আমার এবং আমাদের সন্তানের জন্য আমার শিক্ষানীতি

পড়াশুনা এবং পাঠ্যপুস্তকের প্রতি অনীহা আমার বরাবরই। অন্যান্য বাবা মায়ের মত আমার মা বাবা ও দাবী করেন যে ছেলেবেলায় আমার ব্রেইন নাকি দারুণ সার্প ছিলো। ক্লাস ফোরের পর্বশেষ পরীক্ষার আগের সন্ধ্যার ঘটনা, মা সিলেবাস হাতে নিয়ে দেখেন আমি কিছুই পারি না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রচন্ড রাগারাগি করলেন এবং এক পর্যায়ে যথারীতি আমার উদ্ধারকারী জাহাজ “হামজা” অর্থাৎ আমার বাবা এসে আমাকে মায়ের বকুনীর হাত থেকে রক্ষা করে নিয়ে গেলেন। বাকিটা সময় উনি পড়ে গেলেন আর আমি শুনে গেলাম। এই ভাবে ৮ টা বিষয়ের উপর পরীক্ষা শেষ করলাম এবং ফলাফল দেখা গেল খুব একটা ভাল না করলেও প্রথম ১০ জনের ভিতর ছিলাম (পাবলিক স্কুলে পড়েছি, তাই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা একেবারে কম ভাবার কারন নাই)| বাবার তৈরী করা এই “ওয়ান নাইট প্রিপারেশন” এর খারাপ অভ্যেসটা আমাকে আমার ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত তাড়া করে নিয়ে গেছে। পরে বুঝেছি, খুব খারাপ একটা অভ্যেস। কিন্তু করার কিছুই নাই, কারণ আমার পড়তে বসতে একেবারেই ভাল লাগতো না। শুধু আমি কেনো আমার তো মনে হয় শতকরা ৮০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরই পরীক্ষার জন্য পড়তে ভাল লাগে না। কলেজে থাকতে, প্রেপ টাইমে পড়ার বইয়ের নীচে গল্পের বই পড়তে গিয়ে কতো না ধরা খেয়েছি তার হিসেব নেই। গল্পের বই, পেপার-পত্রিকা পড়তে এতো ভালো লাগে কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের প্রতি কেন এতো বিতৃষ্ণা?

এতক্ষনে নিশ্চই অনেকে বুঝে গিয়েছেন কি নিয়ে লিখতে যাচ্ছি। আর যারা এখনও বোঝেননি তাদের জন্য আরেকটি ঘটনা বলি। ক্লাস এইট থেকে নাইনে উত্তীর্ন হলাম মাঝামাঝি একটা রেজাল্ট নিয়ে এবং স্বাভাবিকভাবেই সায়েন্স পেলাম। কিন্তু মাস দুই একের মধ্যেই আবিষ্কার করলাম যে বিজ্ঞানের জীবন সংক্রান্ত বিষয়টি তে আমি কোনো রকমের কোনো আগ্রহই পাচ্ছি না। যিনি বিষয়টি পড়াতেন তার প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদর্শন করেই বলছি, ক্যাডেটদের তিনি দু চোক্ষে দেখতে পারতেন না এবং সারাক্ষন অকথ্য ঝাড়ির উপর রাখতেন। যাই হোক, তিনি যখন ক্লাশে আসতেন তাকে দেখা মাত্রই আমার হার্ট বী্ট দ্বিগুন, কখনো কখনো তিন বা চারগুন বেড়ে যেতো এবং উনার লেকচার আমার কাছে হায়ারোগ্লিফিক্স পর্যায় কিছু একটা মনে হতো। তাই না বুঝেই উনার প্রেপটাস্ক করে নিয়ে আসতাম (বলা বাহুল্য অন্যদেরটা টুকলী করে) এবং ক্লাশে বেছে বেছে যখন তিনি আমাকেই পড়া জিজ্ঞেস করতেন আমার নিজেকে তখন সিনেমার সেই নায়িকাটি মনে হতো যে এর আগের সিনে স্মৃতি হারিয়েছে। ক্লাশ নাইনের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ৬ মাস পর বোধগম্য হল যে, নাহ, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না, সিদ্ধান্ত নিলাম সায়েন্স ছেড়ে দিব। অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত আর মাচ্যুরিটি অনেক কম ছিল, তাই আবার উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার স্মরণাপন্ন হলাম। বাবা তখন আমাকে সায়েন্স ছেড়ে দেবার সুবিধা অসুবিধাগুলো জানিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার উপদেশ দিলেন। আমি আরো এক সপ্তাহ সময় নিলাম চেষ্টা করার জন্য, চিন্তা করার জন্য। বুঝলাম হবে না। হায়ার ম্যাথ ইলেচটিভ সাবজেক্ট রেখে আর্টসে চলে আসলাম এবং এস এস সি তে আর্টসদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পাস করলাম।

