পিলখানা হত্যাকাণ্ড

বছর খানেক আগের ২৫শে ফেব্রুয়ারিতে চ্যানেল আইএর স্ক্রলের দু’টি লাইনে চোখ আটকে গিয়েছিল ।হুবুহু লাইন দু’টি মনে করতে পারছি না। তবে সম্ভবত এরকম,

এক। পিলখানা হত্যাকান্ডের দিন আজ।
দুই। ছয় বছরে বিজিবি সৈনিকদের অনেক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি এই দু’টি লাইন অন্যদের মনে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে কীনা জানিনা। আমার মনে হল পাশাপাশি লাইন দু’টি দিয়ে হত্যাকান্ডটিকে এত সরলীকরণ করে ফেলা হয়েছে যে, সেসব বিবেকহীন হত্যাকারিদের প্রতি মানুষের এক ধরণের সহমর্মীতা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ হতাকান্ডের অন্য যে সব মোটিভ নিয়ে এখনও পর্যন্ত মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হচ্ছে, সেসব থেকে মানুষের দৃষ্টি শুধুমাত্র বিডিআর সদস্যদের হাহাকারের হা তে আঁটকে দেওয়া। এধরণের সাংবাদিকতা হত্যাকান্ডের দিন থেকেই শুরু হয়েছে।খুব একটা প্রতিবাদ হয়নি, গোপনীয়তা এবং আনুগত্যের অজুহাতে সামরিক বাহিনীকে, এবিষয়ে খুব একটা উচ্চ কন্ঠ হতে দেখা যায়নি। যে কয়েকজন এই শোক সইতে না পেরে বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন, তারা চাকরিতে টিকতে পারেননি। বিচার চাইবার কারণে, ঘাতকদের বিচার হবার আগেই, তারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

২০০৯ সালে যে সব দাবি দাওয়া অভিযোগ সামনে রেখে বিডিআরে বিশৃংখলা ঘটেছিলো তাকে দু ভাগে ভাগ করা যায়।

অভিযোগ

১। বিডি আর ১০০ বছর ধরে নানা্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত
২। বিডি আরের রেশন পর্যাপ্ত নয়।
৩। সামরিক বাহিনীর অফিসাররা ছোট খাটো কারণে তাদের পদচ্যুত করে
৪। সৈনিক মেসে প্রাপ্য খাবার না দিয়ে সেনাবাহিনীর অফিসাররা খাবারের টাকা বাঁচিয়ে ব্যাটালিয়নের প্রাইভেট ফান্ড তৈরি করে
৫। অফিসাররা পাজেরো গাড়ি চড়ে
৬। খালেদা জিয়ার সরকার বৈষম্য মূলক বেতন কাঠামো বানিয়েছিল,
৭। ১৯৯৬ সালে ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরবারে কথা বলার জন্যে নেক সৈনিককে চাকরি হারাতে হয়েছিল।

দাবীঃ
“একটি মাত্র দাবী বিডিআর থেকে সেনাবাহিনীর অফিসারদের তুলে নেওয়া হোক। না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে কুকুরের ন্যায় গুলি করে সরাবো। “

আমি এই দাবী দাওয়া গুলো বিডিআরের সেই সময়কার লিফলেট থেকে উদ্ধৃত করেছি।

দাবী দাওয়ার মূলকথা সেনাবাহিনীর অফিসারদের বিডিআর থেকে অপসারণ। অভিযোগগুলি অযুহাত। এতবছর পর হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করতে গিয়ে যখন বিডিআরের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথাটি গুরুত্বের সাথে বলা হয়। তখন হত্যাকান্ড গৌণ আর সুযোগ সুবিধা মুখ্য হয়ে ওঠে।

আমরা যদি তালিকার অজুহাতগুলি বিবেচনা করি, প্রথমে আসে ১০০ বছরের বঞ্চনার কথা, প্রশ্ন হল, ১০০ বছরের বঞ্চনার সমাধান, একটি নতুন সরকার থিতু হবার আগেই চাওয়া হল কেন?

২ নম্বর অভিযোগ রেশন পর্যাপ্ত নয়, রেশন বাড়ানোর এক্তিয়ার মহাপরিচালক বা অন্যান্য অফিসারের নয়। তা ছাড়া রেশন বাড়াবার ব্যপারের অনেক আগে থেকেই মন্ত্রনালয়ের সাথে দেন দরবার করা হচ্ছিল, সৈনিকদের সেটি অজানা থাকার কথা নয়, বিভিন্ন সময় দরবারে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

বাকি অভিযোগ, অজুহাতের প্রায় সবই হাস্যকর এবং অসত্য। বিডিআর একটি প্যারামিলিটারি ফোর্স। সামরিক অফসারদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে প্রশিক্ষণে, মনণে এবং সাহসে বিডিআর এই অঞ্চলের একটি শক্তিশালি সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। ইতপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বহিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবিলায় সেটি প্রমাণিত হয়েছে। বিডিআরের নেতৃত্ব ধবংশ করে একদিকে যেমন তাদের যুথবদ্ধতা নষ্ট করা হয়েছে একই ভাবে সেনাবাহিনীর মনোবল ধ্বংস করা হয়েছে। বিডি আরের সৈনিকদের শাস্তি বা তাদের বঞ্চনার অবসানই বড় কথা নয় সব কিছু খোলাসা হওয়া দরকার।

৫ টি মন্তব্য : “পিলখানা হত্যাকাণ্ড”

  1. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    বিডিআর এই হত্যাকাণ্ডের সব কিছুই ধোঁয়াশা। তদন্ত কমিটির নামে একটা কৌতুক হয়েছিল। অবশ্য এখানে তদন্ত কমিটি মানে ঘটনা ঐখানেই শেষ। এই ঘটনার পেছনের সত্যি কি কখনো উদ্ঘাটিত হবে?


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আমাদের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় ২৫ ফেব্রুয়ারির অমানবিক ও ঘৃন্য এ ঘটনা। এর পেছনের কারণগুলো কেউ জানুক না জানুক, যারা বোঝার তারা বোঝে। কখনো কোনো এক দিন পর্দার অন্তরাল থেকে সত্য হয়তো দৃশ্যমান হবে। তখন হয়তো যারা বোঝেন কেন হয়েছে, তারা কেউই থাকবেন না। নাকি পঁচিশে মার্চের কালো রাতের মতোন এর সব তথ্য প্রমাণ নথি নিখোঁজ হয়ে যাবে। কে জানে!
    তবে এটুতকু নিশ্চিত, যাদের আমরা হারিয়েছি এই দিন। যে ভয়াবহ স্মৃতি জন্ম নিয়েছে এই দিনে। তার যোগ্য শ্রদ্ধা ও স্মরণ আমরা তাঁদের দিতে পারিনি। এতোটুকু পারিনি। যে ঐতিহ্য, আর শৌর্যকে বলি দিয়েছি তার পুনরুদ্ধার দুরুহ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।