ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০২

ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০১
৬।
এই নীল, উঠ তাড়াতাড়ি।
নীলঃ ও তুই, তোর আর কোনো কাজ নাই , সাত সকালে এসে আমার ঘুমটার বারোটা বাজালি।
তমালঃ পড়তে যাবি না? চল।
নীলঃ শালা, বস। আমি মুখ ধুয়ে আসি।
হাত, মুখ ধুয়ে কোনোরকমে নাস্তা করে বাসা থেকে বের হতে যাবে, তখন প্রিয়ার চিতকার।
“ভাইয়া সন্ধায় একটু কুইক আসিস”
নীলঃ কেনো?
প্রিয়াঃ আমাকে কিছু অংক দেখিয়ে দিতে হবে।
নীলঃ আচ্ছা।
প্রাইভেট এ বসে বসে প্রায় পুরাটা সময়ই ঘুমালো নীল। শেষ বেলায় অবশ্য স্যারের এক ঝারিতে একটু মনোযোগ দিলো। ধুর, রসায়ন যে কোন বেটায় আবিষ্কার করেছিলো।
পড়া শেষ করে দেখে হাসান আর পলাশ দাঁড়িয়ে আছে।
নীলঃ কিরে তোরা এইখানে কি করস?
হাসানঃ কিছু না , চল চা খাই।
চা খেতে খেতে নীল বলে, “কিরে তোর কাহিনি কতদুর?”
হাসানঃ “নারে তেমন কিছু হইতেছে না। সামনে গেলেই আর কিছু বলতে পারি না”
হাসান অনেকদিন ধরেই একটি মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু বলতে পারতেছে না। আর ওই মেয়ে নাকি কঠিন সুন্দরী। অবশ্য সব প্রেমিকের কাছেই পছন্দের মানুষটি সবচেয়ে সুন্দর। যদিও নীল এখনো দেখতে পারে নাই।
মনে হয় ওর কপালে দেখা নাই। কারন তিন দিন গেছে ও দেখতে। কিন্তু কোনো না কোনো কারনে ওই মেয়ে আসে না, নাহলে টাইমিং মিলে না। তাই দেখা হয় না। আর যেহেতু বছরের বেশির ভাগ সময় ও থাকে কলেজে তাই হাসান একা একা কাতো সাথে পরামর্শও করতে পারে না।
নীলঃ চিন্তা করিস না, আমার সাথে খালি একবার দেখা হোক, দেখলেই বলতে পারবো ওই মেয়েকে কেমনে পটাবি।
হাসানঃ নারে মামা। আমি যেভাবেই হোক, ওই মেয়েকে চাই। আমি আসলেই ওকে পছন্দ করি।
নীলঃ বললাম তো, পাবি। এখন চল, ক্রিকেট খেলি। কালকে না ওই পাড়ার সাথে ম্যাচ আছে সার্কিট হাউস মাঠে। কলেজে যাওয়ার আগে আমি হারতে চাই না।
৭।
যাক শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বহু কষ্টে জিতা গেছে। পিকাশ এর বোলিং আর নীলের ব্যাটিং এর কল্যানে।খেলা শেষে নদীতে গোছল।
ওদের আবার সবার সাইকেল আছে। তাই যখন একসাথে বের হয় তখন ভালো মজা হয়। একসাথে এতোগুলো সাইকেল।
নীল আবার মাঝে মাঝে একা একাই সাইকেল নিয়ে শহরে চক্কর দিতে থাকে। ওর বেশ মজা লাগে।
হাসানঃ ওই নীল, তখন না বললি কি কাহিনি শুনাবি?
নীলঃ ও হ্যা। মজার কাহিনি। কালকে বাসায় তাড়াতাড়ি গেলাম না প্রিয়াকে অংক করাতে। দেখি পাশের বাড়ির সেই মেয়েটি প্রিয়ার রুমে।
হাসানঃ কঠিন। কাহিনি তো আলোর গতিতে আগাচ্ছে। তারপর?
নীলঃ তারপর কি? কথাবার্তা হলো। একমাত্র মেয়ে।
হাসানঃ তাহলে আর কি, দেখ তোর তো কাহিনি হয়েই গেলো।
নীলঃ হ্যা একদিন কথা বল্লো আর হয়ে গেলো। শালা, ২ দিন পর তো কলেজ এ চলে যাবো। দেখবি তিন মাসে আর মনেই থাকবে না।
হাসানঃ এইটা একটা পয়েন্ট। তোদের এই জন্য কিছু হয় না।
নীলঃ হ্যা, তুই তো এখানেই থাকিস। তুই তো তোর কাহিনি কিছু করতে পারতেছিস না।
হাসানঃ দেখ, সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে ফাজলামী করবি না।
নীলঃ খেপিস কেন? এমনি বললাম।চল বাড়ি যাই।
৮।
রাতে শুয়ে শুয়ে হঠাত নীলের অনীতা এর কথা মনে হলো। নাহ, মেয়েটা তো ভালোই। দূর, আমার ওর কথা হঠাত মনে পড়লো কেনো? চিন্তা করে কি লাভ? আর আছি দুই দিন। তারপর তো আবার সেই হোস্টেল লাইফ। বাইরের পোলাপাইন কতো মজা করবে। ইস, কবে যে কলেজ লাইফ টা শেষ হবে।