উপরের ঘটনাটি আমার কৃতিত্ব কিংবা অপছন্দের বিষয় জানান দেবার জন্য লিখিনি। লিখেছি আমার ইদানিং কালের একটা বোধোদয় থেকে। এস এস সি- এর পর অনেকেই এই প্রাণী বা উদ্ভিদ নিয়ে আর পড়ার আগ্রহ বোধ করেনি। বলেছিল, ডাক্তার হবোনা, বায়োলজী ভাল লাগে না। কিন্তু কেন ভাল লাগে না? এইখানেই আমার ছোট্ট একটা উপলব্ধি। আর তা হচ্ছে, একজন ছাত্রের বিশেষ কোনো সাবজেক্টের প্রতি আগ্রহ কিংবা অনাগ্রহ দুই ই তৈরী করতে পারেন একজন শিক্ষক। অন্যভাবে বললে দাঁড়ায়, একজন শিক্ষকই পারেন কোনো ছাত্রের ভিতর পার্টিকুলার কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরী করতে, এবং একজন শিক্ষকের কারনেই কোনো ছাত্রের মধ্যে কোনো পার্টিকুলার সাবজেক্টের প্রতি অনীহা বা ভীতি তৈরী হয়। শুরুতেই বলেছি পড়ালেখার প্রতি আমার অনীহার কথা, তাই পড়ালিখা সংক্রান্ত কোনো ইস্যুই আমার চিন্তার বিষয়বস্তু ছিলনা কখনোই। তবে যখন থেকে জানলাম মা হতে চলেছি, নিজের অজান্তেই হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, লার্নিং সাইকলজী, বিহেভিওরাল সায়েন্স…এসব ব্যাপারগুলোতে খুব আগ্রহী হয়ে উঠলাম। শারীরিক অসুস্থতার কারনে ৯ টা ৫ টার চাকুরী থেকে ইস্তফা নিতে হল। শুরু করলাম বিষয়গুলো নিয়ে নেটে খোঁজাখুজি। খুজতে খুজতে মজার একটা বিষয় পেয়ে গেলাম “আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট & এডুকেশান”| একসময় আমার রাজ্য আলো করে আমার রাজকন্যা এলো। ওর যখন ৮ মাস বয়স, তখন থেকে আমি ওকে সাথে করে আমাদের নিজেদের একটা ছোটখাট স্কুল আছে, সেখানে নিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করলাম। সবার ইচ্ছা, এম বি এ ডিগ্রিটাকে এবার কাজে লাগাই, পারিবারিক এই স্কুলের ব্যাবসাটার হাল আমি ধরি। আমি ঘোষণা করলাম আগে টিচার হয়ে কাজ শিখব, তারপর এডমিন ধরব। একেবারে শুরুর দিন থেকেই খুব মজা পেয়ে গেলাম। আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশানের উপর একটা ডিপ্লোমাও করে ফেললাম। আমার মেয়ে তখন হয়ে দাড়ালো আমার প্রাক্টিকেলের সাবজেক্ট! থিওরীতে যা যা শিখি, ওর উপর প্রয়োগ করি। ফলাফল খারাপ হলনা, দেখলাম ওর বয়সী আর দশটা বাচ্চাদের চাইতে ওর লার্নিংটা বেটার হচ্ছে। দাবী করছিনা আমি ভাল শিক্ষক, তবে আমার মেয়ে বা আমার স্কুলের বাচ্চাদের যখন ইন্দ্রিয়-নির্ভর পদ্ধতিতে পড়াই, ফুল, পাখী, পোকা, মাছ, পাতা, বৃষ্টি নিয়ে গল্প করে করে, জ্যান্ত দেখিয়ে বা ধরিয়ে ধরিয়ে পড়াই লক্ষ্য করি ওরা জিনিসগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে গ্রহন করছে এবং এভাবে শিখানোতে ওদের শেখাটাও তুলনামূলকভাবে স্থায়ীও হচ্ছে। এগুলোও তো আসলে বিজ্ঞানের বিষয়, যদিও কাজ করি ৩ থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের নিয়ে। আমার কেজি ক্লাশের ৬ বছর বয়সী বাচ্চারা হার্বিভরাস বা ওমনিভরাস কাকে বলে তা জানে, নার্সারির ৪/৫ বছরের বাচ্চাগুল খুব সুন্দর করে বলে দিতে পারবে দিন আর রাত কি করে হয়, কেন কোনো জিনিস পানিতে ভাসে বা ডুবে যায়! ওদের কে বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব প্রাথমিক ধারনা দিতে গিয়ে দেখলাম আরে, এই জীব-বিজ্ঞান বিষয়টা তো বেশ ভালই মজার!!!

