বিবিধ উপলব্ধি – প্রথম পর্ব

এক
সত্য নির্মোহ। তাই তা থেকে অর্জন আসে ধীর গতিতে।
নির্মোহ সত্যের চেয়ে বরং চটকদার মিথ্যা দিয়ে মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করা যায়।
এ দিয়ে তাৎক্ষনিক জনপ্রিয়তা অর্জন ও শর্টরানে স্বার্থসিদ্ধি করাও সহজ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিথ্যার ব্যবহারে শেষরক্ষা করা যায় না।
যখন চটকদার মিথ্যার মুখোস উম্মোচিত হয়, তখন তা থেকে করা যাবতিয় অর্জন মুহুর্তে মূল্যহীন হয়ে পড়ে……

দুই

“বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক” মানে আমরা এমন একটি কনসেনচুয়াল রোমান্টিক বা শারীরিক সম্পর্ক বুঝি, যেখানে একটি বা দুইটি পক্ষ বিবাহিত।
অর্থাৎ তা হতে পারে:
১) এক বিবাহিত পুরুষের সাথে অন্য এক বিবাহিত নারীর রোমান্টিক সম্পর্ক
২) এক বিবাহিত পুরুষের সাথে যেকোনো অবিবাহিত বা সিঙ্গেল নারীর রোমান্টিক সম্পর্ক
৩) এক অবিবাহিত পুরুষের সাথে অন্য এক বিবাহিত নারীর রোমান্টিক সম্পর্ক
৪) এক বিবাহিত পুরুষের সাথে অন্য এক বিবাহিত নারীর শারীরিক সম্পর্ক
৫) এক বিবাহিত পুরুষের সাথে যেকোনো অবিবাহিত বা সিঙ্গেল নারীর শারীরিক সম্পর্ক
৬) এক অবিবাহিত পুরুষের সাথে অন্য এক বিবাহিত নারীর শারীরিক সম্পর্ক

মজার ব্যাপার হলো, এই ছয়প্রকার সম্পর্কের কোনটির জন্যই একজন নারীর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ উত্থাপনের কোনো সুযোগ নাই।

তবে হ্যাঁ, ৪ ও ৬ এ উল্লেখিত অভিযোগ প্রমান সাপেক্ষে পেনাল কোড ১৮৬০-এর ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী পুরুষটির বিরুদ্ধে বিবাহিত নারীর স্বামী হলেন একমাত্র ব্যাক্তি, যিনি অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেন।

বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক সামাজিকভাবে যত অনভিপ্রেত বা বর্জনিয়ই মনে হোক না কেন, রিয়েল ওয়ার্ল্ডে এটা যখন ঘটে, এদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের বিরুদ্ধে কারো খুব একটা কিছু করার থাকে না।
রিয়েল ওয়ার্ল্ডে ঘটা বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক নিয়েই যখন খুব একটা কিছু করার থাকে না, তখন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে পারষ্পরিক সম্মতিতে ঘটা বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক নিয়ে প্রতিকার চাওয়াটা তো আরও কঠিনই!!!

[নোট:
১) ৪৯৭ ধারায় প্রতিকার পাবার জন্য ঘটনাটা পারষ্পরিক সম্মতিতে ঘটা “সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স” বলে প্রমানিত হওয়া জরুরী। ভার্চুয়াল সেক্স বা রোমান্টিক সম্পর্কে যেহেতু “সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স” ঘটে না, তাই ১ থেকে ৩ এর জন্য কোনো আইনগত প্রতিকার নাই।
২) ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে পারষ্পরিক সম্মতিতে ঘটা বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক অন্তর্ভুক্ত বিষয়াবলি হলো – ক) ফোনসেক্স, খ) সাইবারসেক্স, গ) ভিডিওসেক্স, ঘ) সেক্সটিং, ঙ) রোমান্টিক চ্যাটিং, ইত্যাদি]

