উত্তপ্ত কড়াই থেকে জলন্ত চুলায় : এক

আমরা কি উত্তপ্ত কড়াই থেকে জলন্ত চুলায় পরিলাম? ২৯ ডিসেম্বরের জনরায় দেখিয়া, পড়িয়া এবং জানিয়া আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটা এই রকমই দাঁড়াইয়াছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাইয়া ২০০১ হইতে ২০০৬ পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসনে পিস্ট হইয়া রীতিমতো চিড়াচেপ্টা হইয়া গিয়াছিলাম আমরা। দুর্নীতি-সন্ত্রাসের লাগামহীন বিস্তার দেশকে নৈরাজ্যের শেষপ্রান্তে নিয়া গিয়াছিল। গ্রেনেড-বোমা নিয়া একদল মধ্যযুগীয় জঙ্গি সন্ত্রাসী গোটা জাতিকে জিম্মি করিয়া রাখিয়াছিল। আর এক দল গণহত্যা, লুটপাট, নির্বিচারে ধর্ষনের মতো নিজেদের অতীত জঘন্য অপরাধের পক্ষে সাফাই গাহিয়া আমাদের আত্মমর্যাদাকে জুতার তলায় পিষিয়া মাটিতে বিলীন করিয়া দিতে সব অপচেষ্টা করিতেছিল। পরিবারের নামে, দলের নামে দেশ ও মানুষের সম্পদ লুটপাটের একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করিয়াছিল ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি।

পরিবর্তনটা আমরা ভীষণভাবে চাইয়াছিলাম। আমরা মান-সম্মান ও মানুষের মর্যাদা নিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইতে চেষ্টা করিয়াছিলাম। ২০০৯ সালের নতুন সূর্যকে আমরা দারুণ ভালোবাসা আর উজ্জলতার আলোকে বরণ করিয়া নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হইতেছিলাম।

কিন্তু এই সূর্যের প্রকট আলো যে চোখ-মুখ ও শরীর ঝলসাইয়া দিবে তাহা তো ভাবি নাই। আশেপাশে কোনো বটগাছও দেখি না যে তাহার তলায় আশ্রয় নিব। এই প্রখর আলোতে হাজারি-বিজারি, হেলাল-বেলাল বাহিনী উদ্দাম নৃত্য করিবে বলিয়া আশংকা হইতেছে। দীর্ঘ সাত বছরের অভুক্ত মোখলেসরা জমি কিম্বা বাড়ি দখল, আর ঘরে-আপিসে আমাদের সম্পদ লুটিয়া নেওয়ার জন্য যে আবারো হানা দিবে না তাহার নিশ্চয়তা কে দিবে? আমরা কি উত্তপ্ত কড়াই হইতে জলন্ত চুলায় পরিলাম?

কেহ বলিতে পারেন আমি ভীষণ নৈরাশ্যবাদী। হয়তো। ঘর পোড়া গরু তো সিদুরে মেঘ দেখিলেই খুটি ছিড়িয়া পলানোর সব চেষ্টা করিয়া থাকে। আমি কোথায় যাইবো? আমার তো কোথাও যাওয়ার আর জায়গা নাই!

২,৮৭৭ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “উত্তপ্ত কড়াই থেকে জলন্ত চুলায় : এক”

  1. এহসান (৮৯-৯৫)

    সানা ভাই অনেক ধন্নবাদ সারারাত আমাদের আপডেট করার জন্য। আচমকাই এবিসি রেডিও এর লিঙ্ক মিলে গেল। কিন্তু অনেক দেরীতে। শ্যাম তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম... দারুন দারুন লাগছে গানটা।

    আর আপনার মতো আমিও একটু ভয়ে আছি। কিন্তু পরিবর্তনটা খুব দরকার ছিল।

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    মনে-প্রাণে চাইছি যেন ২০০১ পরবর্তী ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি না হয়...!!!!!!!
    একটি সুন্দর আগামীর প্রতিক্ষায়-

    খালেক


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    আমি কোথায় যাইবো? আমার তো কোথাও যাওয়ার আর জায়গা নাই!

