চিনে নিন আপনার প্রকৃত বন্ধুটিকে…

এক
বন্ধুত্ব দুই ধরনের হয়ে থাকে।
– সুবিধাজনক
– অসুবিধায় পরিপূর্ণ
বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন:

যেটা করা উচিত, তা হলো – অসুবিধায় পরিপূর্ণ বন্ধুত্বগুলো থেকে নিজেকে যথাসম্ভব মুক্ত করে সুবিধাজনক বন্ধুত্বগুলো চালিয়ে যেতে যেতে এক বা একাধিক প্রকৃত বন্ধু খুজে নেয়া……
কিভাবে করবেন?
বলছি, সাথে থাকুন…..

দুই
“পোকরিত” কথাটা ওভার ইউজড হয়ে হয়ে এখন একটা ক্লিশেতে পরিনত হয়েছে।
🙁 🙁 🙁
কথায় কথায়, পোকরিত ইতিহাস, পোকরিত দেশপ্রেম, পোকরিত মুক্তিযোদ্ধা, পোকরিত ইসলাম, পোকরিত ভালবাসা, পোকরিত প্রেমিক/প্রেমিকা, পোকরিত বন্ধু, ইত্যাদি শুনে শুনে এই পোকরিত কথাটার উপরেই ভক্তি উঠে যাচ্ছে আজকাল!!!
তাও, আজ বসলাম এই পোকরিত বন্ধুত্বের বর্নণা দিতে।
বুঝতে হবে, শুধু পরিচিতি ও নৈকট্য থাকাটাই বন্ধুত্বের জন্য যথেষ্ট শর্তপুরন নয়।
বন্ধু হবার জন্য ভিতর থেকে একটা টান অনুভব করার ব্যাপার থাকে যে টানটা বন্ধুর উপস্থিতিতে মনটা ভরিয়ে দেয়।

বন্ধুত্ব তাই কেবলই একটা পরিচিতির নাম না, এটা আসলে এক ধরনের সম্পর্কও…
প্রকৃত বন্ধু হতে হলে, আগে বন্ধু নামক সেই সম্পর্কে থাকাটা জরুরী। তারপরে আসবে, আরও কিছু শর্ত পুরনের কথা।
আসুন জেনে নেই, কি সেই সব শর্ত?
– এটা কোনো শ্রেনিবিভাগের অন্তর্ভুক্ত হবে না (অমুক ফ্রেন্ড তমুক ফ্রেন্ড না। শুধুই ফ্রেন্ড)
– শর্তসাপেক্ষ নয়। (এইটা এইটা করলে ফ্রেন্ড আছি, না করলে নাই – এমন না)
– আমাকে নূল্যায়ন করলে আছি, না করলে নাই – এমন না।
– এটা বলা যাবে, সেটা করা যাবে না – এরকম কোনো বিধিনিষেধের বেড়াজালে তা আবদ্ধ না।
– এটা এমন একটা সম্পর্ক, যা মূলত ইমোশনাল সাপোর্ট দেবে, এবং
– কোনো রকমের প্রতিদানের আশা না করেই সুখে বা দুখে পাশে এসে দাঁড়াবে।

আছে আপনার এরকম কোনো বন্ধু?
যদি থাকে, আপনি ভাগ্যবান।
কারন, সে ই হলো আপনার “প্রকৃত বন্ধু!!!”

