কায়রোর দিনলিপি

ছবিতে দেখা সুবিশাল গগনচুম্বী পিরামিড,পবিত্র কুরআনে পড়া অত্যাচারী ফেরাউন, নীলনদ, মুসা নবী আর মমির গল্প- মিশর সম্পর্কে আগ্রহহীন মানুষ সম্ভবত পৃথিবীতেই বিরল।পিরামিড,মরুভুমি, নীলনদ, ফেরাউন আর মমি আমাকে যেমন টেনেছে, তেমনি কৈশোরের নায়ক মাসুদ রানার কায়রোর বিভিন্ন মিশনও আমাকে করেছে দুর্নিবার আকর্ষণ। আবার একই সাথে আরবের বেদুঈন আর মহানবী (সঃ) এর মক্কা মদীনাও আমাকে টানে সমানভাবে। কিন্তু বাংলাদেশে বসে এত দূরদেশে ভ্রমণের চিন্তা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে।
সহসা একটা সুযোগ মিলে গেল।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে এলাম দক্ষিন সুদানে। এখান থেকে মিশর বা সৌদি আরব খুব বেশি দূরে না ।ছুটিতে যাওয়ার সময় ত সৌদি আরবের উপর দিয়েই যেতে হয়। বাংলাদেশ থেকে দক্ষিন সুদানে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই।দুবাই, দোহা, আবুধাবি এসব শহরের একটা না একটায় ট্রানজিট নিতেই হবে। চিন্তা করে দেখলাম,ট্রানজিট টা কোন ভাবে জেদ্দায় ফেলতে পারলে যাত্রাপথেই আল্লাহর ঘর দেখে যাওয়া সম্ভব। আরেকটু ভেঙ্গে গেলে কায়রো ও দেখা হয়ে যায় !
ত হয়ে গেল আইডিয়া, এখন বাস্তবায়নের পালা। SkyScanner এ শুরু হল রুট search, সাধ ও সাধ্যের দূরত্ব যতটা কমানো যায় তার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ।অবশেষে best possible এবং most economical রুট পাওয়া গেলঃ জুবা- কায়রো- জেদ্দা- দুবাই- ঢাকা, আপ-ডাউন, যাওয়ার পথে কায়রো তে ৩ দিন ট্রানজিট, ফেরার পথে জেদ্দায় ৩ দিন ট্রানজিট। যাত্রার প্রথম অংশ,জুবা- কায়রো-জেদ্দা(আপ-ডাউন)- by EgyptAir, আর শেষ অংশ, জেদ্দা- দুবাই- ঢাকা(আপ-ডাউন)- by Emirates। সর্বমোট খরচ ৭৯,০০০ টাকা যেখানে নরমালি জুবা-ঢাকা- জুবা (ট্রানজিট দুবাই)খরচ প্রায় ৭০,০০০ টাকা। অতিরিক্ত ৯,০০০ টাকায় দুইটা দেশ ভ্রমণ,খারাপ কি !
জুবা থেকে মিশরের ভিসা নিয়ে এক সুন্দর বিকেলে উঠে পড়লাম EgyptAir এর প্লেনে। এমিরেটসের মত চাকচিক্যপূর্ণ আর বৃহদাকার না হলেও EgyptAir ভালোই।নিচে আফ্রিকার মানুষের চুলের মত থোকা থোকা কোঁকড়ানো জঙ্গল, অন্তহীন মরুভূমি আর আফ্রিকার ৫ টি দেশের উপর দিয়ে সরু সাপের মত একেবেকে বয়ে চলা ভূমধ্যসাগর অভিমুখী সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক নীলনদ দেখতে দেখতে চার ঘণ্টা পর পৌঁছে গেলাম কায়রো।রাতের আকাশ থেকে দেখা সুবিশাল আলোকোজ্জ্বল কায়রো শহরের অতুলনীয় সৌন্দর্য আসলে বর্ণনাতীত।
ইজিপ্সিয়ান সহকর্মী আর ইন্টারনেটের কল্যাণে শুক্রবার রাতে কায়রোর সুবিখ্যাত জ্যাম সম্পর্কে আগেই জেনেছি, আকাশ থেকেই স্থবির রাস্তার দৃশ্য দেখে তা আর মিলাতে বাকি রইল না। মধ্যরাতে হোটেলে পৌঁছানোর চেয়ে এয়ারপোর্ট এ কোনোরকম রাতটা কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
