ছোটদি (২)

[ মাঝে মাঝেই কিছু গল্প উপন্যাস পড়ে আমার খুব ইচ্ছে করে এর পরে কি হল কিংবা এই একই ঘটনা যদি অন্য কারো মুখ থেকে আসত তাহলে কি হত। যেমন পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে কুবের আর কপিলা কোথায় গেল কিংবা সাতকাহনে দীপাবলি কি একাই কাটিয়ে দিল বাকি জীবন। আমার সাথে যদি লেখকদের চেনা জানা থাকত তাহলে আমি খুব অনুরোধ করতাম তাদের এই থিম নিয়ে লেখার জন্য। অনেকদিন ধরে মনে হচ্ছে নিমাই এর মেমসাহেব উপন্যাস (আমার খুবই প্রিয় একটা বই ) এর কথা। মনে হচ্ছিল সেখানে মেমসাহেবের ছোটভাই খোকন এর একটা গল্প বুঝি লুকিয়ে আছে। তার জবানীতে যদি মেমসাহেবকে বের করা আনা যেত। তাই আমার এই চেষ্টা। লেখার হাত আমার তত ভাল নয়। তাই আমার এই প্রচেষ্টায় যে কারো সমালোচনা উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করব]
ছোটদি (১)
(২)
আপনার চিঠি পেয়েছি অনেক আগেই। চিঠিতে আপনি আমাকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে আমার উপর আপনার কোন রাগ নেই এবং আমার জন্য আপনি মেমসাহেবকে হারিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন না। শুনে ভাল লাগলেও আমি নিজেকেই নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারিনা। আপনাকে অনেকদিন অপেক্ষা করালাম। অনেকবারই বসেছিলাম লেখার জন্য কিন্তু কলম নিয়ে বসলেই কি যে হত পুরান দিনের সেইসব মধুর স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। অসম্ভব মায়াবী একটা মুখ আমাকে ডাকে,”পিচ্চি কেমন আছিস? কতদিন তোকে আদর করিনা। দিদির কথা মনে পড়ে না তোর?” বোকা মেয়েটা কেন জানেনা এক মুহূর্ত ও যে আমি শান্তি পাইনা। ঘুমাবার সময় এখনও কত ডাকি তাকে , ও ছাড়া কে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে?

বিশুর যখন দিদির বিয়ে হল সেইদন বিয়েবাড়িতে কিছুক্ষণ থেকেই অসহ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম আমি। সারা কলকাতা চষে বেড়িয়েছি। কি এক অস্থিরতা ভর করেছিল আমার উপর কে জানে। খুঁজে ফিরেছি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া মায়াবী মুখ। বিয়ের সাজে উপমাদিকে যতবার দেখছিলাম ততবার মনে হচ্ছিল সেখানে আমার ছোটদি বসে আছে। পরে বিশুর জেরার মুখে পড়ে মিথ্যে বলে পার পেয়েছিলাম।

সেবার পূজোর বন্ধে বড়দি এসেছিল বেশ কিছুদিনের জন্য। অনেকদিন পর দিদি আসাতে আমাদের সেবার অনেক আনন্দ হয়েছিল। দিদির ছেলের তখন মাত্র দেড়বছর বয়স। তাকে নিয়ে তখন বাড়িতে অনেক হৈচৈ সবাই কাড়াকাড়ি করে তাকে আদর করার জন্য। ছেলেটি দেখতেও একেবারে পুতুলের মত ছিল। সবার সাথেই তার ভাব সবার কোলে গিয়েই অদ্ভুত সুন্দর করে হাসত। বাসার সবাই তাকে নিয়েই ব্যস্ত। আমারও খুব মজা লাগছিল কিন্তু দুদিন পরেই আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লাম। মেঝদি ছোটদি সবাই বাইরে থেকে আসলেই সবার আগে ঐ পিচ্চির খোঁজ করে আদর করে, যা এতদিন আমার ভাগেই ছিল। মেনে নিতে পারছিলাম না।
সেদিন ছোটদি বাসায় ছিল না। মেঝদির পাশে বসে আমি তার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম ওদের রুমে। বাইরের ঘরে আওয়াজ পেলাম ছোটদি এসেছে। আমি অপেক্ষা করছি কখন সে এই রুমে আসবে অন্য সময়ের মত ছুটে তার কাছে গেলাম না। ছোটদি কিন্তু এল না এই ঘরে ওই ঘরেই বড়দির সাথে গল্পে মেতে গেল। কখন যে মেঝদি ও ওই ঘরে চলে গেল টের পেলাম না আমি তখন একা একা বসে বসে অভিমানে জ্বলছি। কেউ আমার খবর নিচ্ছে না মনে হচ্ছিল এক ছুটে চলে যাই সেখান থেকে অনেক দূরে। মনে হচ্ছিল এখন আমি যদি এমন কোথাও চলে যাই যেখানে আমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না তাহলে বেশ হবে খুব শাস্তি হবে সবার। অনেকক্ষণ পরে মনে হয় আমার ছোটদি খেয়াল করল আমি আজ সে আসার সাথে সাথে তার কাছে যাইনি।
“মা খোকন কই বাসায় নেই?” বলতে বলতে দিদি ঘরে ঢুকল। আমি তখন কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছি।
-কিরে পিচ্চি কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন।
দিদির কথা শুনে ওঘর থেকে সবাই এসে গেল এই রুমে। আমার তখন কথা বলার মত অবস্থা নেই। ছোটদি তো কিছুই বুঝতে না পেরে এসে আমাকে আদর করে কাছে টেনে নিল।
মেঝদি এসে বলল তুই না এতক্ষণ আমার সাথেই বসে ছিলি কখন ছোটদি আসবে সেই অপেক্ষায় কখন আবার কাঁদতে শুরু করলি । কি হয়েছে ভাইয়া?
সবাইকে দেখে আমি খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম। ছোটদির বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়ল। বড়দি আসার পর তুমি আমাকে আর আদর কর না আমার খবরই নাওনা।
এতক্ষণে বুঝতে পেরে সবাই হেসে উঠল। বোধ করি বড়দির কোলে থাকা পিচ্চিটাও। আমার ছোটদি একটু লজ্জা পেয়ে গেল।
-ওহহো অভিমান হয়েছে আমাদের খোকনের। বড়দি বলল।
-দূর পাগল । এজন্য এত কান্নাকাটি। ও না তোর কত ছোট আর কদিনের জন্য মাত্র এসেছে । ২ দিন পরেই চলে যাবে। তোর আদর তো আলাদা করা সেটাতে কেন ও ভাগ বসাবে। আমাকে সামলাচ্ছে ছোটদি।
– ওকে বাবা স্যরি আর হবে না। আমি নাহয় একটু পঁচা হয়ে গিয়েছিলাম আর কখনো তোর আদরে কম হবে না।

