নির্বাণ ও বিজ্ঞান

বৌদ্ধ ধর্মমতে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সকল বন্ধন থেকে মুক্তি। এটাকে নির্বাণ বলা হয়। আক্ষরিক অর্থে নির্বাণ শব্দটির অর্থ নিভে যাওয়া। তা হলে নির্বাণ কি জীবন বিমুখ কোন দর্শন? সক্রিয় সামাজিক জীবন ত্যাগ করে সন্যাস গ্রহণ করা? সন্যাসই যদি মোক্ষ হয় তা হলে পার্থিব জীবনের অর্থ কি? ভোগবাদ বনাম ভাববাদ- এর মূল দ্বন্দটি কোথায়? প্রথমেই স্বীকার করে নেই, বিষয়টি খুবই গভীর এবং আমি এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ নই। নিজে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়েও ভিন্ন ধর্মের এই বিষয়টি নিয়ে লিখতে বসেছি বোঝার জন্য। ভিন্ন প্রেক্ষাপটের কিছু চিন্তা সবার সাথে শেয়ার করছি এই প্রত্যাশায় যে,এভাবে হয়তো জীবন নিয়ে কবি জীবনান্দের সেই বিপন্ন বিস্ময় কিছুটা স্তিমিত হবে।

অনেকেরই মতোই ধর্ম সম্পর্কে আমার কৌতূহল আছে। উপমহাদেশের অন্যান্য ধর্ম যেমন জৈন বা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি রয়েছে বিশেষ আগ্রহ, কারণ ধর্মটি আমাদের অঞ্চল হতে উদ্ভুত। নেপালের লুম্বিনী যেখানে গৌতম বুদ্ধ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কিংবা বিহারের গয়া, যেখানে তিনি বোধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, জায়গাগুলো বা তার বাতাবরণ অনেকটা আমাদের দেশের মতোই। এই অঞ্চলের জীবন যাপন পদ্ধতি বা মেজাজ, জন্ম সূত্রেই আমাদের পক্ষে বোঝা সহজ। অন্য দিকে ইহুদি, খৃষ্টান বা ইসলাম ধর্মের উদ্ভব হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলে, যেখানকার জীবন যাপন পদ্ধতি বা মেজাজের সঙ্গে বাস্তবিক অর্থে আমরা পরিচিত নই। বঙ্গে ইসলাম ধর্ম আসার আগে আমরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলাম বলে জানি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরেও আমরা বাঙ্গালী মুসলিমরা যে নমনীয় রয়ে গেছি, তার কারণ বোধ হয় আমাদের এই অতীত প্রেক্ষাপট।

হিন্দু ধর্মে জীবনের প্রধান চারটি অধ্যায় হচ্ছে, ব্রহ্মাচার্য (ছাত্র জীবন), গার্হস্থ্য (সংসার), বানপ্রস্থ ও সন্যাস। ব্রহ্মাচার্য, গার্হস্থ্য সহজেই বোধগম্য। বানপ্রস্থ হচ্ছে সংসারের বিষয় আসয় থেকে মুঠো আলগা করা। অনেক তো কাম-কামাই হলো, এবার কি পেলাম বা কি পেলাম না, সে হিসেব থেকে একটু দূরে সরা। যা আঁকড়ে ধরে আছি তার বাধন হালকা করে, দান-খয়রাতের মাধ্যমে কিছুটা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। আর জীবনের শেষ অধ্যায়, সন্যাস হচ্ছে হাত সম্পূর্ণ খালি করা। সংসার ত্যাগ করে, কোন আশ্রমে গিয়ে ধ্যান বা প্রার্থনা করা।

ইসলাম ধর্ম সন্যাস সমর্থন করে না। ধর্মগ্রন্থ কোরান সমাজের মাঝে থেকেই, আমৃত্যু জীবন যাপন করার বিধান দেয়। দান-খয়রাত করার বিধান আছে, তবে জীবনের শেষ বয়সে আয় উপার্জন থেকে দূরে সরে যেতে হবে সে কথা বলে না। অর্থাৎ সংসারের মাঝে থেকেই বানপ্রস্থ চর্চা করতে হবে, সংসার ত্যাগ করা যাবে না। প্রয়োজনের অধিক সম্পদ আহরণ করা যাবে, প্রয়োজন হলে একাধিক বার বিয়েও করা যাবে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, পার্থিব অর্জনে নিষেধ নেই, নেই বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা ।

হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের এই জীবন বিরাগী ও জীবন মুখী দর্শন জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যেতে পারে। জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে দুটি বিপরীত সিস্টেম রয়েছে। একটি হচ্ছে সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম অপরটি প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম। সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হলে মানুষ আক্রমানাত্মক হয়ে ওঠে আর প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হলে মানুষ হয়ে ওঠে রক্ষনাত্মক, পলায়নপর। এজন্য এ দুই সিস্টেম এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে “ফাইট অথবা ফ্লাইট (fight or flight)” রেসপন্স বলা হয়। মানুষ কখন ফাইট করবে বা আক্রমণ করবে, আর কখন ফ্লাই করবে বা পালাবে, তা অনেকটা নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর। পরিবেশের প্রভাব একটি গোষ্ঠী বা সমাজকে তূলনামূলক ভাবে অধিক আক্রমণাত্মক বা অধিক পলায়নপর করে তুলতে পারে।

জীবনের প্রতি ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গী ইতিবাচক, তবে তূলনামূলক বিচারে একটু আক্রমণাত্মক বলে মনে হয়। ইসলামে এই ফাইট রেসপন্স এর আধিক্যের কারণে এগিয়ে যাওয়া, যুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে অনেক বার। প্রয়োজনে যুদ্ধের মাঠে শহীদ হবার কথাও বলা হয়েছে। ফ্লাইট রেসপন্স অর্থাৎ পালানোর কথা খুব বেশী বলা হয় নি। এর পিছনেও রয়েছে পরিবেশের প্রভাব । ইসলামের উন্মেষ ঘটে ধূ ধূ মরুভূমি অঞ্চলে। সেখানে পালিয়ে যাওয়ার জায়াগা তেমন নেই। পালিয়ে গেলেও বাঁচা দুষ্কর কারণ জীবন ধারণের অন্যতম উপাদান পানির উৎস সেখানে সীমিত। খাবার কিংবা জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণও অপ্রতুল। সুতরাং জীবন বাজী ধরে যুদ্ধ না করে পালিয়ে গেলে বৈরী পরিবেশে টিকে থাকা দুষ্কর। সম্ভবত একই কারণে সমাজ ত্যাগ করে সন্যাস অবলম্বন করাকে সমর্থন করা হয় নি।

অপর দিকে হিন্দু ধর্মকে তূলনামূলকে বিচারে রক্ষনাত্মক মনে হয়। এ ধর্মে সংসারের প্রতি বৈরাগ্য বা সংসার ত্যাগ করে সন্যাস অবলম্বন করাকে সমর্থন করা হয়। এটা কিন্তু জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় ফাইট নয় বরং ফ্লাইট রেসপন্স। এর পেছনেও রয়েছে পরিবেশের প্রভাব। হিন্দু ধর্ম বিকশিত হয়েছে পাকভারত উপমহাদেশে। এ অঞ্চলে প্রচুর নদীনালা ও বনবাদাড় রয়েছে। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ, তাই বনবাসী হলেও ফলমূল বা বন্য প্রাণীর দুধ-মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব। আগেকার দিনে সন্যাসীরা তাই করতেন। সঙ্গত কারণেই, এ অঞ্চলে বিকশিত হিন্দু ধর্মের দর্শনে ফ্লাইট রেসপন্স এর আধিক্য পরিলক্ষিত হয়।

বৌদ্ধ ধর্ম এক্ষেত্রে একটু আলাদা। এ ধর্মের অনেক ধারণাই হিন্দু ধর্ম থেকে আসার কারণে মূল সুর রক্ষনাত্মক। তবে বৌদ্ধ ধর্ম সংঘবদ্ধ জীবনের কথা বলে, সন্যাস সমর্থন করে না। ফাইট অথবা ফ্লাইট রেসপন্সএর পরিবর্তে জীবনের প্রতি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পরিলক্ষিত হয় এ ধর্মে। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন জীবন যাতনাময়। জীবন যুদ্ধে জিতে কিংবা জীবন থেকে পালিয়ে, কোন ভাবেই জীবন জ্বালা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। বরং জগতের মায়াজালে জড়িয়ে না পড়াই শ্রেয়, কারণ তা দুঃখ ভোগের কারণ হবে। মুক্তি খুঁজতে হবে জাগতিক বাসনা নির্বাপনের মধ্য দিয়ে। আর সেই মুক্তির সর্বোচ্চ সোপান হচ্ছে নির্বাণ।

