DSLR ক্যামেরা কিনছেন? পর্ব- ২ ( লেন্স পরিচিতি )

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আমাদের প্রায় সবারই ফটোগ্রাফির প্রতি খানিকটা দুর্বলতা আছে, এটাই স্বাভাবিক। হরেক রকমের সোস্যাল নেট ওয়ারকিং আর ফটো আপলোডের এত প্লাটফর্ম থাকায়, সবাই এখন ভালো ছবির কাঙ্গাল। ভালো ছবির জন্য DSLR ক্যামেরা একটি অন্যতম মাধ্যম।আমদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন হইতো চিন্তা করছেন DSLR কিনবেন, কিন্তু বাজারে এত বেশি অপশন থাকায় ঠিক ধরতে পারছেন না , কি করা উচিত। হ্যা , আপনাদের এই সাহায্যের জন্য এই ব্লগ লিখা। আশা করি ভালো লাগবে।
ক্যামেরা নিয়ে মোটা মোটি বিস্তর আলোচনা প্রথম পর্বে করা আছে।
ক্যামেরা কিনলেন, এবার কোন লেন্স টি কিনবেন ? লেন্স এর প্রকারভেদ ও পরিচিত। লেন্সের গায়ের লেখা গুলোর মানে কি? আজকের পর্বে আমরা এগুলো জানবো।
digital-camera-lenses-660x360

ফোকাল লেন্থ
লেন্সের গায়ের উপরে mm একক দিয়ে ফোকাল লেন্থ এর পরিমাপ টা দেয়া থাকে ।নিচের ছবিতে লেন্সের ফোকাল লেন্থ হল ১৮-৫৫ মিমি।
lense for focal lenth
ফোকাল লেন্থ হলো , ছবি তোলার সময় কতটুকু অংশ ছবিতে আসছে এর নির্ধারক। অর্থাৎ ফোকাল লেন্থ বেশি হলে ছবিতে কম জায়গা কভার করবে। আবার ফোকাল লেন্থ যত কম হবে ততবেশি জায়গার ছবি উঠবে, তত বেশি wide হবে। নিচের ছবিটিতে খেয়াল করুনfocal lnth and imag border
focallengths3
ফোকাল লেন্থেরপার্থক্যের জন্যে আরো একটা ব্যাপার সম্পরকযুক্ত, তা হলো ব্যাকগ্রাওন্ড ব্লার বা ঘোলাটে হউয়া। ফোকাল লেন্থ বেড়ে যাওয়া মানে ফোকাসিং অবজেক্ট এর পিছনের Material গুলো আরো কম্প্রেস হয়ে যাওয়া।
f n img size
কেন এরকম হয়ে থাকে এর ব্যাখ্যা নিচে দেয়া হলো। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ফোকাল লেন্থের ওপর ভিত্তি করে লেন্সের ভাগ করা যায় এভাবে, নরমাল লেন্স ( সাধারণত ১২-৭৫ মিমির মধ্যে), ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স(২৪ মিমি এর নিচে) আর টেলিফটো লেন্স( ৭০ এর ওপরে)।
nrmal

ttttttttt

widde
সাধারনত বাজারে দুই ধরনের লেন্স পাওয়া যায়, জুম লেন্স আর প্রাইম লেন্স। জুম লেন্সের ফোকাল লেন্থ পরিবরতন করে ইচ্ছা মতো লিমিটের ভিতরে ছবি তোলা যায় , আবার প্রাইম লেন্সের ফোকাল লেন্থ ফিক্সড।
prime lens
এটি একটি প্রাইম লেন্স। এই লেন্সের গায়ে ফোকাল লেন্থের কোন লিমিট নাই, অর্থাৎ জুম করতে পারবেন না, কন্তু এই লেন্স গুলি প্রফেসনাল দের ছইচে, কারন এটির আপারচার বেশি, লো লাইটে ভালো ছবি পাওয়া যায়, সফট ব্যাকগ্রাওন্ডেড় কারনে অনেক ভালো পোট্রেট তোলা যায়।

অ্যাপারচার
aperture
উপরের ছবি থেকে বুঝতে পারি যে অ্যাপারচার লেন্স দিয়ে কতটুকু আলো ঢুকবে তা নিরধারন করে। f/(number) হলো একটা অনুপাত, সঙ্খ্যাটা যত ছোট হয় ,অ্যাপারচার তত বড় অ্যাপারচার মানে তত বেশি আলো ঢুকে ছবি উজ্জ্বল করে তোলে। সাধারনত রাতে বা কম আলোতে সুন্দর ছবি তোলার জন্য বড় অ্যাপারচার দরকার। APERTURE BRGT
অ্যাপারচারের সাথে কিন্তু DEPTH OF FIELD এর বড় একটা সম্পর্ক আছে। নিচের ছবি টি খেয়াল করুন
DEPTH OF FIELD
অর্থাৎ বলা যায় আপারচারটা যত বড় হয়, তত ফোকাসিং আর ডিটেইল ছবি তোলা যায়, যা আমরা সবাই চাই।
লেন্সের গায়ে সাধারণত ফোকাল লেন্থ এর পরেই লেখা থাকে।
Image Stabilizar( IS)
হাতে ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফি করার সময় হাল্কা কাপানো কে সহনীয় মাত্রাই রেখে ছবি কে সুন্দর করে তোলে। একি জিনিস নিকনের লেন্স এ VR( Vibration Reducer ) হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আবার ক্যামেরা যখন ট্রাইপডে রেখে ছবি তোলা হয় তখন এটা অফ রাখা উচিত।

