ক্যাট ক্যাট

ক্যাম্পে এসেই প্রথম যেই জিনিসটা চোখে পড়ল তা হলো অনেক অনেক বিড়াল। গাড়ি থেকে নেমে একটা বিড়ালকে দাবড়ানি লাগাতেই আমার এক সৈনিক হা হা করে বলে উঠল, “স্যার এগুলো তো পালা বিড়াল। ইঁদুর মাইরা সাফ কইরা রাখে”। বুঝলাম যেখানে ইঁদুর বাহিত লাসা ফিভারের প্রচন্ড ভীতি (যাতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির মৃতদেহ দেশে ফেরত নেয়া হয় না পর্যন্ত এবং স্টিলের কফিনে কমপক্ষে ৪০ ফুট নিচে সমাধিস্থ করা হয়) সেখানে এই বিড়াল সম্প্রদায় জামাই আদরেই আছে। এখানের প্রত্যেকটা ক্যাম্পে প্রচুর সংখ্যক জ্যান্ত বিড়াল মজুদ আছে।

আমাদের ক্যাম্পে আলাদা আলাদা তিনটি মেসে খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়। প্রায় বিশটা বিড়াল এই তিন জায়গায় ভাগ হয়ে থাকে। কক্ষনও একে অন্যের জায়গায় যেয়ে ডিস্টার্ব দেয় না। সিনিয়রিটি জুনিয়রিটি মেইনটেইন করার ব্যাপারটাও চোখে পড়ার মতো। এদের উৎপাতে এখন পর্যন্ত কোন ইঁদুর আমার চোখে পড়েনি। মাঝে মাঝে সাপ, গিরগিটি, চড়ুই পর্যন্ত এরা দাবড়ে বেড়ায়। গায়ে তেল বেশি হয়ে গেলে নিজেরা নিজেদের দাবড়ানি দিয়ে গাছে তুলে বসে থাকে।

এরা চান্স পেলেই আমাদের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে ডাঁটে বসে থাকে। আমি ডাক দিলে পাত্তাই দেয় না। কিন্তু মেস স্টাফদের সাথে এদের বহুত খাতির। ল্যাজ আকাশের দিকে সটান খাড়া করে দিয়ে পায়ে পায়ে ঘোরে। কাকে তোয়াজ করলে খাবার পাওয়া যাবে ভালোই জানে। লাইবেরিয়ার লোকজনের মাতৃভাষা ইংরেজি বলেই কিনা জানি না এরা ইংরেজি ভালো বোঝে। “কাম ক্যাট, ক্যাচ র‌্যাট” বললে দৌড়ে আসে। মাত্র একটা বিড়াল (মাথায় কলো ছোপ, শরীর সাদা) আছে যেটা বহুত ইউজার ফ্রেন্ডলি – হাত বাড়ালেই কোলে উঠে আসে।

বর্তমানে এদের ব্রিডিং সিজন চলছে। যত্রতত্র আনাচে কানাচে এদেরকে যথেষ্ট আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। যারা একটু আগেভাগে পরিবার পরিকল্পনা করে ফেলেছে তাদের পরবর্তী জেনারেশনের বয়স বেশ কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে। মোট সংখ্যা বিশ থেকে বেড়ে কত হয়েছে সেই বিড়ালশুমারি এখনও করা হয়নি। পিচ্চি বিড়ালগুলোর নর্তন কুর্দন দৌড় ঝাঁপ বেশ মজা লাগে।

এর মধ্যে একদিন নিজের হাতে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসলাম। কয়েকটা ছবি এ্যাটাচ করে দেশে পাঠাতেই সেখান থেকে গিন্নি ডিম্যান্ড পাঠিয়েছেন। বলেছেন, আমি ফেরত আসি কি লাইবেরিয়াতেই থেকে যাই ব্যাপার না – তবে এখান থেকে বিড়াল বাচ্চা না নিয়ে যেন আমি জিয়াতে না নামি। বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম এই বিড়াল আর বাংলাদেশি বিড়াল একই – লাভ হয়নি। উল্টা দুইদিন ফোন পানিশমেন্ট খেয়েছি!

ক্যামনে এখন কুমির তাড়াই সেইটা নিয়ে বহুত চিন্তায় আছি।

*********
কৃতজ্ঞতা : মুসা (১৯৯২-১৯৯৮), সিলেট ক্যাডেট কলেজ।

২৩ টি মন্তব্য : “ক্যাট ক্যাট”

  1. দোস্ত, 'বিড়াল কাহিনি' চরম লাগলো। ব্রিডিং সিজনের পর প্রডাকশন সিজন শেষ হইলে পুচ্চি গুলার ছবি সহ আবার পোস্ট দিস।

    আর অফটপিক, 'ফোন পানিশমেন্টটা' একটু ব্যাখ্যা কইরা দিতি যদি 😉

    জবাব দিন
  2. অই সায়েদ, তুমি লাইবেরিয়ায়, তুমি আর যুবরাজ এক নাকি?

