প্রেম আমার প্রেম আমাদের

কলা ভবন প্রাঙ্গণ আর রেজিষ্ট্রারের দাফতরিক ভবন, এই দুয়ের মাঝে সরু রাস্তার চেক চেক খোপ আঁকা একখান প্রান্তর, অসমান দূরত্বে বর্ষীয়ান বৃক্ষের বন্ধনে ছড়ানো ঘাসের ময়দান। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অবসরে পাঁপড়ির মতোন পেখম মেলে আড্ডায় মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা সেই চত্ত্বরের এখানে ওখানে। আকাশ থেকে দেখতে পেলে দেখা যেতো যেনো, আড্ডায় মানুষ নয়, মেলে আছে থোকা থোকা গোলাপ পাঁপড়িরা।

তরুণীরা সংখ্যায় কম, উচ্ছ্বলতায় অধিক খলবল। তরুণেরা উদ্বেল উচ্চকিত হুল্লোড়ে লাগামহীন কথার খেয়ালে। এখানে অতি পড়ুয়াদের দেখা মেলে খুব কম। আর যারা ব্যস্ত বেশী মিছিলে কি মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতির ডামাডোলে তাদেরও ফুরসত কম এখানে মিলবার।

জায়গাটাকে সবাই বলে ‘মল’। ওরা নাম দিয়েছে ‘ফুচকাতলা’। কলা ভবনের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে অনেকগুলো ফুচকা-চটপটি ভ্যানের পসার। মাঝে এক কি দু’জন মুড়ি চনাচুর মাখা বিক্রেতা। বিক্রেতারা সবাই এখানে ‘মামু’। আর ভাগ্নে-ভাগ্নী ছাত্রদের মামুরা সমীহ করে ডাকে স্যার কিংবা আপা, ক্কচিৎ ম্যাডাম ।

মলের একেবারে মাঝখানটায়, সম্ভবত গোটা চত্ত্বরের সবচেয়ে পুরোনো গাছটা তার দাপুটে দাবীতে কংক্রিটের সরু পথটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে অনেকটা জায়গা জুড়ে। তাই কখনো কখনো এ চত্তরে দুটা চারটা গাড়ী বা রিকশা যা ও বা ঢুকে পড়ে, তারা ভুলেও এ ভাঙ্গা পথে আসে না। ওই পরিত্যাক্ত জায়গাটুকুন দখল করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া এক দল তরুণ-তরুণী। নিত্যদিনের আড্ডায় ওটা হয়ে ওঠে ওদের স্থায়ী ঠিকানা। কোন একদিন আড্ডায় এমনও প্রস্তাব ওঠে যে গাছটার গায়ে একখানা ক্ষুদে সাইনবোর্ড পুঁতে দেয়া হোক। জায়গার নামকরন আর দখলী স্বত্ত্বের ঘোষণা জানিয়ে। নিরিবিলি এদিকটায় আগে আসলে কখনোই কেউ সেভাবে আড্ডা দিতো না। তাই দখলী স্বত্ত্বের ভয়টা তেমন না থাকাতে ওই সাইনবোর্ড লাগানোর কাজটা শেষ পর্যন্ত আর করা হয় না।

প্রতীমকে ওখানে দেখে তার দলের নেতারা আর হলের বড় ভাইরা বেশ অবাক হয়। মিছিলে উচ্চকিত, রাজনীতির আকন্ঠ নিমজ্জিত কর্মী ! মাঝে মধ্যে হাকিম চত্ত্বরে, স্বোপার্জিত স্বাধীনতার বদ্বীপ চত্ত্বর কিংবা টিএসসিতে ঘুরে ফিরে দেখা যায় নানান আড্ডায় প্রতীমকে অনেকটা নিয়মিতই। ওখানে রাজনৈতিক আর সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গণের সখ্যতা তাকে টানে। এটা সবাই জানে। কিন্তু ‘মল’-এর আড্ডায় সে কিসের টানে!