STM ( Stepping Motor)

700d
STM-Step motor ক্যানন লেন্সে ব্যবহৃত মটর যা লেন্সকে অটোফোকাস করে। এই মটর শব্দহীন ভাবে আটোফোকাস করতে পারে। সুতরাং STM লেন্সগুলো ভিডিও করার সময় কোনরূপ শব্দ ছাড়াই অটোফোকাস করে থাকে।

কয়েকটি লেন্সের উদাহরন

আমি ক্যানন লেন্সের উদাহরন দিয়ে দিচ্ছি। আসলে নিকন বা ক্যানন একই , নামকরণে একটু পার্থক্য থাকে, তবে দেখলেই বুঝবেন
১। CANON ZOOM LENS EF-S 18-135mm 1:3.5-5.6 IS STM 18-135 EXAMPLE
এটি ক্যাননের জুম লেন্স, যার ফোকাল লেন্থ ১৮-১৩৫ মিমি পর্যন্ত, অ্যাপারচার ১৮ মিমি তে সরবোচ্চ ৩.৫ আবার ফোকাল লেন্থ বাড়ালে কমে ৫.৬ পর্যন্ত যায়। Image Stabilization আছে, স্টেপিং মটোর ও আছে। কথা হলো EF-S কী। এটি হলো ক্যানন ক্যামেরা যেগুলোতে APS-C ( CROPPED FRAME) সেন্সর ব্যবহার করা হয়ছে , যেমন Canon 70D, Canon Rebel T3i ।

২। CANON LENS EF 35mm 1:1.4 L
EXMPLE RIME
এটি একটি প্রাইম লেন্স, যেখানে ফোকাল লেন্থ ৩৫ মিমি, EF মানে হলো, এটি ফুল ফ্রেম , larger sensor body এর ক্যামেরার জন্য যেমন, Cano 6D, Canon 5D । এখানে L মানে হলো এই লেন্স আরো উন্নত্মানের ছবি তুলতে পারে, বড় এবং শার্প।

৩। Canon EF 24-70 mm 1:2.4 L II USM
EXM L LENS

USM-UltraSonic Motor ক্যানন লেন্সে ব্যবহৃত মটর যা অটোফোকাস করে। USM আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। micro motor USM এবং Ring type USM। Ring type USM মটর গুলো STM মটরগুলোর মতই শব্দহীন এবং মসৃন হয়ে থাকে। micro motor USM গুলো Ring type USM-এর মত এতটা শব্দহীন না হলেও এই ধরণের মটর যে লেন্সগুলোতে ব্যবহার করা হয় সেই লেন্সগুলোর দাম তুলনামূলক কম হয়।)

এখন আমরা সহজেই বলতে পারবো কোন লেন্স কেমন এবং কি মানে বোঝায়। নিকনের ক্ষেত্রেও একী শুধু EF এড় ্যায়গায় AF পড়তে হবে। IS বা VR ও একি জিনিস। তারপর ও কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
ধন্যবাদ। এই লেখাটির ১ম পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
DSLR ক্যামেরা কিনছেন? পর্ব- ১ ( মধ্যম দামের মধ্যে কয়েকটা ক্যামেরা )

১৪ টি মন্তব্য : “DSLR ক্যামেরা কিনছেন? পর্ব- ২ ( লেন্স পরিচিতি )”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সুন্দর লেখা।
    ভালো কথা বিষয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফি, ছবি তোলা ইত্যাদি সংযুক্ত করে দিও। এতে করে ঐ বিষয়ে সার্চ দিলে এই লেখা সহজেই পাওয়া যাবে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. রেজা

    :clap: :clap:
    দুর্দান্ত হয়েছে। আরো বিষয় ভিত্তিক লেখা আশা করছি।


    বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।

    জবাব দিন
  3. ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ভাবে ব্লার করতে হলে কি কি করতে হবে? আমি কারো পুরো ছবি সহ ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে ব্লার করতে চাই,,,এক্ষেত্রে কি করতে হবে?
    nikon D3200(kit lens 18-55mm)

    জবাব দিন
  4. ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ভাবে ব্লার করতে হলে কি কি করতে হবে? আমি কারো পুরো ছবি সহ ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে ব্লার করতে চাই,,,এক্ষেত্রে কি করতে হবে?
    (নিকন ডি৩২০০(১৮-৫৫এমএম লেম্স)

    জবাব দিন
    • আবু হাসান মেহেদী/৩০তম/বকক

      কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার জন্য ১৮-৫৫ তেমন সুবিধার লেন্স না। তবে আমি আপনাকে কিছু টিপস দিতে পারি।
      ১. ম্যাক্সিমাম জুম করে ছবি তুলুন। দরকার হলে সাবজেক্ট কে ফ্রেম এর ভিতরে আনতে আপনি নিজে পিছিয়ে নিন।
      ২. আপারচার মিনিমাম করুন। ৫৫ মিমি তে মনে হয়ে ৫.২ ই সবচেয়ে কম।
      ৩. ব্যাকগ্রাউন্ড মোটামোটি দূরে রাখুন। যেন ফোকাসিং করা সাবজেক্ট টা স্পশট লাগে
      ধন্যবাদ

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।