চোরের দশ দিন…

    দিনের শুরু

শ্রাবন্তী ভার্সিটির সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। খুশী খুশী মুখে তাকিয়ে থাকা শ্রাবন্তীর দিকে তাকিয়ে একটা ইশারা করলো নুর। অন্যরা না বুঝলেও তারা দুইজন জানে…এই ইশারা-র অর্থ হলো… “শ্রাবন্তীর সকল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া”। শ্রাবন্তীর গিফ্‌ট করা সানগ্লাসটা চোখে চাপিয়ে মটর সাইকেলটা ঘুরিয়ে রওনা দিলো ওরা।
# এই, জান্টুস, তুমি আজ আমাকে কোথায় খাওয়াবে?
-দেখি সোনা, রিজেন্সী অথবা র‍্যাডিসন ব্লু-তে খাওয়ানো যায় কি না…
# কি ব্যাপার, আজ দেখি সাহেবের ভালবাসা উথলে উঠছে? কি হয়েছে?
-আরে তেমন কিছু না…আমার লেখা বিজয় দিবসের গল্পটা অনলাইন পত্রিকা “রাইজিং নিউজ২৪”-এ প্রকাশিত হয়েছে।
# আমি জানতাম, তুমি এতো সুন্দর লেখো…তোমারটা তো প্রকাশিত হবেই!! তোমার লেখা কবিতাতেই তো আমি ডুবেছি…। মনে আছে, তুমি লিখেছিলে… “ধান থেকে চাল হয়…পাট থেকে আঁশ, তোমার চোখে দেখেছিলেম…আমার সর্বনাশ” !! কি অসাধারণ তোমার লেখা…… আচ্ছা, কি লিখেছিলে তুমি বিজয় দিবস নিয়ে??
-গল্প সোনা, পিওর দেশপ্রেমের গল্প… “বিজয়ের সকাল”।
# বলো না আমাকে পুরো গল্পটা…!!
– আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে, খেতে খেতে তুমি অনলাইনে দেখে নিও। নাহলে তো আমার ফেসবুক আইডি-তে ওটা আছেই…
# না, তুমি বলো…আমি এখনি শুনবো। তোমার নিজের মুখ থেকে শুনলে-ই আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগবে।
– আহা…আমার কি পুরোটা এখন মনে আছে না কি…ওই তো, একজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে যুদ্ধ করে তার প্রিয়াকে পাকিস্তানীদের ক্যাম্প থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে… সেটা নিয়ে…।
# ওয়াও, আমার তো এখনই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে…নিশ্চয়ই অ-সাধারণ হয়েছে…লাভ ইউ জাআআআন!!
র‍্যাব হেডকোয়ার্টারের উল্টোপার্শ্বে ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। ফালতু কাজকর্ম সব, নিশ্চয়ই টাকা খাওয়ার ধান্দা…মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো নুরের।
* দেখি ভাই, হেলমেট-টা খুলেন।
– কেনো ভাই, হেলমেট খুলতে হবে কেন?
* এমনি ভাই, বিজয়ের মাসে চোখে চোখ রেখে কথা না বললে আবার অনেক নব্য মুক্তিযোদ্ধারা মন খারাপ করেন তো, তাই আমাদের নতুন এএসপি স্যার সকল যাত্রীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বলেছেন…। আমরা ভাই হুকুমের দাস… বোঝেনই তো!!
– না, ঠিক আছে। বিজয়ের মাস মানেই তো আমাদের সবার গর্বের বিষয়, মাথা উঁচু করে চলার বিষয়।
* সারা দিনে আপনি প্রথম একটা পজিটিভ রেসপন্স করলেন ভাই। আপনার নাম?
– নূরুল্লাহ আখন্দ নুর।
* পেশা?পড়ালেখা?
– এই তো, সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ছি… “………” বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইচএসসি নটরডেম কলেজ থেকে পাশ।
# জানু, বলো না…তুমি যে লেখালেখিও করো…
* তাই না কি?
# হ্যাঁ, ওর লেখা গল্পতো অনলাইন পত্রিকা “রাইজিং নিউজ২৪”-এ প্রকাশিত হয়েছে… বিজয়ের সকাল!!
* তাই না কি? এই যে, এই লেখাটা আপু? আমরা তো খুবই আগ্রহ নিয়ে এইটা পড়ছি…সম্ভবতঃ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ছোটগল্পগুলির মধ্যে এই গল্পটি সেরা হিসাবে এবারের একুশে পুরষ্কার পেতে যাচ্ছে…!! এইটা ভাইয়ার লেখা?? ভাইয়া, আপনার ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার আর বাসার সবার বিস্তারিত যদি একটু দিতেন…মানে, কাল হোক্‌…দুইদিন পরে হোক্‌… আপনার অটোগ্রাফ তো আমাদের নিতেই হবে!!
– না, মানে, আমি সবাইকে আমার ডিটেইল্‌স দেই না…
# কি বলছো জানু, ওনারা তো পুলিশ ভাই, তা ছাড়া, তুমি তো সেলিব্রিটি হয়ে গিয়েছো…এখনই এই রকম ভাব নেয়া শুরু করে দিলে তো পরে এক সময়ে আমাকেই ভুলে যাবে… নেন ভাই, আমি দিচ্ছি “০১৭১……………”।
* থ্যাঙ্ক ইউ আপু, থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া, হ্যাভ এ নাইস ডে।
লাঞ্চ শেষে শ্রাবন্তীকে ওদের বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিল নুর।
# কি ব্যাপার জান, তুমি হঠাৎ এতো গম্ভীর? এনিথিং রঙ? তুমি কি আমার উপরে কোন কারণে মন খারাপ করেছো??
– নাহ্‌, তেমন কিছু না…মাথায় আরেকটা গল্পের প্লট এসেছে তো…সে জন্য।
# এবার কি আরও সুন্দর…আরও ফাটাফাটি কিছু লিখবে না কি?? কি নিয়ে লিখবে??
– দেখি, বিজয়ের মাস যেহেতু, বিজয় নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে…মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লেখা যায় কি না…
# প্রাউড অফ ইউ জান, আমার গুগলু মুগলু-টা। রাতে কথা হবে, বাই।
– তাড়াতাড়ি ফোন দিও…
# পারবো না। তুমি জানো না, দিদামনি না ঘুমালে আমি তোমাকে ফোন দিতে পারবো না?? উনি জানলে…বাবা/মা জানবে… আমাদের খবর আছে…
– আচ্ছা, ঠিক আছে, যখন পারো, ফোন দিও।