পরদিন খুব সকালে ফজরের পরপরই বের হয়ে পড়লাম কায়রো দর্শনে।সারা দিনের জন্য একটা সাদা ক্যাব নিয়ে নিলাম, ড্রাইভার বেশ মিশুক,অনেকটা যেচেই গাইডের দায়িত্ব নিতে চাইল।বেশির ভাগ পর্যটকই পিরামিড বলতে গিজার পিরামিড কেই বুঝে,শহর থেকে সেটাই যে সবচেয়ে কাছে,Downtown থেকে নদী পেরিয়ে মাত্র ১৮ কিলো দূরত্ব।কাছে হওয়ার বিড়ম্বনাও অনেক। পিপিলিকার মত মানবস্রোত ত আছেই, এর বাইরেও আছে ঠগ, বাটপার,দালাল আর উট চালকদের দৌরাত্ম্য,পিরামিড দর্শনের মুগ্ধতা বিষিয়ে তুলতে এসবই যথেষ্ট। ভিড় এড়িয়ে শান্ত পরিবেশে কোলাহল বিবর্জিত পিরামিড এর নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হয়ে শহর এলাকা থেকে কিছুটা বাইরে, দাহশুরে। দাহশুর গিজা থেকে ৩৫ কিলো মিটার দূরে।যেতে যেতে পথিমধ্যে চোখে পড়ে প্রত্যন্ত গ্রাম, খেজুর বাগান, কৃষ্ণচূড়া গাছ…………… ইট পাথর আর কংক্রিটের আধুনিক কায়রোর সাথে যার কোন মিল ই নেই।রাস্তায় এখনো গাধায় টানা গাড়ি বহাল তবিয়তে চলছে সগৌরবে। রাস্তার পাশের টং দোকানে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম ড্রাইভার এর সাথেই।
অবশেষে দূর দিগন্তে দেখা দিল ঝাপসা ত্রিকোণ মাথা, পিরামিডের সাথে আমার প্রথম দেখা। আস্তে আস্তে ঝাপসা থেকে স্পষ্ট, ছোট থেকে বড়,বড় থেকে বিশাল আর বিশাল থেকে সুবিশাল হয়ে বিরান মরুভূমির মাঝে দাড়িয়ে গেল মহাকালের সাক্ষী পিরামিড।মহাকালের আবর্তে তার কিছু ক্ষয় হয়েছে সত্য, কিন্তু তার মহিমা এখনো অমলিন।আসলে ছবিতে পিরামিড যত বড় দেখা যায়, বাস্তবে তার চেয়েও বিশাল, এক একটা পাথরের ব্লকই একজন প্রমান সাইজের মানুষের বুক সমান। ঠিক অর্ধেক উচ্চতায় পিরামিডের প্রবেশপথ,বাঁশের তৈরি মাচা দিয়ে প্রবেশপথ পর্যন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে নিচের গাড়িগুলোকে খেলনার মত ছোট লাগে, তাহলে চূড়া থেকে যে কেমন দেখাত কে জানে !2 7 16 17 21 30 31 32 45 48 61 64 4 19 40 53
এবার পিরামিডের অভ্যন্তরে প্রবেশের পালা।মূল উচ্চতার প্রায় অর্ধেক থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোনে সরুপথ Ground Floor এ Mummy Chamberএ গিয়ে মিলেছে। কুঁজো হয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নামছি ত নামছি ই, এই পথ যেন আর শেষ হবার নয়।সিঁড়ি না ঠিক,পাটাতন বলা যায়। শেষ না দেখে যাব না, এই অদম্য আগ্রহ, কৌতূহল বা জেদ যা ই হোক না কেন, টেনে নিয়ে গেল আমাকে টানেলের শেষ প্রান্তে। মিশর সরকারের ট্যুরিজ্‌ম বিভাগের ব্যাপক সংস্কারের পরেও Ground Floorএ যাওয়া যখন এতই দুষ্কর, ফেরাউন সাহেবের আমলে তা কেমন ছিল,সে ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