আসলে আমাদের দেশের পড়ানোর পদ্ধতি অনেকটাই মুখস্ত এবং পরীক্ষা নির্ভর হওয়াতে ছাত্র-ছাত্রীরা এর মধ্যে নতুনত্ব, সৃজনশীলতা বা আনন্দদায়ক কিছু খুজে পায় না। আমি মুখস্ত পদ্ধতির বিরুদ্ধে। আমার কাছে মনে হয় শিশুদের সৃজনশীলতা পুরপুরি ধ্বংস করে দেয় এই মুখস্থ প্রথার চর্চা। বলা যেতে পারে পরীক্ষা-পদ্ধতিরও কিছুটা বিরুদ্ধে আমার অবস্থান, তবে তা প্রাথমিক-শিক্ষা পর্যায়ে। আমার মতে লেখাপড়ার প্রতি বিতৃষ্ণার পেছনে পরীক্ষাভীতি আরেকটি অন্যতম কারন। আর সবচাইতে ভয়ংকর ব্যাপার যেটি, তা হচ্ছে, আমাদের দেশে স্কুলগুলোতে একেবারে ছোট বয়স থেকেই পড়ানোর এই পদ্ধতি প্র্যাকটিস করানো হয়। আর এতে করে একেবারে গোড়াতেই একটি শিশুর মনে পড়ালিখার প্রতি বিরূপ প্রভাব বা বিতৃষ্ণা জন্মে যায়। কেউ কেউ সেই বিতৃষ্ণাটাকে কোনোমতে ধামাচাপা দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উথতে থাকে আবার কেউ হয়তো আমার মত জ্ঞানের কোনো বিশেষ শাখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রাখে কেউবা আবার মাঝপথেই ঝরে যায়।
তাই আমি খুব চেষ্টা করি যাতে আমার নিজের এবং অন্যের যে সন্তানটির প্রাথমিক শিক্ষার ভার আমার উপর অর্পিত, তারা যেন কোনোভাবেই লেখাপড়া করতে গিয়ে হাপিয়ে না উঠে। আজ যদি তারা হাপিয়ে উঠে বাকি সারাটা জীবন আমার মত পড়ালিখা বিমুখ হয়ে থাকবে। তখন আমি অন্তত কোনোভাবেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না এই ভেবে যে, আমার ভুল পদ্ধতিতে পড়ানোর কারণে ভবিষ্যতের কিছু সম্ভাবনাময় মেধা বিকশিত হতে পারলো না।

৮,৬২৬ বার দেখা হয়েছে

৬২ টি মন্তব্য : “আমার এবং আমাদের সন্তানের জন্য আমার শিক্ষানীতি”

    • লেখাটি খুবই ভাল লেগেছে, আরও বিস্তারিত আশা করেছিলাম। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অপ্রতুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর কারনেই, ছাত্ররা শিক্ষার মধ্যে আনন্দ খুজে পাচ্ছে না। তাছাড়া শিক্ষকদের ভূমিকাও একটা বড় কারন। আমি যদি কোন একটা পার্কে ঘুরতে যাই, তাহলে আমি সেখান কার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আনন্দিত হব, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমাকে যদি বলা হয়, তোমাকে এই পার্কের মধ্যে ৩ ঘন্টা থাকতে হবে এবং একই স্থানে ৫ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করা যাবে না এমনকি ঐ স্থানে ২য় বার আসা যাবে না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি কোন শর্ত আরোপ করা হলে সেখানে আর আনন্দ পাওয়া যাবে না। একজন ছাত্র তার শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত শুধু প্রতিযোগিতার মধ্যেই অতিবাহিত করেন। আর এ করনেই আমরা বা আমদের সন্তানেরা শিক্ষার মধ্যে আনন্দ পান না।
      আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা বিদেশে যান কিন্তু বিদেশি ভাল নীতি অনুসরন করেন না।

      জবাব দিন
  1. দিহান আহসান

    ভালো লিখেছেন।
    পরীক্ষার আগে ছাড়া জীবনেও কোন্দিন পড়তে বসিনি আমিও 😛
    প্রথম ছেলেটা হওয়ার সময় যেভাবে বই আর নেটের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম, ;))
    তবে বই পড়ে যতটা না শিখেছি মা হওয়ার পর বাচ্চাদের সাথে সারাক্ষন থেকে ওদের বড় করতে গিয়ে আরো কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এখনো শিখে চলেছি 🙂

    শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

    জবাব দিন
    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      শুভ কামনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
      ঠিকই বলেছেন, মা হয়ে আপনা থেকেই অনেক কিছু শিখে যাই আমরা। কিন্তু অনেক সময় আমাদের ছোটখাটো ভুল বা অজ্ঞানতার কারনে নিজেরদেরই অজান্তে সন্তানদের ক্ষতি করে ফেলি আমরা।
      আপনার আর আপনার সন্তানদের প্রতি ও রইলো শুভ কামনা।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

      জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    সাবিহা, এই লেখাটা অসাধারন লাগলো। আশা করি তুমি তোমার সময় বের করে নিয়মিতভাবে এই টপিকের ওপরে লেখা চালিয়ে যাবে। শিক্ষকতার সুবাদে তুমি বাচ্চাদের শেখানোর যেসব টিপস এন্ড ট্রিক্স শিখছো, আশা করি আমাদের সাথে শেয়ার করবে।

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    খুব একটা উপযোগি লেখা যা পরিপক্কভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। মুখস্ত পদ্ধতির পড়াশোনা সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয় এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তুমি যেই পয়েন্টগুলো উল্লেখ করলে তা আমি এই দেশে দেখতে পারছি। আমেরিকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তেমন পরীক্ষা বা গ্রেডিংএর চাপ নেই।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. আছিব (২০০০-২০০৬)

    বড়াপু তো একদম ঝড় শুরু করে দিল। :boss: :thumbup:
    চালিয়ে যান,আপু আশা করি এই শিক্ষানীতিই একসময় আমাদের দেশে চালু হবে। :salute:
    আমারও পড়াশুনা ভাল্লাগে না,উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা নাই আমার,আমি চলি ঠেলার উপরে :((

