আমার হুজুর হওয়ার কাহিনী!!!! (৫ মিনিট)

লাস্ট টার্মে কলেজে পৌছেই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে! কোন ধরনের নিয়ম বহির্ভুত কাজে যোগ দিব না! প্রপার ক্যাডেট বলতে যা বোঝায়,তাই হব! ঠিক করলাম নামাজ পড়তে হবে! পরদিন ফজর থেকে শুরু করলাম নামাজ পড়া। জুনিয়রকে বলে দিয়েছি রিভেল দিতে,ক্লাস সেভেন এইট নামাজ পড়ে,তাদের থেকে হুজুর দেখেই একটাকে বললাম “ফজরের নামজে জামাতের আগে ডাক দিবা”! জুনিয়রটাও মহাউৎসাহে ডাক দেয় প্রতিদিন! প্রথম দুদিন আমারও চরম ঊৎসাহ! ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি জামাতের সাথে,জুনিয়রদেরকেও আসতে বলি! আমার রুমমেট দুজনকেও ডাক দেই! ওরা অবশ্য আসে না,কিন্তু আমাকে ঊৎসাহ দেয়! পাশের অন্যান্য ক্লাসমেট কেউ নাই,টুয়েলভ থেকে দুজন ভাইয়া আসেন,অনিয়মিত! আর আমিই হঠাৎ করেই নিয়মিত! বলে রাখা ভাল,ক্লাস নাইনে ঊঠে নামাজ পড়া ছাড়সিলাম,সেই আমি আর হাউজ মস্কে যাই না ২ বছর। এমনকি এস এস সি পরীক্ষার সময়ও নামাজ পড়ি নাই! সেই কারণেই হোক আর আমার ইমেজ(!)এর কারণেই হোক,জুনিয়ররাও বোধহয় অবাক হয়েছিল,আমার ক্লাসমেটরা কম হয় নি! সেই কারণেই দু একজন ক্লাসমেট হঠাৎ হঠাৎ জিজ্ঞেস করত “দোস্ত ছ্যাক ট্যাক খাইসিস নাকি?”আমি আরও দ্বিগুণ বিষ্ময়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করতাম,আমি কি নামাজ পড়তে পারি না!

যাই হোক,এভাবেই সবাই ধীরে ধীরে মেনে নিল আমি নামাজ পড়তে পারি,আমার মাথায় টুপি থাকবে রেস্ট আওয়ারে,প্যান্ট সবসময় গোড়ালির ওপর থাকবে!ডিভিডি শো দেখতে যাব না,টিভি রুমে যাব না(অবশ্য আমি এমনিতেও টিভিরুমে যাই না,B4U আর অন্যান্য মিঊজিক চ্যানেল কেন যেন আমার হজম হয় না)!এরকম করে দিন যাচ্ছে!এদিকে আমিও দিন দিন এই নিয়মে ফেড আপ হয়ে যাচ্ছি!নামাজ পড়তে কষ্ট লাগা শুরু হল।সবচেয়ে বড় কষ্ট অযু করতে যাওয়া!ফজরের নামাজে জুনিয়র আসে রিভেল দিতে,বিরক্ত হয়ে আমি বলি “গেট লস্ট!”বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ি!অন্যান্য নামাজে আড্ডায় বসে পড়ি,নামাজে ইচ্ছা করে না!কারেন্ট এফেয়ার্স শুরু হওয়ায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি,নামাজে আর যাওয়া হয় না!পরীক্ষা শুরু হল,দু এক জন বন্ধু কথা তুলে নামাজ পড়িস না কেন?আমিও যুক্তি দেখাই,বিজ়ি।এথলেটিক্স টাইমেও একই কজ,সময় পাইনা!এমনি করেই ধীরে ধীরে নামাজ থেকে সরে আসলাম!

টার্ম শেষ হল!ভ্যাকেশনে আসছি,কিন্তু সেই যে আমি,সেই আমিই হয়ে গেসি আবার!নামাজ পড়া হয় না!হঠাৎ ইচ্ছে হল আমার গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করতে হবে!এতদিন ফ্রেন্ড ছিল,কলেজে পড়ি যখন বড় হয়েছি,মনের কথাটা জানাই!ভেবে ফোন করলাম!
-হ্যালো!
-হু,আমি!একটা কথা বলার জন্য বলে ফোন করসি!
-কথা বলার জন্যই তো সবাই ফোন করে!কী বলবি?
-এইটা একটা বিশেষ কথা,সময় লাগবে!
-আমার তো টাইম নাই এখন!রাতে বল!
-ঠিক আছে!বাই!

