ছুটি, ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার আগে বাসার বাইরে ভাল করে বলতে গেলে আম্মুকে ছেড়ে কখনোই থাকিনি। একবার মনে আছে নানাবাড়িতে আমাকে এক খালার কাছে রেখে আম্মু আরেক খালার বাড়ি গিয়েছিল ২ দিনের জন্য। সেই দুদিন নিজেকে খুবই বেচারা বেচারা মনে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই আমি মা ন্যাওটা। সবসময় মায়ের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করি। তাই ক্যাডেট কলেজে গিয়ে আমার প্রথম রাত থেকেই দিন গুনা শুরু হয়েছিল। প্রতিদিন ক্লাসে স্যারদের লেকচার শুনতে শুনতে আমি আমার খাতায় ক্যালেন্ডার বানিয়ে ফেলতাম। তারপর কাটাকাটি। আর কতদিন আছে। ক্যাডেটদের মধ্যে আমাদের থেকে খারাপ ভাবে কেউ শুরু করে নি। সবাই ৭ দিনের জন্য কলেজে যায় তারপর ছুটি কাটিয়ে এসে কলেজ লাইফ শুরু করে। প্রথম ৭ দিন হচ্ছে পিকনিক টাইপ। কিন্তু আমাদের সেই পিকনিক ছিলনা। ৯৬ এর সেই অসহযোগ আন্দোলন এর কারণে কি যেন হল আমাদের সেই ৭ দিনের পিকনিক নাই হয়ে গেল এবং আমরা প্রথম দিন গিয়েই জানতে পারলাম আমাদের ৮৯ দিনের টার্ম কাটাতে হবে। অনেক জুনিয়রদের ধারণাই নাই টার্ম ৬০ দিনের বেশি কিভাবে হয়। ৮৯ দিন যে আসলে কত ঘন্টা তখনই টের পেয়েছিলাম। আমার খাতায় যে কত ক্যালেন্ডার বানানো হল। আমার মনে আছে যেদিন আর ২৯ দিন বাকি ছিল বাড়ি যাবার আমাদের ক্লাস সেভেনের সে কি আনন্দ। আর এক মাস ও নাই। আমার আজও চোখে ভাসে সেদিন আমি এমদাদ নামের এক বন্ধুকে কলেজ মসজিদে আঙ্গুল দিয়ে বুঝাচ্ছি আর ২৯ দিন আছে। কথা তো বলা যাবেনা।
সেই ক্যালেন্ডার আকা আমার ক্লাস ১২ এ উঠেও বন্ধ হয়নি। তখন অবশ্য এত খারাপ লাগা থেকে বানাতাম তা না। কেমন যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রতি খাতাই কেমনে যেন রাফ খাতা হয়ে যেত। দুটা জিনিসে ভরপুর। এক হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম আর এই ক্যালেন্ডার। নিজেই বাংলাদেশ দলের নির্বাচক হয়ে টিম বানাতাম। তারপর পেপার দেখে ভাবতাম কেন আমার পছন্দের ওই প্লেয়ারকে নিল না। মাঝে মাঝে সেই টিম নিয়ে পাকিস্তানের সাথে খেলতাম। পাকিস্তান কেন খেলতাম কারন বলতে লজ্জাই লাগে আমি তখন পাকিস্তান সাপোর্ট করতাম।
যা বলছিলাম কলেজ থেকে বের হয়ে ভাবলাম যাক আর কখনো ক্যালেন্ডার বানিয়ে বাড়ি যাওয়ার দিন গুনতে হবে না। তখন অবশ্য ভার্সিটিতে এসে আমার ক্রিকেট টিম বানানোও বন্ধ হয়ে গেল। ভার্সিটিতে ক্লাস ভাল না লাগলে বাং মেরে দেওয়া যায় এই জন্যই মনে হয়। কিন্তু বেশিদিন লাগল না। বিদেশে চলে আসলাম এক বছর পরেই। এক বছর পর থেকেই আবার শুরু হল আমার ক্যালেন্ডার বানানো। এখনো ক্লাসে বসে বসে ক্যালেন্ডার বানাই। আগে গুনতাম মাস চিন্তা করতাম আর কতদিন আছে যাবার আর এখন গুনি বছর আর কত মাস আছে দেশে যাওয়ার। কালকের বানানো ক্যালেন্ডার এ দেখলাম আমার দেশে যেতে আরো এক মাস ৫ দিন আছে। তার মধ্যে শনি রবি যদি বাদ দেই তাহলে আর বাকি থাকে ২৫ দিন ( হাহাহাহা, এইটাও ক্যাডেট কলেজের হিসাব। দিন কমানোর জন্য শুক্রবার আর বন্ধের দিন বাদ দিয়ে দিতাম, যদিও এখন সব দিনই সমান আগে এইটা করতাম কারণ শুক্রবার দিন তো প্রেশার যেত না। এখন সবদিনই সমান প্রেশার কিংবা সমান রিলাক্স তাও অভ্যাসটা যায়নি )। আরেকটা জিনিস দেখে বুঝতে পারলাম আমারও বয়স কম হল না। সেই ক্যাডেট কলেজের দিন আমার বানানো টিমে বুলবুল ছিল ক্যাপ্টেন আর এখন বুলবুলকে কোচ এর জায়গায় লিখি (অতি কল্পনা বাংলাদেশ দলে নিজেদেশীয় কোচ এর শখ আমার )।
সবাইকে জানানোর জন্য এই পোস্ট আমি ইনশাআল্লাহ আগামী ১৬ আগষ্ট রাতে বাংলাদেশে আসব। যদিও এখনো ৩৫ দিন(শনি রবি বাদ দিলে ২৫ দিন ) বাকি। আমাদের একটা গেট-টুগেদার হবার কথা ছিল। সেটা কতদুর হল জানাবে কি কেউ?

১১ টি মন্তব্য : “ছুটি, ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দল”

মওন্তব্য করুন : কনক

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।