ভাববাদী দৃষ্টিকোন থেকে নির্বাণ সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হলেও, বস্তুবাদী মানুষের পক্ষে দর্শনটি বোঝা বেশ কঠিন। তাই ভাববিদ্যা নয় বরং পদার্থবিদ্যার আলোকে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করা যাক। কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলছে স্থান ও সময়, এ দুটো জিনিস আপেক্ষিক। তাই স্থান বা সময়ের কোন পরম অস্তিত্ব নেই বা সেভাবে তা মাপাও সম্ভব নয়। বিষয়টি মনে রেখে, এবারে দেখা যাক, ধর্ম সময়কে কি ভাবে মাপছে। ইহুদি, খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্মে সময় হচ্ছে একটি সরল রেখা। শুরুতে শুধু আল্লাহ বা ঈশ্বর ছিলেন, সময় বলে কিছু ছিল না। সময়ের সরল রেখাটি শুরু হল, যখন তিনি সৃষ্টি করা শুরু করলেন। প্রথমে তিনি ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। তার পরে তিনি মানুষ সৃষ্টি করলেন। তার পরে সেই মানুষকে সিজদা না করার জন্য শয়তানকে বিতাড়িত করলেন। তার পর বেহেস্ত সৃষ্টি করলেন। তার পর সেখানে মানুষকে থাকতে দিলেন এক শর্তে যে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া চলবে না। মানুষ ভুল করে বসলো। তার পর সৃষ্টিকর্তা আসমান ও যমিন (পৃথিবী এবং চাঁদ-তারা খচিত এই বিশ্ব) সৃষ্টি করলেন। মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন পৃথিবীতে। পার্থিব জীবনের পরীক্ষায় কেউ ভাল রেজাল্ট করলো, কেউ ফেল করলো। সেই অনুযায়ী বেহেস্ত ও দোযখ তৈরী করা আছে, সেখানে রেজাল্ট অনুযায়ী মানুষকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এবং তখনই সময়ের সরল রেখাটি যাবে থেমে ।

এবার আস যাক সময় সম্পর্কিত বৌদ্ধ ধর্মীয় ধারণায়। বৌদ্ধ ধর্মে কিন্তু সময়টা সরল রেখা নয়, বরং বৃত্তাকার। শুরুতে সময় ছিল না। যা ছিল তা ঈশ্বর নয়, তাকে বলে হয়েছে পরম সত্তা (গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন নি, স্বর্গ-নরকের কথা বলেন নি)। সময়ের শুরু হয় মহাবিশ্বের সৃষ্টি লগ্নে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই সৃষ্টি লগ্নকে বলা হয় বিগ ব্যাং। অর্থাৎ একটি বিশাল বীষ্ফোরণ (বিগ ব্যাং) এর ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো এবং তা ক্রমাগত সম্প্রাসারিত হতে শুরু করলো। ছায়া পথ, সৌরজগত সৃষ্টি হলো। পৃথিবী নামক গ্রহে প্রাণের উদ্ভব ঘটলো। সেই প্রাণ বিকশিত হয়ে মানুষের জন্ম হলো। মানুষের দেহ ও আত্মা আছে। আত্মা হচ্ছে সময় শুরু হওয়ার আগে যা ছিল, সেই পরম সত্তার অংশ। এক পর্যায়ে মহাবিশ্বের সম্প্রাসরণ থেমে যাবে। সম্প্রাসারিত বৃত্তটি সংকুচিত হয়ে কিংবা ধ্বসে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে। সেখানেই কিন্তু শেষ নয়, বারবার এই চক্রের পূণরাবৃতি ঘটবে। আবারো আর একটা বিগ ব্যাং হবে, মহাবিশ্ব পূণর্বার সৃষ্টি হবে। পৃথিবীর মতো একটি গ্রহে আবারো প্রাণের উদ্ভব ঘটবে, জন্ম নেবে মানুষ। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে, এটাই বৌদ্ধ ধর্মের জন্ম চক্র।