৯।
পরদিন ছিলো প্রাইভেট পড়ার শেষ দিন। কারন আর একদিন পর কুলেজে চলে যাবে। স্যারের কাছ থেকে বিদায়, দোয়া ইত্যাদি নিয়ে ওরা বের হলো।
নীলঃ তমাল, কালকে কিন্তু দেরি করবি না। লাস্ট বার তোর জন্য কলেজে ঢুকতে দেরি হয়েছিলো। আর আমার এতো সাধের ওয়াক ম্যান টা ধরা পড়েছিলো।
তমালঃ কেনো? আমারও তো খাবার সব রেখে দিলো, মনে নাই?
নীলঃ এই জন্যই ত বললাম দেরি করিস না। ভোর বেলায় বের হবি।
তমালঃ ঠিক আছে।
নীলঃ আমি যাই, হাসান দের সাথে আজকে একটু সময় কাটাই গিয়ে। কালকে থেকে আর ওদের পাবো না।
তমালঃ যা।
হাসান এর বাসায় গিয়ে দেখে সবাই আছে।সোহেল, পলাশ।
নীলঃ কিরে তোদের কি খবর?
সোহেলঃ আর বলিস না। এই হাসান কে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
নীলঃ কেনো?
সোহেলঃ আরে আজকে ওই মেয়েকে একা পেয়েও হাসান কিছু বলতে পারে নাই।
হাসানঃ আমি কি করবো? ওর সামনে গেলেই আমি সব ভুলে যাই।
নীলঃ শালা সিনেমার ডায়লগ দিস না। না বললে কেম্নে হবে? দাড়া, আমি আগামি বার এসে তোর এই কাহিনি টা শেষ করব। জানি, তুই এই তিন মাসেও কিছু করতে পারবি না।
সোহেলঃ হ্যা, আর তোর কাহিনি টাও শেষ করিস।পাশের বাড়ির।
নীলঃ সে দেখা যাবে। এখন আমি গেলাম। শেষ বারের মতো বাসায় লাঞ্চ করি গিয়ে।
হাসানঃ কালকে সকালে আমরা বাস স্ট্যান্ডে আসবো।
নীলঃ ঠিক আছে আসিস।
হাসান দের বাসা থেকে বের হয়ে নীল ভাবলো শেষ বারের মতো শহরটা একটা চক্কর দিয়ে যাই। এই চিন্তা করে সে উদ্দেশ্যহীন ভাবে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে লাগলো। মাথায় হঠাত করেই অনীতা এর কথা ঘুরতে লাগ্লো।
জিলা স্কুলের মোড় পার হতে গিয়েই হঠাত করে মোড়ের অন্য দিক থেকে একটি রিক্সা প্রায় ওর সাইকেলের উপর উঠে পড়লো।
নীলঃ চাচা, দেখে চালান। আরেকটু হলেই তো দিছিলেন আমাকে ভর্তা করে।
আরো কিছু বলতো, কিন্তু হঠাত নীলের মুখ নির্বাক হয়ে গেলো। মানুষ এতো সুন্দর হয়? কি করে? অপূর্ব একটি মেয়ে বসে আছে রিক্সাতে। একটু একটু তাকাচ্ছে। আবার ওর এই অবস্তা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। তাতে যে তাকে আরো সুন্দর লাগছে তা কি সে জানে? দুপুরের রোদে বিন্দু বিন্দু ঘাম ওর গালে। মনে হচ্ছে মুক্তোর দানা।
নীল অবাক এবং নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই মেয়েটির দিকে…
(চলবে)

২,৯৭২ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০২”

  1. রকিবুল ইসলাম (৯৯-০৫)
    অবশ্য সব প্রেমিকের কাছেই পছন্দের মানুষটি সবচেয়ে সুন্দর।

    কিন্তু কি হইলো তার পরে???
    এইটা কি আলিফ লায়লা নাকি ??
    খালি জমাইয়া রাখেন ??
    বেশী করে লিখেন।

    জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    চমৎকার। আমারও অবশ্য নীলের মতন একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়ে বের হয়ে প্রাইভেট কারের সাথে হাল্কা ধাক্কা খেয়েছিলাম। এবং গাড়ীর ভেতরে তাকিয়ে নীলের মতই হা হয়ে গিয়েছিলাম।

    চালিয়ে যাও। দারুন লাগছে।

    জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    গল্প ভালোই এগুচ্ছে। :thumbup:

    হ্যা, আর তোর কাহিনি টাও শেষ করিস।পাশের বাড়ির।

    তা, পাশের বাসার কাহিনিটা কি পরের পর্বেই আসছে? 😀


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।