    আগেভাগে সবধরণের প্রস্তুতি থাকলে আমরা আশাভঙ্গের বেদনায় হয়তো আর পুড়বোনা।
    দেখা যাক এখন বোধহয় এই দাবীটা তোলাই যায়,
    যুদ্ধাপরাধী জামাত রাজাকারদের কঠোরতম শাস্তি চাই
    এদেরকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ণ করার এটাই সঠিক সময়।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. আশিক (১৯৯৬-২০০২)
    কেহ বলিতে পারেন আমি ভীষণ নৈরাশ্যবাদী। হয়তো। ঘর পোড়া গরু তো সিদুরে মেঘ দেখিলেই খুটি ছিড়িয়া পলানোর সব চেষ্টা করিয়া থাকে। আমি কোথায় যাইবো? আমার তো কোথাও যাওয়ার আর জায়গা নাই!

    আমরা সবাই এইরকমই......কিন্তু দুই বড় দলের থেকে বের হয়ে আসারতো কোন উপায় নাই......। গতদুই বছরের ধরপাকড়ে ভয় পায়া যদি একটু লাইনে থাকে, সে আশাতেই বুক বাধি......

    জবাব দিন
  5. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    ২০০১ এর নির্বাচনের পর কোন একটা পত্রিকার হেডলাইন ছিল এরকম,

    People opted for change.

    কথাটা খুব মনে ধরেছিল। শেষমেষ আশাহত হতে হয়েছিল।
    ২০০৮ এ এসে ঐরকমই মনে হচ্ছে। জানিনা আশাহত হতে ঠিক কতদিন লাগবে।
    তারপরও আশায় বুক বাঁধা..........।

    সানাউল্লাহ ভাই ঠিক ঠিক মনের শঙ্কাটা তুলে ধরেছেন :thumbup: :thumbup: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  6. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    সানা ভাই, এদের চাপে রাখতে হবে। একমাত্র মিডিয়াই ভরসা। রাজাকারদের বিচার এই দাবীর পাশাপাশি যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের বিচার যাতে হয় এবং সাজাপ্রাপ্তরাদের আসন শুন্য করা থেকে নতুন নির্বাচন, দুদকের কাজে হস্তক্ষেপ না করা এই গুলোর পিছনে লেগে থাকতে হবে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  7. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    আমার ভাইয়া মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা এবার যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করবেন। এবারের বিএনপির ভরাডুবি তাদের শিক্ষিত করে তোলা উচিত।
    তবে কি এই দলে বুদ্বিজীবির সংখ্যা আশংকাজনক।আর এই মহিলাও পরিবারের ব্যাপারে ভাবাবেগপূর্ণ। তাই তার পরিবারের দোহাই দিয়ে কতজন কি করে সেটাই চিন্তার বিষয়।

    সবচেয়ে ভাল হয় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে। তবে বঙ্গবন্ধুর সম্মান রক্ষা হবে

    সংবিধান পরিবতর্নের সুযোগে এবার হয় বাংলাদেশ দাড়িয়ে যাবে না হয় ........??????


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  8. কিছু প্রতিষ্ঠান যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগ, দুদক, পিএসসি, ইকেক্সন কমিসন।

    সুখের কথা এই প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্বে এখন যে ক'জন মানুষ আছেন তারা বেশ সৎ এবং সাহসী মানুষ হিসেবে এতোদিন নিজেদের প্রমান করেছেন। এই ভুমিকা সামনের দিন গুলিতেও ধরে রাখতে হবে।

    মিডিয়া, একটা বিশাল ফ্যাক্টর। তারা যদি একটু স্বচ্ছ সৎ ভাবে নিজেদের কাজটা করতে পারে, তবে সব সময় চাপে থাকবে সরকার। এই চাপটা ধরে রাখতে হবে।

    আর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আমাদের মতো সাধারন মানুষদের। আমাদের জেগে থাকতে হবে।

    এবারের ফলাফলে আমি যে ব্যপারটা সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক দেখি সেটা হলো, এ দেশের জনগন এখনো জেগে আছে। তারা ইচ্ছে করলে সব পারে। একেবারে অন্তপ্রান আওয়ামী লীগ/বা অন্য কেউই কখনো স্বপ্নেও ভাবেনাই যে বিএনপি'র আসন ৩০ এ নেমে আসবে। কিন্তু দেশের মানুষ সেটা করে দেখিয়েছে। তার মানে তারা ইচ্ছে করলে এখনো এমন কিছু করতে পারে যা স্বপ্নেরও বাইরে। এটাই এখনো আমাকে আশার আলো দেখায়।