রাতে প্রতিদিন তার রুমেও চলে লগামহীন আড্ডা। হলের সবাই কম বেশী জানে। বেশ কয়টা রুম দূরের আতাউর, পাশের রুমের ইস্তেক, হলে আবাসিক নয় মোহাম্মদ, জাকারিয়া এদের সখ্য সূত্রে এমন আরো অনেকে, এমনকি প্রথিতযশা কবি রুদ্র, গাইয়ে হ্যাপি। কেউ বাদ থাকে না ওই রুমের আড্ডায় শরীক হতে।

দেশ, রাজনীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান ঘটনা কি কর্মকান্ড, দেশ বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, গাইয়ে, গল্প, কবিতা, গান, চেগুয়েভারা, তাহের, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, আবুল হাসান, কাহলিল জিবরান, নাজিম হিকমেত, ভ্যান গগ, জয়নুল, দীপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কিছুই বাকী থাকে না কথার মিছিলে। আড্ডায় জলস্রোতের মতোন উপচে পড়তে থাকে মানুষ আর বিষয়ের ভীড়।

হলের দেয়ালে চুনকাম করা হয়েছে। কিন্তু এই রুমটা বাদে। ইচ্ছাকৃত ভাবেই। সারা দেশের যতো সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক দৃষ্টিনন্দন পোস্টার ছাপা হতো, তার সবগুলোরই একটা অন্তত পৌঁছাতো এই রুমে। সেগুলো সব মেঝে থেকে ছাদেও দিকে দু’স্তরে সাঁটা থাকতো দেয়ালে। তার উপরের বাকী অংশে সবার নিজের লেখার এক দুই কি তিন লাইন উদ্ধৃতি আর সাথে স্বাক্ষর। এলোমেলো ভাবে আল্পনার মতোন ছড়ানো সেই লাইনগুলো সব লেখা হতো ছবি আঁকার দশ কি বারো নম্বর হার্ড ব্রাশে (তুলিতে)। সেই স্মৃতিজাগানিয়া এক একটি লাইন দেয়ালে লেখা চীকার চেয়ে অনেক ছোটো আকারের। সেই সূত্র ধরে ইস্তেক একদিন বলে ওঠে এগুলো সব চীকার বাচ্চা “হলুই”।

সেই পোস্টার সাঁটা দেয়ালে হেলান দিয়ে ঝকঝকে মোছা মেঝেতেই আড্ডায় বসতো সব গোল হয়ে। দু-এক জন হয়তো জায়গা না পেলে বিছানার ওপরে। হ্যাপী আসলে দেখা যেতো প্রায়শই সে চোখ বুঁজে দেয়ালের পাশে বসে সাঁটা পোস্টারের গায়ে খস খস শব্দে নানা ছন্দ লয়ে হাত ঘষে ঘষে কোনো এক নতুন গানের সুর ভাঁজার তালে মগ্ন হয়ে আছে যেনো। উচ্চকিত আড্ডা হয়তো তাকে প্রশ্রয় দিতে শব্দহীনতায় থেমে থাকতো কখনো কিছুক্ষণের জন্য।

এর মাঝে পাঠ হতো নিজের সদ্য লেখা কবিতাগুলো। কখনো কখনো সম্ভাব্য গানের দু’এক কলিও। সেই পাঠের গভীরতায় উঠে আসতো প্রেম। সেই প্রেম দেশের, প্রকৃতির, মানুষের, চেনা অচেনা প্রিয় নারীর। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত সবার লেখার প্রাণকেন্দ্রই প্রেম। তার প্রায় সর্বাংশে নারী আর কিয়দংশে মানুষ, রাজনীতি, শোষণ, যুদ্ধ, বিপ্লব, আন্দোলন, অকাল মৃত্যু এইসব।

সবগুলো কবিতা নিয়েই পাঠের পরে চলতে থাকে অঘোষিত অনির্ধারিত নানান রকম আলোচনা আর সমালোচনা। কখনো কখনো সেই তুমুল তর্ক সমস্ত উত্তেজনার সীমানা ভাংচুর করে ভয়ংকর দুর্বার হয়ে উঠতো। আবার কখনো সম্ভাব্য জানা কিংবা অজানা নারী চরিত্রটিকে ঘিরে চলতো তাকে নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করবার প্রয়াস। সেই থেকে তৈরী হতো কতো রাগ, অভিমান! কখনো কারো প্রেমের দাপুটে বসন্তে অন্যের দীর্ঘশ্বাস। কখনো কোনো কাল্পণিক চরিত্রকে কোনো বাস্তব চরিত্রের পরিচয়ে নিশ্চিত রকম ভাবে প্রোথিত করবার প্রয়াস।