Ground Floorএ অনেকগুলো গোপন কুঠুরি দেখলাম,প্রতিটির দেয়ালে হায়া রোগ্লিফিক লিপিতে খোদাই করা অজানা রচনাবলী। একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে শবাধার, অনেকটা পুরানো সিন্দুকের মত। বর্তমানে শবাধারগুলো ফাঁকা,মমিগুলো মিউজিয়ামে,আর সোনাদানাগুলো ডাকাতের পকেটে।
দাহসুরে সব মিলিয়ে ৩ টি পিরামিড রয়েছে। এছাড়া আরও ছোটখাটো কয়েকটা অসমাপ্ত পিরামিড রয়েছে,সঠিক ফিনিশিঙ্গের অভাবে ভগ্নপ্রায়। এখানের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে টুরিস্ট পুলিশ।এরা খুবই হেল্পফুল এবং মিশুক।আপনাকে চা পানি এগিয়ে দিবে যেন কতদিনের বন্ধু! উদ্দেশ্য একটাই, টিপস।এটা মিশরের কমন রেওয়াজ। যেখানেই যান না কেন, পকেটে কিছু ভাংতি রাখা একান্ত প্রয়োজন,যা দিয়ে সহজেই এসব আবদার মেটানো যায় কোনধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে। টিপসের পরিমান অবস্থাভেদে ৫-২০ EGP এর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত রাখাই শ্রেয়।
এখান থেকে বের হয়ে একে একে সাক্কারা,ইমহটেপের মিউজিয়াম,মেম্ফিস ওপেন এয়ার মিউজিয়াম,স্টেপ পিরামিড দেখে গিজার পথে ফেরার পালা। একেকটা পিরামিড এর গঠন এক এক রকম। পথিমধ্যে রাস্তার দুপাশে চোখে পড়ল কার্পেট স্কুল। অতি চমৎকার সব বাহারি ডিজাইনের কার্পেট, শিল্পীরা নিষ্ঠার সাথে হাতে বুনে চলেছে। বেশ মনোরম দৃশ্য।
গিজার পিরামিড কমপ্লেক্সে ৩ টি পিরামিড আর স্ফিংস একত্রে আছে,এই পিরামিড গুলি ই সবচেয়ে বড়।প্রবেশদ্বার এর সামনে এক অন্য দৃশ্য,যেন মরুর বুকে একখণ্ড মিরপুর চিড়িয়াখানা!ভিড়,দালালদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্য, জায়গায় জায়গায় উট আর হাতির বিষ্ঠা,কি নেই এখানে! দালাল গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে, এড়ানো খুবই কঠিন।একবার উটের পিঠে উঠাতে পারলে কাজ হইছে, ৫০ ডলার না খসিয়ে থামবে না।কানে হেডফোন গুজে ছিলাম,তার পরও নিস্তার মিলেনি। কথা বলতে না চাইলে আইডি কার্ড দেখাবে যে তারা এখানকার নিরাপত্তারক্ষী !এই অনাচার দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। এসব ঝক্কি পেরিয়ে পিরামিড দর্শনের অভিজ্ঞতা কেমন হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করবে কিভাবে আপনি এসব বিরক্তিকর বিষয় সামাল দিতে পারেন তার উপর।
সব প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে পদব্রজে হাজির হলাম স্ফিংসের সামনে। কোন শতাব্দীতে এক দুর্বৃত্ত হামলাকারীর আগ্রাসনে খোয়া গেছে তার নাক।এর পিছনেই সটান দাড়িয়ে আছে গৌরবোজ্জ্বল তিন পিরামিড, বহু কালের সাক্ষী এই তিন মহারথী।এদের কে বানিয়েছে আর কেনই বা বানিয়েছে,এর উত্তরের সমীকরণ এখনো আমি মেলাতে পারি নি। স্থির হয়ে বসলাম খুফুর পিরামিডের সামনে, সবচে বড় পিরামিড এটাই।কত দিগ্বিজয়ী বীর যুগে যুগে আমার মতই এখানে দাড়িয়ে বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থেকেছে অবাক নয়নে,অপার বিস্ময়ে,চরম মুগ্ধতায়। দূরে যতদূর দৃষ্টি পৌঁছে, মরুভূমির হলুদাভ বালু ছাড়া আর কিছুই নেই। ডুবে গেলাম কল্পনার জগতে,মহাবীর আলেকজান্ডার ঘোড়া ছুটিয়ে ঠিক এই মরুভূমি দিয়েই এসেছিলেন মিশরে, আর্কিটেক্ট হেমিওন ঠিক এখানে দাড়িয়ে নিষ্ঠুরভাবে পরিচালনা করেছেন পিরামিড নির্মাণকাজ, আর দূরে বসে গোঁফে তা দিয়ে দেখছে  ফারাও সাহেব।কয়েক যুগ পরে হয়তো সেই ফারাও এর মৃত্যুর পর তাকে মমি করে শুঁটকি বানিয়ে তার পরম আরাধ্য এই পিরামিডের ভিতরেই সমাহিত করা হয়েছে।দিন যায়,মাস যায়,বছর যায়,শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে যায়, ফারাও এর পর ফারাও চলে যায়…………..একমাত্র নিশ্চুপ দাড়িয়ে মহাকালের অতন্দ্র প্রহরী হাজার বছরের সেই পুরানো পিরামিড।
