রোহিঙ্গা ইস্যুঃ সংকট নাকি সম্ভাবনা?!

কক্সবাজারের ‘দর্শনীয়’ জিনিসের তালিকায় নতুন সংযোজন রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গা পল্লী। বিশেষ করে উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এই ‘জিনিস’ প্রচুর পরিমাণে মিলবে। স্যুভনির পণ্য তালিকাতেও বেশি কিছু নতুন আইটেম যোগ হয়েছে। যেমন- জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (UNHCR) ছাপ মারা কম্বল, তাঁবু, ডাল, কৌটা বা টিনজাত খাবার, এমনকি ত্রাণের তরল দুধও! শোনা গেছে রোহিঙ্গাদের অনেকেই দুধ পানে অভ্যস্ত নয়। প্রাপ্ত দুধ দিয়ে অনেককে হাত-মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে কাপড় ধুতেও (জ্বি, ঠিক পড়েছেন!) দেখা গেছে।

আসলে রোহিঙ্গাদের খুব বেশি দোষও দেয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় তারা এত বেশি সাহায্য/ত্রাণ পাচ্ছে যে সেগুলো তারা স্বল্প দামেই স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। ত্রাণের পণ্য ঘিরে একটি বিশাল চক্র রীতিমত ব্যবসা ফেঁদে বসেছে! এর বাইরে আছে নানান অপরাধমূলক এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলছে।

দেশি বিদেশি এনজিও-রাও দারুণ খুশি। মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের অনুদান থেকে খামচি মেরে কিছু রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিয়ে বাকি টাকা হালাল করে নেয়া যাচ্ছে। দেশ-বিদেশের পত্রিকায় ছবি ছাপা হচ্ছে, আর্টিকেল লেখা হচ্ছে। নাম হচ্ছে, যশ হচ্ছে। এসব দেখে নতুন নতুন আরও অনুদানের আগ্রহ, অঙ্গীকার পাওয়া যাচ্ছে…খুশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও!

সংবাদ কর্মীদেরও ঈদ! টপিক হিসেবে এমনিতেই দারিদ্র সবচেয়ে ভাল বিকোয়, তার সাথে যুক্ত হয়েছে মৃত্যু, গণহত্যা, রোগ-বালাই, শরণার্থী, অস্তিত্বহীনতার সংকটসহ নানা রোমান্টিক টপিক! আগামী কয়েক বছরে রোহিঙ্গা ইস্যু কাভার করে কত সাংবাদিক যে সুপারস্টার হয়ে যাবেন, তার ইয়ত্তা নেই…দুই একটা পুলিৎজারও দেখা যেতে পারে!

আনন্দে আছে সরকারও! প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি সাহায্যের আসার পাশাপাশি ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার রক্ষায় দারুণ একটি ভাবমূর্তিও তৈরি হয়েছে। খালি পয়েন্ট আর পয়েন্ট। অচিরেই আমাদের দেশে দুই-একটা নোবেল প্রাইজ চলে আসাও বিচিত্র কিছু নয়।

সুন্দরে একটু খুঁতের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব ও দেশহীনতার মনঃকষ্ট। এদিকে পাহাড়-টিলা কেটে, যত্রতত্র রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে তোলার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বয়ে আনা এইডস, পোলিও, টাইফয়েড, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ-বালাই শুধু কক্সবাজারই নয়, সারাদেশের মানুষের জন্য চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বলতে চাইলে অপরাধমূলক এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড, ইয়াবা বা অন্যান্য ড্রাগস বাণিজ্যের কথাও চলে আসে…

তবে, সব মিলিয়ে বলা যায় রোহিঙ্গা ইস্যু আসলে কোন সংকট নয়, বরং সম্ভাবনার নাম। মুদ্রার অপর পিঠের মত নেতিবাচক ইস্যুগুলো একটু উপেক্ষা করতে পারলেই এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে উঠবে!

৪ টি মন্তব্য : “রোহিঙ্গা ইস্যুঃ সংকট নাকি সম্ভাবনা?!”

  1. কাজী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (১৯৮৫-১৯৯১)

    আশা করি মানবতাবোধ ও মানবিকতার প্রকৃত উন্মেষ ঘটবে আমাদের সকলের মন ও মননে। পৃথিবী হোক সকল মানুষের জন্য। মানুষের কল্যানের জন্য্য। তোমার সময়োপযোগী লিখনীর মাধ্যমে জাগ্রত হোক আমাদের সুস্থ বিবেক। দূর হোক সকল অমঙ্গল আর অমানবিকতার।

    জবাব দিন
  2. তারেক (৯৪ - ০০)

    এখানকার একজন মাসখানেক রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে অনেক ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন। সেগুলো নিয়ে প্রদর্শনী হলো। উনি সেখানকার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করলেন, শুধু তো কষ্ট আর অভাবের কথাই শুনলাম। ত্রাণের যে এত প্রাচুর্য এরকম কিছু শুনিনি।
    সত্যিকারের চিত্র আসলে পাওয়া মুশকিল। 🙁


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।