তবে আগের বার যে ভাবে জন্ম হয়েছিল, পরের বার ঠিক তেমনটি হবে না। পরের জন্মটি হবে পূর্ব জন্মের কর্মের উপর নির্ভর করে। কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধ বোধি বৃক্ষের নীচে ধ্যানে বসে অতীত অবলোকন করেছিলেন এবং তিনি অতীতের একুশটি বিগ ব্যাং পর্যন্ত তাঁর জন্ম পরম্পরা অবলোকন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়ায় তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, যে ভাবে, যেখানেই জন্ম হোক না কেন, জগতে দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ নেই। তবে এই জাগতিক যাতনা থেকে মুক্তি লাভ করার উপায়ও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। সেটা হলো বিগ ব্যাং এর চক্র থেকে আত্মাকে মুক্ত করা। দৈহিক কামনা-বাসনার আগুন পরিপূর্ণ নির্বাপিত করতে পারলেই আত্মার চিরমুক্তি ঘটবে, অর্থাৎ নির্বাণ লাভ হবে। যে নির্বাণ লাভ করবে তার পূণর্জন্ম হবে না। বিগ ব্যাং এর চক্রে সে আর প্রবেশ করবে না। সে মিশে যাবে পরম সত্তার সাথে ।

৩,৫০৩ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “নির্বাণ ও বিজ্ঞান”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    বুদ্ধের দর্শনকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখাটা আমি সমর্থন করি না। কারণ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কিছু দেখতে হলে বিজ্ঞান দিয়েই দেখতে হয়। প্রথম কথা, একের পর এক এমন বিগ ব্যাং ঘটে এটা বর্তমানে খুব একটা প্রতিষ্ঠিত নয় বলে পড়েছি, মহাবিশ্ব আজীবন প্রসারিত হতে হতে এক সময় মরে যাবে বলেই বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করছেন। দ্বিতীয়ত বারবার বিস্ফোরণ হয়ে নতুনভাবে জগতের শুরু হওয়াটা বিজ্ঞানের মাধ্যমে নাহয় ব্যাখ্যা করা গেল, কিন্তু মানুষের দুটি অংশ আত্মা ও দেহ, আত্মাটা বিগ ব্যাং এর আগে পরম সত্ত্বার অংশ- এগুলোর কিন্তু কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই সামগ্রিকভাবে বুদ্ধ কেবল নয় প্রাচীন দার্শনিকদের যেকোন কিছুই বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার গোঁড়ায় গলদ আছে, কারণ তা ধ্বসে পড়ে এবং আর বিজ্ঞানের আওতায় থাকে না। বিজ্ঞানের মাধ্যমে কিছু ব্যাখ্যা করতে হলে তাতে কোনই গলদ থাকতে পারবে না, তাকে পুরোপুরিই বিজ্ঞানের ধারার সাথে একমত হতে হবে বলে মনে করি।

    বুদ্ধকে আমি ঠিক ধর্মবেত্তা নয় বরং দার্শনিক হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করি এবং তাকে খুবই ভাল লাগে। কিন্তু তার কোনকিছুকে বিজ্ঞান বা ধর্মের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না। তিনি একজন মানুষ ছিলেন যিনি আমাদেরকে চমৎকার চমৎকার চিন্তার খোরাক দিয়ে গেছেন- এটুকু ভেবেই স্বস্তি পাই।

    আর ধর্মের লোকশিল্পের অংশটুকুতে আমার খুব আগ্রহ আছে। ফোকলোর হিসেবে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে ভাল লাগে। কিন্তু সংঘবদ্ধ সমাজ-রাজনৈতিক ধর্ম ভাল লাগে না। আলোচনার মূল টোনটা ধর্ম এবং বিজ্ঞানকেন্দ্রিক হওয়ায় আমার দ্বিমতটুকু তুলে ধরলাম।

    জবাব দিন
    • শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

      মুহাম্মদ, তোমার কমেন্ট এর কয়েকটা অংশ পরিস্কার নয়ঃ

      ১) মহাবিশ্ব আজীবন প্রসারিত হতে হতে এক সময় মরে যাবে। মরে যাবার বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তবে কি তার পরে আবারো পুণর্জন্ম(!) ঘটবে তার? ঘটতে পারে না? সে সম্ভাবনা কি নেই?