নিত্য দিন কথায় কথায় প্রায় সবার ভেতরেই গড়ে উঠছিলো প্রেমের গুল্ম-গুচ্ছ আর তার লতানো ডাল-পাতা। আতাউরের দিদি নামের আড়ালে সবাই খোঁজে কবিতার প্রেমের নারীটিকে। ইস্তেকের কবিতায় জুড়ে থাকে তার মনবশ করা প্রেয়সীটি। মোহাম্মদের কবিতা তো উত্তাল প্রেমের কথার সাগর। কত্তো রকম যাতনা যন্ত্রণা সুখ স্বপ্ন শব্দে শব্দে পংক্তি জুড়ে। তার হিসেব রাখা দুষ্কর। প্রতীমের কবিতাগুলোকে ঘিরে সবাই আবিষ্কার করতে চায় কোনো এক তিষনাকে। তারপর সব তীর কেন্দ্রীভূত হয় সেই ফুচকাতলার সখ্যতা, সহপাঠী ‘দেবী’কে ঘিরে।

মোহাম্মদের কবিতায় উঠে আসে “বিনতা” নাম নিয়ে তার পৃথিবী –
“বিনতা দু’চোখে জল নিয়ে ঘুমায় এখন
… … … …
অথচ বিনতা জেনে গ্যাছে সব
প্রতীক্ষা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের।”

ইস্তেক হৈ চৈ করে পড়ে তার লেখা –
“আমি লিখলাম – সম্ভাবনা
তুমি পড়লে – সম্ভব না।”

জাকারিয়ার কবিতায় বড্ড সহজ অভিব্যক্তিতে উঠে আসে প্রেমিকারা। সবাই ঠিক চিহ্নিত করে উঠতে পারে না নারীটিকে। অথচ শব্দের বুণনে জলোচ্ছ্বাসের মতোন উপচে আসে প্রেম।
“আমার হাতে হাতটি রাখো
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস
নিংড়ানো সব প্রেম দেবো আর
যা কিছু বিশ্বাস ।”

আতাউরের লাইনগুলো সাজে সেই ‘দিদি’ নামের আড়ালের নারীটিকে ঘিরেই। অন্তত সবার তাই ধারণা।
“অন্তত একবার বলো
চুপি চুপি রাতের আড়ালে লুকিয়ে হলেও
অন্তত একবার জ্যোৎস্না কাঁপিয়ে বলো।”

প্রতীমকে উসকে দ্যায় যেনো সবাই, তার কবিতার লাইনগুলোকে ঘিরে।
“একটা হরিণ এসে রোজ
নির্বিচারে খেয়ে যায় সমস্ত বাগান।
আমি তবু হেলানো চেয়ারে স্থির
নিষ্পলক চেয়ে দেখি
অবিনাশী সুন্দরের সৌন্দর্য বিনাশ।”

কে এই হরিণ! খুঁজতে খুঁজতে আরো ঘণীভূত সন্দেহ আর অনুমানের তীর ছুটে আসে লক্ষ্যভেদী হয়ে, যে সন্ধ্যায় প্রতীম পাঠ করে সদ্য লেখা পংক্তি –
“যে মায়ায় নিজেই জড়ায় মানুষ নিজেকে
সে মায়া ছাড়াবে কে ?
ভালোবাসার কষ্ট বুঝে কষ্টকেই ভালোবাসে যে
তাকে আর কষ্ট দেবে কে ?”

প্রতীম আর দেবী হয়ে ওঠে কবিতার জীবন্ত নায়ক ও নায়িকা যেনো। সেদিন থেকে নাম হয় তাদের “মায়া” ও “মোহ”।

রুদ্রের তখন গভীর টানাপোড়েন। সেই রকম এক বিকেলে মংলা থেকে ফিরে এসে টিএসসিতে সে গুন গুন করে কি যেনো এক গান। আর মধ্যরাত পার করে সোনালী শিশির মগ্ন এক উন্মাতাল আবেগের ঝড়ে স্কুটারের কানে তালা লাগানো শব্দ ছাপিয়ে বাড়ী ফেরার পথে বলে ওঠে – সুর দেয়া হয়ে গ্যাছে –
“ভালো আছি ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো …”

