~ ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম’ পড়তে পড়তে কবিকে প্রণাম ~

Book Cover

[ গ্রন্থপাঠ প্রতিক্রিয়া বা গ্রন্থ সমালোচনা ]

নেশাগ্রস্ত হতে হয়, বুঁদ হতে হয়। পাঠের অলিগলি ঘুরে যেনো শব্দে শব্দে উন্মোচিত হয় এক চুম্বকাকর্ষী কামার্ত শরীর। না প্রেম নয় নারী নয় তার উপজীব্য। খুব লাগসই আর নির্ভুল কথাটুকুন কাভারের ফ্ল্যাপেই অনবদ্য শব্দমালায় গাঁথা আছে।

[ ‘আমি প্রেমের কবিতা লিখতে পারি না, হাঁটু কাঁপে’ – একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সুবোধ। প্লেটো থেকে পাওলি দাম (বইটাতে) এমন একটা দীর্ঘ সময়ের কথা ধরে আছেন এখানে যেখানে ‘সিস্টেম’ হয়ে ওঠে সুবোধের লক্ষ্য। আয়লান, সিরিয়ার সেই বাচ্চা ছেলেটি মৃত পড়ে আছে সৈকতে, সেই যেনো আর একবার বলে গেল আমরা আসলে এক ধ্বংস থেকে আর এক বিনাশের দিকে এগিয়ে চলেছি।
সুবোধ লেখেন সেই ভাষায় যে ভাষা তিনি রাস্তা থেকে তুলে এনেছেন পিঠের তুণীরে। সমকালকে চাপকেছেন কিন্তু ইতিহাসকে কান মুলে দিতে সংকোচ করেননি। এক দিকে প্লেটো, অন্য দিকে পাওলি দাম, দুজনেই দুটো প্রতীক, দুজনের এক জনও কবিতার বিষয় নয়, কিন্তু দুজনেই এসে নিরন্তর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সময়ের ব্ল্যাকহোলে। একটার পর একটা কবিতার বইয়ে যেভাবে নাইন ইলেভেন এসেছে, বানতলা এসেছে, চৌত্রিশ বছরের পঁচন এসেছে, তার ভিত্তিতেই বলা যায় সুবোধ সরকারের মাতৃভাষার নাম, প্রতিবাদ। ]

এমন একটা ফ্ল্যাপ পড়বার পর আর খুব বেশি কিছু বলবার থাকে না। আর যাঁরা সুবোধ সরকারের কবিতার ভক্ত অনুরক্ত তাঁদের কিছু বলবার ধৃষ্টতা দেখানোই মুর্খতা। তবু একটা বই নিয়ে কিছু বলতে গেলে দ্বিরুক্তির মতোন কিছু কথাও বলেই ফেলা যায়।

বইটার নাম আর ফ্ল্যাপের মুখবন্ধ – যে পাঠক কখনো এঁকে পড়েননি তাকেও অনায়াসে কবি ও কবিতা সম্পর্কে একটা বোধগম্য ছবি তৈরি করে দ্যায়। শুধু পড়তে পড়তে নেশাগ্রস্ত হবার বিষয়টা পাঠের জলে নাইতে শুরু না করা অব্দি বুঝে উঠতে পারবেনা কেউ, এই যা।

প্রথম কবিতাটির শিরোনাম ‘একটা স্কুলে ক্লাস নাইন থাকলো না’। হতে পারে তা ফিলিস্তিনে, গাজায়, সিরিয়ায়, আফগানিস্তানে, কাশ্মীরে, এমন কি খোদ আমেরিকায় কোনো স্কুলে গান এটাকের পর; হতে পারে সুবোধ সরকারের জীবনে, যে ক্লাস এইট শেষ না করতে তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন। ক্লাস নাইন অনেক রকম ভাবেই পৃথিবীতে যে কারো কারো জন্যে থাকেনি, অনেকেই ক্লাস নাইনের জন্য আর বেঁচে থাকেনি কিংবা থেকেও যেতে পারেনি। কারণ তাদের জন্য ‘নিয়তি নবম শ্রেণি নিয়তি নাইন’।

