জীবনের জার্নাল – ১১

প্রথম “প্রিন্সিপালস ইন্সপেকশন”। নামটা সবার জন্য “প্রিন্সিপালস ইন্সপেকশন” হলেও, আসলে প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপাল আর এডজুট্যান্ট, এই তিনজন মিলে ভাগাভাগি করে তিন হাউসে ইন্সপেকশনে যেতেন। শুক্রবারে কলেজে এসে রোববারেই এই কঠোর “প্রিন্সিপালস ইন্সপেকশন”এর সম্মুখীন হলাম এমসিসির কোলে আসা আমরা এই ৫৬ জন সদ্যজাত শিশু। অনেকের অনেক রকম পরামর্শ শুনে মাঝে মাঝে আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। একদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম যে কাপড় চোপড়, জুতো স্যান্ডেল, বই পত্র সবই নতুন। ধোয়াধুয়ির বালাই ছিলনা। প্রথম ইন্সপেকশন এর দিন প্রিন্সিপাল কর্ণেল আনসারী আমাদের হাউসেই এলেন। সাথে হাউস মাস্টার, হাউস টিউটর এবং হাউসের জন্য নির্দিষ্ট এনসিও। বাকী অন্য দুই হাউসে গেলেন একটাতে ভাইস-প্রিন্সিপাল, অপরটাতে এডজুট্যান্ট স্যার। আমাদের রুম ক্যাপ্টেন এ্যটেনশন করানোর পর প্রিন্সিপাল ‘স্ট্যান্ড এ্যাট ইজ’ করালেন। বললেন, কিভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আমার সামনে এসে বললেন, “ইওর সুজ শুড শাইন সো মাচ দ্যাট ইউ ক্যান সি ইওর ফেস অন ইট। আমি বললাম, ইয়েস স্যার! তিনি মাথা নেড়ে আস্তে আস্তে নিজ হাতের তালুতে ব্যাটনটা দিয়ে মৃদু কশাঘাত করতে করতে চলে গেলেন। যাবার সময় রুম ক্যাপ্টেন আবার ‘এ্যটেনশন’এর হাঁক ছুঁড়লেন, আমরা সদর্পে বুক ফুলিয়ে হিল মারলাম। নিরাপদ দূরত্বে চলে যাবার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

পরে শুনি, প্রিন্সিপাল পাশের রুমে গিয়ে আমার এক সতীর্থকে বুঝিয়েছিলেন, কী করে ময়লা ক্যানভাস সুজ (পিটি সুজ) পরিস্কার করতে হবে। তিনি বলেছিলেন, “First clean your shoe with water, then apply soap and wash it, then apply white liquid”। এটা বলার পর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সে বুঝেছে কিনা। সে ইয়েস স্যার বলাতে কী বুঝেছে তা বলতে বললেন। সে পড়ে গেল মহা ফাঁপড়ে। বুঝেছে তো ঠিকই, তবে বোঝাবে কি করে? চক্ষু ছানাবড়া করে এদিক সেদিক তাকিয়ে ঢোক গিলতে গিলতে কোন রকমে বলতে পেরেছিলো “ওয়াস-ওয়াটার-সাবুন-ক্লীন”! উল্লেখ্য যে সে ‘শ’ কে ‘স’ বলতো, তাই ওয়াশ কে ওয়াস। তবে প্রিন্সিপাল তার এই সরল প্রচেষ্টায় খুশী হয়েই মৃদু হেসে তার পাশের রুমে চলে গিয়েছিলেন। অবশ্য ঐ দিন থেকেই ”ওয়াস-ওয়াটার-সাবুন-ক্লীন” কথাগুলো পরিচিতি চিহ্ন হিসেবে বন্ধুর কপালে স্থায়ীভাবে আঁকা হয়ে যায়। আমাদের এই যে ইংরেজী বলা নিয়ে এত প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, এসব নিয়ে যারা তখন ইংরেজীতে কথা বলতে পারতো, তারা ভীষণ কৌতুক বোধ করতো। আমাদের ৫৬ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জনের মত এসেছিলো ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল থেকে, আর তাদের বেশীরভাগই সেন্ট গ্রেগরী’জ হাই স্কুল থেকে। দুইজন বোধহয় ছিলো উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে। ওদের মুখে যখন ইংরেজীর খৈ ফুটতো, আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম, আর এ ব্যাপারে নিজের দৈন্যের কথা ভেবে কিছুটা লজ্জিত বোধ করতাম।