সেই উন্মাতাল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় কবিতা কি শুধু খাতায়ই হতো লেখা! মিছিলের শ্লোগানেও ছিলো কবিতার অবাধ বিস্তার। এমনই এক দিন মিছিলের শেষে এসে জানা যায় হাসিবের নামে হুলিয়া। তাহলে! কাল থেকে সেই উদ্দাম শ্লোগানের কবিতায় মিছিলের বুকে উত্তাল খুন নাচাবে কে ? তার প্রিয় মুখ টিএসসি-র বিকেলে তবে নির্ভরতায় হাত ছুঁয়ে দেবে কার!

এমনি এক দিন প্রতীম চলে যায় তার দলের নেতা ও বড় ভাইদের সংগী হয়ে সিলেটে। দলীয় সম্মেলনে। তখন তো আর মোবাইল ইন্টারনেটের যুগ নয়! নিকট চেনাদের কেউই জানে না দেবীর প্রতীম কোথায়! দেবী খুঁজে পায় না প্রতীমকে, ক্যাম্পাসের কোথাও। ক’দিন বাদে যখন ফিরলো প্রতীম। না বলে অমন হাওয়া হয়ে যাওয়ার অপরাধে কাঠগরায় দাঁড়াতে হয় তাকে। ভাবনারা জট পাকাতে থাকে পাকাপোক্ত ভাবে প্রতীমের মাথায়। কেনো এতো অভিমান! কেনো এমন অধিকারবোধ! কেনো এমন রাগের তুফান দেবীর!

রিকসাসংগী হয়ে বাসা অব্দি পৌঁছে দিয়ে আসে দেবীকে। তবু সে শান্ত নয়! প্রবল নিম্নচাপের মতোন থমথমে হয়ে থাকে সারাটা পথ ওরা। তারপর হাঁটাপথে কোণাকুণি রমনার ঘাস মাড়িয়ে তার হলে ফেরা, ভাবনার মেঘময় একটা গোটা আকাশ বুকের ভেতর নিয়ে।

সেই রাতে পাকাপোক্ত ভাবেই যেনো দেবী হয়ে ওঠে সেই বাগান খেয়ে যাওয়া হরিণটি। দেবী হয়ে যায় “মায়া” আর প্রতীম হয়ে ওঠে তার কবিতার সেই “মোহ” চরিত্রটি। এক রকম সভা করেই বলতে গেলে এ পরিবর্তনের সনদ দিলো রুমের নিত্য দিনের আড্ডার কবি সভাসদ। হুল্লোড়ে ধোঁয়ার ডগার মতোন যেনো কেঁপে ওঠে চারদিক, হলের জনপদ।

আঙ্গুল ছোঁয়ার উষ্ণতায় তখন দাবাণলের ভয়াবহতা। বাঁকা চোখের দৃষ্টিতে সব হৃদযন্ত্রের শল্য চিকিৎসক বিফল হবার মতোন গোলযোগের হেতু লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর এক গেরিলা যোদ্ধার মতোন।