সেবার বড়দি যাবার সময় দুষ্টামি করে বলছিল ,”যাইরে খোকন , তুই তো খুশিই হবি আমি গেলে তোর আদরে ভাগ বসাবার কেউ থাকবে না।”
লজ্জায় ছোটদির পিছনে লুকিয়েছিলাম আমি। ওরা যাওয়ার পর বাসাটা খুব খালি খালি লাগছিল আমারও।
দিদিকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম , দিদি তোমাকে আমার এত ভাল লাগে কেন। জবাবে কি বলেছিল জানেন?
–আমাকে ভাল লাগবেনা তো কাকে লাগবে তোর কি ১০১ টা দিদি আছে নাকি?
-কিন্তু মেঝদিকে নিয়ে তো আমার এমন হয় না। আমাকে ছাড়া তুমি অন্য কাউকে আদর করলে আমার সহ্যই হয় না।আমি কী হিংসুটে তাইনা?
– আমার মত কি মেঝদি তোকে আদর করে। তুই জানিস আমি যখন বাসার বাইরে থাকি তখনও আমার সবসময় মনে হয় আমার পিচ্চিটা না জানি কি করছে এখন। তুই যখন অনেক বড় হবি বাইরে বাইরে থাকবি তখনও আমার তোকে নিয়ে চিন্তা থাকবে সবসময়। আমার কেবলই মনে হয় তুই আমার কাছে না থাকলেই একটা বিপদ বাঁধিয়ে ফেলবি। আর তুই হিংসুটে হবি কেন তুই যে আমাকে প্রচন্ড ভালবাসিস এজন্য তোর এমন হয়।তোকেও যদি কেউ অনেক আদর করে তাহলে আমার ও এমন লাগবে। বড় হয়ে যখন তুই বিয়ে করবি তোর বউকে আমার থেকে বেশি ভালবাসবি তখন দেখবি আমি একেবারে হিংসায় মরে যাব।
-আমি কখনো কাউকে তোমার থেকে বেশি ভালবাসব না দিদি তুমি দেখো।

ওর থেকে কাউকে ভালবেসে ফেলি সেই দুঃখ যেন না পায় সেইজন্যই বুঝি আমার দিদি এত তাড়াতাড়ি চলে গেল।

২,৭৩৮ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “ছোটদি (২)”

  1. রকিব (০১-০৭)

    তপু ভাই, আপনার আগের একটা পোষ্ট "আমার আপুসোনা" এর সাথে কেমন যেন এক্তা পরিচিত গন্ধ পাচ্ছি...
    ঐটা পড়ে তো আগেই কাত হয়ে্ছিলাম... এবারে ছোটদি দিয়ে তো বাজিমাত করছেন... ভাইয়া পরের পারত তাড়াতাড়ি লিখেন প্লিজ।। 😀 😀 😀 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ফয়েজ ভাইয়ের কমেন্ট ধার করে বলি-ডিটেইল আরেকটু কম হলে আরো অনেক সুখপাঠ্য হতো...তবে "মেমসাহেব" পড়তে গিয়েও একটু বেশি ডিটেইলড;যথাকারণেই স্লো বলে মনে হয়...যার জন্য আজো শেষ করা হয়ে উঠলনা...এইবার শেষ করে ফেলতে হবে, নাইলে তোমার 'ছোটদি' সিরিজের লাইন-লেংথ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।
    তবে, লেখাটা অনেক টাচিং...আর নিমাইয়ের ছাপ থাকাটাও এই তুচ্ছ পাঠকের কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিতে পারো।


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  3. দিহান আহসান

    এবারো ভাল হয়েছে, কিন্তু আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা লাগলো।
    তোমার আপুসোনার লেখার সাথে মিলে যাচ্ছে, শুধু সেখানে আপুসোনা এখানে ছোটদি। আমার মনে হচ্ছে, ভুলও হতে পারে। 😕

    আমিও এমন হিংসিতো হই। :grr:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।