      ২) লিখেছো, বিজ্ঞানের মাধ্যমে কিছু ব্যাখ্যা করতে হলে তাতে কোনই গলদ থাকতে পারবে না। বিজ্ঞান কি সব কিছু গলদ হীন ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছে? পরিপাটি নিউটনিয়ান (সেকেলে) কন্সেপ্ট পর্যন্ত তা না হয় মানা গেল। তার পর? অতি পারমাণবিক স্তরে বস্তুর সত্ত্বাই তো এখন পর্যন্ত অনির্ধারি। কোয়ান্টাম লেভেলে একটি অবজারভেশন কিন্তু নির্ভর করে অবজার্ভার এর অবস্থান এর উপর। সে ক্ষেত্রে তাকে কি গলদহীন বলা যাবে?

      আমার কথাঃ
      বিজ্ঞান যদি সর্বগামী, সর্বব্যাপী হয়, তাহলে তা দিয়ে অবশ্যই ধর্মকে বুঝতে পারা উচিতৎ নয় কি? অন্তত চেষ্টা তো করা যেতে পারে।

      জবাব দিন
      • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

        মরে যাবে মানে মহাবিশ্বের সব শক্তির উৎস ফুরিয়ে যাবে। অবশ্যই এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। নতুন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতেই পারে, কিন্তু এর সম্ভাবনা বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে অস্বীকারই করছেন। অনেকে তো আবার বলেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে সবসময়ই মহাবিশ্ব তৈরি হচ্ছে, আমাদের মত মহাবিশ্ব আছে অসংখ্য যেগুলোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্কই নেই।

        বিজ্ঞান অবশ্যই সবকিছু নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না। বিজ্ঞানে নির্ভুল বলে কিছু নেই। বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বটিও বলে দেয় ঠিক কি ঘটলে তাকে ভুল বলা যেতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, যে জিনিস কতোটা নিশ্চিত তাই আমরা জানি না তা দিয়ে কিভাবে একটা সুনির্ধারিত জিনিসের ব্যাখ্যা করি। অনিশ্চিত দিয়ে কিভাবে নিশ্চিতের ব্যাখ্যা হয় যখন আমরা স্বীকার করেই নিচ্ছি অনিশ্চিতটি কিছুদিন পরেই সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হতে পারে? অনিশ্চিতটা ভুল প্রমাণিত হবার পর নিশ্চিতের কি হবে?

        গলদ থাকতে পারবে না বলতে আমি বুঝাতে চাইনি যে বিজ্ঞান সবকিছুই গলদহীনভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। আমি বলতে চেয়েছি, যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে কিছু একটা ব্যাখ্যা করছি সেটাকে বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরিই একমত হতে হবে। বিজ্ঞানের কিছু জিনিসের সাথে কাকতালিয়ভাবে মিলে গেলেই হবে না। কিছু অংশ বিজ্ঞানের মাধ্যমে আর কিছু অংশ পুরাণ আর মিস্টিসিজমের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে দুয়ের মিলন ঘটানো সম্ভব বলে মনে করি না।

        বিজ্ঞান অবশ্যই প্রাকৃতিক জগতে সর্বগামী এবং সর্বব্যাপী, কিন্তু অতিপ্রাকৃতে নয়, কারণ বিজ্ঞান অতিপ্রাকৃত বলে কিছু আছে সেটা জানেই না। ধরুন জ্যোতিষ শাস্ত্রের কথা, বিজ্ঞান স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে এটা ভুল এবং ভ্রান্ত। তারপরও যদি কেউ বিজ্ঞানের মাধ্যমে জ্যোতিষ শাস্ত্র ব্যাখ্যা করতে চায় তবে ভুল হবে। কারণ বিজ্ঞান বলছে, সে জ্যোতিষ শাস্ত্র বলে কিছু আছে তা স্বীকারই করে না। কেউ যদি প্রাকৃত, অতিপ্রাকৃত সবকিছুতেই বিশ্বাস করে তবে অবশ্যই তার জন্য বিজ্ঞান সর্বব্যাপী ও সর্বগামী নয়।

        জবাব দিন
      • মহান (১৯৯০-১৯৯৬)
        বিজ্ঞানের মাধ্যমে কিছু ব্যাখ্যা করতে হলে তাতে কোনই গলদ থাকতে পারবে না। বিজ্ঞান কি সব কিছু গলদ হীন ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছে?