    জবাব দিন
  5. তানভীর (৯৪-০০)

    চমৎকার একটা টপিক নিয়ে ভালো একটা লেখা। :thumbup:

    মুখস্থ করাটাকে সারাজীবন ঘৃণা করে এসেছি, নিজের স্মৃতিশক্তি ভালো না বলেই হয়তো! 🙁

    আপু, এরকম আরও কিছু লেখা চাই আপনার কাছে।

    জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    দারূন একটা বিষয়ে আলোকপাত করেছো। আমার নাতিদীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে আমি সব সময়ই খেয়াল করেছি যে, বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী নিজে থেকে চিন্তা করতে পারেনা, অর্থ্যাৎ, তাদের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি তৈরী হয় নাই। আর এর পেছনে দায়ী মুখস্তবিদ্যাভিত্তিক আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থাই। আশা করি, তোমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এই বাধা দূর করার কারণ অনুসন্ধান+প্রাপ্ত জ্ঞান শেয়ার করবে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  7. জিতু ,
    খুব ভালো লাগলো তোর লিখাটা পড়ে।আমি ঠিক করেছি আমি আমার বাচ্চার পড়া নিয়ে কাউকে খেলতে দিবনা । আমারও ঠিক তোর মত অবস্থা, সব সময় আগের রাতে পড়তাম । আমেরিকার সব স্কুলের standard এক না হলেও ভাগ্য ভালো যে আমার ছেলে এই ছোট বয়সে কোনো প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করেনা, আসলে করতে হয়না । ওর grade নিয়ে কখনো চিন্তা করিনা 🙂 । বাচ্চাদের আসল শিক্ষক হলো মা-বাবা । এভাবেই মার্জু কে উঠতে বসতে শিখালে ও এমিনিতেই অনেক দূর এগিয়ে যাবে । যখন আমি নতুন usa এসেছিলাম , DMV office এ এক মা তার ৬-৭ মাস বয়সের বাচ্চাকে বই পড়ে ছবিগুলো দেখাচ্ছিল, আমি ভেবেছিলাম মহিলা পাগল নাকি । কিন্তু আমি পরে নিজেই আমার বাচ্চাকে ৭-৮ মাস বয়স থেকে বই পড়ে শুনাতে থাকি, ওকে ঠিক ২ বছর বয়স থেকেই library নিয়ে যাই, পরবর্তিতে ও নিজেই আড়াই বছর বয়স থেকে নিজের বই pick করে । ওরা বড় হলে কি হবে আল্লাহ ই ভালো জানেন. কিন্তু আমাদের সর্বাঙ্গিক চেষ্টা করা উচিত. আমার ছেলে কোনো ভালো কাজ করলে আমি ছোট বেলা থেকেই ওকে বই কিনে দেবার লোভ দেখিয়েছি । কখনো ওকে বলিনি এইটা করলে তোমাকে toy কিনে দিব. আমি জানিনা এর জন্যই কি ও অমন বইপোকা হয়েচে নাকি. আর হা, আমি ওকে ছোট থেকেই fiction আর nonfiction দুটি পড়াতাম।এই কর্মব্যাস্ততার মাঝেও ভালো একটা মা হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।তোর আমিও যেই subject গুলো ভয় পেতাম , সেগুলো পরে দেখেছি অনেক easy . একটা ব্যাপারে আমি ১০০% তোর সাথে agree , সেটা হলো শিক্ষক ই পারে যে কোনো একটা বিষয়কে ছাত্রের কাছে আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করতে. আমাদের বাচ্চারা সব সময় সব বিষয়ে একটা ভালো শিক্ষক পাবেনা. তাই nijekei 12th grade porjonto closely monitor korte hobe. 🙂

    জবাব দিন
  8. জিতু ,
    খুব ভালো লাগলো তোর লিখাটা পড়ে।আমি ঠিক করেছি আমি আমার বাচ্চার পড়া নিয়ে কাউকে খেলতে দিবনা । আমারও ঠিক তোর মত অবস্থা, সব সময় আগের রাতে পড়তাম । আমেরিকার সব স্কুলের standard এক না হলেও ভাগ্য ভালো যে আমার ছেলে এই ছোট বয়সে কোনো প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করেনা, আসলে করতে হয়না । ওর grade নিয়ে কখনো চিন্তা করিনা । বাচ্চাদের আসল শিক্ষক হলো মা-বাবা । এভাবেই মার্জু কে উঠতে বসতে শিখালে ও এমিনিতেই অনেক দূর এগিয়ে যাবে । যখন আমি নতুন usa এসেছিলাম , DMV office এ এক মা তার ৬-৭ মাস বয়সের বাচ্চাকে বই পড়ে ছবিগুলো দেখাচ্ছিল, আমি ভেবেছিলাম মহিলা পাগল নাকি । কিন্তু আমি পরে নিজেই আমার বাচ্চাকে ৭-৮ মাস বয়স থেকে বই পড়ে শুনাতে থাকি, ওকে ঠিক ২ বছর বয়স থেকেই library নিয়ে যাই, পরবর্তিতে ও নিজেই আড়াই বছর বয়স থেকে নিজের বই pick করে । ওরা বড় হলে কি হবে আল্লাহ ই ভালো জানেন. কিন্তু আমাদের সর্বাঙ্গিক চেষ্টা করা উচিত. আমার ছেলে কোনো ভালো কাজ করলে আমি ছোট বেলা থেকেই ওকে বই কিনে দেবার লোভ দেখিয়েছি । কখনো ওকে বলিনি এইটা করলে তোমাকে toy কিনে দিব. আমি জানিনা এর জন্যই কি ও অমন বইপোকা হয়েছে নাকি. আর হা, আমি ওকে ছোট থেকেই fiction আর nonfiction দুটিই পড়াতাম।এই কর্মব্যাস্ততার মাঝেও ভালো একটা মা হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।তোর মতো আমিও যেই subject গুলো ভয় পেতাম , সেগুলো পরে দেখেছি অনেক easy . একটা বেপারে আমি ১০০% তোর সাথে agree , সেটা হলো শিক্ষক ই পারে যে কোনো একটা বিষয়কে ছাত্রের কাছে আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করা. আমাদের বাচ্চারা সব সময় সব বিষয়েই একটা ভালো শিক্ষক পাবেনা. sheta mathai rekhe nijekei 12th grade porjonto closely monitor korte hobe.

