ভালবাসি ৫৫

(গত ২০ ডিসেম্বর ছিল আমাদের পাসিং আউট প্যারেডের ছয় বছর পূর্তি।বন্ধু তোদের অনেক মিস করছি)

BMA তে জয়েন করেছিলাম ১১ জানুয়ারি,২০০৫ –দিনটা সবসময় খেয়াল থাকেনা।তবে ঘটনাগুলা ভালই মনে আছে।এয়ারপোরট রেল স্টেশন থেকে পারিবারিক বিদায়।সম্ভবত শারেক আমাদের একটা বিশাল গ্রুপের জন্য কয়েকটা বগি ম্যানেজ করেছিল।আমার ঠিক খেয়াল নাই-অনেক ভায়া হয়ে টাকা জমা দিয়েছিলাম কিনা।সেদিন শৈত্যপ্রবাহ ছিল-তার পরও জার্নিটা খারাপ লাগেনি।জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নি বলে কথা।তাও আবার A REAL JOURNEY TO HELL………।
ট্রেন একটু লেট করছিল।পুরানা রেলস্টশনে নেমে দেখি বিএমএ বাস আমাদের রেখেই চলে গেছে।হোটেলে লাঞ্চ করে সিএনজি নিয়ে বিকাল ৫টার দিকে আল্লাহ হাফেজ গেট পৌঁছলাম।গেটের দুই পাশে যেন পুরা দুই দুনিয়া!বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম ঢোলের বাড়ি,রক্তে চাপা উত্তেজনা আর মনে আসন্ন কালবৈশাখীর অপেক্ষা।LUCKILY আমরাই লাস্ট কয়েকটা গ্রুপ যাদের TIMELY IN ধরা হয়েছিল।আমি SURE তোরা লেট পার্টির কথা ভুলিস নাই-হাহহাহাহাহ।
তারপর ৫৩ এর কোন স্যার রিসিভ করে রুমমেট অনুযায়ী নাম ডাকল।আমি রুমমেট পেলাম দাঁতাল রাশেদকে।সেই ডিফেন্স গাইড থেকেই হারামীটাকে ভাল লাগত,তাই একটু বেশিই খুশী হয়েছিলাম।(এই ভাল লাগার মাঝে অন্য কোন কারণ খুজবিনা হারামখোরের দল)।
কিছুক্ষনের মাঝেই আমাদের নিয়ে খেলা শুরু হয়ে গেল।এই হাত সেই হাত করে নানা হাত পেরিয়ে গিয়ে পড়লাম রিয়াজ স্যারের হাতে।তারপর আর নাই বা বলি……………।3 IDOTS এর চাতুর এর ভাষায়-“ইতনি বলাৎকার ক্যায়সি কার সাঁকতি হু???”সারা রাত ধরে চলল সেই পানিশমেন্ট।ভোর পাঁচটার দিকে সেলিম স্যার একটু ফ্লোর এ বসতে দিল।নিষ্ঠুর বিএমএ তে প্রথম বিশ্রাম!!!স্যারের মুখে একটু সহানুভূতির কথা শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই কখন চোখ বন্ধ হয়ে গেল জানিনা।তারপর ফুটবলের মত দিন কাটতে লাগল।আফসোস একটাই-আমরা প্লেয়ার না,অই ফুটবলটা।সবাই নিয়া খেলে,টায়ার্ড হয়ে গেলে আরেকজনের কাছে পাস দিয়া দেয়।অবর্ণনীয় কষ্টের ভিতর দিন কাটে,শুধুই পাংগা আর পালিস।২৪ ঘন্টায় ২ ঘন্টার মত ঘুম আর দুতিন চামচ ভাত-ব্যস!!নেভির সাখাওয়াতের ভাষায়-“কই আইলাম রে ভাই,খাইতেও দেয় না,ঘুমাইতেও দেয় না…।”এই দুঃসহ দিনগুলোতে জন্ম নিল-অসাধারন কিছু বন্ধু।যারা এক পিস বিস্কিট কয়েকজন মিলে ভাগ করে খায়।হয়ত নিজেই অনেক সময় ভাগ পায়না!!!পানিশমেন্টের মাঝেও চেষ্টা করে কিভাবে অন্যদের কষ্ট কমান যায়-দরকার হলে নিজে একটু বেশি পাঙ্গা খেয়েও।ফার্স্ট টার্মের সে জীবন মানে-বিভীষিকা,দুঃস্বপ্ন,দৌড়, একটু ঘুম আর একটু খাবার এর চিন্তা।নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয় কি করে পার করে সে দিনগুলি!!পানিশমেন্ট এর সময় আরেকজনকে কাঁধে চড়িয়ে রেখে ঘুমানো,মার্চ করতে করতে ঘুমানো বুঝি বিএমএ তেই সম্ভব।
এই নরক যন্ত্রণাও যে ENJOY করা যায় সেটা শিখেছি কোর্সমেটগুলার কাছ থেকেই।কথায় আছেনা-WHEN RAPE IS IMINENT,BETTER ENJOY IT.খুব অল্প সময়ে টের পেলাম,টাচ এন্ড ব্যাক এ আগে এসে,কিংবা প্রপার পুস আপ দিয়ে খুব একটা লাভ নাই।সবাইকেই রাত দুইটা কিংবা তিনটা পর্যন্তই থাকা লাগবে-ভাল খারাপ কোন ভেদাভেদ নাই। আর রমে যাবার আগে সবাইকে অবশ্যই NICE BATH নিতে হবে মাঠের পাশের ড্রেনে কিংবা কোম্পানীর সামনের ট্যাপের পানিতে। ভেজানোটাই লাস্ট অ্যান্ড ম্যাক্সিমাম পাঙ্গা।পার্থক্য শুধু কেউ আগে আর কেউ পরে।বরং ভিজিয়ে দেয়ার পর বেগারতি করলেও সিনিয়ররা আর কিছু বলেনা,তারা তখন শুকনাদের নিয়া খেলা করে।এই সত্য আবিস্কার করে গঠিত হল THREE COMRADES GROUP-আমি,সারেক আর ফাহিম।ফায়ারের শুরুতেই ফায়ার নেই- থিওরিতে শুরু থেকেই ফলিনে বেগারতি।পরপর কয়েকটা টাচ এন্ড ব্যাক এ পরে আসলেই কাংক্ষিত NICE BATH ইস্যু হয়ে যেত।তারপর কষ্ট অনেক কম,শুধু একটু শীত বেশি লাগত।তখন নিজে থেকেই কয়েকটা টাচ এন্ড ব্যাক এ জোরে দৌড় দিয়ে নিতাম।
সেই ভয়াবহ শীতের রাতগুলোতে পানিশমেন্ট ফলিনের পরও কেন আমাদের নিউমোনিয়া তো দূরের কথা,বুকে একটু কফও কেন জমল না সেটা আমার কাছে আজও একটা বড় রহস্য। ফুলস্লীভ ইউনিফর্মের নীচে পুলওভার পড়ে স্যারদের দেখতাম কাপছেন।আর হাফপ্যান্ট,হাফশার্ট পড়ে ঘাম/পানিতে ভেজা শরীরে আমাদের চামড়া অসার হয়ে জেত।পানিসমেন্টের মাঝেও সুযোগ পেলেই আমরা একজনের সাথে আরেকজন গায়ে গা লাগিয়ে শীতের মোকাবেলা করতাম। শরীর তো জমে বরফের মত ঠাণ্ডা,বোধহয় হৃদয়ের উষ্ণতাটুকু দিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করতাম।এভাবেই কখন যে সবগুলো হৃদয় ৭.৬২ ক্যালিবারের হয়ে গেছে টের পাইনি।শেয়ার করলে দুঃখ কমে আর সুখ আনন্দ নাকি বেড়ে যায়।তোদের মত বন্ধু পেয়েছি বলে বিএমএর দিনগুলাও রঙ্গীন হয়ে উঠেছিল।সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে সবাই মিলে গড়ে তুলেছি ৫৫ পরিবার……………।

