বিরক্তি-অবহেলা চক্র: খুব খারাপ! খুব খারাপ!!

আজ সকালেই দালাইলামার একটি কোটেশন পড়ে যা বুঝলাম তা হলো এই যে –
কখনো কারো ক্রোধের কারন হলেও, বিরক্তির কারন হতে নেই। কারন:
ক্রোধ ও বিরক্তি, দুই-ই মানব মনে থাকা কাছাকাছি ধরনের অবস্থা হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর।

ক্রোধ জিনিষটা তুলনামূলকভাবে তীব্রতর একটি অবস্থা হলেও তা আসে যায়। অর্থাৎ তা দীর্ঘস্থায়ী কিছু নয়।
কিন্তু বিরক্তি কম দৃশ্যমান হলোও তা দীর্ঘ্যস্থায়ী একটি অবস্থা যা ধিকি ধিকি করে জ্বলতেই থাকে। সহজে তার প্রশমন হতেই চায় না।
এমন কি কারো কারো উপর থেকে কখনো কখনো সারা জীবনেও সেই বিরক্তিটা দূর করা যায় না।
একবার কারো প্রতি বিরক্তির উদ্রেক হলে তা যে শুধু সহজে যেতে চায় না, তাই নয় – বিরক্তি উদ্রেককারী মানুষটার নাম শুনলে, চেহারা দেখলে, এমন কি তার কথা কোন ভাবে মনে এলেও – মনটা বিষিয়ে ওঠে।

তাই ভালছিলাম, একটি সম্পর্কের সুস্থতা ধরে রাখতে এমন কিছু কখনোই করা উচিৎ নয় যা অন্যজনের বিরক্তির উদ্রেক করে।
জেনেবুঝে সেরকম কিছু করাটা তো অতি গর্হিত কাজ, না বুঝেও যেন সেরকম কিছু ঘটে না যায়, সে ব্যাপারেও সবার সতর্ক থাকা উচিৎ।
আর একান্তই যদি ঘটে যায় সেরকম কিছু, অন্যজনের উচিৎ হবে দ্রুততম সময়ে সেটা সঙ্গিকে জানানো। অর্থাৎ কমুনিকেট করা
এবং যথাশীঘ্রই ব্যাপারটা রিজলভ করে নেয়া।

আমার তো ধারনা, একজন ভালবাসার মানুষ কখনো চাইবেন না তার সঙ্গির বিরক্তির কারন হতে।
আর মনের ভুলে যদি তা হয়েও পড়েন কখনো, জানার সাথে সাথেই যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন সেটা শোধরাতে যেন, জীবনেও তা আর না ঘটে কখনো…

কিন্তু কখনো কখনো তো এমনও হয় যে, বার বার বিরক্তির উদ্রেক করা সঙ্গিকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন কেউ কেউ।
আর তখন এমন একটা সময় আসে যে, মনে হয় “আর কতো? নিজে বোঝে না, কি করতে হবে আর কি করতে হবে না? এত এত কমুনিকেট করে, এতবার শুধরিয়ে আর তো পারি না…”
সেটা যদি ঘটেই কখনো, তাহলেই কিন্তু সর্বনাশের শুরু হয়ে গেল।

কিভাবে? বলি, তাহলে সেটা এখন।

বিরক্তির কারনে যখনই সঙ্গি হাল ছেড়ে দেবেন, দেখা যাবে কাজেকর্মে সঙ্গির প্রতি একটা অবহেলা এসে যাচ্ছে।
আর অবহেলা হলো সেই জিনিষ, যা কিনা ভালবাসার উল্টোপিঠ।
অনেকেরই ধারনা, ঘৃনাই হলো ভালবাসার বিপরিতার্থক শব্দ।
আসলে তা না।
ঘৃণা নয়, অবহেলাই হলো ভালবাসার বিপরিতার্থক শব্দ।
ভালবাসার মানুষটি যেদিন থেকে অবহেলা প্রদর্শন করা শুরু করে, সেদিন থেকে, ভালবাসার মৃত্যুও শুরু হয়ে যায়……
সমস্যাটা জটিল হয়ে ওঠে, যখন কোন যুগল একবার “বিরক্তি-অবহেলা”র এই দুষ্ট-চক্রে ঢুকে পড়েন।

