিকায় বাবার ছবি দেখে তার পিছু নিয়েছে। মার্চে যুদ্ধ শুরু হলে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের সব শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সৌহার্দ্য জানিয়ে ঝিনাইদহ শহরে একটি সভা করেছিলেন। বাবা সেখানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই ছবি ইত্তেফাক ছেপেছিল এবং তা দেখেই রাজাকাররা বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। নানা আমার বাবাকে পালিয়ে যেতে বললেন। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন তার মাকে দেখতে আমাদের গ্রামের বাড়ি যাবেন। গেলেনও। তারপর প্রায় একমাস তার কোনও খোঁজ নেই। আমরা সবাই ধরেই নিলাম যে বাবা আর নেই। মা অনেক কান্নাকাটি করলেন। তারপর বাবা একদিন ফিরে এলেন। গালভর্তি দাড়ি-গোঁফ। নানা তাকে বাড়িতে না রেখে গ্রামের মসজিদে থাকতে বললেন। আমার মনে আছে, আমি তার জন্য খাবার পৌঁছে দিতাম মসজিদে।

শিশুরা ও ছোটরা মিলে প্রায় ২৫-৩০ জনের দল আমরা। বড়রা যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও আমাদের সময় কিন্তু আনন্দে কেটে যাচ্ছে। পড়াশোনা নেই। বেশিরভাগ সময় কাটে খেলাধুলা করে; তাও আবার যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে। গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আমাদের অনেক ধরনের কাঠের রাইফেল এবং হাতবোমা বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেগুলো দিয়ে আমরা সারাক্ষণই খেলছি। মাঝে-মাঝে আমাদের খেলায় বাধা দেন আমাদের কিছুটা বয়সে বড় খালাতো বা মামাতো ভাইরা। তারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সাজতে দেন না,হয় পাক-আর্মি না হয় রাজাকার বানিয়ে দেন। আমরা যারা এক বয়সের তারা একদিন বিদ্রোহ করলাম; তাদের সঙ্গে আর খেলবো না। তারপর থেকে আমরা তাদের সঙ্গে আর খেলিনি।

আমরা ছোটরা খুব ভয় পেলাম যখন নভেম্বরে তুমুল শব্দ করে কিছু যুদ্ধবিমান কুষ্টিয়ার আকাশে দেখা গেল। বড়দের কাছ থেকে জানলাম ওগুলো ভারতীয় বিমান। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান খুঁজে-খুঁজে বোমাবর্ষণ করছে। বাড়ির সবাই এদিক-ওদিক দৌড়াতে শুরু করলেন। বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে হবে। বাংলাদেশের পতাকা দেখলে বিমান থেকে সেখানে বোমা পড়বে না। কে বাংলাদেশের ম্যাপ সবচেয়ে ভাল আঁকতে পারে তাকে খোঁজা শুরু হলো। বড় মামার মেজো মেয়ে নীলু আপা হলুদ কাপড়ের ওপর ম্যাপ এঁকে কেটে পতাকার লালের মধ্যে সেলাই করে দিলেন।

আমার নানা তার বাগানের সবচেয়ে লম্বা বাঁশ কেটে এনে পতাকা দোতলার ওপর উড়িয়ে দিলেন। খুব অবাক হয়ে দেখলাম পতাকা ওড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গেই সবার চেহারা থেকে ভয় দূর হয়ে গেল। বাংলাদেশ যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমার বাবা মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে এলেন।

যুদ্ধের সময় আমি অনেক কিছুই বুঝিনি। তবে এটুকু বুঝেছি যে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে। এই চিত্রগুলো নিয়েই এখনও পথ চলছি।

http://www.banglatribune.com/columns/opinion/165857/%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF

৫,৬০৫ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “এক বালকের যুদ্ধ-স্মৃতি”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    ভাইয়া, স্মৃতির পাতার লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো। আশাকরি ভবিষ্যতে আরো লেখা পড়বার সৌভাগ্য হবে।

    মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি নাই মানসপটে সত্যি কিন্তু আমাদের বৃহত্তর পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা যেমন আছেন, যুদ্ধাপরাধীও আছেন। বহুবার শোনা গল্পগুলি চোখের সামনে ভাসে ভালবাসা এবং ঘৃণায়। যুদ্ধের ডামাডোলে সরকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই যোগদান করেছিলেন কাজে। আমার নিকট স্বজন ছিলেন উচ্চপর্যায়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। আমার বাবা তাঁকে নিজে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়ে আসেন। খুলনা অফিসে পৌঁছুবার পরপরই তাঁকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে আজো।

    বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল।

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চমৎকার স্মৃতিচারণ!
    একদিন দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনের বাড়িতে থাকতেন মুর্শীদ চাচা, বাবার সহকর্মী, বাবাকে বকাবকি করছেন। কলেজ ছেড়ে চলে যেতে বলছেন। আমার বাবার ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মুর্শীদ চাচার বকুনি খেয়ে বাবা ঠিক করলেন ঝিনাইদহ থেকে পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গায় আমাদের গ্রাম কলাবাড়িতে যাবেন - এই মুর্শীদ স্যারকে আমিও চিনি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এর অধ্যক্ষ ছিলেন এবং আমার ছেলেদের শিক্ষক ছিলেন।
    নানা তাকে বাড়িতে না রেখে গ্রামের মসজিদে থাকতে বললেন। আমার মনে আছে, আমি তার জন্য খাবার পৌঁছে দিতাম মসজিদে। - কত রকমের ভয় ভীতিকে সামলে নিয়ে কত অভিনব পন্থায় তখন মানুষকে চলতে হয়েছিলো!
    বড় মামার মেজো মেয়ে নীলু আপা হলুদ কাপড়ের ওপর ম্যাপ এঁকে কেটে পতাকার লালের মধ্যে সেলাই করে দিলেন - এর নাম স্বাধীনতার উদ্দীপনা!
    খুব অবাক হয়ে দেখলাম পতাকা ওড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গেই সবার চেহারা থেকে ভয় দূর হয়ে গেল। বাংলাদেশ যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমার বাবা মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে এলেন - ডিসেম্বর মাসটা এসব সুখ স্মৃতি জাগানিয়া মাস!
    এই চিত্রগুলো নিয়েই এখনও পথ চলছি। - :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : shahinur Islam

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।