        আমি বরং বলব, এমন খুব কম ব্যাপারই আছে যা বিজ্ঞান সম্পুর্ন ব্যাখ্যা করতে পারে। আর এই না পারাটার কারনেই তো বিজ্ঞানের এগিয়ে চলা। সম্ভবতঃ এধরনের আলোচনা সেই এগিয়ে চলার দিকনির্দেশনা কিছুটা হলেও দিতে পারে।

        যদি আমরা ধর্মকে বিশ্বাস করি, তাহলে বলতে হয় ধর্মের কথা কিংবা ঐশ্বরিক কথা আসলে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে দিকনির্দেশনা... আমার মতে সেই দিকনির্দেশনা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে বোঝার চেষ্টার পাশাপাশি আমরা ধর্ম থেকে বিজ্ঞানের দিকনির্দেশনাও পেতে পারি।


        ক্যাডেট মহান
        ও-৭০২
        সিসিআর

        জবাব দিন
        • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

          আবার বলছি: আপনারা আমাকে ভুল বুঝেছেন। আমি বলিনি বিজ্ঞান গলদহীনভাবে সব ব্যাখ্যা করতে পারি। আমি মোটেও এটা বোঝাতে চাইনি।
          আমি বলেছি: বিজ্ঞানের মাধ্যমে করতে হলে পুরোটাই বিজ্ঞানের মাধ্যমে করতে হবে। যেটুকু কাকতালীয়ভাবে বিজ্ঞানের কিছু একটার সাথে খুবই হাস্যকরভাবে মিলে যায় সেটুকু গ্রহণ করা আর যেটুকু মিলে না সেটা পুরাণ আর কল্পনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা- এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গলদ থাকতে পারবে না বলতে আমি বুঝিয়েছি ধর্মকে বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে গেলে সমগ্র বিজ্ঞান দিয়েই করতে হবে, বিজ্ঞানের কিছু সূক্ষ্ণ তত্ত্বের অত্যন্ত স্থূল ব্যাখ্যার মাধ্যমে নয়।

          জবাব দিন
  2. লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।

    ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিস্টান যে ধর্মের কথাই বলা হোক না কেন, সব ধর্মের মুল বিষয় কিন্তু একই। সব ধর্মেই আপসহীন হবার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে - ফাইট অথবা ফ্লাইট নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর।

    গৌতম বুদ্ধ একজন মহামানব। যে বিষয় গুলো তিনি খোলাখুলি বলেছেন বাকি সমস্ত ধর্মই তা সমর্থন করে। এবং তিনি নিজেও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), শ্রী কৃষ্ন প্রমুখ মহা ব্যাক্তিত্তের আগমন সম্পর্কে আগাম সংকেত দিয়ে গিয়েছিলেন।

    ইসলাম সন্যাস সমর্থন করে না - আমি এই দর্শনের পরিপন্হী। আমি মনে করি ইসলাম অর্জনের একমাত্র উপায় হলো লোকালয়ে থেকে মোহমুক্ত হওয়া। বিগ্গান এখনও আত্মার অস্তিত্ব খুজে পায়নি - আর পরমআত্মার সন্ধান বৈজ্ঞানিক উপায়ে খুজে পাওয়া অসম্ভব।