তিন
প্রেম ও সেক্স – এই দুইয়ের সম্পর্ক গভীর ও পারষ্পরিক।
প্রেমবিহীন কোনো কনসেচুয়াল সেক্স হয় না।
আবার সেক্সমুক্ত কোনো প্রেমের সম্পর্কও হতে পারে না।

সেক্সবিহীন যে সম্পর্ক, সেটা: স্নেহের, সহানুভুতির, মুগ্ধতার, বন্ধুত্বের সম্পর্ক হতে পারে – কিন্তু কখনো প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে না।
প্রেমের সম্পর্কে সেক্স থাকতেই হবে, সেটার ব্যবহারিক অনুশীলন করা হোক বা না হোক।
ব্যবহারিক অনুশীলনে নানা অসামর্থ্যতা থাকতে পারে কিন্তু কোনো সম্পর্কে সেক্স অন্তর্ভুক্তির অনিচ্ছা সেটাকে কখনো প্রেমের সম্পর্ক উন্নিত করতে পারে না।
অসামর্থতার উদাহরন হতে পারে শারীরিক অক্ষমতা, বাধ্যতামূলক অবদমন, ধর্মিয় বা সামাজিক বিধিনিষেদের কাছে আত্মসমর্পন।

একইভাবে, কনসেনচুয়াল সেক্স কখনো প্রেমবিহীন হতে পারে না।
হতে পারে সেই প্রেমের অনুভুতিটা পাঁচ মিনিটের অথবা ২৪ ঘন্টার।
অথবা হতে পারে, সেই প্রেমটা টমের (বা ইনা-র) জন্য কিন্তু তা করা হচ্ছে ডিকের (বা মিনার) সাথে – টমকে ডিক (বা ইনাকে মিনা) ভেবে…
স্বমেহনই যেখানে প্রেমবিহীন হয় না, হতে পারে না – সেখানে দুজন জ্বলজ্যান্ত মানুষের কনসেনচুয়াল সেক্স প্রেমবিহীন হয় কিভাবে!!!

(আত্মপ্রেম না করে অর্থাৎ নিজেকে নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকা না ভেবে অথবা কোনো স্বপ্নসঙ্গির সান্নিধ্য ফ্যান্টাসাইজ না করে, সাকসেসফুল স্বমেহন প্রায় অসম্ভব। সেই অর্থে স্বমেহনেও প্রেম থাকে……)

চার

বলা হয়ে থাকে, এটা এলিনর রুজভেল্টের উক্তি।
তিনি এটা হয়তো কোথাও বলেছিলেন কিন্তু তা তিনি নিজে থেকে বলেছিলেন নাকি অন্য কারো লিখা থেকে বলেছিলেন – সেটা এখনো অনিষ্পন্ন।
ঘটনা হলো, পিপলইতো তাদের গুন বা দোষের কারনে ইভেন্ট ঘটায়। আর ইভেন্ট নিয়ে কাজ করতে গিয়েই কিন্তু আইডিয়ার জন্ম হয়।
সেই অর্থে পিপলই আইডিয়ার পিছনের রুট কজ।
তাহলে সেই রুট কজকে এহেনো অপমানজনক ট্যাগিং কেন?
কারন, পিপল ইভেন্ট ঘটালেও, যখন ইভেন্ট ঘটেই যায়, পিপলের চেয়ে ইভেন্ট হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ন।
যারা সেই গুরুত্বপূর্ন ইভেন্টটিকে ধর্তব্যে না নিয়ে পিপল নিয়েই পড়ে থাকে, তাদের তখন ল্যাগার্ড উপাধি না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না।
আবার ইভেন্টের উপর ভিত্তি করে যখন আইডিয়ার চাষ শুরু হয়, যারা তখনো তাতে পার্টিসিপেট করতে পারে না বা করার ব্যাপারটা বোঝে না, তারা এভারেজ ছাড়া আর কি?
ইভেন্টের উপর নির্ভর করে যখন আইডিয়া নিয়ে কাজ চলে, বুঝতে হবে, সেখানে উদ্দেশ্য থাকে প্রিভেনশনের। অথচ তখন যারা পিপল নিয়ে টানাটানি করে, তারা যে প্রিভেনশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা কি তারা বুঝে?
গ্রেট মাইন্ড হতে না পারি, পিপল নিয়ে পড়ে থেকে, সেটা হবার প্রচেষ্টাকে ব্যার্থতায় পর্যবাসিত করার মত কুপমুন্ডক হয়ে থাকাটা যে আর কত দিন ধরে দেখতে থাকতে হবে, কে জানে!!!