    জবাব দিন
    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      সিনা, খুব ভাল লাগল তোর চিন্তা ভাবনার ধরন দেখে, এখনকার মায়েরা আগের চাইতে অনেক সচেতন হচ্ছে। আবার কষ্ট লাগে অনেক মায়েরা আছে যারা নিজেদের নিয়ে এত ব্যাস্ত থাকেন যে সন্তানদের তেমন কোনো খেয়ালই রাখেন না 🙁
      আমাদের মায়েরা যে একেবারে অজ্ঞ ছিল তা কিন্তু না, তারা অনেক ভাল কিছু আমাদের ভিতরে নিশ্চই দিয়েছেন, তবে সেগুলো তাদের অজান্তে দেয়া। আমি বলছি না আমাদের স্কুলগুলো তে যে পদ্ধতিইতে পাঠদান করা হয়, তার সবটুকুই খারাপ, তবে কি জানিস সিনা, আমরা শিক্ষকরা নিজেরাই সঠিকভাবে জানি না যে পড়াচ্ছি তা কেনো পড়াচ্ছি, আসলে আমরা কি শিখাতে চাচ্ছি বাচ্চাদের!


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

      জবাব দিন
  9. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    "হোয়াট এ্যান ইন্সট্রাকটর ডু ডাজ'নট ম্যাটার মাচ বাট হোয়াট এ্যান ইন্সট্রাকটর মেকস দ্যা স্টুডেন্টস টু ডু রিয়েলি ম্যাটার মাচ" - কয়েকদিন আগে আমার স্টুডেন্টদের পড়াতে যেযে এই লাইনটা পেয়েছিলাম আমাদের একটা বইতে 🙂 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      :boss: :boss: :boss:
      সায়েদ ভাই, আমার উপরের পোষ্টটাতে আমি লিখেছি
      "আমরা শিক্ষকরা নিজেরাই সঠিকভাবে জানি না যে যা পড়াচ্ছি তা কেনো পড়াচ্ছি, আসলে আমরা কি শিখাতে চাচ্ছি বাচ্চাদের!"
      আসলে আমি যা পড়াচ্ছি বা যেভাবে পড়াচ্ছি তা দিয়ে আমি আমার স্টুডেন্টদের আসলে কি শিখাতে চাচ্ছি এবং আসলে যা শিখাতে চাচ্ছি তা-ই তারা শিখছে কিনা এটা একজন শিক্ষকের অবশ্যই নিশ্চিত করা দরকার। এবং বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের। আপনার কোটেশানটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, চান্স পেলে আমিও কোটেশানটি চালায় দেবার অনুমতি চাচ্ছি 😛


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

      জবাব দিন
  10. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    জিতু,

    বাবা তখন আমাকে সায়েন্স ছেড়ে দেবার সুবিধা অসুবিধাগুলো জানিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার উপদেশ দিলেন।

    এখন অনুধাবন করতে পারছি তোমার সাফল্যের পিছনে আসল কৃতিত্ত কার। বাবার উপযুক্ত সন্তান হয়েছো - সন্দেহ নেই।

    দোয়া রইল তোমার মেয়েও যেন তেমনি তোমাদের মুখ উজ্জল করে।

    জবাব দিন
  11. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আপু, বাচ্চাদের শিখানোর জন্য মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করার ব্যাপারে আপনার কি মতামত? সামনে এমন অনেক নতুন প্রযুক্তি আসবে। ভালোর কথা যেমন শুনেছি, এর কিছু খারাপ দিকের কথাও শুনেছি। যেমন
    আবার একে তো একেবারে অগ্রাহ্যও করাটাও ঠিক মনে হচ্ছে না...