    নির্বান কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বিশ্লেষন অসম্ভব। দুটো বিষয়ই জটিল - তারপরও প্রসংগ উত্থাপিত হওয়াতে নতুন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবার সুযোগ তৈরি হয়েছে - তাই আপনাকে ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আলীম ভাই খুব কঠিন বিষয় পানির মতো করে বলে গেলেন। আমি এর আগে ধর্মের এরকম বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পড়িনি। আমার শুধু মনে হত প্রতিটা ধর্ম তো এক একটা তত্বের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। সেই তত্বগুলো এখনও আনটাচ অবস্থায় আছে। সেসব নিয়ে এখনও খুব জোরেশোরে গবেষণা শুরু হয়নি। একসময় বিজ্ঞান এগুতে এগুতে এমন জায়গায় গিয়ে পৌছাবে যেখানে এসব ধর্মীয় তত্বগুলোর বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়বে।
    নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র বা আইনেস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ব হঠাৎ (মাত্র ১৫ সেকেন্ডে নাকি এটা তিনি ভেবেছিলেন) করেই তো তাদের মাথায় এসেছিল। কতটা গভীর মনোজগতে প্রবেশ করলে এমন কিছু ভাবা যায়! বিজ্ঞান তো শুধু খটমটে জ্ঞান। কিন্তু ভাবনার জায়গাটা তো দর্শন থেকে আসে। খুব কম মানুষই এই গভীর দর্শনের সন্ধান পায়। বড় বড় বিজ্ঞানীরা যেমন এক একজন দার্শনিক ঠিক তেমন এক একজন ধর্ম প্রবক্তারাও দার্শনিক। ধর্ম হচ্ছে সে দর্শনেরই এক একটা প্রায়গিক রূপ।

    আপনার কাছে মাইন্ড নিয়ে লেখা আশা করছি। এটা আসলে কি? ফ্রয়েড বলছে কনশাস আবার ্দীপক চোপড়া ব্যাখ্যা করছে কোয়ান্টাম থিউরীর বলয়ে। সূক্ষ ম্যাটারের তরংগায়িত রূপ। এন্টি মাইন্ড বলে কি কিছু আছে? মাইন্ড জিনিষটা কেমন জানি অদ্ভূত। আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। তা নির্বাণে পৌছাতে দেয় না - আদৌ যদি আমরা তা চাই।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে আমার আগ্রহ আছে। তবে খুব গভীর পড়াশোনা করা হয় নি সব ধর্ম নিয়ে, বিশেষত বৌদ্ধধর্ম নিয়ে। কোন কিছু নিয়ে পড়তে গেলে আমি প্রথম উইকিপিডিয়াতে যাই। প্রায় সবই আছে এখানে।

    সেখান থেকে যেটা মনে হল- বৌদ্ধদের পুনর্জন্মের ধারণাটা ব্যক্তি পর্যায়ের। ব্যক্তির পুনর্জন্ম হয় একই জগতে ভিন্ন রূপে, কর্মফল অনুযায়ী। আপনার লেখা থেকে মনে হল, পুনর্জন্মটা পুরো বিশ্বজগতের।

    ইসলামে সন্ন্যাস নেই। কথাটাকে আমার ঠিক পুরো অবস্থা বুঝাতে পারে কিনা জানি না। কারণ এটা শুনলে, এবং বয়স অনুসারে পার্থিব অর্জনের কোন সীমাবদ্ধতা নেই শুনলে, মনে হতে পারে এটা ভোগবাদী ধর্ম। এমনভাবে একে ব্যবহারও করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামে বিভিন্ন জায়গায়, কুরআন এবং হাদীসে যে দুনিয়াবিমুখ হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যেতে পারে।

    আমি বৌদ্ধ ধর্মকে তাও বা কনফুসিয়াস এর দর্শনের মত একটা দর্শন হিসেবে দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। হয়ত সেই অনেক আগের যুগ হওয়ার কারণে একটা গ্রহণযোগ্য দর্শন ধর্ম হয়ে গেছে। এই যুগে হলে হয়ত একটা মতবাদ বা মতাদর্শ হত।

    আমার মনে হয়েছে আমাদের অঞ্চলের বা এশীয় ধর্মগুলোতে Pantheism এবং Panentheism এর একটা বিশেষ প্রভাব রয়েছে। আমার কাছে Panentheism
    বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বেশ গ্রহণযোগ্য একটা থিওরি মনে হয়েছে। একবার একটা লেখায় বিষয়টা নিয়এ হালকা 'টাচ' দিয়েছিলাম-
    //cadetcollegeblog.com/gulshan/28119