    দিনের শেষ?? না কি আবার শুরু???- পর্বঃ ১

রাতে খাওয়ার পরে দিদামনি-র সাথে গল্প করাটা শ্রাবন্তীর খুব ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে, যখন বাবা-মা-ভাইয়া সবাইসহ একসাথে লিভিং রুমে বসে আড্ডা দেয়া হয়…
আজ রাতে খাওয়ার সময়েই বোঝা যাচ্ছিলো…রাতে জম্পেশ একটা আড্ডা হবে। শুরুটা করলো ভাইয়া,
– জানো বাবা, একটা অসাধারণ গল্প বের হয়েছে বিজয় দিবসকে নিয়ে…আমাদের এক ভাইয়ার টাইম লাইনে পেয়েছি…এক আপু-র লেখা…অ-ক-ল্প-নী-য় রকমের সুন্দর।
= রাতুল, তুই জানিস না…তোর বাবা আলতুফালতু লেখা পড়েন না??
-জানি তো মা, সে জন্যেই বলছি…লেখাটা অস্বাভাবিক সুন্দর। দাঁড়াও, আমি তোমাদের পড়ে শোনাচ্ছি…
“গল্পের নাম, গেরিলা। লিখেছেন জেনিফার আরেফীন তিলোত্তমা”
= দাঁড়া, একটা মেয়ে লিখেছে?? নিশ্চয়ই রাবিশ টাইপের কিছু হবে…
এবার শ্রাবন্তী, দিদামনি, বাবা- সবাই মিলে মা’কে হালকা বকুনী দিলো…আগে তো গল্পটা পড়তে দাও!!!
……………………………………………………
……………………………………………………

