মিতু

“ওয়াও !!!!! তোমার পিচ্চিটা কিন্তু খুবই কিউট হইছে । কি নাম রাখলা মামনির ??????”

” হুম…আর বইলোনা । সে যত দিন যাচ্ছে , ততই বেশী দুষ্ট হচ্ছে । আর নামের কি আর অভাব আছে ????? ওর বাবা, দাদী, চাচা, ফুফু …সবাই চায় তার দেয়া নামটাই যাতে ফাইনাল করা হয় । আর আমার ইচ্ছা ওর নাম রাখি সুরভী । কিন্তু ওর বাবার আবার এই নাম একদমই পছন্দ না । মজার ব্যাপার হল …কাল রাতে এই নাম নিয়ে ঝগড়াও হয়ে গেছে । আজ সকালে সাহেব না খেয়ে অফিসে গেছেন প্রতিবাদস্বরুপ ।”

“তার মানে ভালই আছো । তা কি করেন ওর বাবা ?”

“একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির এক্সিকিউটিভ । হ্যাঁ……খুব ভালো আছি । প্রথম দিকে একটু ভয়ে ছিলাম নিজেকে নিয়ে । পরে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেল । আর মেয়ে হওয়ার পর উনি তো এখন পারলে বাসায়ই অফিস করেন ।”

মিতুর হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে খুব ভালো লাগলো । সুরভীকে কোলে নিয়ে পুরদমে গৃহিনী এখন সে । মেয়ে বোধহয় মায়ের চেয়েও বেশী সুন্দর হবে বড় হলে ।

“দেখি কী টিকা দিবো আজকে ? কার্ডটা দাও ।”

কার্ডটা দেখে নার্সকে বললাম টিকা দেবার ব্যাবস্থা করার জন্য ।

“তুমি কী চাকরিটা করছো এখনো ? নাকী মেয়ে -স্বামী নিয়ে ঘরেই থাকবে ?”- জিজ্ঞাসা করলাম আমি ।

” এখনো ডিসিশন নেইনি । আসলে ওকে রাখাটাই সমস্যা । তোমার কি হলো ? থানা স্বাস্থ্য অফিসার হয়ে আর কতদিন এখানে পড়ে থাকবে ? অন্তত বাড়ির কাছে কোথাও পোস্টিং এর জন্য চেষ্টা তো করতে পারো । এভাবে এতো দূরে একা একা আর কতোদিন ? খারাপ লাগেনা ?”

উত্তরে আমি শুধু অসহায়ের হাসি হাসি ।
“চেস্টা যে একেবারেই করছিনা তা নয় । দেখি কপালে কি আছে । আর বাড়িতে মা চেষ্টা করছে যাতে আমাকে আর খুব বেশি দিন একা থাকতে না হয় । এলাকায় আশেপাশের মধ্যেই মেয়ে দেখা চলছে আপাতত ।”

“হ্যাঁ । দ্যাখো । তোমার তো আবার…… ( হাসি ) এলাকার মেয়েই হতে হবে । তা না হলে তো আবার মেয়ের সমাজের সাথে তোমার সমাজ , আচার- আচরণ মিলবে না । সেই মেয়ে তোমার মায়ের সাথে মিলিয়ে থাকবে কীনা ভালমত দেখে নিও ।”

আমিও তার সাথে হাসিতে যোগ দিয়ে বললাম ” আসলে তোমার আর আমার মাঝে খুব কমই মিল ছিল । আর্থিক হয়তো ম্যানেজ করে নেয়া যেতো । কিন্তু তোমাদের এই লন্ডনী পারিবারিক আবহ আর আমার যমুনা পাড়ের সমাজের মাঝে অনেক পার্থক্য । সুরমা আর যমুনার পানি কিন্তু এক না ।”