তিন
এবার সেই সব বন্ধুদের কথা বলি, যাদের মধ্য থেকে “প্রকৃত বন্ধু” খুজে পাওয়ার সম্ভবনা থাকে অতিক্ষীণ (এটা ইংলিশ এলফেবেটিক অর্ডারে লিখছি, গুরুত্বের বিচারে না):
১) Appendage বা লেজুড়বৃত্তি করা বন্ধু:
সফল বন্ধুর কাছ থেকে সুবিধা পেতে যারা সবসময় আশেপাশে থাকে।
২) Conditional বা শর্তসাপেক্ষ বন্ধু:
বিশেষ কোনো চাহিদা পুরন সাপেক্ষে যারা বন্ধুত্বটা চালিয়ে যায়।
৩) Counterfeit বা ভুয়া বন্ধু:
সামনাসামনি বন্ধুত্বের ভাব ধরে কিন্তু আসলে তাঁরা বন্ধুত্বের কোনো দায়ই কাঁধে নেয় না। এদের উপর তাই আস্থা রাখা যায় না।
৪) Evaluative বা পরিমাপের মধ্যে থাকা বন্ধু:
এঁরা প্রতিনিয়ত পরিমাপ করে যায়, কতটা পেলাম আর কতটা দিলাম। যতক্ষণ বেশী পায়, থাকে। কম পেলেই অভিযোগের ডালা মেলে বসে হিসাব দেখাতে।
৫) Fair-Weather বা সুসময়ের বন্ধু:
আপনি যখন সমস্যায় আছেন, অথবা তাঁকে যখন দরকার, দেখবেন মিথ্যা বলে বা কোনো না কোনো অজুহাত দিয়ে সে ভেগে গেছে। অথচ সমস্যা দূর হয়ে গেলে, বা তাঁর যখন আপনাকে দরকার, তখন ঠিক ঠিকই আপনার পিছে পিছে ঘুরে বেড়াচ্ছে যতটা যা সুবিধা পাওয়া যায় তা আদায়ের জন্য।
৬) Leech বা চোষক বন্ধু (জোঁকের লাহান):
এঁরা আপনার সব এনার্জি, সামর্থ্য চুষে নেবে নানা ইমোশনাল নাটক করে করে। আপনার যখন তাদেরকে দরকার পড়বে, তখন দেখবেন কোনো না কোনো নাটক করে বা মিথ্যা বলে দূরে থাকবে এবং আপনাকেই আবার সেজন্য দোষারোপ করে আরও কিছু এনার্জি শুষে নিয়ে ছোবড়া বানিয়ে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে।
৭) Negative বা নেতিবাচক বন্ধু:
বন্ধুত্বে থাকে ঠিকই কিন্তু সারাক্ষণ মনোযোগ থাকে “কি পেলাম না”, “কি করলে আরও ভাল হতো” এসব নেতিবাচক বিষয়াদি নিয়ে। তাছাড়া বন্ধু আর বন্ধুত্বের নানা ভুল ধরাধরি করে বেড়ানোটাও এদের নৈমিত্তিক কাজ।
৮) Noncommittal বা দায় এড়ানো বন্ধু:
“ধরি মাছ না ছুই পানি” মনবৃত্তি সম্পন্ন সেসব বন্ধু যারা সারাক্ষণ আগপিছ করতে থাকে বন্ধুত্বে থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে।
৯) Occasional বা উপলক্ষ নির্ভর বন্ধু:
বিশেষ কোনো এক উপলক্ষে এঁরা হঠাৎ করেই বন্ধুত্ব-এ ঢুকে পড়ে। আবার সেই উপলক্ষ যখন আর থাকে না, বা অন্য কোনো কারনের উদ্ভব হয়, দেখা যায়, হুট করেই এঁরা উধাও হয়ে যায়। পরে আবার বন্ধুত্বে ফিরে যদি আসেও, দেখা যায়, সেটা হয় কঠিন শর্তসাপেক্ষ, মানে – “এটা বলা যাবে না”, সেটা করা যাবে না”, ইত্যাদিতে ভরপুর এক রেসট্রিকটেড বন্ধুত্ব তা!!!
১০) Situational বা পরিস্থিতিগত বন্ধু:
উদ্ভুত কোনো এক পরিস্থিতি থেকে সুবিধা আদায়ের জন্য যখন কেউ হঠাৎ করেই বন্ধুত্বে ঢুকে পড়ে। দেখা যায়, পরিস্থিতি বদলে গেলে এদের টিকিটাও আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!!!
১১) Spiteful বা কুচুঁটে বন্ধু:
সামনাসামনি এঁরা বন্ধুর ভাব নিয়ে চলে কিন্তু মনে মনে ঈর্ষায় জর্জরিত থাকে। তাই সারাক্ষণ ছিদ্রান্বেষণ করে যায় কি ভাবে আপনার কি কি দুর্বলতা খুজে বের করা যায় ও তা ব্যবহার করে কি কি ভাবে আপনাকে বিপাকে ফেলা যায়…
১২) Toxic বা বিষাক্ত বন্ধু:
সামনাসামনি এরা আপনার প্রতি খুবই সাপোর্টিভ – এরকম একটা ভাব নিয়ে চলে। কিন্তু পিছনে পিছনে এমন সব কলকাঠি খুব জেনে বুঝে নেড়ে যেতে থাকে যা আপনার যাবতিয় অর্জনকে যেন ধুলিস্যাৎ করে দেয়…

যেসব বন্ধুদের মধ্যে এসব লক্ষন দেখতে পাচ্ছেন, সময় থাকতেই তাদের ব্যাপারে সতর্ক হন!!!

