পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ ছয়

“চাঁন রাইতে চাঁদনী চক যাইবি না কিলা? এক্কেরে আসল মজা পাইবি।”
পুরনো ঢাকার এই সংলাপ মিথ্যা নয় প্রমাণ পেলাম। একবার ঈদের আগের রাতে মা’র ব্লাউজ আনতে গেলাম। দর্জি ডেলিভারি দিতে দেরি করছে। পরে বুঝেছিলাম সে আসলে বানায়নি সেই ব্লাউজ, শুধু কাপড় কেটে রেখে দিয়েছে, সেলাই বাকি! অথচ দু’দিন আগে ডেলিভারির ডেট ছিল।
আমি রাগে, ক্ষোভে গড়গড় করছি, পায়চারি করছি, আর আশেপাশের ঘটনা দেখছি। অনেকের সাথেই এমন করা হয়েছে।
হুড়মুড় করে দুই তরুণী দোকানে ঢুকেই দর্জি’র ওপর হামলে পড়ল। “মিয়া, আপ্নেরে কইলাম শাহজাদি তাইবা ড্রেস বানাইবেন… পাবলিকে টাস্কি খাইয়া যাইব! আর আপ্নে এইডা কী বানাইছেন? এইডা তো মালিকা হামিরা ড্রেস অইছে; আমি কি এই চিমা মাস্তি কা হুল হুল চাইছি?”
বেরসিক দর্জি বলে বসলো, “যেইডা বানাইছি এইডা পরলেও আপা পাবলিকে টাস্কি খাইবো!”
তখন বিটিভি’তে আলিফ-লায়লা সিরিয়াল নিয়ে মাতামাতি।
আরেকজন এলেন উনার ব্লাউজের পিঠের বোতাম ভুল করে সামনে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। দেখলাম সবুজ ব্লাউজের সম্মুখ দিকটায় তিনটি নীল বোতাম!
রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশ! রাত তিনটায় মা’র ব্লাউজ নিয়ে ঘরে ফিরলাম।

পুনশ্চঃ অনেক আগে ছোটবেলায় মা’র সাথে ঈদের কেনাকাটায় গিয়ে শুনেছিলাম এক মা তার মেয়েকে বলছেন, “কি জ্বালা, কহন থিকা লাছা লাছা করতাছস (লাসা ড্রেস সেবার ঈদের ফ্যাশন), আবে হালায় লাছা বাদ দিয়া এক খান ছালা কিনা ল’। ফর্সা মেয়েটি মুখ কালো করে মায়ের পেছনে পেছনে হাঁটছে। চেয়ে না পাবার কিংবা পেয়ে হারানোর দুঃখটা মেয়েদের বেশি হয়, না কি?

আগস্ট ৫, ২০১৫
টরন্টো, কানাডা।

১টি মন্তব্য “পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ ছয়”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।