    মাঝের ছবির বাম হাতের বিড়ালটাতো হেব্বি কিউট আছে।

    ইদুরের জন্য প্লেগই না শুনছি, লাসা, এইটা কি জিনিস?

    জবাব দিন
  3. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    ফয়েজ ভাই,

    না ভাইয়া, আমি যুবরাজ না 😛 । তবে যুবরাজ আমার খুব কাছের একজন কলিগ। সচলে ওর লেখার আপডেট লাইবেরিয়াতে আমিই সবচেয়ে আগে পাই 🙂 । আপাতত ও হাইবারনেশনে আছে। আগামী মাসখানেক থাকবে বলেও মনে হয়।

    মাঝের এই ছবিটা পাঠায়াইতো ঝামেলা বাধাইছি.....এখন এই বিল্লি বাচ্চা নিয়ে আমাকে দেশে যাইতো হইবো!! বোঝেন ঠ্যালা :(( ।

    আমাদের প্রথম দিকের কয়েকটা ইউনিট লাসা ফিভারে ভালোরকম সাফার করেছে। কয়েকজন মারাও গেছে। ইঁদুর এর জীবাণুর প্রধান বাহক 😐 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    সায়েদ ভাইজান,ধূমপানে বিষ্পান জানা থাকা সত্ত্বেও মার্জার সম্প্রদায়ে সিগারেট আত্তীকরণের অপচেষ্টার অপরাধে পশুপালন সমিতি থেকে সাজা হিসাবে আপনার নামে নয়া ২ টা ব্লগ ইস্যু করা হইল।ঢিশিম(বিচারকের টেবিলে হাতুড়ির বাড়ি)

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    খুব মজা পাইলাম, সায়েদ ভাই। বৈদেশের কথা শুনতে সবসময়ই ভাল লাগে। আপনার লেখা সবগুলা পড়তে হইব। আগের অনেকগুলাই পড়িনাই। লাইবেরিয়ায় আপনের অভিজ্ঞতা নিয়া আরও লেখা চাই। এখন থেকে নিয়মিত পড়ুম।

    জবাব দিন
  6. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    @ সামিয়া
    থ্যাংকস আপু ;;) ।

    @ কামরুল
    আমাদের জন্য লাইবেরিয়াতে বাসর রাত বানানো অতীব গর্হিত কাজ 😛 😛 ।

    @ মাসরুফ
    আইজকা আর কিছু করি আর না করি চিঠির উত্তর বিলকুল দিমু B-) ।

    @ টিটো
    ওই মিয়া সাইবেরিয়া পাইলা কই :-/ ?

    @ মুহাম্মদ
    থ্যাংকস। দেখি তোমাদের সাথে লাইবেরিয়া নিয়ে আর কি কি শেয়ার করা যায়....মাথা চুলকাচ্ছি :dreamy: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  7. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    @সায়েদ ভাই,কুনু টেনশন নিয়েন না মামা।ধীরে সুস্থে সময় কইরা এক ফাঁকে উত্তর দিয়েন।তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে গিয়া দায়সারা গোছের কিছু একটা পাঠাইবেন সেইটা হইব না।তাইলে কইলাম মামীরে কমু যে লাইবেরিয়াতে ইন্ডিয়ান সেনাদের মরাল বাড়াইতে শিল্পা শেঠী গেছিল আর সেইখানে অতিথি প্রটোকল অফিসার হিসেবে আপনে...... 😀

    জবাব দিন
  8. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আহসান ভাই, ঘুম নাই আপনের? x-( যান ঘুমাইতে যান।রাত ৪ টার সময় সিসিবি তে কি?উঁচা টাওয়ার দিয়া কালকে হাঁটতে গিয়া তো ঘুমের অভাবে মাথা ঘুইরা পইড়া যাইবেন পানিতে,কমান্ডো ইন্সট্রাক্টর হইয়া পার্ট যা ছিল সব যাইব।

    জবাব দিন
  9. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    আবে শয়তান, ঘুম ভাইঙ্গা গেছিলো তখন। তাই চোখ কচলাইতে কচলাইতে গিয়া সিসিবিতে ঢুকছিলাম। কিন্তু তুমি? তোমার না পড়া লেখা করার কথা?

    ঐ কামরুল,
    মাসরুফ রে পিডা... :chup:

    জবাব দিন
  10. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    @ আহসান ভাই,
    থ্যাংকস। কিন্তু আপনের লেখাটেখা তো কিচ্ছু দেখি না......

    @ হাসনাইন
    থ্যাংকু ভাইয়া।

    @ মাসরুফ,
    তোমারে বিএমএ'র প্রথম তিন মাসের টেরেনিং না দিয়া আর্মি কম্যান্ডো কোর্সের প্রথম তিন মাসের টেরেনিং খাওয়ানো উচিত আছিল 😀 😀 । তাইলে বহুত মজাক হইতো :grr: :grr: :grr: ।

    @ তৌফিক,
    :shy: :shy:


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।