হল গেটে বা মধুর ক্যান্টিনে লুচি, সব্জী ভাজি, ডিমের ওমলেটের সাথে কড়া লিকারের চা। কিংবা কোনো দিন বাধ্যতামূলক কৃচ্ছতার নামে চা বিস্কিটে যে দিনের শুরু তার সীমানা সমুদ্রতীরের চেয়েও দূরদৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে যেনো। কলা ভবনের চত্ত্বর থেকে বুয়েট, আহসানউল্লাহ হল, নজরুল ইসলাম হল, ডিএমসি, ফজলে রাব্বী হল থেকে কার্জন হল, শহীদুল্লাহ কিংবা ফজলুল হক হলের সীমানা গিয়ে ঠেকে মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ চত্ত্বরে। শাহবাগ, চারুকলা, পাবলিক লাইব্রেরী, যাদুঘর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, নিউ মার্কেট পেরিয়ে চারুকলার ছাত্রাবাস, সাইন্স ল্যাব, নাজিমুদ্দিন রোড, নীরব হোটেল, কাজী আলাউদ্দীন রোড, হাজী বিরিয়ানী, ঠাটারী বাজারের স্টার, ওয়ারী বনগ্রামের হিন্দী সিনেমা স্টাইলে পথের মাঝে রাজকীয় ক্ষমতাধর তরুণদের সভা। কোথাওই থামে না দিন। সময় যেনো ছুটতে থাকে! কোমরে কাটা রাইফেল গুঁজে জীন্স আর হালকা ঘিয়ে রঙ ফিনফিনে গোল্ড লীফ শার্ট, উন্মত্ত স্বৈরাচার বিরোধী মিছিলে প্রেসক্লাব, জিরো পয়েন্ট। ধাবমান মিছিলে পুলিশী হামলায় পাশের ছুটন্ত মানুষটির লহমায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, এফ রহমান হল থেকে জান্তার অনুচরের সহিংস গুলিতে বসুনিয়া হত্যার ক্রোধে উন্মত্ত মিছিলের তোড়ে মাঠের সীমানা দেয়াল লহমায় লোপাট হয়ে যাওয়া। এর সব কিছুতেই তখন এক উন্মাতাল প্রেম। পার্কের সমান সবুজ বুকের বাগানে প্রিয় নারী যখন বসন্ত বাতাসে বৈশাখের তীব্রতা এনে দ্যায় – তখনও বাম পকেট থেকে উঁকি দ্যায় নাজিম হিকমেতের জেলখানার চিঠি আর অন্য পকেট থেকে উঁকি দিয়ে থাকে স্প্যানিশ পয়েন্ট টু ফাইভ!

এভাবেই এক হাতে মিছিলের সহযোদ্ধার মুষ্টি বন্ধন কিংবা তার গুলিবিদ্ধ আর্তনাদ। আর অন্য হাতে জাতীয় কবিতা পরিষদ বা আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের ব্যানার ফেস্টুন, কবিতার শব্দ গাঁথুনিতে উন্মুখ কলম কিংবা প্রিয়ার মোহন আঙ্গুল! এক লয়ে অবিরাম বুনেছে ভালোবাসা। জীবনের, অধিকার অর্জনের। নাগরিকের ও প্রেমিকের। যোদ্ধা ও কবির। দেশের ও প্রিয়ার। প্রতিটি নিঃশ্বাসে যাপনের সাথে লেপ্টে থাকা প্রেম। যার পরতে পরতে তুলি ও কলমে নারী-নিসর্গ-নৃনিধি। অনন্য এক নকশী কাঁথায় জীবনের গল্পে এভাবেই আঁকা ছিলো সেই অদম্য সোনালী সময়ে আমার ও আমাদের তাবৎ প্রেম ।

০২ ও ০৪ জুলাই ২০১৫
নিভৃতনিসর্গ, উত্তরা, ঢাকা ।

৩,২০৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “প্রেম আমার প্রেম আমাদের”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    আপনার লেখায় আমাদের সময়ের সুরভি পাওয়া যায়, ভাইয়া। মধুর ক্যান্টিনের চা অথবা ডাসের আড্ডার খলবলে হাসি; পাঁচ টাকার বিরিয়ানি! চরিত্রগুলোর নাম বদলেছে ঠিক বাকী সব একই আছে।

    আপনার গদ্য দারুণ, ভাইয়া। পড়বার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলেন বহুগুণ।

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    কি সব দিন গেছে???
    কাঁটা রাইফেল নিয়ে ঠুস ঠাস করা আমিও দেখেছি বহুবার।
    তারপরেও শো-অফ প্রবনতা থাকলেও তারুন্য মনেহয় না তেমন একটা করাপ্ট ছিল।

    এখনকার রাজনীতি সংস্লিষ্ট তারুন্য বোধ হয় আরও অনেকবেশি করাপ্ট।
    এটা সত্যিই দুঃখজনক.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    এক ঝলকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ফ্ল্যাশ ব্যাক দেখতে পেলাম যেন! :dreamy:
    আমাদের সময়ে অবশ্য ক্যাম্পাসে শো ডাউন অনেক কম হত।
    ২০০৫-০৬ এবং তত্ত্বাবধায়ক আমলের শেষে গিয়ে হালকা উত্তপ্ত হয়েছিল...

    আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অনেক সাদামাটা ছিল, তবুও খুব ভাল লাগল লুৎফুল ভাই! 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      সময়ের সাথে সাথে সামাজিক প্রেক্ষিত ও বোধের ছাপ জুড়ে থাকে জনতার জীবনের দৈনন্দিকতায় ।
      যা কখনোই একের সাথে থাকে না অন্যের দিনে, এক নোটেশনে ।
      সে আমলে তবু যেনো ওয়েস্টার্ণ ফিল্মী কায়দায় শো ডাউন ছিলো ।
      দিনভর গোলাগুলি হলেও লাশের খবর হতো না তৈরী নিত্য দিনই রাজনীতির কারখানায় ।
      এর পরে যে এমন হলো তার খুনের নেশা । একখানা মোটে গুলির খোসা পাবার আগে লাশখানা লোকে দেখতে পেতো ।
      আজকাল তো খুনের লাগি লাগেনা খুনীর কারণ দেখা ছুতো খঁজা। ইচ্ছে হলেই বুনো ঝোঁপে ফোটা ফুলের মতোন ছিঁড়ে নিতে পারে তাজা প্রাণ অনায়াসে।
      আর এই সব হঠকারীতায় ক্রমান্বয়ে রাজনীতি আর ঐতিহ্যের শিক্ষাঙ্গণ হারিয়েছে তার গোরবের ঐতিহ্য ।
      এসব খামোখা ভুলে ভালে ঘটেনি বেখেয়ালে ।
      খুব সন্তর্পণে, ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য আর অতীত জৌলুষকে ধুয়ে মুছে ফেলার জোর ছক কষা হয়েছে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ।
      বীতশ্রদ্ধ আমজনতাও দিনে দিনে হারিয়েছে তাদের শ্রদ্ধা। ছাত্ররা হারিয়েছে অতীত সংযোগ আর বোধের গায়ে বেঁধে দেয়া ইস্পাত দেয়াল আড়ালে ঠেলে দিয়েছে সামাজিক দায় ও দায়বদ্ধতার সব যৌক্তিক সূত্র ।
      এসবের পাশাপাশি আরো একটা বিষয় হলো যে আমাদের শিক্ষাঙ্গণ একটা বিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যখন খু বেশী প্রয়োজন ছিলো রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতার। বিপরীতে গত কয়েক দশকে সেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের উদ্যোগেই ততপর দায় দায়িত্বের হর্তা কর্তা ও হোতারা ।

      আর হ্যা । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ ভাগে এসে বুঝতে পারছিলাম যে যতো সব রংধণুতে ছিলাম দৃষ্টি ও মনযোগ নিবিষ্ট হয়ে তার সবই ছিলো মেকী ।
      আজকের রেসলিং টিভি শোগুলোর মতোনই সাজানো স্ক্রীপ্টের নাট্যমহড়া বই বেশী কিছু নয় ।

      গল্প আর অংকের শেষ কথা কেবল বানরের পিঠা ভাগ ।

      তবু স্মৃতি তো স্মৃতিই । তাই তো জীবন যটই সাদা-কালো হোক, অতীত সোনালী । 🙂

      জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "আকাশ থেকে দেখতে পেলে দেখা যেতো যেনো, আড্ডায় মানুষ নয়, মেলে আছে থোকা থোকা গোলাপ পাঁপড়িরা" - চমৎকার বলেছো।
    "এক লয়ে অবিরাম বুনেছে ভালোবাসা। জীবনের, অধিকার অর্জনের। নাগরিকের ও প্রেমিকের। যোদ্ধা ও কবির। দেশের ও প্রিয়ার। প্রতিটি নিঃশ্বাসে যাপনের সাথে লেপ্টে থাকা প্রেম। যার পরতে পরতে তুলি ও কলমে নারী-নিসর্গ-নৃনিধি। অনন্য এক নকশী কাঁথায় জীবনের গল্পে এভাবেই আঁকা ছিলো সেই অদম্য সোনালী সময়ে আমার ও আমাদের তাবৎ প্রেম।" - এক নিঃশ্বাসে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেলে, চমৎকার লেখাটার চমৎকার সমাপ্তি টেনে।
    গোটা পৃথিবীব্যাপী তারুণ্যের জয় হোক! নারীপ্রেম, নিসর্গপ্রেম, দেশপ্রেম- সকল প্রকার প্রেম সকল কিছুর ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠিত হোক!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।