গল্পটা শেষ করলো রাতুল। চুপিচুপি নিজের চোখের পানি মুছে দেখলো… বাবা-মা-দিদামনি কিংবা রাতুল ভাইয়া…কেউই একটুও লজ্জা পাচ্ছে না… বরং গর্বভরে চোখের পানি বুকের উপরে পড়তে দিচ্ছে…
= আই অ্যাম স্যরি রাতুল। মেয়েটা কে রে? এতো সুন্দর করে লিখেছে…আর আমি কি না বলেছিলাম… নিশ্চয়ই রাবিশ টাইপের লেখা হবে…
– ওহ্‌, জেনিফার আপু এবং ওনার হাজবেন্ড “তামুর হাসান ভাইয়া” দু’জনেই আমার এক পরিচিত বড় ভাইয়ার পারিবারিক বন্ধু……তুমি হয়তো আমার সেই ভাইয়াটাকে চিনবে…এএসপি মাসরুফ হোসেন…কয়েক বছর আগে উত্তরাতে ছিলেন…
= তুই ওদের লেখা পেলি কি করে?
– তুমি জানো না মা, আজকাল সুন্দর সুন্দর অনেকগুলি ফোরাম আছে, লেখালিখির ব্লগ আছে…। এইসব গ্রুপে অনেকেই আছে…যারা খুবই চমৎকার লিখেন। এই রকম একটা ব্লগে…আর আমার একটা বন্ধুর টাইম লাইনে শেয়ার দেয়া অবস্থায় লেখাটা পেয়েছি…
= আহ্‌, কি সুন্দর লেখা, এতো বাস্তব… মনে হয় যেন নিজে উপস্থিত থেকে লেখা…
– জানো মা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এইটা আপুর প্রথম লেখা। উনি আবার এই গল্পের শেষে লিখেও দিয়েছেন… “মুক্তিযুদ্ধের মতো বিষয় নিয়ে লেখার দুঃসাহস কখনো হয়নি।এই প্রথম। দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আশাকরি ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন!ধন্যবাদ।”
একটা অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে শোবার ঘরে ফিরলো শ্রাবন্তী। শোয়ার আগে খেয়াল হলো…আরে, নুর-ও তো একটা অসাধারণ গল্প লিখেছে… “বিজয়ের সকাল”!! একজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে যুদ্ধ করে তার প্রিয়াকে পাকিস্তানীদের ক্যাম্প থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে… সেটা নিয়ে…লেখা!!
উত্তেজনায় ঘুম কেটে যায় শ্রাবন্তীর। তাড়াতাড়ি নুর-এর ফেসবুক-এ গিয়ে লেখাটা দেখা শুরু করে…
– কি রে দাদুভাই, কি করিস্‌?
# আমার এক ফ্রেন্ড-ও বিজয় দিবস নিয়ে একটা লেখা লিখেছে…সেটা পড়বো…
– সমস্যা না থাকলে নিয়ে আয়…দুই বোন মিলে একসাথে পড়ি…
# আচ্ছা, ঠিক আছে…আসছি।
……………………………………………………
……………………………………………………

লেখাটা পড়ে চুপ করে থাকলো শ্রাবন্তী। দিদামনি-র মুখের দিকে তাকাতেও পারছিলো না…লজ্জায়, অপমানে। জেনিফার আপু-র লেখা সম্পূর্ণটা চুরি করেছে নুর…ওর নুর!!! এ-ও কি সম্ভব??? এমনকি শেষের ফুটনোট-টা পর্যন্ত একই…!!!
তারপরেও বড় মুখ করে বলে নিজের লেখা!!!
দিদা ওকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন…
– হ্যাঁ রে, এমন কি হতে পারে, তোর বন্ধু-ই আগে লিখেছে লেখাটা??
# তাই তো দিদা, এটা তো ভেবে দেখি নি!!! দাঁড়াও, দুইজনের লেখার টাইম দেখি…