পরেরটার শিরোনাম ‘ঠাকুর’। ‘পিঁড়িতে এসে বসেন তিনি / ধরেন আমার ছেলের হাত / তিনি লবন এবং নুন / তিনি আমার ঘরের ভাত।’ ধরুন এরপর ‘ইতি দ্রৌপদী’র কথা। ‘মাসে তিনদিন আমি পায়ে ফুল লাগাই / মাসে তিনদিন আমি পা ডুবিয়ে / মানস সরোবরে চলে যাই / সাঁতার কেটে আমি এক অনন্ত দুই অনন্ত তিন অনন্ত / পার হয়ে বাবার কাছে ঘুরে / মায়ের কাছে ঘুরে আসি / ছোটবেলার উঠোনে গিয়ে শিউলি কুড়িয়ে আনি।‘ এ এক ইমেজারি আবার এক স্তবক পরেই টেনে নিয়ে যায় দৃশ্যান্তরে। ‘কিন্তু আমি প্রতিটি চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম / পুরুষের চোখ আমি চিনি / কোন চোখে ফাল্গুন / কোন চোখে বৈশাখ, সেটা সবচেয়ে ভাল বোঝে / একটা মেয়ে।‘ … আবার পরে এসেছে … ‘তুমি কি বোঝাতে চেয়েছিলে প্রতিটি পুরুষ আসলে পুরুষ / পুরুষের কোনো কন্যা নেই / ধাত্রী নেই / মা নেই / স্ত্রী নেই / তার চোখের ভেতরে একটা চোখ আছে / সেই চোখ দেখতে চায় একটা শরীর।‘ আবার অন্যত্র বলছেন ‘ক্ষমতা একটা নেশা / যে নেশা করে না তাকেও ধরাতে হয়? / ক্ষমতা একটা চড় / সেটা দুর্বলের গায়েও মারতে হয় / বীরের গালেও মারতে হয় / ক্ষমতা একটা দড়ি / সেই দড়িতে অন্যের ছেলেকে জড়াতে হয় / নিজের ছেলেকেও জড়াতে হয়।‘। আশ্চর্য এ কবিতার শেষ স্তবকে লিখেছেন, ‘তোমাকে একটা কথা বলে যাই, কৃষ্ণ / মেয়েদের জন্য এত সুন্দর সুন্দর পোষাক সারা পৃথিবীতে / সব পুরুষ বানিয়েছে, সব / আসলে একটা একটা করে খুলবে বলে।‘

কী আশ্চর্য তীর, অমোঘ এক অজানা স্বাদের বিষ মাখা, তার কবিতা। নিখাদ বাস্তবতাকে নেংটো করে ভরে দিয়েছেন তিনি কবিতার শরীরে, এখানে ওখানে। অবলীলায়, অনন্য দৃষ্টিনান্দনিকতায়, অভূতপূর্ব বুননে। এই সেলফোন আর ইন্টারনেট যুগের ছবিটাও বাদ যায়নি তার লেখায়। এসেছে তাঁরই অনন্য স্বকীয়তায়। ‘আমার সঙ্গে ট্যাক্সিতে চেপে একজন কবি চলেছেন / যমুনায় জল আনতে চলেছেন / মানে এটিএম থেকে টাকা তুলবেন।/ তার ফোন এল, তিনি বললেন আমি একটা মিটিঙে / দ্বিতীয় ফোন এল, তিনি বললেন / আমি ক্লাসে আছি।/ তৃতীয় ফোন এল, তিনি বললেন / আমি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে। // কুড়িমিনিটে একজন তিনটে মিথ্যে বলতে পারে তাহলে / তাহলে একেই বলে নেটওয়ার্ক ?’ হ্যা, কবিতাটির শিরোনাম ‘নেটওয়ার্ক’। এমন অবলীলায় তিনি উন্মোচন করেছেন সমাজের বাঁকগুলো, যেনো স্থাপত্যের ক্লাসে একে একে খুলে ফেলছেন ভেনাসের সমস্ত আবরণ, আর সেইখানে তুখোড় তুলি হাতে বসে ছিলেন ফ্রিদা, মাতিস, হুসেন, শাহাবুদ্দিন।