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আলীম ভাই, গৌতম বুদ্ধকে ধর্মবেত্তা বা ধর্মের প্রচারকের চেয়ে বেশি দার্শনিক বলেই জানি। ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সাহস তিনি দেখিয়েছিলেন এই অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই। বৌদ্ধ দর্শনকে ধর্ম হিসাবে নিলে বিজ্ঞানের সঙ্গে সংঘাত হবেই। আর দর্শন হিসাবে দেখলে ভিন্ন কথা।

    তবে বুদ্ধ বা এর দর্শন নিয়ে যে কোনো লেখাই উপভোগ করি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগের এই এক সুবিধা, নিজের কিছু পড়া না থাকলেও অন্যদের আলোচনা থেকে অনেক কিছু জানা হয়ে যায়। ধন্যবাদ আলীম ভাই লেখাটার জন্য :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    আলীম ভাই,
    অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
    আপনি এত সাবলীল ভাবে এবং স্বল্প পরিসরে ধর্ম- তত্ত্ব - দর্শন এর ব্যাখ্যাগুলো দিয়েছেন যে আদতেই উপকৃত হলাম।

    শিরোনামটিও ছন্দময়।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  8. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আলীমুজ্জামান ভাই,

    আপনার ইমেইল আইডি বা ফোন নম্বর পাওয়া যাবে কি? জরুরী দরকার ছিলো আপনার সাথে যোগাযোগ করার। আমার ই-মেইল mahmud735এটজিমেইল.com


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  9. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    বাহ! বেশ চমৎকার লেখা তো আলীম ভাই। আগে চোখে পড়েনি বলে খারাপ লাগছে।
    আমি নিজে পদার্থবিজ্ঞানের মানুষ আমার প্রথম গবেষণা ছিল কসমোলজির উপর, ঐ আপনার উল্লেখিত পর্যাবৃত্ত মডেলের (oscillating model) উপরেই। ধর্মের বিষয়েও আগ্রহ আছে প্রচুর। নিজে মুসলমান বলে প্রথমে অনেক কিছু সমাজের চাপে আর পরে অনেক কিছু পড়েছি নিজের আগ্রহে। আপনার মত আমারও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। আপনারই মত ঠিক ঐ একই কারণে - আমাদের পূর্বপুরূষরা বৌদ্ধ ছিলেন। যার সাক্ষী আজও বহন করছে ময়নামতি, মহাস্থানগড়, পাহাড়পূর, ইত্যাদি। সেই কারণে আমাদের কালচারে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব স্পষ্ট।
    বিগ ব্যাং কসমোলজির একটি মডেল, রুশ ইহূদী বিজ্ঞানি ফ্রীডমানের দেয়া। আরো কিছু মডেল ছিল, তবে বর্তমানে এই মডেলটিই ডোমিনেটিং। পর্যাবৃত্ত মডেলও অনেকগুলোর একটা মডেল, আরো দুটি মডেল আছে, যার একটি অনুযায়ী মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত গিয়ে আবার সংকুচিত হয়ে হয়ে একটি বিন্দুতে মিলে যাবে (Singularity), এটাই ধ্বংস। অন্য মডেলে মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে সম্প্রসারিত হতে থাকবে, একসময় চরম শীতলতা এসে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে, এটাও মহাবিশ্বের মৃত্যু। তিনটি মডেলের মধ্যে কোনটি সঠিক তা নির্ভর করছে ল্যাটেন্ট মাসের উপর, যা নির্ণয় করা এখনও সম্ভব হয়নি।
    আমি 'রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা' নামে একটি সিরিজ লিখছি, সেখানে ধীরে ধীরে এই বিষয়গুলো তুলে ধরব।
    আরেকটি বিষয় হলো, ধর্ম দিয়ে বিজ্ঞানকে, অথবা বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে বিচার করা বোধহয় ঠিক নয়। দুটি সাবজেক্টের বিচরণ ক্ষেত্র ভিন্ন। একটি কাজ করে প্রকৃতি জগৎ নিয়ে, আরেকটি কাজ করে অতিপ্রকৃত নিয়ে।
    যাহোক, বিশ্লেষণমূলক চমৎকার লেখা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।