……………………………………
……………………………………

মনটা ভালো করা গেলো না কিছুতেই… জেনিফার আপু-র লেখাটা ছিলো ৩০ আগষ্ট ২০১৭ তারিখে…
আর… নুর-তো বলেছেই…ওর লেখাটা গত দু’একদিন আগের…
কি যেন ভেবে এবার নুর-এর লেখাটার মন্তব্যগুলি দেখতে লাগলো শ্রাবন্তী… হায় আল্লাহ্‌, এতোজন মিলে নুরকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে…মূল গল্পের লেখিকার ক্রেডিট শেয়ার করতে বলেছে??? তারপরেও নুর এতো নির্বিকার!!!
একটু একটু করে শ্রাবন্তী যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মাঝে চলে গেল। একে একে নুর-এর পাতা থেকে জেনিফার আপু-র অন্য লেখাগুলি পড়লো…তারপর পড়লো তামুর হাসান ভাইয়া, মাসরুফ হোসেন ভাইয়াসহ আরও অনেকের লেখা… কি অসাধারণ লেখা সব!!! কেবল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে-ই নয়, অন্যান্য সবকিছু নিয়ে-ই কত চমৎকার লেখা রয়েছে!! দেখলো কত ব্লগ রয়েছে…কত লেখালেখির জায়গা…কি বৈচিত্রময় সব লেখা…অদ্ভুতুরে থেকে শুরু করে ধর্মীয়…সমাজ-সংসার থেকে শুরু করে বই পড়া-মার্শাল আর্ট শেখা…বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে নোংরামী ধরার গল্প…ফিকশন থেকে গল্পের ফিউশন…… কত কি!!! প্রায় সারাটা রাত-ই নির্ঘুম কেটে গেল ওর। সকালে দিদামনি যখন শ্রাবন্তী-র চোখের দিকে তাকালেন…বুঝলেন… তাঁর আদরের নাতনীটি আজ এক রাতেই কত ম্যাচিউর্ড হয়ে গিয়েছে…

    দিনের শেষ?? না কি আবার শুরু???- পর্বঃ ২

– কি ব্যাপার সোনা…এতো গম্ভীর কেন?
# কই না তো! তোমার লেখাটা দিলে না??আমাকে পড়ে শুনাবে না?? আজ কিছু নতুন লিখেছো না কি??
– হ্যাঁ সোনা…গতকাল রাতেও একটা গল্প লিখেছি…মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে…ওয়েল, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে…মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ব্যবহার করা একটি বন্দুক নিয়ে…
# তাই না কি? নাম কি?? গল্পটা বলো তো??
– আমার ফেসবুকের টাইম লাইনে দেখে নিও…সবকিছু কি আর স্পষ্ট মনে থাকে!! আজকে কোথায় খাবে সোনা??
# চল আজ আমরা শুধু গল্প করি…তুমি তো তোমার সম্পর্কে আমাকে বিশদ কিছুই জানালে না!!! তুমি ইঞ্জিনীয়ারিং এর কোন ইয়ারে পড়ছো?? কবে তোমার পড়া শেষ হবে?? বাবা/মা কিন্তু ইতিমধ্যেই আমার বিয়ের খোঁজ শুরু করেছেন…কি বলবো তাঁদের??
– ও আচ্ছা, এইজন্য তুমি এতো উতলা জানু…আমি আরও ভাবলাম কি না কি…
# হুঁহ্‌, তুমি তো আমাকে নিয়ে ভাবোই না…আচ্ছা বলো তো… তুমি কেমন করে এই ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে ভর্তি হলে?? এখানে তো অ-নে-ক টাকা ডোনেশন দিতে হয়…
– ব্যাপার না…আমার বাবা আছে না?? বাবার কাছে আমি কখনও কিছু চেয়ে খালি হাতে ফিরে আসিনি…
# আচ্ছা, আমাদের বিষয়ে কি তোমার বাসায় জানে? তুমি কি আমার ব্যাপারে কথা বলেছো?? তোমার বাসা কোথায়??
– আমাদের বাড়ী আসলে শেরপুর, এখন থাকি মোহাম্মদপুরে…মোহাম্মদী হাউজিং-এ। আর হ্যাঁ, তোমার ব্যাপারে আমি আমাদের বাসায় বলেছি…তোমার ছবিও দেখিয়েছি…আমার মা তো তোমাকে খুব-ই পছন্দ করেছেন…আমার ছোট বোনটাও তোমার ভীষণ ভক্ত হয়েছে…কেবল বাবা-কেই বলিনি এখনও। অবশ্য, তোমাকে তো আগেই বলেছি…বাবা কখনো আমার মতে না করবেন না।
# আমাকে নিয়ে চলো…আমি আজ তোমাদের বাসায় যাব।
– কি বলো?? আজই?? আরেক দিন যাই!!
# নাহ্‌, আজই নয়তো কোনদিনই নয়- স্পষ্ট কথা শ্রাবন্তীর।
– আচ্ছা, ঠিক আছে…
………………………………
………………………………