    জবাব দিন
    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      গুলশান, মাল্টিমিডিয়া ব্যাবহার করা নিয়ে সত্যি বলতে কি কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখি নাই। তবে আমার মনে হয়, শিশুদের সবগুলো ইন্দ্রিয় ব্যাবহার করে শিক্ষাদান অনেক বেশি দরকার আর এই পদ্ধতি অনেক বেশিই কার্যকর। মাল্টিমিডিয়া কেবল মাত্র অডিও-ভিজুয়াল সেন্সরি সজাগ করছে, অন্যান্যো সেন্সরি সিস্টেমগুলো কিন্তু বন্ধই থাকছে। তবে তারপরেও মাল্টিমিডিয়া ব্যাবহার তুলনামুলকভাবে ভালো সাদাকালো আর ক্রেয়নের কৃত্তিম দুনিয়া থেকে। এর পরেও কথা থাকে যে কোনো কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভালনা।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

      জবাব দিন
  12. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    গুলশান, মাল্টিমিডিয়া ব্যাবহার করা নিয়ে সত্যি বলতে কি কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখি নাই। তবে আমার মনে হয়, শিশুদের সবগুলো ইন্দ্রিয় ব্যাবহার করে শিক্ষাদান অনেক বেশি দরকার আর এই পদ্ধতি অনেক বেশিই কার্যকর। মাল্টিমিডিয়া কেবল মাত্র অডিও-ভিজুয়াল সেন্সরি সজাগ করছে, অন্যান্যো সেন্সরি সিস্টেমগুলো কিন্তু বন্ধই থাকছে। তবে তারপরেও মাল্টিমিডিয়া ব্যাবহার তুলনামুলকভাবে ভালো সাদাকালো আর ক্রেয়নের কৃত্তিম দুনিয়া থেকে। এর পরেও কথা থাকে যে কোনো কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভাল না।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  13. মেহবুবা (৯৯-০৫)

    আপা লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।কলেজে সায়েন্স পাওয়া সত্বেও আমাদের ব্যাচে আমি একমাত্র ব্যক্তি যে জীব বিজ্বান নেই নি।কারণ শিক্ষকের প্রতি অনাগ্রহ সাথে সেই বিষয়।অথচ এস এস সি র ছুটিতে আমি সেই জীব বিজ্বান নিজে নিজে পড়ি এবং এইচ এস সি তে নেই।কলেজ আমাকে মেইন সাব্জেক্ট হিসাবে নিতে দেয়নি।এখনো পড়ছি সেই সাবজেক্টেই।এবং আই লাভ বায়োলজি।
    লেখাটা খুবি উপকারি আমাদের সবার জন্য।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

    জবাব দিন
  14. এই প্রসংগে আমি একটা জিনিস বলতে share করতে চাইব, সেটা হলো আমাদের যে traditional classroom গুলো আছে , সেগুলো auditory sequential learner দের জন্য design করা.আমাদের classroom গুলো অনেক টা ই এদেরকে favor
    করে.
    অনেকে আছে যারা ছোটবেলায় খুবই তুখোর ছিল ,বড় হয়ে performance তা তেমন থাকেনা ।অনেক গুলো কারণ থাকলেও তার অন্যতম কারণ হলো, তারা সম্ভবত visual – spatial learner হয়ে থাকে , এলেমেন্টারি ক্লাস গুলোতে ভালো করলেও, এক পর্যায়ে এসে তার পূর্ণ potential এ পৌছতে পারেনা. তাদের ব্রেন organization থাকে ভিন্ন । দেখা যাচ্ছে high IQ ,মোটামুটি ১৪০ এর উপরে iq এর মানুষদের একটা বড় অংশই ভিসুয়াল-spatial learner এবং এদের আছে উল্লেখযোগ্য auditory sequential weakness . আমরা যদি lecture এর সাথে power point presentation অথবা অডিও-ভিসুয়াল learning technique অবলম্বন করতে পারি, তাহলে এধরনের মেধাবী ছাত্রদের জীবন অনেকটা ই সহজ হয়ে যাবে.
    এবার একটু মজার কথায় আসি, আমার ছেলে একদম লিখতে চায়না বলে একদিন বলেছিলাম, ” জান বাংলাদেশ এ থাকলে তুমি লাড্ডু হতে,তুমি এত slow লিখ আর পচা হাতের লিখা”, সে আমাকে উত্তর দিয়েছিল, ” আম্মু, we live in 21st century , আই’d rather practice typing “. যাই হোক, ইদানিং আমি তাকে bolechi, জান president ra সব shomoi type korena, majhe majhe oder nij hatey likhe official chithi dite hoy. shey ekhon utshahito হয়ে তার cursive প্রাকটিস korchey.
    আশা করছি এই একুশ শতকে, আমাদের পুরনো আমলের classroom এর চেহারা কিছুটা পাল্টাবে. একই রুমে এ বিভিন্ন রকমের ability র বাচাদের জন্য বিভিন্ন রকমের learning পদ্ধতি accomodate না করা গেলেও, আমার সব শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ থাকবে ক্লাস টি যেন মোটামুটি সবাইকেই (অডিও-sequential learner এবং ভিসুয়াল- spatial learner )…সবাইকেই favor করে.

