বেস্ট ফ্রেন্ড

আজ নীলার বিয়ে।মা মরা বাড়ি র একমাত্র মেয়ে।আদর টা তাই ওর একটু বেশি। বাবা কখনই মেয়ের কোনো আব্দারের সাথে পেরে ওঠেননি।বাবাকেও অনেক ভালোবাসে নীলা।এক এক করে সব অতিথিরাই আসছে।এখোনো আসেনি কেবল নীলা র বেস্ট ফ্রেন্ড রাফি।
..
বাবাকে জিজ্ঞেস করে নীলা
-বাবা রাফি কি এসেছে?
-না মা ও তো এখনো আসেনি।
প্রচন্ড রাগ হয় নিলার।রাফিটা এমন কেন?ও না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।অথচ আমার বিয়ের দিনটাতেও কি এমন কাজ ওর?
মনে মনে ভাবে নিলা।
নিলা প্রসংগ:ভারসিটির সুন্দরী মেয়েদেরি একজন নিলা।মা নেই।বাবাই সব।বাবা কষ্ট পাবে ভেবে বাবার কথা ভেবে কখনোই প্রেম টেম করেনি।প্রোপোজ কিন্তু যথেষ্টসংখ্যক পেয়েছে।কিন্তু ও ওর মত ছিল।প্রচন্ড ছেলেমানুষি আর অভিমানি ছিল নীলা। বন্ধুদের কারো সাথে ঝগড়া হলে কখনোই নিজে থেকে সরি বলতনা ও যতখন বন্ধুরা না বলত।তবে সবাই এটাকে নিলার অহংকার না ভেবে আত্বমরযাদাবোধ ভাবত।অবশ্য অনেকে বলাবলি করত যে রাফিকেই নিলা ভালবাসতো।কিন্তু নিলার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।তাই সবার সে ভুল ধারনা ভাংলো।রাফি নিলার অনুরোধে ওর বিয়ের যাবতীয় কাজেই হেল্প করেছে।কিন্তু আসল দিনে এসগে উধাও।

রাফির নাম্বারে ফোন দেয় নিলা ০১৭৩৩……
নারি কন্ঠ,”এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা…”
আবার রিং দেয় নিলা। কয়েকবার।কিন্তু একই কন্ঠ।।রাগে নিলা হুংকার দিয়ে ওঠে-
-সব দরজা বন্ধ করে দাও।আর কেউ যেনো ঢুকতে না পারে বাসায়।।
বাবা অসহায়
-কি বলিস মা?তোর ফুপিরা আসছে।
-না আমি বলেছিনা???
-ঠিক আছেরে শান্ত হ।বুঝেছি।রাফির উপরে রাগ করেছিস।হয়ত ব্যস্ত আছে মা।ঠিক এসে পরবে।
-কেউ ওর হয়ে কথা বলবেনা।।
মনে মনে নিলা ঠিকই রাফিকে খুজছিলো এবং চাইছিলো যে ও আসুক।রাফি এলোনা।
বিদায়ের সময় হয়ে এলো।যাবার আগে অনেক কাঁদল নিলা।রাফির জন্য অনেক খারাপ লাগছিল ওর।
বরের গাড়ি তে উঠে চলে গেল একটু পরে।পিছে ফেলে গেল তার ২৪ বছরের প্রিয় বাসা,বাবা,ছোট বোন আর বন্ধুদের।শেষবারের মত রাফিকে ফোন দিল।
“এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না.
।”
“ঠিক আছে তুই যখন আসবিই না তখন তোর সাথে আমার আর কোনো কথা নাই।দেখি তুই আমাকে কি করে খুঁজে পাস।”-মনে মনে বলে নিলা।তারপর সিমটা খুলে চোখ মুছতে মুছতে টিসুর সাথে পেচিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।সেই সাথে রাফির কন্ট্যক্ট নাম্বারটাও।।আর অনেক কষ্ট নিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করে নীলা।।।

রাফি আসেনি,আসেনি তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিদায় জানাতে…অভিমানী মেয়েটা সমস্ত চাপা অভিমানে রাফিকে ফোন থেকে মুছে ফেলে,মন থেকেও কি পেরেছিলো???





১২ বছর পর…
ভারসিটির গোল্ডেন জুবিলি উপলক্ষে আজ অনেকদিন পর একত্রিত হয়েছে ওরা।নিলার সাথে তার ১০ বছরের ছেলে রাফি আর কোলে ৬ বছরের আরেক ছেলে রাতুল।ধীরে ধীরে পুরোনো জায়গাটাকে নতুন করে দেখছে নিলা।সবাই প্রায় হাজবেন্ড ওয়াইফ নিয়ে এসেছে।।নিলার চোখ আটকে গেল।।রাফি।। দীর্ঘ ১২ বছর পর দেখা।রাফিই এগিয়ে এলো
-কেমন আছিস?
-ভালো।
ছোট্ট অভিমানি উত্তর নিলার।আজ আর সেদিনের মত আনন্দে জরিয়ে ধরলোনা নিলা।পরিচয় করিয়ে দিল শুধু ওর ছেলেদের সাথে।।তারপর জিজ্ঞেস করল
-একা যে।তোর বউ কোথায়?
-ওটা তো হওয়ার কথা ছিলনা।
-মানে?
-মানেটা ১২বছর আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
বলতে বলতে কন্ঠ ধরে এল রাফির।।।
-ওহ আমার একটা কাজ আছে।আসিরে দোস্ত।
বলে হ্যন্ডশেক করার জন্য হাত বারিয়ে দিলো রাফি।এদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা নিলা।রাফির হাতটা ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল ছোট মানুষের মত।
ওটাই ছিল বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছে পাওয়া রাফির শ্রেষ্ঠ উপহার।।।

৫,১৫৯ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “বেস্ট ফ্রেন্ড”

  1. ইশরাক (২০০৮-২০১৪)

    আমার নাম্বারের শুরুটাও ০১৭৩৩.... একাই থাকতে হবে হয়ত নীলার খোজে। হাহ ???


      হারিয়ে যাইনি তবু এইত জরুরী খবর
      আকাঙ্ক্ষা আর হতাশায় হারিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।