কলিং বেল দিতেই এক ভদ্রমহিলা সদর দরজা খুললেন।
= কি ব্যাপার নুর, কাকে সাথে নিয়ে আসলি??
– মা, আমার পরিচিত…বান্ধবী…শ্রাবন্তী- তোমাকে বলেছিলাম না??
নুর-এর মা কিছু বলার আগেই মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে এসে শ্রাবন্তীকে নিয়ে তার ঘরে নিয়ে গেল।
@ মা, আমি ওনাকে আমার ঘরে বসাচ্ছি…
# তোমার নাম কি আপু??
@ জ্বী, আমার নাম তামান্না আখন্দ দীবা।
# সুন্দর নাম তো, আমি শ্রাবন্তী।
@ আপু, তুমি কি ভাইয়ার সাথে “………” কলেজে বিবিএ পড়ো??
# নাহ্‌ তো। আমি তো “…………” ভার্সিটিতে “……”-এ অনার্স পড়ছি। আর তোমার ভাইয়া বিবিএ পড়বে কেন? ও তো “………” ভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিং “…” ইয়ারে পড়ছে!!
@ তুমি কচু জানো। আমাদের শেরপুর কলেজ থেকে বানিজ্যিক বিভাগে এইচএসসি পাশ করে ভাইয়া ভাল কোথাওই ভর্তি হতে পারে নি। তারপর বাবা বললো… “আমাদের বংশে এই প্রথম একজন এইচএসসি পাশ করেছে…ও যেখানে ভর্তি হতে চায় হবে”- সে জন্যই তো ভাইয়া “……” টাকা খরচ করে “………” কলেজে বিবিএ পড়ছে…আর মাত্র বছরখানেক পরেই পাশ করে যাবে!! জানো আপু, আমাদেরতো অনেক টাকা…কিন্তু বংশে কেউ তেমন পড়ালেখা জানতো না বলে বাবার মনে অনেক দুঃখ। ভাইয়ার বিবিএ শেষ হলে বাবা যে কি খুশী হবে!!!
# কি বলো?
@ হ্যাঁ, তাই তো ভাইয়া বাসায় ফিরে সারা দিনরাত ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে লেখাপড়া করে…অনেক গল্প/কবিতা-ও লিখেছে। বাবা বলেছে, ভাইয়ার সব লেখা বই আকারে প্রকাশ করবে…
# দীবা, তুমি তো খুব সুন্দর করে বানিয়ে বানিয়ে গল্প করতে পারো!!
@ কি, আমার কথা বিশ্বাস করছোনা?? এই দেখো, ভাইয়ার বানিজ্যিক বিভাগে এইচএসসি পাশ করার সার্টিফিকেটটি বাবা তাঁর শোবার ঘরে বাঁধিয়ে রেখেছেন- বলেই দৌড় দিয়ে একটি বাঁধাই করা সার্টিফিকেট নিয়ে এসে শ্রাবন্তীকে দেখালো।
# দীবা, এটা আমাদের সিক্রেট, কাউকে বলোনা যে আমি জানি…ঠিক আছে?
@ ও কে… নো প্রবলেম!! এই আপু, তুমি-ই কি আমার ভাবী হবে??
# দেখা যাক্‌, আল্লাহ্‌ কি করেন!!!
………………………………………………………………..
………………………………………………………………..