    জবাব দিন
  15. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    বাচ্চাদের শেখা নিয়ে আয়েশা আর সাবিহার আলোচনা থেকে অনেক কিছু শিখলাম। আমি একটু বড়দের পড়া নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

    উচ্চতর ডিগ্রী নিতে এসে অনেক রকম পরীক্ষার কথাই জানলাম। ওপেন বুক এক্সাম,অনলাইন এক্সাম, টেক হোম এক্সাম। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ডিসকাশন এক্সাম। এধরনের এক্সাম এ সাধারনত প্রফেসর খুব ক্যাজুয়ালি বলেন যে, "তুমি আমার রুমে চলে এস , আমরা কিছু প্রবলেম নিয়ে ডিসকাস করব।" কিন্তু এই ক্যাজুয়াল কথাটার বাস্তবায়ন যে কত ভয়াবহ তা চিন্তাও করা যায় না। প্রফেসরের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রবলেম সলভ করা, তাকে নতুন কিছু সাজেস্ট করার জন্য যে কি পরিমান প্রস্তুতি লাগে তা বলার মত না। তবে সবচেয়ে ভাল লাগে আলোচনায় প্রফেসরদের অংশগ্রহন, তাদের স্বত:স্ফুর্ততা, আন্তরিকতা এবং শেখানোর জন্য তাদের আগ্রহটা। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, একটা লিখিত পরীক্ষার চেয়েও এই ধরনের পরীক্ষায় শেখার পরিমান অনেক বেশি।

    আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ভুল জায়গাটাই হলো এটা অংশগ্রহন মূলক না জবরদস্তিমূলক।

    জবাব দিন
  16. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    পড়াশোনা এত ভয় পেতাম এবং এখনো পাই যে একটু কঠিন শিরোনাম দেখে পোস্টটা এড়িয়ে গিয়েছিলাম সচেতনভাবে।
    আজ কী মনে করে পড়লাম, এবং খুব ভালো লাগলো।

    বেশ গুছিয়ে কঠিন কিছু কথা সহজ করে বলেছেন। তবে আরো একটু বড় লেখা আশা করেছিলাম।

    মুখস্ত বিদ্যা বা পাশ করার জন্যে নয়, ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে পড়তে শিখুক। শিক্ষা হোক আনন্দের।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  17. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    জিতু, তোমার লেখাটা অনেক আগেই পড়েছি। এক কথায় বললে দারুণ লেগেছে। নিজেকে বেশ স্মৃতিকাতরও করে ফেলেছে। সম্ভবত বয়স হওয়ার লক্ষণ এটা! যে কোনো বললেই, শুনলেই বা পড়লেই নিজের কথা চলে আসে। মন্তব্য করতে ১০ দিন লেগে গেল! অফিসের ব্যস্ততার পাশাপাশি এই সময় দেশের বাইরেও যেতে হয়েছিল। ভালো লেখায় মন্তব্য না করতে পারলে খারাপ লাগে। কিন্তু সময়ই পাই না। হয়তো এ করণে অনেকেই কষ্ট পায়, ভাই আমার লেখাটা পড়লো না। (ইমো দেওয়ার সুযোগও কমিয়ে দিয়েছে এডু! নইলে ওইটা দিয়ে হলেও জানান দেওয়া যেত যে লেখাটা আমি পড়েছি!! ~x( )

    আমাদের বেশির ভাগের জীবনের অভিজ্ঞতা একই। নিজেরা যখন অ্যাকাডেমিক পড়াশুনা করেছি, সেটাকে সবসময় অসহ্য লেগেছে। কবে এই পর্ব শেষ হবে তার দিন গুনেছি। আর আজ যখন এসে পেছন দিকে তাকাই, কষ্ট লাগে। সময়ের কি বিশাল অপচয় করেছি। শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।

    ষাটের দশকে একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। বাবা পঞ্চশের দশকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা এসে গ্র্যাজুয়েশন করে সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়েন। তারপর আর দশটা মধ্যবিত্ত জীবনযাপন আরকি। বুঝের বয়স থেকে দেখেছি, বাবা সংবাদপত্রের বাইরে আর কিছু কখনো পড়েনি। স্বল্পশিক্ষিত মা অবশ্য বেগম পত্রিকা রাখতেন, পড়তেন নিহাররঞ্জন, শরৎচন্দ্র, রোমেনা আফাজ, ফাল্গুনি বা এদের মতো লেখকদের ব্ই। বাসায় আসলে স্কুলের বইয়ের বাইরে পড়ার তেমন জগৎ ছিল না। কিন্তু সম্ভবত পঞ্চম শ্রেনী থেকে রোমেনা আফাজের "দস্যু বনহুর", সেবা প্রকাশনীর "কুয়াশা" হয়ে ক্রমে "মাসুদ রানা"র প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। নিজে কমই কিনেছি। বন্ধু আর পাড়ার লাইব্রেরিই ছিল সহায়। তারপর ক্যাডেট কলেজ। সেখানেও অ্যাকাডেমিক পড়ার চেয়ে কলেজের লাইব্রেরিটা আমাকে বেশি টানতো। প্রতিদিন দুটো করে গল্প, উপন্যাসের বই ইস্যু করতাম। ক্লাস, প্রেপ ফাঁকি দিয়ে পড়ে আবার নতুন বই ইস্যু করা, এইভাবেই চলেছে। অংক, বিজ্ঞান এগুলো কখনো আমাকে টানেনি। তাই যথারীতি নবম শ্রেনীতে "মানবিক" বিভাগ নিলাম স্বেচ্ছায়। বাবা কিছু বলেননি। তবে অতৃপ্তি ছিল সেটা পরে টের পেয়েছি। মুখস্থ বিষয়টা এতো অসহ্য ছিল! তাই নিজে নিজেই পড়ার একটা পদ্ধতি বের করলাম। পরীক্ষার আগের দুয়েকদিন যে কোনো বিষয় পড়ে সেটা বুঝে মাথায় গেঁথে নিতাম। ঘণিষ্ট বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করতাম। কখনো কখনো পয়েন্টগুলো মনে রাখতাম। পরীক্ষার হলে গিয়ে সেই পয়েন্টগুলো নিজের মতো করে বিস্তারিত লিখতাম। আর সেটাই আমাকে একটা মোটামুটি মানের ফল করতে সাহায্য করেছে।

