অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ – ১

[[ ব্লগে কলেজের অনেক মজার মজার কথা আমরা সবাই লিখছি। আমাদের নতুন উদ্যোগ- সম্পূর্ণ কাল্পনিক কিছু ঘটনা নিয়ে সাজানো ক্যাডেট কলেজ। এই গল্প যে কেউ লিখতে পারো। আমি শুরু করলাম। পরবর্তী অংশ অন্য কেউ লিখবে। এভাবে চলতে থাকবে। নিয়মটা হল- পরবর্তী অংশ যে লিখবে- তাকে মন্তব্যে বলে দিতে হবে… ঘটনা কীরকম হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নাই।
তাইলে শুরু করা যাক…]]

একঃ

ঘটনার শুরু হল ঠিক বারোটা তেত্রিশ মিনিটে। সেকেন্ডের পরিমাণটা পারলে আরো ভালো হত। কিন্তু সাজিদ সেটা খেয়াল করে নি।
চিৎকারটা করলেন হুদা স্যার। বাংলার সহযোগী অধ্যাপক। আর কয়েকদিন পর ভিপি হওয়ার কথা। তাই অন্যান্য স্যারদের মত তাকে একাডেমিক বিল্ডিং ত্যাগ করতে একটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। হুদা স্যারকে দেখা গেল দৌড়ে দৌড়ে ভিপির রুমের দিকে ছুটছেন। মোটা শরীর। অল্পতেই হাঁপিয়ে যান। ভিপি স্যারের রুমে ঢুকেই বলেন।
– স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে।
ভয়ানক শ্বাসের কারণে হুদা স্যারের কথা অষ্পষ্ট লাগছে। ভিপি স্যার বললেন।
– আরে হুদা সাহেব বসেন। হয়েছ কি?
– সব সাইকেল গায়েব।
ক্যাডেট কলেজ প্রায় সব স্যারের সাইকেল থাকে। মরুভুমির জাহাজ উট। আর ক্যাডেট কলেজের জাহাজ স্যারদের সাইকেল।
– সব সাইকেল গায়েব মানে?
– একাডেমিক ব্লকের সামনে একটা সাইকেলও নাই।
ভিপি স্যার জনাব হামিদুর রহমানে মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। ব্যাপারটা তিনি কিছুতেই ধরতে পারছেন না। ক্যাম্পাসে এসব কী শুরু হয়েছে? কয়েকদিন আগে দিন দুপুরে প্রিন্সিপালের গাড়ী উধাও হয়ে গেল। আর এখন সাইকেল। হামিদুর রহমান স্যার একাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনে গেলেন। ইতোমধ্যেই ব্যাপারটা কলেজে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাডেটরাও ফর্মের সামনে থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। ভিপি স্যার পিয়নকে ডেকে পাঠালেন।
– মকবুল, ঘটনা কী?
– স্যার। আমি কেমনে বলব? আমার সাইকেলও নাই।

দুইঃ

– এটা কোন কথা হল? একটা প্যান্টও খুঁজে পাচ্ছ না।
পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল গাফফার প্রচন্ড বিরক্ত হলেন তাঁর স্ত্রীর উপর। আটটার মধ্যে একাডেমিক ব্লকে যেতে হবে। আর এখন নাকি কোন প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে না। আধা ঘন্টা ধরে তিনি আর তাঁর স্ত্রী পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে ফেলেছেন। কিন্তু কোন প্যান্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল করে তার হার্ট এটাকের মত অবস্থা হল। তাঁর পরণে লুংগী। স্পষ্ট মনে আছে তিনি রাতে ট্রাউজার পরে ঘুমিয়েছিলেন।
কিছুই তাঁর মাথায় ঢুকছে না। হচ্ছে কী এসব। কাল সাইকেল অদৃশ্য হয়ে গেল। আজ প্যান্ট। ভিপি স্যারকে ফোন দিলেন তিনি।
– হ্যালো স্যার। আমি আব্দুল গাফফার।
– প্যান্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। আমারও সেইম অবস্থা।
– তার মানে?
– প্রায় সব স্যারকে ফোন করলাম। সবার প্যান্ট হারিয়ে…
ভিপি স্যারের কথা পুরোটা শেষ হলো না। তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে দড়াম করে একটা শব্দ হলো। একটা নারী কন্ঠ শোনা গেল।
– হাই। মিস্টার গাফফার!