‘আ বে চোপ, আমি পঁচিশে বৈশাখ বলছি’ তাঁর আর এক অনন্য নির্মাণ। কি ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ তার কথা উপমা রূপক আর চিত্রায়ন ! সেই অভিনবত্ব কেবলি অবাক করে, আলোড়িত করে, নেশাগ্রস্ত করে, চুর চুর বিধ্বস্ত করে, বুঁদ করে। এর দ্বিতীয় স্তবকে লিখেছেন, ‘ ‘অন্তরমম বিকশিত করো অন্তরতর হে’ / এর থেকে বড় ঢপের লাইন আমি আর জীবনে লিখিনি।/ নির্বাচন কমিশন / এবং সেনিটারি ন্যাপকিন ছাড়া / আর কিছুই বিকশিত হল না। / যখন লিখেছিলাম বিকশিত করো / তখন গায়ে কাঁটা দিয়েছিল।/ এখন দুপায়ের ফাঁকে / ল্যাঠা মাছের গায়ে কু দেয়, পরিহাস করে।/ তবু আমি জানি কু এবং পরিহাসের মধ্যেও একটা সুন্দর জীবন / আছে আমাদের।‘ আশ্চর্য উজ্জ্বল চপেটাঘাতের মতো এই কবিতাটার পুরোটাই হয়তো উদ্ধৃতিতে তুলে আনা খুব দরকার ছিল, যুক্তিযুক্ত ছিল। তবু লোকে বইটা কিনে বাকিটুকু পড়বে প্রত্যাশায় একটু একটুই থাকুক।

‘মানুষ মানুষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি / একটা নগরকে ন’বার ধ্বংস করেছিল মানুষ / সেই নগরের নাম ট্রয়। / আর যাকে নিরানব্বই বার ধ্বংস করে / অপেক্ষা করে আছে মানুষ / তার নাম সভ্যতা।’ সেই সভ্যতার ছবিগুলো সেলুলয়েডের মতো নিজে যেমন তুলে এনেছেন, সাহিত্য কপচানো মানুষেরা যে তুলে আনছেন না। বাংলা কবিতা পড়ায় যে একটা ভাটার টান চলছে। এইসব বাস্তবতা আর সব কবি লেখকদের নিস্পৃহ অবাস্তব নিমজ্জনের ভয়াবহতা অবলীলায় এঁকেছেন গোটা বইতে। বিশেষ করে ‘আ বে চোপ, আমি পঁচিশে বৈশাখ বলছি’, ‘আমি এমএস ধোনি, কতটুকু ক্রিকেট বুঝি?’, ’মুখুজ্জে বাড়ির জলের গ্লাস’, ‘আমার যে ছাত্রটি বলেছিল’, ‘প্রেম নাকি তির?’, ‘যিশু’, ‘লামডিং চা বাগান’, ’আঙুলে শিশির’, ‘কে দাঁড়িয়ে?’, ‘হাই রাহুল’, ‘তিন মেয়ের গল্প’, ‘গাড়ি’, ‘আয়লান’, ‘বিন্দু’, ‘শি হুয়াং তি’, ‘কাকে দিয়ে কি?’, ‘হাত’ এবং সবশেষে বইয়ের নামে নাম যে কবিতাটির, ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম’। অনবদ্য দক্ষতায় বোনা, চৌচির খরার মতোন বাস্তবতা, নরোম পেঁজা তুলার মতোন কল্পনা, সব সাজিয়েছেন চাবুকের আলপনায়।

কতোখানি অন্য রকম হতে পারে কবিতা, তার প্রতিপাদ্য, ভাষা আর উপমারা তার নজির তাঁর লেখার সর্বত্র। তবু তুলে ধরছি কয়েক ছত্র।

‘বিশ্বাস করুন আমি ব্রেকফাস্ট আর ডিনারের মাঝখানে / ভালবাসা ও কনডোমের মাঝখানে / বৃষ্টি ও ডে-লাইটের মাঝখানে / বিষন্নতা ও উল্লসের মাঝখানে / ডাকোয়ার্থ-লুইস নিয়মটা জানিনা / আমি তাকিয়ে থাকি / আম্পায়ারের আঙুলের দিকে / আমি তার ভুলটাকেও সম্মান করি। // সোভিয়েট ভুল করে, বার্লিন ওয়াল ভুল করে / মহাচিন ভুল করে, আমেরিকা-ইরাক ভুল করে / পার্লামেন্ট ভুল করে / আর একজন আম্পায়ার ভুল করতে পারে না? / ক্রিকেট এবং জীবন আমাকে একটাই কথা বলেছিল সেই সকালে / সমস্ত খারাপ ভুলের মধ্যে মাথা উঁচু করে / বেঁচে থাকাটাই হল মানুষের আসল ইতিহাস।‘ _ ‘আমি এমএস ধোনি, কতটুকু ক্রিকেট বুঝি?’

