ঘটনা, নাকি দূর্ঘটনা

১.
ছোটবেলায় অন্যান্য সব পিচচি পোলাদের মত আমারও কিউরিসিটির সীমা-পরিসীমা ছিল না। বাপের পোষ্টিং তখন রাজশাহীতে। প্রতিদিন গোয়ালা এসে দুধ দিয়ে যায়, কিন্তু এই দুধ কোথায় থেকে আসে তা জানার আসীম আগ্রহ আমার। মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, গরু দুধ দেয়। তাও আমার প্রশ্ন গরু দুধ কোথায় থেকে দেয়, এবার মা বলে পেট থেকে দেয়। কিন্তু তাও পরিষ্কার হয় না আমার কাছে ব্যাপারটা। আমরা থাকতাম নিচতলাতে। আমাদের ঊপর তলায় বাবার আরেক কোর্সমেট থাকতেন, উনারা আবার গাভী পালতেন। একদিন সেই মহেন্দ্রক্ষণ এল, বারান্দায় বসে দেখলাম গাভীকে দোয়ানো হবে। এক দৌঁড়ে চলে গেলাম নিজের চোখে দেখার জন্য। আমি গাভীর পিছনে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছি আর হাঁসছি। গাভী মহাশয়ের যে ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি সেটা বুঝলাম গাভীটার লাথি খেয়ে।

শেষ দৃশ্যঃ আমি ভূপাতিত, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে আর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গলা ফাটাচ্ছি।

ইউরেকাঃ গরু শধুমাত্র পিছনের দিকে লাথি মারতে পারে, সামনে কিংবা পাশে লাথি মারতে পারে না।

২.
রাজশাহীরই ঘটনা, সবাই মিলে পিকনিকে গেলাম নাটোর। পিচ্চিপোলা-আন্ডাবাচ্ছা সবাই মহাআনন্দে স্লিপারে উঠছি আর বিভিন্ন স্টাইলে স্লিপ খাচ্ছি। আমাকেও নিজের কসরত দেখাতে হবে তা না হলে পিচ্ছি সমাজে স্ট্যাটাস(!!) থাকে না। স্লিপারে উঠার সিড়ি দিয়ে উলটা হয়ে টারজানের স্টাইলে উঠছি, হঠাৎ কে জানি পাড়া দিল হাতে। শেষ যা মনে ছিল, হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছি আর শক্ত কিসে যেন মাথাটা বাড়ি খেল। হাসপাতালে চোখ খুললাম প্রচন্ড মাথাব্যাথা নিয়ে।

ইউরেকাঃ সবাই টারজান হতে পারে না।

৩.
আমার যখন দেড় বছর বয়স তখন নাকি আমার প্রচন্ড নিউমোনিয়া হয়েছিল, বাঁচা-মরা নিয়ে
প্রশ্ন। মা বলে আমি নাকি নীল হয়ে গিয়েছিলাম। ‘নীল মানুষ’ ভাবতে ভালই লাগে। মানুষ কিভাবে নীল হয় তা আমি এখনও বুঝি নাই। এখনও অবশ্য কোন নিউমোনিয়া রোগীর দেখা পাই নাই। দেখা হলে বুঝতাম।

ইউরেকাঃ যদি নীল মানুষ হতে চাও বেশি করে নিউমোনিয়া বাধাও, যদিও নিউমোনিয়া ‘জিনিসটা’ ভাল না।

৪.
রাতের বেলা সবাই বসে টিভিতে নাটক দেখছি। আমি বাপের কোলে বসে পেন্সিলের পিছনের রাবার
একবার নাকে ঢোকাচ্ছি আর বের করছি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম পেন্সিলের পিছনে রাবার নাই, রাবার আমার নাকের ভিতরে। আর কারও নাটক দেখা হ্ল না। আমাকে নিয়ে হাসপাতালে দে ছুট। নাকের ভিতরে ফরসেপ ঢুকিয়ে নাকটা বিশাল করে ডাক্তার অতিক্ষুদ্র রাবারখানা বের করলেন।

ইউরেকাঃ মানুষের নাক ক্ষুদ্র মনে হলেও আসলে অনেক বৃহৎ এবং স্থিতিস্থাপক!!!

৫.
রাজশাহীতে প্রথম স্কুলে ভর্তি হ্লাম শিশু শ্রেণীতে। নতুন নতুন বন্ধু জুটল। ছুটাছুটি আর খেলাধুলাতেই আগ্রহ বেশি। প্যারোডি কবিতা শিখলাম। একদিন হেডমাস্টার স্যার ক্লাসের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, আমি তখন নতুন কবিতা বানাতে ব্যস্ত,
” গরম গরম রুটি,
রুটির মধ্যে পোকা;
হেডস্যার বোকা।”
আর যাই কোথায়। ক্লাসে ঢুকে আমার কান টেনে বেঞ্চে দাঁড় করালেন। বাসায় গেলাম ভয়ে ভয়ে। বাপ অফিস থেকে আসলেন, আমাকে তলব করলেন। কিছু বোঝার আগেই মাথা নিচে পা বিছানার উপর করতে বললেন।

আট বছর পরে ক্যাডেট কলেজে গিয়ে জানলাম একে ‘লং আপ’ বলে।

ইউরেকাঃ কোন শিক্ষাই বৃথা যায় না।

১,৬৯১ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “ঘটনা, নাকি দূর্ঘটনা”

মওন্তব্য করুন : মাহমুদুল আলম

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।