উদ্ভট ফ্যান্টাসী

অনেকদিন ধরে কিছু একটা লিখবো চিন্তা করতেছিলাম। এখন সিসিবি এর যেই লেখার স্রোত চলতেছে, ভাবলাম, উদ্ভট কিছু দেয়ার এইতো সময়।
১।
জিহাদ এর ফোনে হঠাৎ ঘুম ভাংলো।
“রবিন ভাই, নেক্সট উইকে যে সিসিবি গেট টুগেদার আছে, মনে আছে?”
ওহ, তাইতো, ভুলেই গেসিলাম।
“না ভাই, ভুলবো কেন?” খুব ভাব নিয়ে বললাম।
“তুমি আমাকে প্রোগ্রাম ডিটেইলস টা আমার কমিউনিকেশন মডিঊলে সেন্ড করে দিও।“

চিন্তা করতে লাগলাম, আগেকার দিনে আমাদের কতো কষ্ট করতে হতো। যেকোনো গেট টুগেদার এর আগে সবার সাথে যোগাযোগ করো, টাইমিং মিলাও, ভেনু ঠিক করো ইত্যাদি। এখন সবার কমিউনিকেশন মডিঊলে শুধু এড করা থাকলেই হলো। মডিউল নিজেরাই যোগাযোগ টা সেরে নেয়। তারপর একটা তারিখ নিজেরাই ঠিক করে রাখে। সবাই দিনের শুরুতে আজকের কাজগুলো দেখে নেয়। পরের দিনের কথা কাউকে চিন্তা করতে হয় না।

চিন্তার সূতো ছিড়ে যায় ক্রিনি এর চিকন সুরে।
“আর ৫ মিনিট পর আপনার বোর্ড মিটিং আছে জুপিটার এর প্লানেট ম্যনেজার এর সাথে।”
ক্রিনি আমার কমিউনিকেশন মডিঊল এর ভয়েজ রিপ্রেসেন্টর। আজকাল মিটিং করা কতো সহজ হয়ে গেছে। সবাই ভার্চুয়ালি একত্রিত হয়ে সেরে নেই। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো, আজ থেকে ৬০ বছর আগের কথা। যেদিন আমি হঠাৎ ডাক পেলাম তখনকার সবচেয়ে বড় সফটয়ার কোম্পানী “ইঊনিসফট” থেকে। “আপনাকে আমাদের ইন্টিলিজেন্স এর মাধ্যমে সিলেক্ট করা হয়েছে আমাদের কোম্পানীর চাদের চীফ প্রোগ্রামার হিসাবে”। সেটাই আমার প্রথম আর্থ এর বাইরে ভ্রমন।
নাহ, মিটিং টা সেরে নেই। কোম্পানীর ১টা জরুরি ডিসিশন নিতে হবে আজকে। ২য় চাদের অফিস টা মনে হয় বন্ধ করে দিতে হবে।
২।
শেষ পযন্ত অফিস টাকে বন্ধই করে দিলাম। অনেক লোকসান থেকে বাচিয়ে দিলাম কোম্পানী কে।
“ক্রিনি, আমার এই সপ্তাহের ডায়েট এর ডোজ গুলো আমার সিনাপ্স এ পাঠিয়ে দাও”।
এখন আর কেউ খাবারের পিছনে সময় নষ্ট করে না। সপ্তাহের শুরুতে মস্তিকের যে সিনাপ্স গূলো খাবারের এর ব্যাপার গুলো নিয়ন্ত্রন করে সেগুলো তে ভার্চুয়ালী ওয়েব পাঠিয়ে দেয়া হয় পুরো সপ্তাহের। যেহেতু সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিকে তাই এর মাধ্যমে মস্তিক সারা শরীরে সিগনাল পাঠিয়ে দেয় যে, এই সপ্তাহের খাবারের ডিমান্ড ফুলফিল।

