মুসলিম ইন আমেরিকা-২: সেরা ব্যক্তিত্বঃ আমিনা আসিলমী

সুত্রঃ www.famousmuslims.com/Aminah%20Assilmi.htm

International Union of Muslim Women এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও আমিনা আসিলমী
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অতিথি লেকচারার হিসেবে ভ্রমন করেছেন। তাঁর কাহিনী বলতে হলে শুরু করতে হবে তাঁর ইসলাম গ্রহনের কাহিনী দিয়ে…

ইসলাম গ্রহনের পূর্বে আমিনা আসিলমী ছিলেন একজন Southern Baptist (খ্রীষ্টান ধর্মের একটি বিভাগ), তীব্র নারীবাদী, এবং সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিক। ইউনিভার্সিটিতে তিনি শুধুমাত্র ভাল ছাত্রীই ছিলেন না, ছাত্রী অবস্থায় ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি ঈর্ষনীয় সাফল্যের আধিকারী হয়েছিলেন।

আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোতে ১৯৭৫ সাল থেকে ক্লাসের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়। একটি কম্পিউটার ত্রুটির জন্য ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমিনা আসিলমী একটি থিয়েটার ক্লাস নিতে বাধ্য হন। প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে তিনি দেখতে পান তাঁর ক্লাসের বেশির ভাগ সদস্যই আরব থেকে আগত এবং এটি দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পরেন। তাঁর মতে, “There was no way I was going to sit in a room full of dirty heathens!” কিন্তু অবশেষে তিনি ক্লাসটিতে যেতে মনস্থ করেন এই ভেবে
যে, বিধাতা হয়ত ক্লাসের সেই মুসলিম আরবদেরকে খ্রীষ্টান ধর্মে নেবার জন্যই তাঁকে ক্লাসটি দিয়েছেন। সুতরাং, পরবর্তী ক্লাস থেকে আমিনা আসিলমী তাঁর মুসলিম সহপাঠীদের খ্রীষ্টান ধর্মের প্রতি আহবান জানাতে লাগলেন। কিন্তু অনেক প্রচেষ্টার পরও যখন তিনি পারলেন না সেই আরব সহপাঠীদের convince করতে, তখন তিনি একটি ব্যতিক্রমধর্মী পন্থার অবলম্বন করেন। তাঁর মতে, “I decided to read their own book to show them that Islam was a false religion and Mohammed was a false Prophet”.

এর পর তিনি ১.৫ বছর অতিবাহিত করেন ইসলাম নিয়ে গবেষণা করে। এই সময়ের মধ্যে তিনি সমগ্র কুরান শরীফ পড়েন এবং ১৫টির মত ইসলাম বিষয়ক বই পড়েন। এসবই তিনি করেন ইসলাম সম্পর্কে ত্রুটি বের করার জন্য। এই সময়টিতে অবচেতনভাবেই আমিনা আসিলমীর মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে এবং তাঁর স্বামী এই ব্যপারটি সহজভাবে নিতে পারেননি। আমিনা আসিলমীর মতে, “I was changing, just in little ways but enough to bother him (husband). We used to go to the bar every Friday and Saturday, or to a party, and I no longer wanted to go. I was quieter and more distant.” আমিনা আসিলমীর এই পরিবর্তন দেখে তাঁর স্বামী সন্দেহ করেন যে আমিনা আসিলমী পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়েছেন, যার ফলস্বরূপ তারা আলাদা বসবাস করতে শুরু করেন। এত কিছুর পরও আমিনা আসিলমী একজন ধর্মপ্রান খ্রীষ্টান হিসেবে জীবনযাপন করতে থাকেন।

কিছুদিন পর আমিনা আসিলমীর সাথে এক মুসলিম জ্ঞানি ব্যক্তির সাক্ষাত হয় যাকে তিনি বর্ননা করেছেন এইভাবে, “man in a long white night gown with a red and white checkered table cloth on his head”। আমিনা আসিলমীর দেড় বছরের গবেষনাতে তিনি যেই “ত্রুটি”গুলো পেয়েছিলেন, সেইসব বিষয়ে তিনি সেই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, এবং আমিনা আসিলমীর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি। সেই একই দিনে, সেই মুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তিটির সামনে তিনি বলে উঠেন, “I bear witness that there is no god but God and Mohammed is His Messenger.” দিনটি ছিল ২১শে মে, ১৯৭৭।

