ফেসবুকের মানুষগুলো ( পর্ব – ৫)

ঠিক কি কারণে ঘুমটা ভাঙ্গলো হঠাৎ বুঝে উঠতে পারছে না মালিহা। জানালা দিয়ে আসা কড়া রোদ নাকি কাকের কা কা ডাক??
কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকার সিদ্ধান্ত আবার। আজকে ছুটির দিন। এতো আগে উঠে কি হবে!
 
“মালিহা, ওই মালিহা তোর একটা পার্সেল এসেছে”- রুমের জানালায় বান্ধবী ইশরাত এর গলা। চোখ মেলে তাকালো সে। তাকে পার্সেল কে পাঠাবে! বাসা থেকে তো পার্সেল আসার কথা না।
 
ঘুম ঘুম চোখে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। পার্সেল নিয়ে রুমে ঢুকে ইশরাত। পলিথিন এ মোড়া একটা প্যাকেট। উপরে লিখা-
 
নামঃ মালিহা তাসনীম।
কক্ষ নংঃ ৪০৭
 
আগ্রহ নিয়ে প্যাকেট খুলে মালিহা। পাশ থেকে তার চেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ইশরাত। এত কষ্ট করে অফিসরুম থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আসলো , দেখতে হবে না কি আছে!
 
শাড়ী!!! – অবাক কন্ঠে বলে উঠে মালিহা। ‘ শাড়ী কে পাঠাবে আমাকে!’ মনে করার চেষ্টা করতে থাকে।
 
ইশরাত এর কন্ঠে কৌতুক এর সুর,” কে আর পাঠাবে, সেই ঝুঁটি ওয়ালা ছেলেটা, তোর দিকে ক্লাসের সময় যে খালি তাকিয়ে থাকে”
 
‘আরে নাহ, কি বলিস। ও কেন পাঠাবে! আর ওর এত সাহস আছে নাকি! জীবনে তো সামনে এসে একটা কথাও বলতে পারে না। এটা সিউর সায়েম ভাই এর কাজ। এই লোকটাকে নিয়ে আর পারিনা।”- কিছুটা রাগের অভিনয় করে মালিহা। আসলে মনে মনে কিন্তু সে অনেক খুশি।
 
“ঐ দাঁড়া দাঁড়া এটা কি!’- বলেই একটা চিরকুট তুলে নেয় বান্ধবী ইশরাত। দুই বান্ধবী ঘাড় বাড়িয়ে দেখতে যায় কি লেখা-
 
” আপনাকে শাড়িতে বেশি মানায়, এটা কি জানেন???”
 
ইশরাত দাঁত বের করে হাসতে থাকে। মালিহা চেহারায় কপট রাগের ভাব করলেও মুচকি হাসিটা লুকাতে পারলো না।
 
কিছুক্ষণ এর মধ্যে মালিহার রুমে বান্ধবীদের ভিড় জমে যায়। এক একজন শার্লক হোমস সাজতে থাকে।
 
” এই লেখাটা মাহমুদের আমি সিউর। ও ছাড়া আর কেউ না।”
 
” আরে না, আমার মনে হয় এটা জামিল ফাজিলটার কাজ, ঐদিন মালিহার শাড়ি নিয়ে ওই তো প্রশংসা করলো।”
 
” এটা মুনায়েম হওয়ার চান্স আছ। মালিহার সাথে সারাদিন ঝগড়া বাঁধায়, আসলে মনে মনে পছন্দ করে”
 
নানা মুনির নানা মত। এভাবেই আলাপ চলতে থাকে। দুই একজন মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে। মালিহার কাছে শাড়ি আসে, আহারে তাদের যদি কেউ পাঠাতো!
 
——————————————————————————–
 
পরদিন সকাল বেলা গোসল করে শাড়িটা পড়ে নেয় মালিহা। হালকা করে কাজল দেয়। শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কপালে দেয় টিপ।
দাঁড়া, দেখি আজকে কে শাড়ির প্রশংসা করতে আসে। “অতি ভক্তি চোরের লক্ষন”- যে বেশি প্রশংসা করবে ঐ বেটার কাজই এটা।
 
———————————————————————————-
 
শামসুন্নাহার হলের গেট অতিক্রম করছে মালিহা। মৃদু মৃদু পায়ে হাঁটছে সে।
 
তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুমায়ুন। ওর নামটা হয়তো হলের কেউ খেয়াল করে না।
 

হলের সামনের সিকিউরিটি পোষ্টটাতে এখন ডিউটি দিচ্ছে সে। রাত ১২ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ডিউটি আজকে। আর ১৫ মিনিট বাকী আছে। একটু পর আরেকজন এর ডিউটি। সে এখন গিয়ে ঘুমাবে। আজকে একটা শান্তির ঘুম হবে।

গল্পের শেষটা হয়তো কখনো জানা হবে না মালিহার্‌……

 
————————————————————————————
 

 

(দীর্ঘ একবছর পর লিখলাম। এই  পর্বটি এমজিসিসি’র ছোট বোন মালিহা তাসনীমকে নিয়ে লেখা। )

 
 
৪,১৪৪ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।