টোনাটুনি সমাচার।। ছড়ায় ছড়ায়

এইচএসসি পাশ টোনা আর ডিএমসির ছাত্রী টুনি।
প্রেম এসেই দুরমুশ পেটানো শুরু করল।
সামাজিক বিধি-নিষেধ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত সবকিছু মিলে মানুষের যে ভালো খারাপের সাধারণ মাপকাঠি তৈরী হয়, প্রেম সেই মাপকাঠিটাকেই দিল ঠুস করে ভেঙে।

ফলে প্রেমের তাড়নায় তারা দুজনে মিলে মহাসমারোহে সেসব কার্য করতে লাগল যা কিছু ছিল নিষেধ, অন্যায়, অনুচিত এবং এক কথায় যা কিছু সমাজের গ্রহনযোগ্য কাজকর্মের সীমানার বাইরে এবং চোখ রাঙানির এক্তিয়ার-ভূক্ত।

কথায় আছে অতি বাড় বেড়ো না।
একসময় সমাজ চোখ রাঙানো শুরু করে দিল।
দুজনেরই লেখাপড়া গোল্লায় গেল।
মেয়েটি তো তাও ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছিল কিন্তু ছেলেটি একদিন ঘোষনা দিল যে সে আর পড়াশোনা করবে না, সে কবি হবে এবং তার পকেট নোটবুকে সে লিখলঃ

(০১)
টোনা হবে কবি আর টুনি হবে ডাক্তার
এই থেকে শুরু হলো টোনাটুনি সমাচার।।

ঘর ছেড়ে দোয়াহীন টোনাটুনি চলল
একদিন একদিন দুই পাখী মিলল

আকাশের মিতালী দোচালার বাসা
ঘর বাঁধে টোনাটুনি ভালোবেসে খাসা

ঝগড়াটা খায় ওরা ভালবাসা পোষে
নীলনদে ঘুম দিয়ে স্বপনেতে ভাসে

ট্যুর করে খোলাকাশে ফুটো জামা ছেড়ে
সুখের সাগরে ওরা পুটি মাছ ধরে।।

টোনা মাত্র এইচএসসি পাশ। টুনি ঘ্যানঘ্যান করে, “তুমি ডিগ্রী পরীক্ষাটা অন্তত দাও”। টোনাকে বোঝায় এমনিতেই তো ওর বাসায় এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তবু যদি ডিগ্রীটা পাশ করে আইবিএ থেকে এমবিএ টা করতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই সে তার বাবা-মাকে ম্যানেজ করতে পারবে। কিন্তু টোনা কথা শোনে না। তার কথা হলো, সে কবি হবে। আর লেখাপড়া করবে না। এই সমাজের উপর তার কোন বিশ্বাস নাই। সমাজ আর রাষ্ট্র নিয়ে টোনা তার নোটবুকে লেখেঃ

(০২)
জ্ঞান না হতেই সামনে চোখের
ঝুলিয়ে দিল মূলো
”বড় হয়ে যে মানুষ হবে
ধরবে সবাই কূলো”

”মানুষ” বলতে বোঝায়টা কী
শিক্ষা ছাড়া টাকাও নাকি?
আমিই বলো কতটু বুঝি?
কখনো ভাবি সবই ফাঁকি

যাহোক তবে সংজ্ঞা মূলোর
এই সমাজের মানুষগুলোর
সেই মূলোতে তাকিয়ে বেশ
কাটছে জীবন দেয়াল-ঠেশ।।

(০৩)
খোকা ঘুমিয়ে
পাড়া জুড়িয়ে
বর্গী আসে কই?

বর্গাচাষীর
বর্গী বেশ
কেমন করে সই?

ধান পুড়িলে
পান পুড়িলে
গণতন্ত্রের কি?

আরো ক’টা দিন
পকেট ভরো
ইলেকশানটা দি!

শেষমেষ টোনার যে তথাকথিত ক্যারিয়ার জিনিষটা হচ্ছেই সেটা টোনা বোঝে কিন্তু মানতে চায় না। সে টোনার চোখে দেখে বিপুল প্রেম। এতই যেহেতু প্রেম টোনা নিশ্চয়ই একদিন না একদিন তার কথা শুনবে। এই ভেবে টুনি টোনাকে বোঝাতে থাকে, কেন তার পড়াশোনা শুরু করা দরকার। এসব নিয়ে কথা বললে টোনা মাঝে মাঝে খুব রেগে যায়। টোনা বলে, আমি তোমার সম্পদ বা সম্পত্তি নই বুঝলে? (ক’দিন আগে পড়া ”হৈমন্ত“ থেকে ঝেড়ে দেয়)। এত কন্ট্রোল আরোপ করো কেন? এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমার এত বাঁধন ভাল্লাগে না। মাঝেমাঝে তুমুল ঝগড়া হয়।