তবে আমাদের এই অস্বস্তির কথাটুকু আমাদের বাঙলা শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল আমিন স্যার বেশ সহৃদয়তার সাথে অনুধাবন করতেন। তিনি সব সময় আমাদেরকে অভয় দিয়ে বলতেন, খুব দ্রুতই আমরা আমাদের এই অক্ষমতাকে কাটিয়ে উঠতে পারবো, এমনকি ওদেরকে অতিক্রম করেও যেতে পারবো। তিনি বলতেন, উপরের ক্লাসে উঠলে বাংলা মিডিয়ামের ছেলেরাই ইংরেজী মিডিয়ামে পড়া ছেলেদের চেয়ে ইংরেজীতে ভালো করে। তাঁর কথা শুনে আমি আশ্বস্ত বোধ করতাম। তবে শুধু ইংরেজীতেই নয়, বাংলা মিডিয়াম থেকে আগত বন্ধুরা কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছিলো। ১৯৭৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মানবিক ও বিজ্ঞান, উভয় বিভাগে প্রথম স্থানটি অর্জন করেছিলো মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজের ছাত্ররা। তারা উভয়ে বাংলা মিডিয়াম থেকে আগত ছিলো এবং উভয়েই ঢাকার বাইরে মফস্বল শহর থেকে এসেছিলো। পরবর্তীতে তারা উভয়ে অর্থনীতিতে অধ্যয়ন করেছিলো। বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ডঃ নজরুল ইসলাম (কলেজ ক্যাপ্টেন ছিলো) কিছুদিন হার্ভার্ডেও শিক্ষকতা করেছিলো। বর্তমানে সে জাতিসংঘে কর্মরত। আর মানবিক বিভাগের প্রথম ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান তো আজকাল আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই তাকে টেলিভিশনে দেখা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পলিটিকো-ইকনমিক ইস্যুগুলোর উপর বক্তব্য রাখার নিমিত্তে।

এমসিসিতে এসে প্রথম যে ইংরেজী শব্দ শুনে চমকিত হই, তা হলো ফর্ম। চিরচেনা ‘ক্লাস’ শব্দটি হঠাৎ করেই ‘ফর্ম’ এ পরিণত হয়ে গেলো। ক্লাস টীচার হয়ে গেলেন ‘ফর্ম মাস্টার’। প্রথম দিনেই আমাদের ফর্ম মাস্টার জানিয়ে দিলেন যে দিনের পড়া দিনেই শেষ করে রাখতে হবে, কোন কিছুই পরের দিনের জন্য রাখা যাবেনা। প্রতি দু’সপ্তাহ পর পর আচমকা পরীক্ষা নেয়া হবে, যেটার নাম ফোর্টনাইটলি টেস্ট। এটা শুনে আমার ভালোই লাগলো, ছোট ছোট সিলেবাসের উপর ছোট ছোট পরীক্ষা হওয়াই ভালো। বইপত্র হাতে পাওয়ার পর দেখলাম, কেবলমাত্র বাংলা ছাড়া বাদবাকী সব বইই ইংরেজীতে লেখা। পৃষ্ঠা উল্টে পাল্টে দেখলাম, ততটা কঠিন মনে হলোনা, প্রথমে যতটা ভয় পেয়েছিলাম। তবে ইংরেজী শেখার জন্য সবচেয়ে বেশী ভালোবেসে ফেললাম একটা বইকে, যেটা কোন ইংরেজী সাহিত্যের বই ছিলোনা, কোন ইতিহাস ভূগোলেরও না, সেটা ছিল ক্লাস সেভেনের জ্যামিতি বই, যার লেখক ছিলেন যৌথভাবে Hall & Stevens। একসময়ে বাংলা মিডিয়ামে যাদবের পাটিগণিত যেমন নামকরা বই ছিলো, ইংরেজী মিডিয়ামে Hall & Stevens এর জিওমেট্রীও তেমনি নামকরা বই ছিলো। বইটার ইংরেজ়ী ভাষার মাধুর্যের কারণেই আমি প্রথম পাক্ষিক পরীক্ষার সিলেবাসে শুধু প্রথম চ্যাপ্টারটি থাকা সত্ত্বেও পরপর তিনটি চ্যাপ্টার অতি আগ্রহ নিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম। কোণ ও বাহুভেদে ত্রিভুজ কত প্রকার এবং তাদের সংজ্ঞা বাংলা স্কুলে পড়ে এসেছিলাম। ইংরেজি বই এ দেখলাম সংজ্ঞা ও উদাহরণগুলো খুব চমৎকার করে লেখা। মাত্র কয়েকবার পড়েই সংজ্ঞা গুলো একেবারে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো।