আমি ফোন রেখে দেই!বুকটা হঠাৎ ঢিবঢিব করতে থাকে,যদি না বলে দেয়!এভাবে রাত হয়,আমি খালি গালে হাত দিয়ে ভাবি-কী বলতে পারে!রাতে মিসকল দেয়(গার্লফ্রেণ্ডরা কেন যেন কখনই ফোন করে না)!আমি দুরু দুরু বুকে ডায়াল করি!স্পষ্ট গলায় ওপাশ থেকে ভেসে আসে-“হ্যালো”।
-কী খবর?কেমন আছিস?
-আমি ভাল!কি যেন তোর কথা ছিল?
আমি এটেম্পট নেই,বলব কী না!সাহস পাইনা।বলি-
-এখন বলা যাবে না।আগামীকাল আমার সাথে দেখা করতে পারবি?
-নো প্রব!
——————————————————————————————
পরদিন দেখা হয়! এবার অনেক প্রাক্টিস হয়ে গেছে! সরাসরি আমার মনের কথা জানাই! অপরপক্ষের মুখ শক্ত হয়ে যায়! আমি ভয় পেতে শুরু করি! হঠাৎ বলে-তোর পছন্দ ঠিক আছে,আমারও তো কিছু কোয়ালিফিকেশন দরকার!
আমার মুখে আবার হাসি ফিরে আসে-“তোর কি কোয়ালিফিকেশন চাই?”
-বড় হয়ে কি করবি,আমার কিন্তু বড়লোক বর দরকার!
-সেটা তখন হবে,এখন কি চাস?
-আয়াতুল কুরসি বল!
-ফাজলামো করিস?
-আগে তুই বল,পারিস কীনা,আমার পছন্দ আল্লাহভক্ত ছেলে!
-আয়াতুল কুরসি তো পারি না!
-কী বলিস?
-ঠিক আছে,আজকে গিয়ে মুখস্ত করে ফেলব!
-ওকে। নামাজ পড়িস কয় ওয়াক্ত?
– নামাজ তো পড়ি না!
-নামাজ পড়িস না? আমার বয়ফ্রেন্ড নামাজ পড়ে না,এটা কি করে হয়?
-কেন?!আমি বিস্মিত!
-আজ থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বি,যদি পড়িস আমি রাজী!
-এটা তো আমার জন্য কিছুই না,তোর জন্য আমি সব করতে পারি!
-আমার জন্যে না,নামাজ পড়বি আল্লাহর জন্য!তারপর আমার জন্য দোয়া করবি!
-হুমমম!
-মসজিদে গিয়ে পড়তে হবে কিন্তু!
-ঠিক আছে!
-আমাদের বাসার সামনে দিয়ে মসজিদে যেতে হয়,সেটা মনে আছে!
মুখে কষ্ট মাখা হাসি নিয়ে বলি,ঠিক আছে!

ফলাফলঃগত একসপ্তাহ ধরে আমি মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদে হাজির হই দিনে ৫ বার! প্রতিবার দেখি দোতলায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে মুখ টিপে হাসছে!আর প্রতি রাতে ফোনে জিজ্ঞেস করে “আয়াতুল কুরসি মুখস্ত হয়েছে কিনা”। প্রতিবার ওরসাথে কথা বলতে গিয়ে আমি আয়াতুল কুরসি ভুলে যাই!

অফটপিকঃউপরের পুরাটাই নিছক গল্প,আমার কল্পনাপ্রবন মনের কষ্টপ্রসূত!

১০৫ টি মন্তব্য : “আমার হুজুর হওয়ার কাহিনী!!!! (৫ মিনিট)”

  1. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এইডাতো আমার পোলার বয়সী। অহনো বাপেরে জড়াইয়া ধইরা ঘুমায়। আর লেখছে প্রেমের গল্প!! গুইন্যা গুইন্যা ওর ৫টা ব্লগ আর ১০০টা :frontroll: কনফার্ম করো মাস্ফ্যু। 😡 😡 😡


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  2. আহ্সান (৮৮-৯৪)
    ১০০টা কনফার্ম করো

    ওই শুরু...
    গত ছুটিতে একবার রগড়াইছিলাম ভুইলা গেছ?
    আবার আমার বসের কাছেচ টোকাই হইলা ক্যামনে?
    ওই...শুরু...ফাস্ট...ফাস্ট...
    মাস্ফু...অরে রগড়াইয়া নিয়া আসো...সানাউল্লাহ ভাই'র আদেশ...