তিনঃ

রাত আটটার মত বাজে।
সাজিদরা হাউসেই বসে আছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাডেটদের হাউস থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাউসের সামনে স্টাফ শুকনা মুখে মুখে ঘুরঘুর করছেন। ক্যাডেটদের বেশ মজাই লাগছে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয়টা হল- ডিনারের জন্যও বাইরে যেতে হবে না। হাউসে সবার ডিনার চলে আসবে। কমন রুমে ক্লাস ইলেভেন- টুয়েলভের ভাইরা বেশ গম্ভীর মুখে গত কয়েকদিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছে। হাসিব বলল।
– দোস্ত। আসল ঘটনা কী? ভেতরের খবর পাইছিস কিছু?
রাসিফ হাউস প্রিফেক্ট। কলেজে বিশেষ কিছু ঘটলে পোলাপান তাকে জিজ্ঞেস করে। তাই তাকে সবকিছু সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হয়। দুঃখের বিষয় এই সম্পর্কে রাসিফ কিছুই জানে না। তবুও মুখে যথাসম্ভব গাম্ভীর্য এনে সে বলল।
– পরে বলব।
তারপর মুখ দিয়ে সে একটা ইশারা করল। যার মানে হচ্ছে- ক্লাস ইলেভেনের সামনে বলা যাবে না।
হাসিব বলল।
– যাই হোক। আমাদের কী? আমাদের তো মজা। প্রেপে যাওয়া লাগবে না- পিটি করা লাগবে না। সবকিছু মাফ…

চারঃ

শহীদুল্লাহ হাউসের পেছনে কলেজ স্টোরের সামনে সাজিদ দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা চামচ আর একটা প্লেট। রাত এগারোটার দিকে সাজিদ চামচ দিয়ে প্লেটে তিনবার শব্দ করল। হাউসের পেছনের পাহাড় থেকে একটা ছায়া নেমে আসল। সাজিদের বুক কাঁপা শুরু হয়েছে। যতবারই মেয়েটার সাথে দেখা করে ততবারই সাজিদের প্রচণ্ড ভয় হয়। কেউ যদি দেখে ফেলে? সাজিদের সামনে এসেই মেয়েটা মুচকি হাসল। তারপর অদ্ভুত ভাবে বলল।
– পাহাড়ের উপর যাই চল।
– না। হাউসে কেউ জানতে পারলে খবর আছে।
– আরে জানবে না। চল না…প্লীজ।
সাজিদের খুব মায়া হল। মেয়েটা নাকি পাহাড়ের ওপাশে একা একা থাকে। সাজিদের বিশ্বাস হয় না। রুমে কেউ না থাকলে সে একা একা থাকতে পারবে না। আর মেয়েটা!

মেয়েটা হাঁটছে। সাজিদ পেছনে। পাহাড়ের ওপর ওঠার সাথে সাথে তার ভয় একদম চলে গেল। পাহাড়ের ওপর চাঁদের ক্ষীণ আলো অদ্ভুত মায়া ছড়ায়…

মায়াময় আলো চোখে মেখে মেয়েটা বলল…
– তোমাদের ভিপি স্যারকে মনে হয় আর বাঁচানো গেল না।

পরের পর্ব >>

১৯ টি মন্তব্য : “অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ – ১”

  1. আউলায়া গেছি মানে, পুরা অকূল পাথারে পরছি। আমি ফার্স্টে হাত তুলছি, কারণ গল্প লেখার খুব ইচ্ছা আমার, কিন্তু গুছিয়ে কিছু লিখতে পারি না। কি মনে করে যেন তাই দুঃসাহসটা করে ফেললাম।
    খারাপ হলে কিন্তু আমার দোষ নাই..........
    আর আপনাদের সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানি না, দ্বিতীয় কিস্তির প্রথম অংশটা শেষ করে ফেলছি।

    জবাব দিন
  2. এই কি অবস্থা?? এ তো পুরা কাপঝাঁপ!! আরেকজন আবার সেকন্ড পার্টও লিখে ফেলাইসে!!
    প্রথমে গাড়ি, তারপর সাইকেল, তারপর প্যান্ট!! তার সাথে আবার মায়াময় মেয়ে???
    বিশাল আগ্রহ নিয়ে বসে আছি পরের পর্বের জন্য।

    জবাব দিন
  3. এই আমি ৩ নং পার্ট লিখব। মুহম্মদ লেখার পর। সুকুমার এর হযবরল পড়ার পর থেকে এইরকম আজগুবি লেখা নিয়ে আমার খুবই আগ্রহ। আর এই লেখাটাও সেইরকম হইছে। তাই হাত তুললাম।
    আর মহিব ভাই তোমার উপর অসন্তুষ্ট হইছিলাম বহুদিন ওয়েট করাইছ অন্য উপন্যাস টার সেকেন্ড পার্ট দিতে। অনেক ভাল হচ্ছে সেটা।

    জবাব দিন
  4. কামরুল ভাই,
    নিয়ম কিন্তু অন্যরকম। দ্বিতীয় লেখাটা আসার পর সেখানে যে আগে কমেন্ট করে লিখতে চাইবে সে-ই তিন নম্বরটা লিখবে।
    তাই রেডি থাকেন। দুই নম্বরটা আসার সাথে সাথে একটা কমেন্ট করে হাতটা ভালো করে দেখায়া দিয়েন।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।