একটি ক্যাডেটীয় প্রেমকাহিনী

রংপুর ক্যাডেট কলেজের কলেজ বাসটা জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে যখন পার্ক করলো ক্যাডেটরা তখন ক্লাস শেষে ফলইন করে আছে লাঞ্চে যাবার জন্য।পার্কিং এ যাবার সময়ই ক্ষণিকের জন্য চোখে চোখ পড়লো নীল হাউজের জেপির সাথে( ফার্স্ট স্পেলের জেপিশীপ চলছিল)। সি সি আর এর ইলেভেন এর এক্সকারশন!
ঐ দিন থেকেই কবিরের মনে লাল-নীল প্রজাপতি উড়া শুরু করলো।সেই যে শুরু,এরপর আর ওকে পায় কে! কক্সবাজার,ইনানী কি টেকনাফ-সবখানে সে তার জেপি কেই দেখে।ক্লাস ইলেভেনের এক্সকারশন শেষ হয়।কবিরের মনের নীল হাউজের জেপি ভূত হয়ে চেপে বসে।লাজুক স্বভাবের কবির একে ওকে বলে খোঁজ করার চেস্টা করে।কিন্তু পেতে পেতে অপেক্ষা করতে হয় পরের ছুটি পর্যন্ত।অবশেষে খুঁজে পায় এনাকে!ক্লাসমেট ওরা।তাই অবশ্যই প্রথমে ফ্রেন্ডশীপ করতে হবে।এখন কবির দ্বারস্ত হয় ব্যাচের লাভগুরু আসিফের কাছে!
ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়।কয়েকদিন এক্সেপ্ট করে না এনা।পরে আসিফের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড নীরার মাধ্যমে এনাকে দিয়ে ছলে বলে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করানো হয়।তারপর দুটি-একটি নক,ভালো-মন্দ কথা!এজ ইউজুয়াল মেয়েদের যা স্বভাব!৩টা মেসেজ দিলে রিপ্লাই আসতো ১টার! :p কিন্তু হাল ছাড়েনা কবির।এভাবেই ধীরে ধীরে ফ্রেন্ডশীপ হয়ে গেলো ১ ভ্যাকেশানের মাঝেই।পরের টার্মে আবার ওদের আই সি সি এল এম সিলেট ক্যাডেট কলেজে।কবির জানতে পারে যে এনা যাচ্ছে সেখানে মোটামুটি শিউর।এনার ইভেন্ট,ইংলিশ ডিবেট।মনে মনে আশাবাদী হয় কবির- ‘আররে আমিও তো ইন্টার হাউস ইংলিশ ডিবেট করি।” (যদিও ৩ বছরে ইন্টার হাউজে তার পজিশন ছিলো যথাক্রমে সিক্সথ,সিক্সথ এবং ফিফথ!!!)
ছুটিতে এরপর পড়াশুনা বাদ দিয়ে ভোক্যাব এবং স্পিকিং প্র্যাকটিস করা শুরু করে কবির।যে করেই হোক এবারের পজিশন টা ধরতেই হবে তাকে।তাহলে একটা সুযোগ আসবে। “এনার সাথে দেখা করার এটাই সুযোগ।সো আমাকে পারতেই হবে।”-মনে মনে ভাবে কবির।যেই ভাবা সেই কাজ,পুরদমে প্র্যাকটিস করা শুরু করে।কারণ এছাড়া দেখা হবার সুযোগ যে খুবই কম।কেননা কবিরের বাসা লালমনিরহাট আর এনার বাসা বাগেরহাট।
কলেজে যাবার কিছুদিন পর ডিবেট কম্পিটিশান।কবির এবারে অনেক প্র্যাকটিস করে এবং অবশেষে দ্বিতীয় হয় ইন্টার হাউজে।কিন্তু তার খুব মন খারাপ হয়ে যায়।এল এম এ তাহলে যাওয়া হচ্ছে না।অবশ্যই ফারস্ট এর প্রায়োরিটি আগে থাকবে।তবে হাল ছাড়েনা কবির।ও আবার ছিলো তরিক স্যারের প্রিয়পাত্র।আর এল এম এ যেহেতু সাদমানের আরোও একটা ইভেন্ট আছেই(ইংলিশ এক্সটেম্পোর) তাই ওকে বুঝিয়ে বলে কবির।আর সাদমানও বন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।কয়েকজন মিলে স্যারকে বলে টলে অবশেষে রাজি করানো যায় কবিরের ব্যাপারে।কিন্তু কন্ডিশন থাকে যে কবিরকে অবশ্যই প্লেস পেতে হবে এল এম এ আর এজন্য প্রোনান্সিয়েশান এর উন্নতি করতে হবে যাতে অন্য কেউ তাকে বাদ দিতে না পারে।
ক্যাডেট পারে না এমন কিছু নেই।কবির ফাইনালি আই সি সি এল এম এর জন্য সিলেক্ট হয়।যথারীতি আই সি সি এল এম শুরু হয়ে যায়।২য় দিন এনার প্রথম ইভেন্ট থাকে ইংলিশ এক্সটেম্পোর।অটমেটিক কবিরের সেকেন্ড সাপোর্টেড কলেজে পরিণত হয় জে জি সি সি!এনা ফোর্থ হয় তার প্রথম ইভেন্টে।রেজাল্ট ডিক্লেয়ার করার সময় সবার তালি শেষ হয়ে গেলেও চলছিলোই কবিরের হাত দুটি!!!অবশ্য এজন্য পরে হালকা পাতলা পাংগাও খেতে হয়েছিলো এডজুট্যান্ড স্যারের কাছে।কিন্তু তাতে কবিরের বয়েই গেছে!