“থাক । পুরান দিনের কথা বাদ দাও । আমি ভাল আছি । তুমি আমাকে এক্সেপ্ট করনি বলে মনঃকষ্ট রাখার দরকার নেই । আমি সুখে আছি ।”
“হুম………শুনে খুব রিলিভড লাগছে । প্রথমে একটু যে কষ্ট আমারও হয়নি, তা কিন্তু না । যাক তুমি ভালো আছ ।……… আমিও খারাপ নেই ।”

টিকা গ্রহণে সুরভী একটু আপত্তি জানায় এই সময় । ওর মা হটাত ব্যাস্ত হয়ে ওঠে ওর কান্না সামলাতে । আমি নিজ হাতে টীকা দিলাম সুরভীকে । হয়ে গেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে মিতু দাঁড়িয়ে পড়ে যাবার জন্য ।

“আচ্ছা……আসি তাহলে । বাসায় এস । আলাপ করিয়ে দেব ওর বাবার সাথে । তুমি তো আর আমাকে তোমার সংসারে নিলে না । দেখে যেও আমার সংসার । ”

” হ্যাঁ । আসব একদিন ।” আমি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলি । পিচ্চিটাকে আদর করে দেই একটু ।” তবে তোমার মেয়ে কিন্তু তোমার চেয়েও সুন্দর হবে ।” আমি বলি আবার ।

” সেদিন হ্যাঁ বললে আজ সুরভী তোমার মেয়েও হতে পারত ।”
হটাত ঘুরে দ্রুত চলে গেল মিতু ।
আশেপাশের শত কোলাহলের মাঝে একাকী , নিঃসঙ্গ, নির্বাক আমি চেয়ে থাকি মিতুর চলে যাওয়ার দিকে আমার ভাগ্য বিড়ম্বনাকে সাথে করে । কানে বড় বেশী করে বাজছিলো ওর শেষ কথাটা ।

১২,৬১৮ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “মিতু”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সাবাশ শিবলী... চালায়া যাও... বেকার জীবনের উপযুক্ত ব্যবহার করো ;;;

    কিন্তু আরেকজনের সংসার করে, এমনকি বাচ্চার মা হয়ে মনে মনে বাচ্চার বাবার জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা... খুব খারাপ... খুব খারাপ।

    (সুরমা-যমুনা নিয়ে কো ঝামেলা আছে নাকি? আপাতত সুরমার পারেই আছি, থাকলে জানিও ;)) )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

    এই গল্পের মূল অংশটা কিন্তু কারও জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা । সেদিন এমনই এক পিচ্চির ছবি দেখলাম । আর সুরমা-যমুনার কথাটাও সত্য ।
    আসলে আমি নিজে কিছু উদ্ভাবন করে লিখতে পারি না । দেখি চেষ্টা করে ।
    অনেকদিন পর আহসান স্যারকে দেখতেছি । ভালা আছেন নি স্যার???

    নুপুর ভাই..

    জীবন নিয়ে গল্প হয়, গল্পের মত জীবন হয়…..

    আপনি আসলেই অসাধারণ :salute:

    জবাব দিন
  3. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    পাঁচ তারা।
    লেখার ঢং আর প্লট দুইই ভীষন ভালো লাগল। জীবনটা বড়ই অদ্ভুত, ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আরো বেশী অদ্ভুত হয় অনেকসময়ি। নুপুরদার সাথে শতভাগ সহমত। অনেক কিছুই জীবনে না চাইলেও ঘটে যায়, কিছু জিনিস হাজারো প্রতীক্ষার পরেও মেলে না। এই নিয়েই জীবনের গল্প, গল্পের জীবন।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    মজার গল্প।
    এ জাতীয় গল্প পড়লে প্রথমেই বন্ধু আহসান কবিরের কথা মনে পড়ে যে বলেছিল:
    "ভালবাসা মরে যায়, মুগ্ধতা মরে না..."

    আমার মনেহয়, ভালবাসাও পুরোপুরি মরে না। কিছু না কিছু থেকে যায়,
    কোথাও না কোথাও
    কোন না কোন ফর্মে......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।