৫৫ বিএমএ লং কোর্স-অবিচ্ছেদ্য এক বাঁধনে জড়িয়ে ঠিক বুঝে উঠার আগেই বিএমএ এর দুই বছর কেটে গেছে।প্রশিক্ষণ কিংবা কর্তব্যের ডাকে ছড়িয়ে পড়েছি দেশের অভ্যন্তরে কিংবা দেশের বাইরে।কেটে গেছে আরো ছয়টি বছর।গত ২০ ডিসেম্বর ছিল আমাদের কমিশনের ৬ বছর পূর্তি।অনেক গুলো প্রিয় মুখ দেখিনা বহুদিন-তবে অনুভব করি হৃদয়ের গভীরে।মামারা আর একবার যদি নাইট ফলিন লাগে,হাইড আউট কিংবা ডাউট নিবনা। দেখিস ঠিকই জয়েন করব।আমি জানি তোরাও আসবি-সবাই মিলে আরো একবার অনুভব করব ৫৫ পরিবারের হৃদয়ের উষ্ণতা।কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে গায়ে গা লাগিয়ে আবার গলার রগ ফুলিয়ে SHOUT করব,WHO IS OUR BSUO-BSUO AMIN SIR,SALAM SIR.আওলাদ হয়ত আবার ভেবে নিবে ব্যাটালিয়নে দুইজন বিএসইউ-আমিন স্যার আর সালাম স্যার।হায়রে প্রিয় গোবা বন্ধু আমার……………………।ভালবাসি সবাইকে,ভালবাসি ৫৫।

১,৮০৫ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “ভালবাসি ৫৫”

  1. মোঃ রকিবুল ইসলাম অলিক

    অাস্সালামুআ'লাইকুম,রাকিব স্যার(আমার মিতা!!!)।আমি রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছিলাম ২০১৭ সালে।তার আগে ৭৮ তম বিএমএ লং কোর্স এর আইএসএসবি তে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।সেখানে উত্তীর্ণ হতে পারিনি!!!তবে আইএসএসবি তে যাওয়ার আগে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে বিএমএ এবং জিসিদের লাইফ সম্বন্ধে জেনেছিলাম।আর এভাবে বিএমএ তে যাওয়ার সুযোগ না হলেও শিখেছিলাম অন্নেক কিছু যেগুলো আমার জীবনে কাজে লেগেই চলেছে!!! আর আমার এই জানার ক্ষেত্রে আপনার এই পোস্টটিও অনেক কাজে লেগেছিল!!ধন্যবাদ স্যার এমন একটি পোস্ট করার জন্য।ভালো থাকবেন সবমময় স্যার।
    ও আরেকটা কথা------আমি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করছি।দোয়া রাখবেন আমার জন্য।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিয়া হায়দার (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।