ছুটি শেষে অভ্যর্থনা

কলেজ গেটে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দারুণ সব উপকরণ হাজির থাকত। কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নিতেন আর কি। সেগুলো আবার একটার চাইতে আরেকটা কয়েক কাঠি করে বেশি সরেস!

দুলাল ভাই (ও তার দল) এর কাঁচির নিচে ২২/ ২৩ দিনের সযত্ন লালিত মাথাভর্তি চুলের বিসর্জন দিয়ে শুরু হত সেই অভ্যর্থনা পর্ব। করুণ চোখে তাকিয়ে দেখতাম আমার আগের জনের পায়ের কাছে কি নির্দয়ভাবেই না থোকা থোকা চুলগুলো লুটিয়ে পড়ছে। পরে দেখতাম আমারটাও। কেউ কেউ বাসা থেকেই ছাট লাগিয়ে আসত। তা সে যতই ছাট লাগিয়ে আসুক না কেন দুলাল ভাই (ও তার দল) ছাড়বে কেন? এই একটা দিনই তারা ক্যাডেটদের কাছ থেকে নগদ ১০/ ২০ টাকা নিতে পারত (হালাল ছিল আর কি)।

তারপর স্টাফ পর্ব। কোন কারণে দুলাল ভাই যদি একটু ছাড় দিত তখন স্টাফের নাক গলানোর অবকাশ হত। তার অবদানে বাটির উপর বাটি ছাট লাগত কারও কারও। উনার কাছ থেকেই জানা যেত গত কয়েকদিনে কলেজের পরিবর্তন এবং লেটেস্ট আবহাওয়া সংবাদ। বেশির ভাগই ভীতি উদ্রেককারী। যেমন নতুন একজন এ্যাডজুট্যান্ট এসেছেন যার ভয়ে বাঘে মহিষে এক ঘাটে শুধু পানিই খায় না একে অন্যকে নাকি পানি অফারও করে, গত টার্মে মাত্রাছাড়া দুষ্টামি করার কারণে কার কার প্যারেন্টস ডাকানো হয়েছে, কোন সিনিয়র শিক্ষক কোন হাউসের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমাদের কলেজের গড়ে মোট ৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মোটামুটি কড়া ধাঁচের (সব কলেজেই থাকে আর কি)। তারা ডিউটি মাস্টার হিসেবে ক্যাডেটদের উপর একদিনের বাদশাহী চালাতে বড় আমোদ পেতেন। আমরা এই প্রজাতির ডিউটি মাস্টারদের বলতাম “ভিপি স্যারের ট্রাম্প কার্ড”। কেননা বিশেষ বিশেষ দিনে ভিপি স্যার ইনাদের ডিউটি মাস্টার নিয়োগ দিতেন। সেই বিশেষ দিনগুলোর ভিতর আমাদের ছুটি শেষে কলেজে যোগদানের দিনটি অন্যতম।

ভিপি স্যারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হাউস মাস্টাররাও তাদের নিজ নিজ লোকাল ট্রাম্পকার্ড ছাড়তেন। চাই কি নিজেও এসে বসে থাকতেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় হাউসে ঢোকার জন্য ক্যাডেটদের যখন ভিড় লেগে যেত তখন তাদের ভূমিকা হত দেখার মতোন। এর ইউনিফর্মের হাতার ভাঁজ খুঁজছেন তো তার বেল্টের গ্যাপে আঙ্গুল ঢুকাচ্ছেন তো আরেকজনের জুতা খুলে মোজা উল্টাচ্ছেন। যেন সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী – বিডিআর।

কপাল ভালো থাকলে (!) এ্যাডজুট্যান্ট ভিপির এসকর্ট সহযোগে প্রিন্সিপালের অভ্যুদয়ও জুটে যেত। তখন হাউস বেয়ারা থেকে শুরু করে সবারই হাঁক ডাক চরমে উঠত। অধিকাংশ অ্যাডজুট্যান্টই এক্স ক্যাডেট বলে কেন যেন ঐখানেই কেরদানি বেশি ফলাতে চাইতেন। কাছে এসে হক না হক নানান জায়গায় বেমক্কা তল্লাশী শুরু করতেন। এর ফলে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ যে নাকাল হত না তা নয়।

১,৮৮১ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “ছুটি শেষে অভ্যর্থনা”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    বুড়ারে পাই নাই মানে? সেইতো ছিল দুলাল ভাই এবং তার দলের প্রবীণতম সদস্য, পুরনো পাপী।
    ব্যাটাতো ক্ষুর দিয়ে ঘাড়ের চুল চাঁছতো না, ছিলতো - চামড়া ছিলতো।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আমাদের আফাজ ভাই সবাইকে তাঁবুর মধ্যে নিয়ে ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতাই নিশ্চিত করতনা বরং ঐ দুইটা ওজনও করে দেখত। পরে সিনিয়র হয়ে হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে একান্ত আলাপকালে তাকে জিজ্ঙাসা করেছিলাম, ' আফাজ ভাই আপনি তো কত ক্যাডেটের ঐদুইটাই ওজন করলেন, একটু বলেনতো কার ঐদুইটার ওজন সবচেয়ে বেশী ?' আফাজ ভাই হেসে বলে, 'কতরকমই তো দেখলাম, ছোট-বড়, লম্বা-চিকন, গোল-চ্যাপ্টা, সাদা-কালো' :):):):)

    জবাব দিন
  3. আমাদের কলেজ প্রশাসনিক ডে তে মেডিকেল অফিসার এইভাবে একবার চেক করছিলেন।
    আমি ঢুকার পর আমাকে বল্লেন......আহসান্‌,শো উওর পিউবিক।
    আমি বল্লাম,স্যার,না দেখলে চলে না??
    উনি বল্লেন,আর্মি তে যেতে চাও???আমার উত্তর,জি স্যার।
    উনার উত্তর...।।তাহলে লজ্জা করলে হবে না।আর্মি তে গেলে অর্ডার করলেই সাথে সাথে প্যান্টটা নিচে পরে যাবে
    আমি আবার VEET ইউজ করতাম...এখনও করি।
    আমি চেইন খুলে আমার লর্ডস এর মত ফাকা মাঠ দেখালাম।
    আর পরদিনেই তার এক্তা নিক নাম দিলাম.........নাম তা হল...CAPTAIN PUBIC.

    জবাব দিন
    • ওই দিন আমি এই কাহিনী শুনে আর যাই নাই মেডিক্যাল চেকআপরে জন্য। পরে স্টাফ দিয়া আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন পিউবিক। তারপর ব্যাটার রুমে ঢুকার পরে কি হয়েছিল, সেটা আর বলতে চাই না... :((

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শফি

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।