কিংবা ‘জল পূর্ববাংলাতেও জল, পশ্চিমবাংলাতেও জল । সেই এইচ টু ও / সেই হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন / কিন্তু ওপারের সঙ্গে এপারের / রামের আর রহিমের মাঝখানে / মুখুজ্জে বাড়ির একটা বিশেষ গ্লাস দাঁড়িয়ে আছে।‘ _ ‘মুখুজ্জে বাড়ির গ্লাসের জল’। বা ধরুন, ‘আপনারা আমার মাথায় রিভলবার ধরুন / তবু আমি তিনবার বলব / আমি ওই কৃষ্ণসার মেয়েটিকে ভালবাসি / আমি ওই কলমি শাকের মতো শীর্ণ মেয়েটিকে ভালবাসি / গাভীর চোখের মতো ওই অসহায় মেয়েটিকে ভালবাসি।‘ _ ‘আমার যে ছাত্রটি বলেছিল’। কি অবলীলায় সাধারণ কথা আর উপমাতে জীবনের গভীর উন্মোচনকে অনাবৃত করেছেন শৈল্পিক সুষমায় ! কী গভীর উপলব্ধি আর সত্যকে বলেছেন সহজ ও অকপট ভাষায়, ‘মানুষ অমর নয়, মানুষ জেমস বণ্ড নয় / মৃত্যুর পরেও তাকে মার খেতে হয়।‘ সেই সাথে বুনে গেছেন তাঁর উপস্থিতি সমসাময়িকতায়। সেই সাথে হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ, যখন এক লাইনের পারমাণবিক কবিতায় বলে ওঠেন, ‘এই মুহূর্তে দেশ দাঁড়িয়ে আছে মেয়েদের মাথার ইট এবং ম্যাডোনার আণ্ডারওয়ারের মাঝখানে।‘ _ ‘কে দাঁড়িয়ে?’

সাম্প্রতিক সময়ের দৈণ্যতা আর তাকে ঘিরে অমন অব্যর্থ তীর গত দুই দশকে কেউ হেনেছেন কিন জানা নেই। ‘আমি কোকিলের ডাক শুনিনি বহুদিন / ঠোঁটে সিগারেট হাতে হুইস্কি খোলা ল্যাপটপ / জেনিফার লো পেজ আমার শরীরে / তবু আমার স্তন শুকিয়ে আসছে শিউলির মতো।‘ … ‘আমার হাতে ব্ল্যাকবেরি / খুললেই সেটা একটা দোকান / বন্ধ করে রাখলেই সেটা ব্ল্যাক হোল।‘ … ‘পেতে পেতে আমি বোরড হয়ে গেছি, রাহুল / এখন আমার ডিপ্রেশন হয় কিন্তু বিরহ নেই / ডিপ্রেশন হলেই আমি নেক্সিটো প্লাস খাই।‘ _ ‘হাই রাহুল’।

তিন মেয়ের গল্প কবিতাখানি তো এক কথায় তিন তিনখানা আস্ত উপন্যাসের অবয়ব ধরে আছে তার শরীরে। ‘দিয়া’, ‘আমি কৃষ্ণকলি মাহাত, এম.এ., পিএইচডি’, এবং ‘দুটি অবৈধ মাংসখণ্ডের মা’ গোটা সমাজের ছবিটাকে তুলে এনেছে দক্ষ পোর্ট্রেটের মতো। ‘কেউ আমাকে জায়গা ছেড়ে দেয়নি / কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দেয় না / না পুরুলিয়ায় না কলকাতায়।‘ এমন অনেকগুলো লাইনে জীবনের কষাঘাতকে এঁকেছেন, যুদ্ধকে এঁকেছেন, অর্জন আর বিজয়কে এঁকেছেন। অশ্রুপ্লাবনে ভাসা চোখে উন্মুল হাসিকে এঁকেছেন। মোনালিসার চেয়েও বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে যেনো তাঁর শব্দেরা কবিতার বাঁকে বাঁকে, গড়নে আর গভীরতাতে।