নির্দিষ্ট দিনে জীবনে প্রথম ইংরেজীতে অঙ্ক পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষাটা দিয়ে খুব তৃপ্ত বোধ করলাম, যতটা না পরীক্ষা ভালো হবার কারণে, তার চেয়ে বেশী ইংরেজী ভীতি দূর হবার কারণে। তারপর বিভিন্ন দিনে একে একে অন্য বিষয়ের উপরেও পরীক্ষা দিলাম। কোনটাকেই ততটা কঠিন মনে হলোনা, প্রায় সবগুলো পরীক্ষাই ভালো দিলাম। আর বাংলা পরীক্ষাটা ছিলো জলবৎ তরলং। কিন্তু ওটা দিতে গিয়েই আমাদের ইংরেজী মিডিয়াম থেকে আগত বন্ধুদের নাভিশ্বাস উঠেছিলো। একদিন বিকেলে গেমস পিরিয়ড থেকে ফিরে গোসলের জন্য লাইন দিলাম। বাথরুম থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম, সিনিয়র ক্লাসের কয়েকজন ভাই বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে কাকে যেন জিজ্ঞেস করছে, “হু ইজ ক্যাডেট খায়রুল আহসান”? কে একজন বললো, “হি ইজ ইন দ্য বাথরুম”। আমি ভয় পেয়ে একটা দরজার আড়ালে লুকোলাম। বুঝলাম, কোথাও কোন ভুল করে বসেছি, তাই সিনিয়র ভাইএরা খুঁজছেন শাস্তি দেবার জন্য বা সংশোধন করার জন্য। ধীরে সুস্থে গোসল সেরে বারান্দায় এসে দেখি, তাদের দুই একজন তখনো রুমের সামেনে দাঁড়িয়ে। আমি গোটো সোটো হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে তাদেরকে কোনমতে অতিক্রম করতে চাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন হাঁক দিলেন, কাম হীয়ার! আর ইউ খায়রুল আহসান? আমার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছিল না। শুধু কোনমতে মাথাটা নাড়লাম। যিনি এই হাঁকটা দিয়েছিলেন, তিনি কোন হাউস ক্যাপ্টেন বা প্রিফেক্ট ছিলেন না। তবে তাঁকে শুধু তাঁর ক্লাসের সহপাঠীরাই নয়, তার উপরের ক্লাসের ভাইএরাও মান্য করতো। কি কারণে জানিনা, তখন থেকেই তার সতীর্থরা তার নামের আগে “কর্ণেল” পদবী যোগ করে সম্বোধন করতেন। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান না করলেও বাংলাদেশ সরকারের একজন জাঁদরেল সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সেই তিনিই আমার দিকে তার হাত প্রসারিত করে বললেন, “কংগ্রাচুলেশনস! ইউ হ্যাভ গট দ্য হাইয়েস্ট মার্ক্স ইন ম্যাথস ইন ইওর সেকশন”। আমি নিজের কান ও চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

তখনকার দিনের নিয়মই ছিল, ক্লাস সেভেনে এসেই প্রথম প্রথম যারা পরীক্ষায় ভালো করতো, সিনিয়র ভাইএরা টীচারদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে তাদেরকে সেই সুসংবাদটা আগেই দিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন। অপর সেকশনে হাইয়েস্ট মার্কস পেয়েছিলো ইংরেজী মিডিয়ামের আবদুল্লাহ। তাকেও একইভাবে অভিনন্দন জানানো হয়েছিলো। পরের দিন ক্লাসে গিয়েও প্রথমেই ফর্ম মাস্টার এর প্রশ্ন, “হু ইজ ক্যাডেট খায়রুল আহসান”? তার হাতে তখন আমাদের পরীক্ষার খাতার একটা বান্ডিল ধরা। তিনি সেটা মেলে ধরে প্রথম খাতাটা আমার হাতে দিয়ে অভিনন্দন জানালেন। আমি পেয়েছিলাম ৪৮/৫০। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ইংরেজী isosceles triangle লিখতে বানানে c অক্ষরটা বাদ পড়ে গিয়েছিলো বলে টীচার দু’নম্বর কেটে রেখেছিলেন। এই ত্রিভুজটার নামের বানান বাংলা ও ইংরেজী, উভয় ভাষাতেই বেশ কঠিন (সমদ্বিবাহু এবং isosceles)। অপর সেকশনের আবদুল্লাহ’র ঐ ভুলটা হয় নাই। সে তাই ৫০ এ পুরো ৫০ই পেয়েছিলো। সে সেন্ট গ্রেগরী’জ থেকে এসেছিলো। টীচার আমাকে প্রশ্ন করলেন, “ইউ হ্যাভ কাম ফ্রম হুইচ স্কুল”? আমি জানালাম, “সেন্ট্রাল গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল স্যার”। তখনকার নামী দামী সেন্ট গ্রেগরী’জ হাই স্কুলের পাশে আমার জীবনের প্রথম স্কুলের নামটাকে সম্মানের আসনে বসাতে পেরেছিলাম বলে নিজেকে সেদিন খুব ধন্য মনে হয়েছিলো।