চার
দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেয়া শর্তগুলি পুরন করে, এমন একজন প্রকৃত বন্ধু যাদের আছে, তাঁরা জানেন, এটা থাকা কতটা জরুরী।
যাদের নাই, আগের অধ্যায়ে বলেছি, আপনি যাদের বন্ধু ভাবছেন, তাঁদের মধ্যে কারা কারা আপনার প্রকৃত বন্ধু হবার উপযুক্ত নন।
তবে আপনার বন্ধু তালিকায় নিম্নলিখিত ক্যাটাগরির যেসকল বন্ধুরা আছে, তাঁদের মধ্যে থেকে খুজলে পেয়ে যাবেন আপনার প্রকৃত বন্ধুটিকে।
১) Cheerleader বা উদ্দিপনা জাগানিয়া বন্ধু:
এঁরা আপনার যেকোনো সংবাদে শুনেই বিশাল কমপ্লিমেন্ট নিয়ে উপস্থিত হন, উৎসাহ দেন, কঠিন সময়ের কথা জেনে মানসিক সহায়তা দিতে নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। এবং যা যা করেন বা বলেন, কোনো লুকোছাপা না করে সরাসরিই বলেন।
২) Good-Time Charlie বা চাহিবা মাত্রই সঙ্গ দানে সম্মত বন্ধু:
এঁরা প্রধানতঃ ফুর্তিবাজ টাইপের মানুষ যারা আপনার যেকোনো আহ্ববানকে গুরুত্বের সাথে নেন। একসাথে কাটানো সময়গুলো কিভাবে আপনার জন্য আনন্দময় করে তোলা যায়, তাঁর নানা উপায় এঁরা খুজে বের করেন। এঁরা এমনই যে আপনি জানেন, এদের সঙ্গ পেলে আপনি যেকোনো স্ট্রেসফুল পরিস্থিতি সামলে নিতে পারেন।
৩) Kindred Spirit বা আত্মার পরমাত্মীয় বন্ধু:
এঁরা হলো তাঁরা, যারা সুসময়ে না হোক, আপনার যেকোনো সমস্যা সংকুল সময়টাতে নিজে থেকে এগিয়ে এসে সমস্যার গভীরতা বুঝতে চেষ্টা করে এবং তা ফাইট ব্যাক করা জন্য আপনার পাশে থেকে যত ধরনের মানসিক, আত্মিক, নৈতিক সমর্থন আপনার দরকার, তা দিয়ে যেতে থাকেন।
৪) Strategist বা পথপ্রদর্শক বন্ধু:
আপনি যেকোনো জটিলতার সম্মুখিন হলে বা সিদ্ধান্ত গ্রহনের ডাইলেমায় থাকলে এরা তত্ত্ব-তথ্য-উপদেশ-উদাহরণ দিয়ে আপনাকে জটিলতা থেকে উদ্ধারে বা সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করে আপনার লক্ষ্যার্জন সহজ করে দেন।

এই চার ধরনের বন্ধুদের মধ্যে যে জিনিষগুলা কমন দেখতে পাবেন, তা হলো:
– এঁরা আপনার ইন্টারেস্টকে সবসময় প্রাধান্য দেবে।
– আপনার সম্পর্কে ঘোর আপত্তিকর কথা শুনলেও এঁরা আপনাকে নিয়ে জাজমেন্টাল হবে না।
– আপনার স্বার্থ পরিপন্থি কোনো পক্ষের সাথে যোগ তো দেবেই না, বরং আপনার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারেই এঁরা আপনার পক্ষ নিয়ে তাঁদের মোকাবেলা করে যাবেন।
– আপনার মঙ্গল হয়, এরকম যেকোনো কিছু নিজে থেকেই আপনার গোচরে আনবেন। আবার অমঙ্গলের সম্ভবনাযুক্ত সকল পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজে থেকেই আপনাকে পূর্বাভাষ দেবেন।
– আপনি না বললেও এঁরা আপনার বিপদ আঁচ করে এগিয়ে আসবেন এবং বিপদের সময়টাতে এঁরা কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবেন না।

আছে আপনার তালিকায় এমন কোনো বন্ধু?
যদি থাকে, সেই হলো আপনার প্রকৃত বন্ধু।
চিনে রাখুন তাঁকে আর ভুলেও তারসাথে এমন কিছু করবেন না যাতে করে তাঁকে হারাতে হয়।
জীবনে অনেক কিছুই হারিয়ে পাওয়া যায়, কিন্তু একজন প্রকৃত বন্ধু হারালে আর কখনো তা ফিরে নাও পেতে পারেন………

৬,২৮৩ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “চিনে নিন আপনার প্রকৃত বন্ধুটিকে…”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।