অবশেষে ক্ষান্ত দিলাম পিরামিড দর্শনে।ট্যাক্সি বিদায় দিয়ে চেক ইন করলাম হোটেলে, বেল্লা লুনা,Downtown এর খুব পুরানো হোটেল।এখান থেকে নীলনদ,ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম,ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম, খান এল খলিলি বাজার সব কিছুই খুব কাছে,পায়ে হাটা দুরত্তে। হোটেল ভাড়া বেশ সস্তা,প্রতি দিন ১৯ ডলার করে,সাথে ব্রেকফাস্ট সংযুক্ত,খারাপ কি?সন্ধ্যায় রিভার ক্রুজে গেলাম নীলনদের তীরে।প্রতিদিন সন্ধায় নীল নদের তীরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৫/৬ টা বিলাসবহুল জাহাজ ছাড়ে,দুই ঘণ্টা রিভার ক্রুজ।স্থানীয় খাবারের বুফে ডিনারের সাথে ডেজার্ট হিসাবে বেলি ড্যান্স ফ্রী।অবাক করা বিষয় হল,মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশি ভালো পারফর্ম করে!
পরবর্তী দুই দিন গেল বিভিন্ন মিউজিয়াম দর্শন আর মার্কেটিঙে।হোটেল থেকে ১০ মিনিটের পায়ে হাটা দুরত্তে ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম,আরব বসন্তের উৎস সেই তাহরীর স্কয়ারের ঠিক পাশেই।বিদেশীদের জন্য প্রবেশমূল্য ৭৫ EGP, ক্যামেরার জন্য আরও ৫০ EGP আর সবশেষে মমি রুমে প্রবেশ করতে আরও ১০০ EGP। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, মিসর ভ্রমনের বাজেটের একটা বিশাল অংশ শুধু পিরামিড আর মিউজিয়ামের টিকেট খাতেই খরচ হয়ে যায়।ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম এত বড় যে সবটুকু শুধু একবার চোখ বুলাতেই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লেগে যায়। এর বর্ণনা দেওয়া নিরর্থক, মিউজিয়ামের প্রতিটা আইটেমই আলাদা মনোযোগ দাবী করার অধিকার রাখে। এই মিউজিয়ামের মূল আকর্ষণ মমি রুম। দুইটি আলাদা মমি রুমে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০ টি মমি রয়েছে।এক রানী কে দেখলাম তার পোষা বেবুন সহ মমি করে রাখা হয়েছে, আরেকজনের দেহ থেকে হৃৎপিণ্ড আলাদাভাবে বের করে মমি করে রাখা হয়েছে দেহের পাশে।সবশেষে এসে দাঁড়ালাম রামসিস-২ এর মমির সামনে,এই তাহলে সেই চ্যাম্পিয়ন! এই ক্ষীণকায় মানুষটিই এক কালে এত প্রতাপশালী ছিল!মনে পড়ে গেল পবিত্র কুরআনের সেই আয়াতঃ
“This day shall We save thee in the body, that thou mayest be a sign to those who come after thee! but verily, many among mankind are heedless of Our Signs!”[Qur’ân 10:90-92]
অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।মমি রুমে ছবি তোলা নিষেধ,তাও ইচ্ছা সংবরণ করতে না পেরে চুরি করে তুলে ফেললাম কয়েকটা ছবি।