    তবে লাবলু ভাই যেটা বলেছেন, আমরা ঘর পোড়া গরু। সিদুরে মেঘ দেখলে আমাদের ভয় লাগে। কিন্তু সেই ভয়ও একদিন আমরা জয় করবো সেটাই কায়মনে চাচ্ছি।

    জবাব দিন
  9. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    কিন্তু এই সূর্যের প্রকট আলো যে চোখ-মুখ ও শরীর ঝলসাইয়া দিবে তাহা তো ভাবি নাই। আশেপাশে কোনো বটগাছও দেখি না যে তাহার তলায় আশ্রয় নিব। এই প্রখর আলোতে হাজারি-বিজারি, হেলাল-বেলাল বাহিনী উদ্দাম নৃত্য করিবে বলিয়া আশংকা হইতেছে। দীর্ঘ সাত বছরের অভুক্ত মোখলেসরা জমি কিম্বা বাড়ি দখল, আর ঘরে-আপিসে আমাদের সম্পদ লুটিয়া নেওয়ার জন্য যে আবারো হানা দিবে না তাহার নিশ্চয়তা কে দিবে? আমরা কি উত্তপ্ত কড়াই হইতে জলন্ত চুলায় পরিলাম?

    :dreamy: :dreamy: 🙁

    জবাব দিন
  10. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    বাংলাদেশের ইতিহাসে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে কারো মাথা ঠিক থেকেছে বলেতো মনে পরে না। তাই ভয় একটা তো থাকবেই। আমার মনে হয় মানুষ যদি যথেষ্ট সচেতন হয় আর মিডিয়া যদি সাহায্য করে তাহলে আমরা হয়ত উন্নতির সপ্ন দেখতে পারি।

    জবাব দিন
  11. জাফর (৯৫-০১)
    আমি কোথায় যাইবো? আমার তো কোথাও যাওয়ার আর জায়গা নাই

    সানাউল্লাহ ভাই, আপনি আমাদের মাঝে থেকেই আমাদেরকে নতুন ভাবে ভাবতে শেখান আপনার লেখার মাধ্যমে...

    ছোট্ট একটা আশাঃ

    আমাদের সবার আশংকা কে মি্থ্যা প্রমান করে দেশ এগিয়ে যাক।
    সবাই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন।
    সবাই " কথা নয় কাজ" এই নীতিতে চলুক।

    জবাব দিন
  12. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সানাউল্লাহ ভাই,আপনার মত আমিও নিরাশাবাদী,দিনবদলের কথা শুনে আশান্বিত হতে চাই কিন্তু পুঁজিবাদের নাগপাশ ছিড়তে পারব এ বিশ্বাস করতে পারি না।শুধুই পতিত পবনের কাছে মিরাকলের আশা করে যাই। এ আশা সম্ভবত দুরাশা। শ্রেণীসংগ্রাম পুজিবাদের আগ্রাসন শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ সহ আমাদের হাজার হাজার সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমাদের সাধারণ মানুষ একেবারেই আঁধারে। মধ্যবিত্ত দুভাগে ভাগ হবে অচিরেই।একভাগ মেরে উপরে যাবে আরেকভাগ মার খেয়ে নিচে পড়ে যাবে। শিক্ষা দরিদ্রদের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাবে। ভেজিটেট নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে অশিক্ষায় তলিয়ে দিয়ে তাদের দাসত্ব পূর্ণ জীবন ভালো লাগাতে শিখানো হবে।ধর্মের নামে মানুষের মাঝে ভেদাভেদ বাঁধিয়ে রাখা হবে-এই আশঙ্কায় মন শি্উরে উঠে।
    প্রত্যাশা করি এসব আশঙ্কা অমূলক প্রতিপন্ন হোক।কিন্তু তার স্বপক্ষে কোন সদ কারণ খুজে পাই না।

    *** পুনশ্চ: নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে.বিএনপির অনেক ভালো লোক হেরে গেছেন,কিন্তু সাকা ভিপি জয়নাল সারোয়ারদের ঠিকই জিত হয়েছে।জামায়াতও দুইটি আসন পেয়েছে।বড়ই আজব আমাদের দেশ।

    জবাব দিন
  13. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমি নৈরাশ্যবাদী নই। কিন্তু আশাবাদী হতে তো বাস্তব কারণ থাকতে হবে। পুরোনো ধান্ধাবাজ-চোরচোট্টারা হাসিনাকে ঘিরে ফেলছে দেখতে পাচ্ছি।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।