ইসলাম গ্রহনের পরে তাঁকে বিশাল চ্যলেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর পূর্বের বেশীরভাগ বন্ধুরা তাঁর শাথে মেলামেশা কমিয়ে দেয়, কারন, she was “no fun anymore”. আমিনা আসিলমীর মা মনে করেছিলেন এটি একটি সাময়িক ভ্রম যা শীঘ্রই কেটে যাবে। তাঁর বোন তাঁকে পাগল মনে করেন ও তাঁকে মানসিক হাসপাতালে প্রেরনের চেষ্টা করেন। তাঁর বাবা তাঁর ইসলাম গ্রহনের কথা শুনার পরে দু’নলা শটগান নিয়ে তাঁকে মারার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কাজেই, ইসলাম গ্রহনের পর প্রথমেই তিনি হন বন্ধুহারা ও পরিবারহারা। অধিকন্তু, যে দিন থেকে আমিনা আসিলমী হিজাব পরা শুরু করেন, সিই দিন থেকে তাঁর চাকরী চলে যায়। শুধু তাই নয়, ইসলাম গ্রহনের পর আমিনা আসিলমী ও তাঁর স্বামীর ডিভোর্স অফিসিয়াল হয়ে যায়। এটি সত্তুর এর দশকের কাহিনী এবং সেই সময়ে আমেরিকার মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানত না বললেই চলে। এর ফলস্বরুপ কোর্টের কেসের মাধ্যমে আমিনা আসিলমীকে তাঁর সন্তানের custody থেকে বঞ্চিত করা হয় শুধুমাত্র তিনি মুসলিম বলে। কোর্টে তাঁকে ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়েছিল দুইটির একটি বেছে নিতেঃ তাঁর সন্তান অথবা মুসলিম ধর্মত্যাগ। অত্যন্ত কষ্ট শুধু তাই নয়, কিছু শারীরিক সমস্যার কারনে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে, আমিনা আসিলমী আর সন্তান ধারনে সক্ষম হবেন না। সবকিছু মিলিয়ে আমিনা আসিলমী জীবনের এক বিভৎস অধ্যায় এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মতে তিনি এই সময়ে নিজেকে শান্ত রেখেছিলেন কুরআনের এই আয়াতটির মাধ্যমেঃ (২ঃ ২৫৫)

ইসলাম গ্রহনের পূর্বের আমিনা আসিলমী ও পরের আমিনা আসিলমীর মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল বিভেদ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ হতে শুরু করল। তাদের মনে curiosity এর জন্ম আমিনা আসিলমীর ধর্ম নিয়ে যা কিনা তাঁর চরিত্রে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন এনেছে। তাঁর পরিবারে প্রথম ইসলাম গ্রহন করেন তাঁর দাদী, যার বয়স ছিল ১০০ বছরের উপর।
এর পর ইসলাম গ্রহন করেন তাঁর বাবা যিনি কিনা শটগান নিয়ে তাঁকে মারতে তৈরী হয়েছিলেন। আমিনা আসিলমীর ইসলাম গ্রহনের চার বছর পর তাঁর মা ফোনে জানতে চান, মুসলিম হবার জন্য তাকে কি করতে হবে। আমিনা আসিলমীর উত্তর ছিলঃ এক আল্লাহ ও নবীজির উপর বিশ্বাস। এর উত্তরে আমিনা আসিলমীর মা অবাক হয়ে বলেছিলেন, “Any fool knows that. But what
do you have to do”. ইসলাম গ্রহন করার পর তিনি আমিনা আসিলমীকে বলেন, “Well … OK. But let’s not tell your father just yet” কারন তিনি জানতেন না তাঁর স্বামী ইতিপূর্বেই ইসলাম গ্রহন করেছেন। আমিনা আসিলমীর বাবা ও মা কয়েক বছর একসাথে কাটিয়েছেন একে অন্যের মুসলিম হবার খবর না জেনে। তাঁর বোন, যিনি আমিনা আসিলমীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন, তিনিও পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহন করেন। তাঁর এক ছেলে, যার custody তিনি হারিয়েছিলেন, ইসলাম গ্রহন করেন ২১ বছর বয়সে। ডিভোর্সের ১৬ বছর পর তাঁর পূর্বের স্বামী এসে তাঁর কাছে ক্ষমা চান এবং ইসলাম গ্রহন করেন।

