রাধার প্রাণে কত ব্যাথা

“তুমি বুঝবে তখন নারীর বেদন
রাধার প্রাণে কত ব্যথা”

ইদানিং “ফেমিনিজম এবং কম্পারেটিভ লিটারেচার” নিয়ে কিছু একাডেমিক রিসার্চের কাজ করছি। মানুষের উপরে তার একাডেমিক চর্চার বেশ প্রভাব পড়ে। রিলেটেড যে কোন জিনিসই বেশ ভাবায়। আর মাথাটাও যেমন! চিন্তাগুলো ঘুরতেই থাকে, ঘুরতেই থাকে। এই যেমন, কিছুক্ষণ আগে আমার এক পুরোনো সিনিয়র ছাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা কবিতা শেয়ার করেছে। (আমি ইদানিং ছাত্র-ছাত্রী সকলকে নির্বিশেষে “ছাত্র” বলেই সম্বোধন করি, এটাতেই আমি কেন যেন বেশি কম্ফোর্টেবল, স্মভবত নিউট্রাল ফ্লেভারের কারনে)। সে নিজেও লেখে, আমি আমার ছাত্রদের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি, তারা লেখে, তাদের চিন্তাগুলো ভিজুয়ালাইজ করি, আমার ভাল লাগে। যাহোক, তার এই শেয়ার করা লেখাটার সোর্স সে দিতে পারেনি, কিন্তু তার কাছে জানলাম, এটা কোন এক প্রতারিত এবং পরবর্তীকালে দেহ ব্যবসার আবর্তে জড়িয়ে পড়া এক নারীর লেখনি। তাতে অবশ্য ভাষার ব্যাবহার এবং প্রয়োগ বেশ এগ্রেসিভই মনে হয়েছে আমার কাছে, কিন্তু আস্বীকার করছি না, লেখাটা বেশ ভাবিয়েছে। সেই শেয়ার করা কবিতাটার স্ট্রং লঙ্গুয়েজের কারনে সেটা আমি এখানে শেয়ার করছি না, কিন্তু সেই লেখার প্রেক্ষিতে আমি যে তাতক্ষণিক মন্তব্য এবং সেই সাথে পুরোনো কিছু সৃতিচারন করেছি, তা বিনা এডিটে এখানে শেয়ার করছি। আমার এই লেখার আপাতত কোন উদ্দেশ্য নেই, একান্তই নিজের তাতক্ষনিক সমালোচনা ব্যক্ত করা ছাড়া। অবশ্য যদিও মূল কবিতাটার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আমি ফেমিনিজমের দিকে না গিয়ে ভাষার ব্যাবহারের দিকেই বেশি ফোকাস করেছি বা করে ফেলেছি, এখানে আমার লেখা মন্তব্যটাকে এডিট না করে পুরোটাই সরাসরি তুলে দিলাম।

“কবিতাটার জন্ম অনেক জমে থাকা ক্ষোভের মধ্য দিয়ে, তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রতারণা, জীবনের বিভিন্ন মোড়, এক সময়ে শেষ হয়ে যাওয়া, এর সবই এখানে স্পষ্ট। আর এই ক্ষোভের কারনেই হয়ত বা, ভাষার প্রয়োগ কিছুটা, কিংবা অনেকটাই, এগ্রেসিভ হয়েছে। এমন ভাষার ব্যাবহার ঠিক হয়েছে, নাকি হয়নি, সে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না, চাচ্ছি না নতুন বিতর্কের, তবে এটা ভাবাচ্ছে যে, এই কবিতাটা কি সব পাঠকের জন্য? আমার মনে হয় “না”। তাই যদি হয়, তাহলে ভাষার পরিমার্জন হওয়া দরকার। এমন থিমে শব্দচয়নে ক্ষোভের প্রকাশে লাগামহীনতা সমাজ বা দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানোর চেয়ে বরং ক্ষেত্রবিশেষে কন্ট্রোভার্সি তৈরি করে ফেলে।