নুর এসে শ্রাবন্তীকে ওর ঘরে নিয়ে গেল।
# জান্টুস, তোমার নতুন লেখাটা পড়ি!!
– এখন? চলো খাই আগে…মা খাবার নিয়ে বসে আছেন!!
# এই তো…গল্পটা পড়েই চলে আসবো…প্লী-ই-জ…
– আচ্ছা ঠিক আছে, বেশী দেরী করো না কিন্তু…
# ওকে…
…………………………………………………………
…………………………………………………………

গল্পের নাম… “আমায় একটি বন্দুক দাও”
সম্পূর্ণ গল্পটা গোগ্রাসে গিললো শ্রাবন্তী…তারপর চোখে পানি নিয়েই নুরকে জিজ্ঞেস করলো…
# জান্টুস, তুমি এতো সুন্দর করে কিভাবে লিখো?? তোমার লেখা কত পরিণত…কত বিস্তারিত…মনে হচ্ছে তুমি কতদিন রাইফেল নিয়ে ট্রেনিং করেছো…সামনাসামনি লড়াই করেছো…আর, কিছু না হোক্‌ অন্ততঃ ট্রেনিং করেছো!!! আর তোমার আগের লেখাটা…উফ্‌, আমি তো এখনও ঘোরের মধ্যে আছি…মনে হচ্ছে…একজন নারীর চোখ দিয়েই তুমি সম্পূর্ণ ঘটনাটা দেখেছো…লিখেছো… লাভ ইউ জাআন!!!
– আরে নাহ্‌, এ আর এমন কি…(মনে মনে বললো…এগুলি তো কেবল শুরু…নতুন একটা সাইট পেয়েছি…দেখো না…কয়দিনের মধ্যেই আমি নতুন একটা মহাভারত নামিয়ে ফেলবো!!)
…………………………………………………………
…………………………………………………………