“আপনাকে কেউ এক জন অর্থহীন শব্দ করে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে”। ক্রিনি বল্লো।
নিশ্চয় কেউ গালি পাঠিয়েছে। ক্রিনি আবার গালি বুঝে না।
আহ, নিশ্চয় কোনো ক্যাডেট। আর কে গ্যলাক্সীর সবচেয়ে বড় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডেভেলোপার কম্পানীর এক জন পরিচালক কে গালি দিতে পারে।
কতদিন পর গালি পেলাম একটা।
চেক করে দেখি আরে এ দেখি আমাদের সাইফ আল দীন। সাথে সাথে কল দিলাম।
ক্রিনি কানেক্ট করো তো।
আমিঃ “কিরে খবর কি?”
সাইফঃ “এই তো দোস্ত, কেমন আছস?”
আমিঃ “তুই দেখি আলফা গ্রহে।“ ভার্চুয়াল ম্যাপে ওর লোকেশন দেখাচ্ছে।
সাইফঃ “আর বলিস না। আদিম যুগে আর্মিরা আফ্রিকা তে যেতো শান্তি মিশনে। আর এখন আমাদের শান্তি করতে হয় মানুষ আর এলিয়েন এর মাঝে। “
আমিঃ “ওই গ্রহে নাকি নতুন ধরনের প্রানী পাওয়া গেছে?”
সাইফঃ “গ্রহে না, ৪ নং উপগ্রহে। “
আমিঃ “তারপর বল, আর কি খবর? আর কি খবর?”
সাইফঃ “ভালোই আছি। আগের সিইও ছিলো খুব খারাপ। খালি ভার্চুয়াল যুদ্ধ করাতো বিভিন্ন গ্যামাক্সীর এলিয়েন হাটু দের সাথে। ব্রেনে খুব চাপ পড়তো। কয়েক জনের তো ব্রেন বদলাতে হয়েছে। কিন্তূ এখন খুব আরামে আছি। “
আমিঃ “কেনো?”
সাইফঃ “আরে কইস না, এখন সিইও আমাদের আহসান ভাই। আমিও চামে টুয়াইছি হইয়া গেছি।“
আমিঃ “ওই আহসান ভাই রে কইস বহুদিন উনি চিন্তার ম্যাপিং পোষ্ট করে না সিসিবি তে। “
সাইফঃ “টুশকি-১৮৬৫ টা দেখছিলি?”
আমিঃ “হ্যা।“ ( মনে পড়ে গেলো, ওইটা পড়ে আমি তো হাসতে হাসতে পিরা গেছিলাম। ক্রিনি বলেছিলো, ব্যাথা পেয়েছি কি না? ডাক্তার প্রোগ্রাম টা লোড করবে কি না? মনে মনে বলেছিলাম, তুই কি বুঝবি টুশকির মর্ম। )
হঠাৎ ক্রিনি সিগন্যাল দিলো, কেউ জরুরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে আমার নেটওয়ার্কে।
আমিঃ “ওই আমি গেলাম। সিসিবি গেট টুগেদার এ হলোগ্রাফিক মেমরি পাঠাইয়া দিস।“
সাইফঃ “বাই দোস্ত।“

৩।
ব্যাপার টা নিয়ে অনেকক্ষন চিন্তা করলাম কিভাবে কি করা যায়। আসলেই চিন্তার বিষয়।

তখন জরুরি ভাবে নেটওয়ার্কে কানেক্ট হয়ে দেখি কামরুল। উত্তেজিত। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললো “এখনি আয় সিসিবি লাঊঞ্জে। আমি, টিটো, মাশরুফ, বন্য,সামিয়া আর সায়েদ ভাই আছি। জিহাদ ১টা জরুরি খবর দিছে।”

সিসিবি লাউঞ্জ। আমাদের অতি প্রিয় একটা যায়গা। আগের দিনে চ্যাট রুম থাকতো। যেটাতে এক সাথে সবাই চ্যাট করতাম। এখনো মনে আছে, প্রথম লাউঞ্জ টা আমি আর জিহাদ শুরু করেছিলাম। এখনকার লাউঞ্জ হল সবার হলোগ্রাফিক ইমেজ এক জায়গায় একত্রিত হয়ে আড্ডা।

আজকের পরিবেশ টা একটু অন্য রকম।
ব্যাপার হলো, গ্যালাক্সীর সিনেটে নতুন একটা বিল পেশ করা হয়েছে। যে, ক্যাডেট কলেজ গুলো এখন থেকে ভার্চয়াল করে দেয়া হবে। তার মানে, ক্যাডেট দের কে প্রতি টার্মের শুরুতে শীতল ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আর তাদের ব্রেনের নিউরাল এর কানেশন দেয়া হবে ভার্চুয়াল ক্যাডেট কলেজ নামের মডিউলে। সব কর্ম কান্ড হবে সেই মডিউলে। আবার ছুটির সময় তাদের জাগিয়ে দেয়া হবে।
কি অদ্ভুত ডিসিশন। মনে পড়ে যায়, আমাদের কলেজ লাইফ এর কথা। কত কিছু। এগুলো কিছু আর ক্যাডেটরা পাবে না? ভাবতেই পারছিনা।
আমাদের কিছু একটা করতে হবে। ঠিক হলো, সিসিবি গেট টুগেদার এ এটা নিয়ে ডিসিশন নিতে হবে।

(চলবে, যদি এই উদ্ভট জিনিস সবার ভালো লাগে । আর কেউ চালাতে চাইলে স্বাগতম)

৩,৩৫৬ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “উদ্ভট ফ্যান্টাসী”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)
    ব্রেনের নিউরাল এর কানেশন দেয়া হবে ভার্চুয়াল ক্যাডেট কলেজ নামের মডিউলে। সব কর্ম কান্ড হবে সেই মডিউলে।

    আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম। আমরা ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    আহ, নিশ্চয় কোনো ক্যাডেট। আর কে গ্যলাক্সীর সবচেয়ে বড় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডেভেলোপার কম্পানীর এক জন পরিচালক কে গালি দিতে পারে।

    একদম খাঁটি কথা.... 😀 ।
    পরের পর্ব কবে??


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    :hug:
    দোস্ত এই টা বন্ধ করলে নী০.০০৭(knee) কে পাঠামু। ও সপ্তম মাত্রার নীগান(হাটু ভাঙ্গার যন্ত্র বিশেষ)এক্সপার্ট। অতীতে সে অনেকরে কবর দিছে হাঁটু ভাঙার বাঁকে।


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।