শুরুতেই হয়তো মনের ভুলে করা ছোট্ট একটি আনরিজলভড বিরক্তির কারনে সঙ্গির কাছ থেকে কিছু অবহেলা পেলেন কেউ, তাতে তার ভাল রকমের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
নিজে যে বিরক্তির কারন ছিলেন, তার কাছে তখন সেটার চেয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে হঠাৎ পাওয়া অবহেলাটা।
কারন এটা তো জানা কথা যে “ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই সহ্য করা যায়। কিন্তু তার অবহেলা সহ্য করা যায় না” – ঠিকই বলেছিলেন প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ।
কী ঘটবে তখন সেই হঠাৎ পাওয়া অসহ্য অবহেলাটার বিপরীতে?
অন্য কিছু ঘটলে সমস্যা কম কিন্তু অবহেলায় পড়া ব্যক্তিটি যখন আরও বেশি বিরক্তি উদ্রেককারি কিছু করাটাকে বেছে নেবে, শুরু তখনি শুরু হয়ে যাবে ঐ দুষ্টু চক্রের দুর্নিবার অগ্রযাত্রা।
আগে যা ছিল “ক্ষুদ্র বিরক্তি – কিছু অবহেলা”, এবার তা রূপ নেবে “বৃহত্তর বিরক্তি – আরও বেশি অবহেলা”-এ।

আর একবার এই চক্রের যাত্রা শুরু হলে তা থেকে পরিস্থিতি “বৃহত্তম বিরক্তি – চরম অবহেলায়” উপনিত হতে খুব একটা সময় লাগবে না।

এমন এক যুগলের কথা ধরা যাক, যেখানে সঙ্গিনীর সামান্য শারীরিক সমস্যা – এই যেমন: ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয়েছে।
উনি ভাবছেন, আদা চা খেয়ে, গার্গেল করে আর ভেপার টেনেই এটা বাগে এনে ফেলবেন।
কিন্তু ঠান্ডায় জবুথবু সঙ্গিনীকে দেখে, তাঁর সঙ্গিটি যে, এরই মধ্যে এক ডাক্তার-বন্ধুর সাথে কথা বলে ঔষধ-পত্র, নাকের ড্রপ ইত্যাদি এনে হাজির করে ফেলেছে!
আর ইচ্ছার বিরুদ্ধে এতসব অত্যুৎসাহ দেখে উনি তো ভালই বিরক্ত। এরই প্রতিক্রিয়ার দেখা গেল, দিন কয়েকের জন্য সম্পর্কের উষ্ণতা কমে গেছে।
সঙ্গি জানলোও না কি ছিল তাঁর অপরাধ, কিন্তু অবহেলাটা পেয়ে সে হয়তো আবারো কোন বিরক্তির কাজ করে বসলো।
এবার আর তা না জেনে না, জেনে শুনেই।
আর এরই ধারাবাহিকতায় একদিন এমন একটা অবস্থায় তারা হয়তো উপনিত হয়ে যাবে যেদিন তাদের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক তো নাই ই, এমনকি মুখ দেখা দেখিও বন্ধ।

কেমন হবে তা?

আশা করছি, এমনটা না হোক কারো জন্যই।
আর তাই যেটা বলার ছিল তা হলো –
১) সবারই সতর্ক থাকা উচিৎ যেন পরস্পরের প্রতি কখনো কোনো বিরক্তি উদ্রেককারি কোন কাজ কেউ করে না বসে।
২) তেমন কিছু একান্তই যদি হয়ে যায়, নিজেদের মধ্যে দ্রুত আলাপ করে সেটার নিষ্পত্তি যেন করে নেয়া যায়।
৩) প্রতিকার হিসাবে অন্য কিছু করলেও কোন ক্রমেই এমন কিছু না করা যেন না হয়, যাকে অবহেলা হিসাবে গন্য করা যায়।

কারন, একবার যদি কেউ এই “বিরক্তি-অবহেলা”র দুষ্টুচক্রের জালে আটকা পড়ে, সময় যতই গড়াবে, তাঁদেরকে ক্রমান্বয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলতে থাকা জাল ছিড়ে বেরুনো ততই কঠিনতর হয়ে উঠতে থাকবে।
যেদিন তারা সেই জাল থেকে বেরুবে, দেখবে এত সাধ করে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সম্পর্কটা নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে নর্দমার ধারে।
কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না, কেবলই থু থু ছেটাচ্ছে………

৩,৭২৪ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “বিরক্তি-অবহেলা চক্র: খুব খারাপ! খুব খারাপ!!”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।