টুনি কাঁদে। টোনাকে বোঝায়। একেকদিন ঝগড়া করে টোনা লুকিয়ে থাকে। তিন-চার দিন লুকিয়ে থাকে। আর টুনি তাকে সারাদিন খুঁজে বেড়ায়। ঢাবি হল, আইবিএ হোস্টেল, মেডিকেল হল, এর ওর মেসে। যতবার টোনা লুকিয়ে পড়ে, টুনি ঠিক খুঁজে বের করে ফেলে। আবার কিছুদিন প্রেম চলে। তারপর অবধারিতভাবে টুনি আবার বলে, প্লীজ ডিগ্রীর ফরম ফিলাপটা করে ফেলো কিংবা রীমা কি বলেছে জানো বা আমার বাসা থেকে বলে দিয়েছে ব্লা ব্লা ব্লা আর আমিও ঠিক করেছি ব্লা ব্লা ব্লা। ব্যস টোনা আবার রেগে যায়। চলতে থাকে ওদের ধারাবাহিক ঝগড়া, দেখা না করা, খুঁজে বের করা, মান ভাঙানো এবং অতঃপর আবার ঝগড়া। প্রেম-ঝগড়া-প্রেম নিয়ে টোনা নোটবুকে লেখেঃ

(০৪)
বন্ধন উটকো বড়
বেশরম ঝামেলা
নিজ বেশবাসে আমি
মুক্ত খোলামেলা

বন্ধন থাকা ভালো
ঠিক সেইটুকু
নদীতে নদীর মাছ
পায় যতটুকু

বন্ধন নেই সে মাছের
বলো, আছে কোথা তার
নদীই মুক্তি তার
নদীই আধার।।

(০৫)
ঘামের গন্ধে সমরখন্দ
খোঁপার ফুলে কাশ্মীর
জায়নামাজের গন্ধ আমায়
ঐ নিয়ে যায় আজমীর।

চুলের গন্ধে অজন্তা যাই
পোষাক বলে হসপিটাল
এই কথাটি বলতে তোমায়
বললে তুমি আস্ত টাল।।

(০৬)
আমড়া কাঠে হয়না ঢেঁকি
ডুমুর গাছে ফল
স্বপ্নবাদী হয় না কভু
বস্তুবাদীর দল।

লোহা ভেঙে গড়তে পারো
লোহার হরেক জিনিষ
তামা ভেঙে লোহা পাবার
প্ল্যানটা কর ভ্যানিশ।

ফিলিপস বাতিঃ জ্যোৎস্না আলো
সঙ্গী হলো কোনটি ভালো?
সেটিই আগে বুঝো রে মন
সূর্য যখন লাল পাটাতন।

ডুমুর গাছে হয়না রে ফল
আমড়া কাঠে হয়না ঢেঁকি
বস্তুবাদীর হয় না কভু
মিষ্টি স্বপ্নবাদী।।

(০৭)
মল বাজিলে তোমার দু’পায়
রক্তে আমার ঝড়ের স্বাদ
মুখের বোলে ঘর ভেসে যায়
নৃত্য তবু দাও না বাদ

ঘর ভাসিয়ে যখন তখন
অামায় তুমি নৃত্য দেখাও
দেখতে সাধ, নাচলে আমি
ক্যামন করে সেইটে ঠেকাও!!

(০৮)
চির-শান্তি মন দোলা
তনু কান্তি হেরি ভোলা
ছায়া দিন-মান হয় রঙ্গীন
হাসি মুচকি বাজে রিনরিন
ছাওয়া ঘন জল ঐ আঁখি
ভাসে দৃষ্টি যেন পাখী

হাতছানি দেয় ভূবন-ভূলান
মন দিন-রাত হাজির-গোলাম।।

টুনি বাড়ী গেলেই টোনার টেনশন বেড়ে যায়। মূলত দুটো কারনে। একটি হলো, যদি জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়? আরেকটি হলো, কি কি বাণী যে নাজিল হবে, তার ফিরে আসার পর!! প্রতিবার টুনি বাড়ী থেকে ফিরেই বলে, সম্পর্ক শেষ, এভাবে চলতে পারে না, ব্লা ব্লা ব্লা। ফার্স্ট প্রফ দিয়ে টুনি বাড়ী গিয়েছে। তাই টোনার সময় কাটে না। ঝগড়া করার লোক নেই তাই মনটাও ভালো নেই। টোনা তাই লেখেঃ

(০৯)
দূরে গেলে রেখে যাও
ইয়া বড় ফোম
সবটুকু শুষে নেয়
জীবনের ওম্।।

(১০)
অন্তর দিয়া বানধো যারে
দুঃখ দিয়া ছোঁও
স্বপন দিয়া কিনলা যারে
মেজাজ দিয়া খাও ?

৫,২৯৬ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “টোনাটুনি সমাচার।। ছড়ায় ছড়ায়”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    সিসিবিতে সুস্বাগত, ফারুখ!

    টোনাটুনির গল্পটি বেশ লাগলো। লেখালেখি চলতে থাকুক সিসিবির পাতায়। তোমার নামটি বাংলায় লিখলে বেশ হতো। সিসিবিতে বাংলার জয়জয়কার!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফারুখ

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।