পরবর্তী গন্তব্য ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম, হোটেল থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা হাঁটা রাস্তা।এত কিপটামি, এত পরিশ্রম সব বিফলে গেল,সংস্কার কাজের জন্য মিউজিয়াম এক মাসের জন্য বন্ধ! অগত্যা বিরস বদনে আশে পাশে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ পেয়ে গেলাম বিখ্যাত বাজার খান এল খলিলি।সস্তায় কেনাকাটার জন্য এটাই কায়রোতে বেস্ট, অনেকটা আমাদের বঙ্গবাজারের মত। এই বাজারের পাশে খুব পুরানো সুন্দর একটা মসজিদ আছে দেখার মত। প্যাপিরাস কিনলাম এখান থেকে,জিনিস টা বেশ আকর্ষণীয়।মহিলাদের ড্রেস ও বেশ সস্তা।
শেষ দিন সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে White ক্যাব(এই ক্যাবই সবচেয়ে সস্তা)নিয়ে চলে গেলাম সালাহদিন সিটাডেল,বাংলায় আমরা যাকে জানি সালাহউদ্দিনের দুর্গ বলে।সালাহদিন সিটাডেল পুরানো ইসলামিক সমরকৌশলের এক অনবদ্য উপাখ্যান। শহরের শেষ প্রান্তে আল আজহার পার্ক পার হয়ে অল্প কিছুটা দূরে পাহাড়ের পাশে চমৎকার একটা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে এই দুর্গ ।দূরে নীলনদ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কায়রো শহরের প্যানরমিক ভিউ পাওয়া সম্ভব এখান থেকে।সেইসাথে,সুপ্রাচীন কারুকার্য মণ্ডিত মসজিদের শীতল বাতাস মনে অন্য ধরনের প্রশান্তির শীতলতা আনতে বাধ্য।ন্যাশনাল পুলিশ মিউজিয়ামটিও এখানেই।
অবশেষে ফেরার পালা। দুপুরের পর আস্তে আস্তে বের হয়ে এলাম সালাহদিন সিটাডেল থেকে, গন্তব্য এয়ারপোর্ট। ক্যাব ওয়ালা ইংরেজি বুঝে না, শুধু জানতাম, এয়ারপোর্ট এর আরবি মাতার,এতেই কাজ হয়ে গেল। বোনাস হিসেবে সে মিটারে যেতে চাইল,মিসরে এটা আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত ব্যাপার।
চমৎকার একটা ট্রিপ ছিল এটা। অনেক দিনের একটা শখ পূরণ হল,এত সহজে হবে ভাবিনি। মিসরের নামে অনেক প্রোপ্যাগান্ডা ছিল, ঠগ,জোচ্চোরের দেশ,নিরাপত্তা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।গিজা কমপ্লেক্স আর টিপসের ব্যাপারটা বাদ দিলে বাকি সব কিন্তু নরমাল ই।সব মিলিয়ে ভালোই লেগেছে দেশটা, ইনফ্যাক্ট শহরটা!এত কম সময়ে অন্য শহরে যাওয়ার আর সুযোগ হল কোথায় !

অনেক লম্বা হয়ে গেল লিখাটা।সৌদি আরবের গল্প না হয় আরেক পর্বে করা যাবে।

সিসিবি তে এটাই  আমার প্রথম  পোস্ট, ভুল বা বিরক্তি  ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার   অনুরধ থাকলো ।

ছবি দেখতে এখানে

৫,১৯৫ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “কায়রোর দিনলিপি”

  1. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    চমৎকার। ছবির সাথে অনবদ্য বিবরণ। খুঁটিনাটি সহ। মনে হল নিজেই ঘুরে এলাম 😀 :gulli2: :gulli2: :gulli2:

    সিসিবিতে স্বাগতম। পরের গুলোর অপেক্ষায় থাকলাম ভাই। :goragori: :goragori: :goragori:


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    যেহেতু রামেসিস সেকেন্ড এর প্রসঙ্গ বেশ কবার এসেছে তাই বলছি রামেসিস ওয়াজ গ্রেট রুলার।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সিসিবি তে এটাই আমার প্রথম পোস্ট, ভুল বা বিরক্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরধ থাকলো - সিসিবি তে সুস্বাগতম!
    বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ভ্রমণ কাহিনীটি বিবৃত হয়েছে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।