“কলম” একটা সাংঘাতিক হাতিয়ার, সিমাস হিনি-র “ডিগিং” কবিতাটা পড়ে থাকলে সেটা হয়ত বুঝতে পেরেছো। কিন্তু কলমের দ্বারা যা সৃষ্ট, তা কিন্তু লেবেল লাগিয়ে শুধু বোদ্ধা পাঠকের জন্য উন্মুক্ত রাখা যায় না। লেখা সর্ব শ্রেণীর পাঠকের কাছেই উন্মুক্ত। আর কলরিজের “রাইম অফ দ্যা এনশিয়েণ্ট মেরিনার”-এ নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো, আম-জনতা কেমন — তারা হুইমজিক্যালি চলে, যখন যেভাবে যা মনে আসে, স্রোতের মত ধাবিত হয়, হঠাত আবার দিকও পরিবর্তন করে। পাঠকদের জগতটা উন্মুক্ত। এখানে এমন একটা থিমের অরতারনায় আম-জনতা-পাঠকের চিন্তাকে বা চিন্তার দিকগুলোকে চেপে ধরে রাখা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত সমালোচনা বা রিএকশনগুলোকে ঠেকানো। কাজেই যে কোন সাহিত্যের বা সাহিত্যকর্মের সর্বজন-গ্রহনযোগ্যতার কথা বা অধিকাংশের মনে পজেটিভ-মোটিভেশন বা থট-প্রভোকিং লাইনকে বিবেচনয়ায় রেখে ভাষার প্রকাশ ভঙ্গিকে পরিশীলিতভাবে নিয়ে আসাটাই মনে হয় বেশি ইফেক্টিভ বা তুলনামূলকভাবে পজেটিভলি শৈল্পিক।

কর্মজীবনের একটা ব্যাক্তিগত উদাহরণ দেই। আন্তর্জাতিক কিছু রিসার্চ জার্নালের ভাষা ও সাহিত্যের কিছু আর্টিকেলের রিভিউয়ারের দায়িত্ব পালন করেছি, বা বলা যায়, সময়-সুযোগ পেলে এখনো করি। একবার এমন এক বিদেশী জার্নালের কোন একটা লেখার রিভিউয়ের দায়িত্ব পেলাম। আর্টিকেলটা ছিল এক লেখকের একই ধরণের কিছু লেখার ফেমিনিস্টিক কাব্য সমালোচনার। সেখানে কবি যেমনই লিখে থাকুক না কেন, সমালোচকের (আর্টিকেলের অথরের) লেখাটাতে ভাষার ব্যাবহার আমার কাছে বেশ অমার্জনীয় এবং আপত্তিকর মনে হলো। লেখাটাতে অনেকগুলো শব্দের ব্যাবহার বা অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার ব্যাবহার লেখাটাকে সাবলীল রিসার্চ আর্টিকেলের তুলনায় যেন সেটাকে রীতিমত “ভাল্গার” বা “পর্ণোগ্রাফিক” করে তুলেছে। বাস্তব জীবনে যাই থাকুক বা ঘটুক, সাহিত্যে বা সমালোচনায় ভাষার ব্যাবহার এবং প্রয়োগ নিউট্রাল হওয়াই বেশি ইফেক্টিভ বলেই আমি এখনো বিশ্বাস করি। পর্দার আড়ালের একটা থিমকে তুলে ধরতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি বিষয়/ঘটনার বর্ননা না করলেই ভাল হয়। সকল দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে গেলে তখন সবই ভিজিবল, থট-প্রসেস তখন সবসময় ইন্টেলেকচুয়ালি গাইডেড নাও হতে পারে। যাহোক, আমি সচরাচর কোন আর্টিকেল ব্লাণ্টলি রিজেক্ট করি না, তবে সেবারে বেশ কড়া রিভিউ দিয়েছিলাম, অনেকটা এমন যে, আর্টিকেলটার বেশ কিছু জায়গায় ভাষার ব্যাবহার এবং শব্দচয়ন পরিমার্জন করা না হলে এটার একাডেমিক ইফেক্ট ম্লান হয়ে যায়, ছাপার অযোগ্য হয়ে যায়, এই পরিমার্জন না হলে এটা ছাপানো সম্ভব হবে না, বরং লাগামহীন এবং ঢালাও স্বেচ্ছাচারি শব্দপ্রয়োগে এটা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে অন্য মাত্রায় ধাবিত হয়েছে।

যাহোক, এখানে আমি বেশ কিছু তাতক্ষণিক চিন্তা এবং পুরোনো কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার মন্তব্যটা দীর্ঘায়িত হলো, আমি সেজন্য দুঃখিত। তবে আমার কথাগুলো নিউট্রালি বিবেচিত হলেই তা আমার জন্য স্বস্তিদায়ক হয়। আহত হলে মন্তব্যটা মুছে ফেলার পূর্ণ স্বাধীনতা তোমার রয়েছে। ধন্যবাদ!”

৬,৬৬৩ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “রাধার প্রাণে কত ব্যাথা”

    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      ভাইয়া, পড়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে মাথার উপর দিয়ে লেখাটা গেছে জেনে মনটা কেমন যেন খচখচ করে উঠল। লেখাটা তাহলে পাঠকের মন ছুঁতে পারেনি। দায় অবশ্যই আমার; আমিই কমিউনিকেট করতে পারলাম না। আগামীতে চেষ্টা থাকবে যেন এমনটা এড়াতে পারি। (সম্পাদিত)


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আল-মামুন (১৯৮৫-১৯৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।