    জবাব দিন
  3. জাফর (৯৫-০১)

    ক্লাস ৯ এ থাকতে আমার এক বন্ধু ও হুযুর হইছিল... তবে কাহিনী অন্যরকম... ছোট / চিকন বই(???) ইন্সপেকশন এর সময় রেখে ধরা খাওয়ার পর হুযুর হইছিল. . . 🙂

    আর একজন হইছিল খাদেম... প্রত্যেক দিন সকাল এ নামাজ এ না গেলে Senior এর কাছে Absent Report দিত.. বিশেষ করে যাদের সাথে তার একটু বেশি ভাল( :-/ ) relation ছিল, তারা নামাজ এ গেলেও Absent Report দিত... অবশ্য আমরা Close Friend ছিলাম বলে আমাদের Absent Report দিত না... 😛

    জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    ভালোবাসার জন্য মানুষ হাতের মুঠোয় প্রাণ নেয়, দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধে দেয় লাল কাপড়। আর তোমার উপর দিয়া তো অল্পের উপর গেছে। শুধু আয়াতুল কুরসী আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তাও নামাজ পড়তে গেলে তার দেখা পাওয়াটা ফ্রি।

    ইহ জনমে প্রেমিকা, পর জনমে হুরদের সর্দারনী---নাহ, তোমার বুদ্ধি আছে মিয়া।

    জবাব দিন
  5. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    মাইয়্যা মাইনষের চিকন বুদ্ধি দেখেন, মাইয়্যা নিজে নামায পড়ে কিনা কে জানে তয় পোলার নামাযের গুনেই বেহেশত বাগাইব। দুনিয়া আর আখিরাত দুইটাই হাসিল।

    জবাব দিন
  6. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    -আয়াতুল কুরসি বল!
    -ফাজলামো করিস?

    =)) =)) :khekz: :khekz: :awesome: :awesome:

    আর প্রতি রাতে ফোনে জিজ্ঞেস করে “আয়াতুল কুরসি মুখস্ত হয়েছে কিনা”।

    আবার ফোনে পড়াও ধরে.........কঠিন চিজ 😕 😕 😉 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  7. রাহাত (২০০০-২০০৬)

    ইসশ.আমারো এইরোকোম একটা বানঢোবি ঠাকটো রে.।আুভরো নাই.টাই বাংলার এই কোরুন ওবোসঠা আজকে.।কেউ হাসবি না..টোর পরেম কাহিনি আমার ভালো লাগসে. :thumbup: :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  8. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)

    "অফটপিকঃউপরের পুরাটাই নিছক গল্প,আমার কল্পনাপ্রবন মনের কষ্টপ্রসূত"-এই কথাটা পুরাই চাপা। :))
    in our time 🙂 আমরা ঘুরাইতাম, :just: ফ্রেন্ডরা ঘুরতো(মাস্ফ্যু ভাই তো এখনো ঘুরায় :khekz: ),কিন্তু আজকাল দেখছি তোমরাই ঘুরতেছ!
    ব্যাপার কি ?ক্যাডেটদের মৌসুম খারাপ যাইতেছে মনে হয়

    জবাব দিন
  9. তেলাওয়াত কইলা মজা হাইলাম.... তয় :boss: আয়তুল কুরসী :boss: দিয়া দিলে আরো বালা হইত..
    আমারও একই দশা জিএফ =)) এ কইছে যাওনের সময় গাড়িতে সুরাডা মুহস্থ লইব... অখন সুরা খুঝতাছি..... :grr:

    জবাব দিন
  10. ইসলাম (১৯৯৬-২০০২)

    বিষয়টা যেহেতু নামাজ তাই একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র এক ভাই নামটা গোপন থাকল। মান্নান স্যারের ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষায় নামাজের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য উদ্দৃতি দিয়ে লিখেছিল- "মহানবী বলেছেন নামাজ না পড়লে মানুষের ভীমরতি ধরে।"


    Islam, CCR (1996-2002)

    জবাব দিন
  11. হুমায়ুন (২০০২-০৮)

    এসএসসি এক্সামের আগে একদিন আসরের নামায পড়তে গেসি মসজিদে। আমার আবার নামাজ না পড়ার একটা কুখ্যাতি ছিল কলেজে থাকতে। তো একটা খবিশ টাইপের স্যার ছিলেন। আমাকে মনে করতেন তার চিরশত্রু। আমাকে মসজিদে দেখে '' ইমাম সাহেবকে ডেকে বললেন হুজুর আজকে একটা বিশেষ দিন কারণ হুমায়ুন মসজিদে এসেছে আর মুয়াজ্জিনকে বললেন হুমায়ুঙ্কে আজকে আপনার জায়গাটা ছেড়ে দিন, ইকামাত টা ওই দিক আজকে।'' লজ্জায় তো আমার মাথা কাটা। ঐদিন প্রতিজ্ঞা করসিলাম আর কোনদিন আসরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবনা। ইট সিমস আই কেপট মাই ওয়ার্ড 😀


    তুমি গেছো
    স্পর্ধা গেছে
    বিনয় এসেছে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।