চলবে…

ঢাকা
১৫ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

৪,১১৯ বার দেখা হয়েছে

৩৯ টি মন্তব্য : “জীবনের জার্নাল – ১১”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:

    কী যে ভাল লাগলো পড়তে, ভাইয়া! পড়তে পড়তে মুগ্ধতায় ডুবে যাচ্ছিলাম বললেও কম বলা হবে। অসাধারণ!

    ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute::

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আপনি জানেন ভালো করেই ভাইয়া সিরিজটা ফলো করি।
    নিজেদের সময়টা মনে পড়ে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. নাঈয়াদ (৯৮-০৪)

    সালাম ভাইয়া, এতকাল পরেও যে আপনি ছোট ছোট ঘটনা গুলো এত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন দেখে সত্যি অবাক হতে হয়। আপনার এই লিখাটিতে আমার বড় মামা ডঃ নজরুল ইসলাম এর নাম দেখে খুব ভালো লাগলো 🙂

    জবাব দিন
  4. প্রথম প্রিন্সিপালস ইন্সপেকশনের কথা মনে পড়ে গেল। ইন্সপকেশনের আগে পুরা রুম পরিষ্কার করতে হয়েছিল। আমার জীবনে সেই প্রথম ঘর ঝাড়ু দেওয়া। আমি শার্ট কিভাবে ভাজ করতে হয় তাও জানতাম না, রুমমেট সাইদ ভাই দেখিয়ে দেন।

    পড়ে খুব ভাল লাগল খায়রুল আহসান ভাই। আপনি আরও নিয়মিত, বড় বড় জার্নাল লিখুন।
    CCR/99-05

    জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সালাম ভাইয়া। খুব মনযোগ দিয়ে আপনার এই জর্নালটা পড়লাম। এত আঘের স্মৃতি এত নিখুঁত এবং জীবন্ত চিত্রায়ন অনেক ভালো লাগলো। আগে সিসিবিতে সারোয়ার মুজিব এডিসন ভাই পোস্ট দিতেন। উনার লেভেল অফ ডিটেইলস যেমনটা দেখেছিলাম তেমনই যেন লাগলো।

    একই কলেজের পুরনো দিনের গল্প শুনতে দারুণ লাগে। আমাদের মির্জাপুরের ফিজিক্সের ডেমোনস্ট্রেটর মুনীর চৌধুরী স্যার আমাদেরেকে গোড়ার এমসিসির গল্প বলতেন। সেই গল্পগুলো আরো বড় পরিসরে চলে এল।

    হাউস ইনসপেকশন জিনিসটা বড়ই ঝামেলার লাগত কলেজে। যদিও সেটার শিক্ষাটাই মনে হয় জীবনের চলার পথে সবচেয়ে বেশি লাগছে।