আমিনা আসিলমীর সুখ্যাতি শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুসলিম এবং অমুসলিম সবাই তাঁর কাছে আসে advice ও counselling এর জন্য। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় তিনি লেকচার দিয়ে থাকেন। তাঁর সংগঠনের প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্টের ডাক বিভাগ ঈদ ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।aminah_stamp

আমিনা আসিলমীর একটি ভিডিও লেকচার দেখুন এইখানেঃ লিঙ্ক

২,৪৯৭ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “মুসলিম ইন আমেরিকা-২: সেরা ব্যক্তিত্বঃ আমিনা আসিলমী”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    তাহলে তো অ্যামেরিকার অবস্থা খুব একটা ভাল বলা যাবে না। কারণ সেদেশের সংবিধান বলে: যে কেউ চাইলে যে কোন ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই। কোর্টে যদি শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে তাকে বাচ্চার কাস্টডি থেকে বঞ্চিত করা হয় তবে সেটাকে আইনের সরাসরি লঙ্ঘনই বলতে হবে।
    চাকরি চলে যাওয়াটাও খুব দুঃখজনক।
    পারিবারিকভাবে সমস্যা হওয়ার কারণ বোধহয়: তার বাবা-মা এর আগে ধার্মিক খ্রিস্টান ছিলেন। অ্যাভারেজ ইউরোপিয়ানদের মত অধার্মিক বা জাপানীদের মত উদার হলে বোধহয় পরিবারে এত সমস্যা হতো না।

    জবাব দিন
    • এহসান (৮৯-৯৫)

      এখন মনে হয় দিন বদলে যাচ্ছে। এখন হয়তো এতোটা সমস্যা হতো না। হিজাব বা বুরকা নিয়ে ফ্রান্সে বারবার গ্যাঞ্জাম লাগলেও আমেরিকা আর ব্রিটেন অফিসিয়ালী ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না।

      আর আস্তে আস্তে বদলে গেলে কিংবা হঠাৎ করে ইসলাম প্র্যাক্টিস শুরু করলে শুধু ক্যাথলিক পরিবার কেনো,এই মুহুর্তে আমাদের দেশের সেমি আধুনিক মুসলিম পরিবারগুলো থেকেও বাধা আসে। এটা যুগে যুগেই আসছে। কনভার্টেড কিংবা মুসলিম ফ্যামিলী মূখ্য না।

      জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    সত্যি জীবন গল্পের চেয়েও বর্ণময় । আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ শাহেদ । দু'টা ব্যাপার আমিনার কাছে কোন ব্যাপার গুলো ভুল মনে হয়েছিল, জানা থাকলে শেয়ার করলে ভাল লাগবে, আর কোরআনের আয়াতের অর্থটা কি দেয়া যায় ?

    জবাব দিন
  3. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ভাইয়া ব্লগটা পড়ে ভালো লাগাটা জানিয়ে গেলাম।
    সাথে, এই অনুরোধটা আরেকবার 🙂

    দু’টা ব্যাপার আমিনার কাছে কোন ব্যাপার গুলো ভুল মনে হয়েছিল, জানা থাকলে শেয়ার করলে ভাল লাগবে, আর কোরআনের আয়াতের অর্থটা কি দেয়া যায় ?
    জবাব দিন
  4. শাহেদ_৯৭-০৩

    There is no god but He,-the Living, the Self-subsisting, Eternal. No slumber can seize Him nor sleep. His are all things in the heavens and on earth. Who is there can intercede in His presence except as He permitteth? He knoweth what (appeareth to His creatures as) before or after or behind them. Nor shall they compass aught of His knowledge except as He willeth. His Throne doth extend over the heavens and the earth, and He feeleth no fatigue in guarding and preserving them for He is the Most High, the Supreme (in glory). (Quran 2: 255)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।