    মনে আছে, একবার এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার আগের রাতে গল্পের বই পড়ছি। বন্ধু সাঈদ (মার্কিন প্রবাসী প্রকৌশলী) এসে এমন ঝাড়ি দিল!

    পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাবার চাপে অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছি। বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। আর অ্যাকাডেমিক অর্থনীতিতে এতো 'ম্যাথামেটিকস' রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম। পাশাপাশি রাজনীতি এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতায় জড়িয়ে গেছি। এরশাদ আমলে এক বিরাট অটো-ভ্যাকেশনের সুযোগে অর্থনীতি ছেড়ে পাস কোর্সে ডিগ্রি পরীক্ষা দিলাম। তারপর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেনী পাওয়া যায় এমন বিষয় একটাই পেলাম, "রাষ্ট্রবিজ্ঞান"। (আচ্ছা একে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন বলে?)

    আজ এতোবছর পরে আবার কিছুটা মাস্টারির সুযোগ পেয়েছি। আমার ছাত্ররা সব পেশাজীবী। আসলে সাংবাদিক। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষক। এবছরই শুরু করলাম। ভীষণ উপভোগ করছি। তার আগে একটা "টিওটি" করেছি। ফলে কিছু কৌশল শিখেছি। শুনছি, শিক্ষার্থী সাংবাদিকরা নাকি আমার ক্লাস উপভোগই করে! বুধবারও ক্লাস নিতে নিতে হবে একটা। দেখা যাক এই খন্ডকালীণ ক্যারিয়ারে কেমন করি! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকতা বিভাগে ক্লাস নিয়েছি। ফাঁকিবাজ ছাত্র এখন মাস্টারি করছে ভাবতেই খারাপ লাগে!! অথচ অ্যাকাডেমিক পড়াশুনাটা যদি উপভোগ করতে পারতাম, আমার নিজের মতো করে করতে পারতাম- হয়তো জীবনে আজ এ পর্যায়ে এসে এ নিয়ে অতৃপ্তিটা থাকতো না।

    নিজের জীবনের শিক্ষা তাই ছেলেকে গড়ে উঠতে সাহায্য করছে। মার কাছে ছোট বয়স থেকে গল্প শুনে বড় হয়েছে। নিজের পড়ার বয়স থেকে অ্যাকাডেমিক পড়ার বাইরে বই পেয়েছে। আমি বা তোমার ভাবী তাকে স্কুলের পড়ার জন্য কখনো বেশি চাপ দেইনা। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ার অভ্যাসও পেয়েছে। কোনো বিষয়ে খারাপ করলে ধরিয়ে দিই। বলি এই বিষয়ে তোমাকে আরো নজর দিতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করে দিই।

    আমি ইচ্ছে করেই ওকে প্রথম থেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়িয়েছি। ভয় ছিল উংরেজিতে না দুর্বল হয়! কিন্তু কখনো এ বিষয়ে কোনো শিক্ষক দেইনি। ও নিজের জেদেই নিজেই স্কুল আর গল্পের বই পড়ে, টিভি দেখে-শুনে লেখা ও বলাটা নিজের আয়ত্ত্বে এনেছে। বরং বাংলাটা ওর দুর্বল রয়ে গেছে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  18. ইন্দ্রিয় দিয়ে শেখা, এভাবে আমি নিজেই অনেক উপকার পেয়েছি। Mnemonics ও তো এরি part, তাই না ??? আপনার লেখা তা পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমি Cadet না হবার কারনে ব্লগের আপডেট কিভাবে জানব ??? Can U pls send me copy of your writings at azmnoman@gmail.com ??? Will be grateful to you.......

    জবাব দিন
  19. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    খুব ভাল একটা লিখা।
    :clap: :clap: :clap:
    :boss: :boss: :boss:
    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
    অনেক চিন্তার খোরাক পেলাম।
    এ জাতিয় বিষয় নিয়ে লিখালিখির ইচ্ছা টের পাচ্ছি...
    পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো, "আচ্ছা শিক্ষক হিসাবে আমি আসলে কেমন ছিলাম - সাবিহার কাছে জানতে চাওয়া উচিত ছিল আরো অনেক আগেই আগেই"
    একদিন জেনে নিতে হবে...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।