এল এম এ এসে ৩ দিন পর্যন্ত সাকসেস বলতে শুধুই দুবার চোখাচুখি আর এনার সেই মায়াবি হাসি।আর তাতেই কবির গন কেইস!যাইহোক যাব খুদা চায়েগা তাব কন রুখেগা!! ইংলিশ ডিবেটে যৌথভাবে ফার্স্ট হয় কবির আর এনা!শেষের আগেরদিন কথা বলার সুযোগ হয় ওদের,দুজনে একসাথে কংগ্র্যাটস জানায় পরস্পরকে।তারপর কিছুখন গল্প করে।কিছু একটা বলবে বলবে করেও বলতে পারেনা কবির।এনাও যে বুঝেনা তাও নয়,আসলে এনার প্রথম প্রথম যতটা বোকাসোকা লেগেছিলো কবিরকে ও যে ততোটা নয় বরং মিচকে তা আর বুঝতে বাকী নেই।অবশ্য ওরও একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করে ্কবিরকে।তবে তা সে এক্সপ্রেস করেনা।এল এম শেষ হবার আগে একটা চিরকুট লিখে কবির।সেটা হাসানের ফ্রেন্ড মাইশাকে দেয় এনাকে পৌঁছে দেবার জন্য।
ক্লাস টুয়েল্ভ এ ওঠে ওরা।এনা নীল হাউজের হাউজ প্রিফেক্ট আর কবির এসিস্ট্যান্ট হাউজ প্রিফেক্ট!ভ্যাকেশানে গিয়ে খুব মন খারাপ থাকে কবিরের। “তাহলে কি এনা ওকে ফিরিয়ে দিলো।নতুবা চিরকুট পাবার পর তো অন্তত রিপ্লাই পেতাম।”-কবির ভাবে। কয়েকদিন পর ছিলো কবিরের বার্থ ডে।
অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এনার ফোন পায় কবির- “কবির আমি খুব স্যরি তোকে রিপ্লাই দিতে পারিনি। আসলে আমার মনে হয় তোর ক্ষেত্রে যেটা কাজ করছে সেটা শুধুই ইল্যুশান।কাজেই ইউ বেটার থিংক ওভার ইট এন্ড লেট মি নো আফটার টু ইয়ারস। বাই দ্যা ওয়ে মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অব দ্যা ডে, হ্যাপি বার্থ ডে কবির।”
কথাগুলো শুনে খারাপ লেগেছিলো কবিরের।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে এনার ভয়েস টা একটু ভেজা ভেজা লাগলো কেন!!তাহলে কি………আচ্ছা ভাবনা অফ রেখে কবির আবার ফোন দেয় এনাকে-
-হ্যালো
-হ্যালো এনা,তুই কি বললি ? ইল্যুশান?
-মানে দোস্ত আমি তোকে বলেছি ২বছর পরে ঠিক তুই কি ভাববি সেটা জানাস আমাকে।আর আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না, হোপ ইউ ডোন্ট মিসআন্ডারস্ট্যান্ড মি।।
-উম আচ্ছা,ঠিক আছে।কিন্তু আমি কি এই ২ বছর তোর সাথে আর যোগাযোগ ও করবো না?
-বেটার না কর?
-আচ্ছা মানলাম।সব শুনলাম।কিন্তু আমাকে একটা কথা দিতে হবে।
-হুম বল।
-আমি ২ বছর পর যোগাযোগ করতে পারবো তো?
-হাহা,ইনশা আল্লাহ।
-এর থেকে আমাকে কয়েকটা ইডি দিতিস।
-হাহা,চিল… তোর না পুডিং পছন্দ? যদি ঠিকঠাক মানতে পারিস যা বলেছি আমি নিজ হাতে পুডিং বানিয়ে খাওয়াবো তোকে, ওকে?
-প্রমিজ?
-উম,হুম প্রমিজ…
এবার কবির বুঝতে পারে এনা কি বলতে চায়… তারপর শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর…
…………
…………
…………
২ বছর পর-
এনা ঢাকা মেডিকেলে পড়ে আর কবির ঢাকা ইউনিভারসিটির জেনেটিক্স এ! দূর থেকে হেঁটে আসছিলো আসিফ(লাভ গুরু)! দুজনের গায়ে ক্যাডেট হুডি পড়া দেখে দূর থেকেও চিনতে খুব একটা অসুবিধে হয় না। টিফিন বাটি থেকে বের করে পুডিং টা কবিরের মুখে পুরে দেয় এনা!
-এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার পুডিং খাওয়াবি তো?
-এহহ এত্ত সোজা নাহ, আমি হাপ্রি আর তুই এসিস্ট্যান্ট!!!
-ঐ হলো।আচ্ছা তাহলে একটা কথা তো দে।
-হুম বল।
-এট লিস্ট হাউজ প্ল্যান টা করার সময় আমায় সাথে নিবি?
-উহু,সেইম হাউজ তো,সে আর বলতে!!!
তারপর হাতে হাত,মিস্টি হাসি এবং চলছে…………

বি. দ্র. : এটি একটি কাল্পনিক কাহিনী।কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নহে!! :p

৫,৭৫৬ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।