    আপনার আগের লেখাগুলোও পড়ব সময় করে।

    অনেক ভালো থাকুন ভাইয়া।, শুভকামনা।

    জবাব দিন
  6. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    বাঙলা শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল আমিন স্যার আমার প্রথম ভাইস-প্রিন্সিপাল ছিলেন। বাংলার শিক্ষক হয়েও চমৎকার ইংরেজী বলতেন। আর যে কোন কাজে ক্যাডেটদের উৎসাহ দিয়ে মনোবল বাড়িয়ে তোলায় স্যারের জুড়ি মেলা ভার ছিলো।
    ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়, আমরা দুজনেই এক্স-ক্যাডেট আবার দুজনই রাশিয়ার গ্র‍্যাজুয়েট, এই হিসাবে মিল আছে আমাদের।
    জ্বী ভাইয়া জ্যামিতির বই ভাষা শিক্ষায় আসলেই সহায়তা করে। আমার অভিজ্ঞতা উল্টোটা। আমাদের সময় পড়ালেখা বাংলা মিডিয়ামে ছিলো। অনেকেই আফসোস করে বলতো, 'বাংলায় বিজ্ঞান পড়া হয়না, শুধু শুধু এই চেষ্টা'। আমরা একটা সাবজেক্ট পড়েছিলাম জ্যামিতিক ও কারিগরী অংকন। ঝকঝকে বাংলায় লেখা পুরো বইটি বুঝিয়ে দিয়েছিলো যে, 'বাংলা বিজ্ঞানের ভাষা হতে পারে'।

    খুব সুন্দর লিখেছেন খায়রুল ভাই।

    জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ, রমিত।
    সে সময়ে আমার আরো বেশ কিছু বন্ধু সরকারী বৃত্তি নিয়ে মস্কো গিয়েছিলো, এদের মধ্যেও কেউ কেউ তোমার পরিচিত হয়ে থাকতে পারে। যেমন, আমাদের বিজ্ঞানের ফার্স্ট বয় ডঃ নজরুল ইসলাম, যিনি ১৯৭৪ সালে (৭৩ সালের পরীক্ষা) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। খন্দকার আলী এরশাদ, বর্তমানে জাপানী কোম্পানী সুমিটমোতে উচ্চ পদবীতে চাকুরীরত আছেন। হামিদুল ইসলাম, রেফ্রিজারেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ অভিজ্ঞ। হাসান তওফিক চৌধুরী, যিনি প্রাক্তন সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীর ছোটভাই, নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন খ্যাতনামা অভিবাসন আইনজীবি, বর্তমানে নিউজীল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসরত। ডঃ সারোয়ার হান্নান ওরফে সেলিম হান্নান, বর্তমানে আমেরিকার হিউস্টনে বসবাসরত এবং একটি নামকরা পেট্রোলিয়াম সংস্থায় কর্মরত।

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সিসিবিতে এই প্রথম আমার কোন লেখা ৬০০ বারের বেশী ক্লিক পেলো। নগন্য মাইলফলক, কিন্তু আমাকে উৎসাহিত করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট! তাই ধন্যবাদ সকলকে যারা এটি পড়েছেন এবং পড়ে মন্তব্য করেছেন।

    জবাব দিন
  9. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    খায়রুল ভাই,
    সত্যি করে বলুন তো-চুপ চুপ করে টাইম মেশিনে করে ঐ সময়টা ঘুরে আসছেন না তো??
    আমি বছর পাঁচেক আগের জীবনের সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর মার্কস বলতে পারব না, আর আপনি কি না কলেজের সার্ভে টেস্টের মার্কস এখনো মনে করতে পারছেন!! (আমাদের কলেজে প্রথম পরীক্ষাকে সার্ভে টেস্ট, বাংলায় মান যাচাই পরীক্ষা বলত। আপনাদের সময়ে কি নাম ছিল?)