পাঁচ
ক্রিয়েটিভ মানুষরা নাকি আমাদের মতো অন্য আর দশটা মানুষের চেয়ে বায়োলজিকালি ভিন্ন।
তাদের মস্তিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার রিসিপ্টরগুলির, যেমন: সেরেটোনিন, ডোপামিন – এইগুলার পরিমান ও কার্যকারিতা আমাদের মত আমজনতা থেকে ভিন্ন।
এই ভিন্নতার কারনেই তাদের দেখাটা, বোঝাটা হয় আমাদের চেয়ে ভিন্নমাত্রার।
অনেকদিন আগে একজন শিক্ষক এই ব্যাপারটার সহজ কিন্তু চমৎকার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
“ধানের নরম শীষে মেঠো ইদুরের চোখ নক্ষত্র পানে আজো চায়?” – নিয়ে উনি বলেছিলেন,
মাটিতে বসা ইদুর যখন উপরের দিকে তাকিয়ে ধানের শীষটা দেখে, আমরা আমজনতা এক ক্ষুধার্ত ইদুরকেই শুধু দেখি, তার ক্ষুধার কথাই শুধু ভাবি।
অথচ কবি সেই একই ইদুরের শারীরিক ক্ষুধা অতিক্রম করে নক্ষত্র খোজাটাও দেখছেন।
ক্রিয়েটিভিটির এই হলো ম্যাজিক, যা আমাদের মত আমজনতার জন্য তাদের প্রতি আকর্ষণের উৎস।
হয়তো এই ভিন্নতাই ক্রিয়েটিভ মানুষগুলির জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলে।
তাঁরা আমাদের মত আর দশটা মানুষের থেকে ভিন্ন ও প্রথাবিরুদ্ধ জীবনযাত্রা বেছে নেন।
আমার মত হলো, যতক্ষণ তিনি তাতে অন্যের জন্য কোনো সমস্যা করছেন না, আমাদের উচিৎ হবে না তা নিয়ে কোনো কথা বলার, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর।
কিন্তু কেন যেন আমরা অনেকেই এই অবস্থানটা ধরে রাখতে পারি না।
ক্রিয়েটিভ মানুষদের জীবনযাত্রাকে যারা অস্বাভাবিক জ্ঞান করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, আমার ধারনা, তারা তা করেন হীনমন্যতার কারনে।
বেশিরভাগ মানুষের মত আপনি যে জীবনযাত্রাটি পালন করছেন, সেটাও যে স্বাভাবিক – আপনি কি নিশ্চিত?
হতেও তো পারে যে, সংখ্যা লঘু হলেও তাদের জীবনযাপনটাই আসলে স্বাভাবিক, আপনারটা তা নয়।
স্বাভাবিকতা শুধুই সংখ্যার বিচারে হয় না, হয় গুনগত মানে।
আর সেই মান নির্ধারনের আপনি কে???
আসুন ক্রিয়েটিভ মানুষগুলোকেই শুধু না, তাদের জীবনযাপনটাকেও শ্রোদ্ধা করতে শিখি।
তাদের ক্রিয়েটিভিটি প্রকৃতির প্রয়োজনেই ও ঈশ্বরপ্রদত্ত।
আমি আপনি তাদের পিছনে লাগলে তাতে ক্ষতিটা তাদের একার হবে না, তা হবে গোটা মানবজাতিরই!!!

বিবিধ উপলব্ধি – দ্বিতীয় পর্ব

৫,৪৪৫ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।