    দিনের শেষ

এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আসতেই শ্রাবন্তী বললো…
# জাআআন, ওই পুলিশ ভাইটার কাছে আজ আবার যাই চলো…
– কেন? কি দরকার?
# আহা, চলোই না, শুধু শুধু কথা বলো…কাল তো আমি তোমার গল্পগুলি পড়িনি…আজ পড়েছি…এইসব নিয়ে কথা বলে আসি…
– ও আচ্ছা, তাই বলো…
# এই যে পুলিশ ভাই, ভালো আছেন? আমাদেরকে চিনতে পেরেছেন?
= হ্যাঁ আপু, আপনাকে চিনেছি…আর হেলমেট খোলার পরে ওনাকেও চিনেছি…
# আপনি জানেন, উনি কে? ওনার কি পরিচয়?
= হ্যাঁ আপু, আমরা তো গতকাল থেকেই জানি…মাসরুফ হোসেন স্যার আমার ফ্রেন্ডলিষ্ট-এ আছেন…আমি স্যারের লেখা ফলো করি…আমরা সবাই-ই জানি… কিন্তু আপনি সাথে ছিলেন জন্যে কিছু বলিনি…
# আমি না থাকলে কি করতেন?
= না, মানে এক পাগলাটে স্যার…ডিফেন্সের…উনি বলেছিলেন…নিবিড়ভাবে ধন্যবাদ জানাতে…ইংরেজীতে ওটাকে TITTAH (Thanking In Treatment Through All Holes) বলে…
# এই প্রসেসে কি করবেন?
= না, মানে, ইয়ে…আমরা প্রথমে ধন্যবাদ গ্রহণকারীকে একটি রুমে নিব। তারপর তার শরীরের যতগুলি আগমন/বহির্গমন পথ রয়েছে…সবগুলি দিয়ে একত্রে তার শরীরে ধন্যবাদ প্রবেশ করাবো…চোখের জন্য আলো…কানের জন্য শব্দ মুখের জন্য খাবার…নাকের জন্য পানি…আর বাকিগুলির জন্য উপযুক্ত জিনিস… আপনি ভাববেন না…ওনাকে আমরা ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না…আপনি সাথে থাকতে তো নয়ই…
# তাহলে ভাইয়া ধরে নেন, আমি ওর সাথে নেই… নাহ্‌…আমি-ই আছি…ও-ই বরং আজ থেকে আর আমার সাথে নেই…
– কি বলছো তুমি এইসব শ্রাবন্তী?? আমি আর তোমার সাথে নেই মানে??
# কেন…, বুঝতে পারছো না?? কি করেছো তুমি?
– নাহ্‌, আমি কি করেছি? কিছুই তো করিনি!!!
…………………………………………………………………………
একরাশ থু থু সামনে ছিটিয়ে শ্রাবন্তী বলে উঠলো…
# তুমি শুধু একটা চোর-ই নও…তুমি একটা ম্যানিয়াক…লজ্জা করে না? চুরি করে অন্যের লেখা গল্প হুবহু নিজের নামে চালিয়ে দাও…হোক্‌ সেটা ছেলের লেখা কিংবা মেয়ের…হোক্‌ সেটা যুদ্ধের কিংবা দেশপ্রেমের… তুমি “বিজয়ের সকাল” গল্পটা চুরি করেছো যেটা কি না জেনিফার আপু-র লেখা “গেরিলা”… তুমি আবারও চুরি করেছো সেই আপুর-ই হাজবেন্ড তামুর হাসান ভাইয়া-র লেখা “Give Me A Gun”!!! আর আমাকে যে কবিতাগুলি শোনাতে…লিখে আনতে সেগুলির প্রকৃত কবিদের নামও আমি কাল রাতে জেনে গেছি…
আর নিজের পরিচয়…পড়ালেখা নিয়েই যে চুরি করতে পারে…তার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়!! তুমি যে নটরডেম থেকে নও…শেরপুর কলেজ থেকে ……… তুমি যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নও…বাণিজ্যিক বিভাগ হতে পাশ করা…তুমি যে সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিং-এ পড়োনা… বিবিএ-তে পড়ো…স-ব কিছু আমি জেনে গেছি…প্রতারক…ভন্ড…লম্পট…ইতর…তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই…ভাগো তুমি!!! খবরদার তুমি আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগ করবে না…তোমার ফেসবুক আইডি-র নামে আমি রিপোর্ট করবো… মিথ্যুক কোথাকার!!!
নুরকে পিছনে ফেলে এলোমেলো পদক্ষেপে একটু সামনে এগিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেল শ্রাবন্তী।
………………………………………………………
………………………………………………………

বাইক ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যাবার সময়ে ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো নুর, নূরুল্লাহ আখন্দ নুর। তারপর ভাবলো…
মেয়েটা কি বোকা…এই দেশে সবাই-তো কমবেশী চুরি করে…আমি তো সামান্য লেখা চুরি করেছি…। আবার আমার ফেসবুক আইডি-র নামে না কি রিপোর্ট করবে…ওরে পাগলা…আমার কি আর একটা ফেসবুক আইডি??? নটরডেম কলেজ, তীতুমীর কলেজ, ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজ, ছেলের নামে…মেয়ের নামে… কতগুলি ফেসবুক আইডি আছে আমার!!! সবখানেই আলাদা আলাদা তথ্য দেয়া…!!!

৫,৯৩৫ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।