    কিছুদিন গ্যাপ পড়ে গিয়েছিল, আবার আপটুডেট হয়ে নিচ্ছি... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  10. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    আমাদের সময় কোন সার্ভে টেস্ট বা মান যাচাই পরীক্ষা ছিল না। সরাসরি পাক্ষিক পরীক্ষা বা ফোর্টনাইটলী টেস্ট হতো। চারটি ২৫ নম্বরের ফোর্টনাইটলী টেস্টের নম্বর যোগ হতো টার্ম ফাইনালের ১০০ নম্বরের পরীক্ষার সাথে। পরে সবগুলো মিলিয়ে গড় করে টার্ম এন্ডিং রিপোর্ট লেখা হতো। মাঝে মাঝে এসব পরীক্ষা বিনা নোটিশে নেয়া হতো বলে এগুলোকে "সারপ্রাইজ টেস্ট"ও বলা হতো।
    ৪৮ বছরের পুরনো এ পরীক্ষার কথা উজ্জ্বলভাবে মনে থাকার কিছু কারণ আছে। আমাদের সময় ক্যাডেট কলেজগুলো, এমনকি মফস্বল শহরের অনেক কলেজেও ইংরেজী সিলেবাসে পাঠ দেয়া হতো। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনা করে এমসিসিতে গিয়ে হঠাৎ করে ইংরেজী সিলেবাস শুরু হয়ে গেলো, তখন আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আমার প্রাক্তন স্কুলে ইংরেজীতে ভালো বলে আমার একটা পরিচিতি ছিলো, তথাপি এমসিসিতে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ইংরেজীর, বিশেষ করে কথোপকথনের ব্যাপারে আমি কতটা দূর্বল ছিলাম। ওরকম একটা পরিস্থিতিতে আমার মত একটা গোবেচারা মানুষ প্রথম পরীক্ষাতেই ফর্মের ২৮ জন ছাত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে গেলো, আমার অকিঞ্চিৎকর জীবনে ওটা একটা উল্লেখযোগ্য মাইলফলকই ছিলো বটে। ঐ রেজাল্টটা আমাকে রাতারাতি আমার সতীর্থদের কাছে একটা সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলো। সে কারণেই হয়তো ঘটনাটা এতটা ভিভিডলী মনে আছে। ইংরেজী মিডিয়ামের সেন্ট গ্রেগরী'জ হাই স্কুল থেকে আগত আমার বিশিষ্ট বন্ধু সালেহ আহমেদ তানভীরও সে সময় একই ফর্মে ছিলেন। তিনি অঙ্কে এতটাই পন্ডিত ছিলেন যে নবম দশম শ্রেণীতে উঠার পর অনেক সময়ই দেখতাম তিনি শিক্ষকদের ভুল ধরিয়ে দিতেন, শিক্ষকরাও কোথাও আটকে গেলে তার সাহায্য নিতেন। শুনেছি, আমরা কলেজ থেকে চলে আসার বহুদিন পর পর্যন্ত শিক্ষকগণ অন্যান্য ক্লাসে তার মেধা নিয়ে গর্ব করতেন। তিনি বর্তমানে আমেরিকার ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অঙ্ক শাস্ত্রের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক। সম্প্রতি তিনি এবং তার একজন পিএইচডি'র ছাত্র মিলে অঙ্ক শাস্ত্রের ২৫০ বছরের একটি পুরাতন অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন। তার পিতা একসময় ওয়াপদা'র চেয়ারম্যান ছিলেন। পিতার ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে তিনি ক্যালটেক থেকে খুব ভাল ফলাফল নিয়ে ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করেছিলেন, কিন্তু সে পেশায় তিনি যোগ দেন নি। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজী থেকে তিনি এপ্লায়েড ম্যাথেম্যাটিক্সে পিএইচডি করেছেন। তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডনেও অধ্যাপনা করেছেন।

    জবাব দিন
  11. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এ তো কেবলই একজন খায়রুল ভাই-এর জীবনের জার্নাল না, সাথে আরও কত কত মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে, কত কত পুরনো স্মৃতি জাগরুক হচ্ছে এর মাধ্যমে, সেটা আসলেই একটা বিরল সৌভাগ্য।
    আবদুল্লাহ আল আমীন স্যারকে আমরাও ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে পেয়েছিলাম ক্লাস ইলেভেনে থাকা কালে।
    উনি সপরিবারে আমাদের সাথে এক্সকারশনে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে।
    সেসময়কার অসাধারন কিছু স্মৃতি আছে ওনার সাথে।
    বিএমএ-তে থাকার সময়টাতে উনি এফসিসিতে ছিলেন।
    মাঝে মধ্যে ওখানে চলে যেতাম স্যারের সাথে দেখা করতে।
    পরে উনি চট্টগ্রামে শীপব্রেকার্স এসোসিয়েশনে কাজ করেছেন কিছুদিন।
    লালখান বাজারের ধারে কাছে কোথাও থাকতেন বলে মনে হয়।
    হালিশহরে বেসিক কোর্স করার সময় সেখানেও গিয়েছি একাধিকবার তাঁর সাথে দেখা করতে।
    এক্সকারশনের সংশ্রাবটা এক ধরনের পারিবারিক যোগাযোগ তৈরী করে দিয়েছিল তাঁর সাথে।
    আর তাই যখনই যেখানে দেখা হয়েছে, তাঁর স্নেহাসিক্ত হয়েছি বারবার।
    জানি না এখন উনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন...

    স্যারকে অনেক অনেক সালাম জানাচ্ছি এই লিখার মাধ্যমে......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।