‘ভালবাসলেই হয় না, চিরে ফেলতে হয় / আমি আপনাদের বলেছিলাম / বসন্তের জন্য বসে থাকতে নেই / আমাদের দরকার নুন / আমাদের দরকার অগ্নি / বসন্তের জন্য ফাল্গুন লাগে না, লাগে মদ।‘ … ‘আমি আপনাদের বলেছিলাম / হাফ-বিপ্লবী হাফ-আঁতেল হাফ-ভিখিরি, ঘোষ বোস গুহ মিত্র / প্রত্যেকেরই কনডোম লাগে / সানি লিওনকে দোষ দেবেন না / বাঙালি নবজাগরণে উঠে দাঁড়িয়েছিল / এখন দাঁড়াতে পারছে না। // আমি আপনাদের বলেছিলাম / ভালবাসা বনগাঁ লোকালে চড়ে আসে না / নুন আর আগুন দেখে আসে / আমাকে সানি লিওনের মা বলেছিল / দুটো বাতাসা খাওয়াতে পারবে তো?’ _ ‘বাতাসা খাওয়াতে পারবে তো?’

‘কলকাতায় ফিরে এসে আমার মনে হল / আমারও একটা হাত নেই। // থাকলে এরকম হতো না, যাকে আমার থাপ্পড় মারার কথা / তাকে আমি আজও একটা চড় মারতে পারিনি।‘ _ ‘হাত’। এইভাবে চপেটাঘাত করতে করতে একের পর এক কবিতা শেষতক এসে পৌঁছে যায় বইটির শেষ ও শিরোনাম কবিতায়। সেখানে উচ্চকিত তার ধারালো কণ্ঠস্বর, ‘ প্লেটো থেকে পাওলি দাম / নরওয়ে থেকে নবদ্বীপধাম / নিকারাগুয়া থেকে নকশালবাড়ি / চণ্ডীমণ্ডপ থেকে ফেসবুক / দান্তের নরক থেকে নিউক্লিয়ার বোম / একটা বিষন্ন সেমিকোলনের পাশে কেঁদে কেঁদে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে।‘ … ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম / আওরা মিশিয়ে ফেলেছি সাবুর দানার সাথে হিরের কুচি / যৌন আরামের সাথে অশোক স্তম্ভের উন্নাসিকতা / আমরা মিশিয়ে ফেলেছি সন্যাস ও সিণ্ডিকেট অব রাইটার্স / মিশিয়ে ফেলেছি সাহিত্য আকাদেমির সঙ্গে দাদরি / পৃথিবীতে আমি দ্বিতীয় একটা কলেজ স্ট্রিট আবিষ্কার করে যেতে চাই / যেখানে একটা গলির ভেতর বসে জীবনের শেষ কবিতাগুলো লিখব।‘ _ ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম’।

এমন কথার বুনন যে একবার পড়বার পর কেবলি ইচ্ছে হয় আবার পাতা ওল্টাই, মুগ্ধতায় আবার একটু গা ভিজাই। সেই মুগ্ধ স্নানের পর পাঠকের হাতে তোলা রইলো আমার সব উদ্ধৃতি উচ্চারণ আর বিশ্লেষণ। খুব বেশি রাবিন্দ্রিক বা সনাতনী পাঠক হয়তো হোঁচট খাবেন এমন অকপট সহজ কাব্য ভাষা, বিষয় ভাবনা, উপস্থাপনায়। তবে উপমা রূপকের অভিনবত্বে প্রত্যেকেই পুলকিত হবেন বলে আমার বিশ্বাস। সব পাঠকের জন্য রইলো সুখকর পাঠভ্রমণের শুভাকাঙ্ক্ষা। একটা প্লেটো থেকে পাওলি দাম আপনি কিনে পড়বার পর নিশ্চয়ই আন্যকেও দেবেন নয়তো কিনতে বলবেন।

সুবোধ সরকার-এর কাব্যগ্রন্থ ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম’। প্রকাশক কৃতি বা বইকৃতি, কোলকাতা। প্রথম প্রকাশ বইমেলা ২০১৬। দাম ১২০ রূপি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাবেন বাতিঘর-এ।

~ লুৎফুল হোসেন
২৮ মে ২০১৮, উত্তরা, ঢাকা।

৬,২৫৩ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “~ ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম’ পড়তে পড়তে কবিকে প্রণাম ~”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "সুবোধ সরকারের মাতৃভাষার নাম, প্রতিবাদ" - চমৎকার!
    খুব সুন্দর আলোচনা উঠে এসেছে সুবোধ সরকার-এর কাব্যগ্রন্থ ‘প্লেটো থেকে পাওলি দাম এর ওপর।
    উপযুক্ত উদ্ধৃতি আর সাবলীল আলোচনা লেখাটিকে অনেক আকর্ষণীয় করেছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।