প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা-২

প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা-১

সেদিন কি যেন একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল, ক্লাসের সব মেয়েদের সাথে স্বাতীও দেখি শাড়ি পড়ে এসেছে। শাড়ি পড়ার সাথে সাথে মেয়েদের মধ্যে একটা অন্যরকম পরিবর্তন আসে, আমি আগে কখনও খেয়াল করিনি। ওকে দেখার পর আমার মধ্যে তৈরী হওয়া বিষ্ময়-ভালোলাগা মিশ্রিত এই অনুভুতিটাকে কেন জানি একান্তই নিজের মনে হল! সেসময় হ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করছিলাম বলে মনে পড়ছেনা। আমি সাধারণত এই ধরনের অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাই। কিন্তু, সেদিন যে কি হল, চলে গেলাম অনুষ্ঠান দেখতে। অনুষ্ঠান তো আমার আর দেখা হলো না, দেখে গেলাম শুধু ওকেই। কিন্তু নীল শাড়ি পড়া মেয়েটা বুঝলই না!

বিকেলে অনুষ্ঠান শেষে রাস্তায় বের হয়েই দেখলাম চারপাশটা লোকজনের উপস্থিতি একটু কম। বুঝলাম, কিছুক্ষন আগে হয়ে যাওয়া কোন রাজনৈতিক গোলযোগ এর পিছনে দায়ী। আমি ভাই খুব ভীতু মানুষ, তাই কাপুরুষের মত ডানে-বামে না তাকিয়ে ভালো মানুষের মত হলের ছেলে হলে ফিরে গেলাম। ভুলেই গেলাম একটু আগে নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ের জন্য আমার অনুভূতির কথা! হলে গিয়েও ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আপন কাউকে বিপদের মধ্যে ফেলে আসার অস্বস্তি মনে হয়! কি মনে করে রুমের পিছনের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। এই বারান্দাটা থেকে আবার রাস্তা দেখা যায় ভালোভাবেই। হঠাৎ চোখ পড়ল একটা নীল শাড়ি পড়া মেয়ের দিকে। কেমন যেন অসহায়ের মত এইদিক ঐদিক তাকাচ্ছে। এইটা স্বাতী না? ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম। আরে, তাই তো! কিন্তু একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করছে? ঠিক কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না! আমার কি এখন ওর কাছে যাওয়া উচিৎ, ও কি কারো সাহায্য খুঁজছে? যাব কি যাব না- এই ভাবতে ভাবতে কি মনে করে চলে গেলাম
ওর কাছে। পিছন থেকে গিয়ে আস্তে করে পাশে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে গেল স্বাতী। আমি মিনমিন করে বললাম, আমি তোমার ক্লাসের, আমাকে মনে হয় আগে কখনও দেখনি। ওর ঢোক গেলাটা আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারলাম। তারপর একে একে ওর রোল নাম্বার, নাম ইত্যাদি আরও অনেক কিছু বলার পর মনে হয় বিশ্বাস করল। কিন্তু কিছুই বলছে না! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিছু খুঁজছ? মাথা নাড়ল উপর-নিচ। বললাম, কি খুঁজছ? আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর কি মনে করে মন খারাপ করে বলল, রিক্সা পাচ্ছিনা! আমি খুব চিন্তিত মুখে বললাম, এখানে তো এখন রিক্সা পাবেনা,মাত্রই একটা গন্ডগোল হল। বেশ কিছুটা পথ হেঁটে গেলে হয়ত পাওয়া যেতে পারে। তারপরও দেখলাম দ্বিধান্বিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম, এগিয়ে দেব? আলতো করে মাথা নাড়ল। মিষ্টি রোদের সাথে বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়া বাতাসটাকে ঐদিনের চেয়ে বেশী আগে কখনও ভালো লেগেছে কিনা মনে করতে পারলাম না!

বেশীক্ষণ কি পাশাপাশি হেঁটেছিলাম ঐদিন? অনেক কথা কি হয়েছিল আমাদের? বড়জোর ১০-১৫ মিনিট হেঁটেছি, কথা হয়নি কিছুই, শুধুই পাশাপাশি হাঁটা। আমার মত কল্পনাবিলাসী মানুষের জন্য তো ঐ সময়টুকুই যথেষ্ট। হলে নিজের রুমের ছোট্ট বিছানায় শুয়ে কত কি ভেবেছি সেই রাতে, এটা বলা উচিৎ ছিল, ওটাও তো বলতে পারতাম। পরদিন হয়ত ক্লাসে আমরা অনেক কথা বলব, আমার কোন কথায় মিষ্টি করে হেসে দিবে, আরো কত কি! সব বোকারাই মনে হয় এরকম করে! পরদিন এল, ক্লাসও হল- কিন্তু একবারও আমাদের চোখাচোখি হলনা, কথা বলা তো অনেক দূরের ব্যাপার। ক্লাস চলতে থাকল তার নিজস্ব গতিতে, পরীক্ষাগুলোও মাঝে মাঝে এসে মনে করিয়ে দেয় পড়তে হবে। আমার স্বপ্নগুলোও আস্তে আস্তে করে বিলীন হওয়া শুরু করল। স্বপ্নটা হয়তো পুরোপুরি বিলীনই হয়ে যেত যদি কেমিস্ট্রি ল্যাবে আমরা দুইজন এক গ্রুপে না পড়তাম! ল্যাব পার্টনার নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় স্যার লটারীর মত একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। সারাজীবন কোন লটারীতে না জেতা এই বোকাসোকা আমিই সেদিন মনে হয় সবচেয়ে বড় লটারীটা জিতে গেলাম!

[প্রথমে ভেবেছিলাম এক পর্বে শেষ করব। প্রথম পর্ব লেখার পর ভাবলাম ২ পর্বে অবশ্যই শেষ করব। এখন দেখি ২ পর্বেও শেষ হয়না। ~x( কাহিনী দেখি হিন্দি সিরিয়ালের মত এগুচ্ছে! ধুর! নিজেই নিজের ব্যাঞ্চাই :bash: ]

৫,৯৫০ বার দেখা হয়েছে

৭৪ টি মন্তব্য : “প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা-২”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    বেশ সুন্দর ভাবে এগুচ্ছে এইরকম মিষ্টি একটা কাহিনী আহারে (আফসোস)... একটা মিষ্টি মিল দিয়েন ভাইয়া শেষে পিলিজ লাগে আপনার।
    অফটপিকঃ চৈত্র মাসে বিকেলে কারো চোখের দিকে তাকাতে নাই। সর্বনাশ হবেই হবে। (কপিরাইটঃ কে জানি কইছিল ভুইলা গেছি , আমিই মনে হয়)

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ঐ তুমি নীল শাড়ি পড়াইছো ক্যান? সবুজ চোখে দেখ না তুমি? হাল্কা টিয়া সবুজ?

    যাউজ্ঞা, প্রেম জমতেছে মনে হয়। থ্যাংক্স টু রাজনৈতিক গন্ডগোল, যেটা কিনা প্র্যাক্টিক্যালিও অনেক ভালেন্টাইনের জন্ম দিয়েছে।

    এইবার ল্যাবে এক্স-পেরিমেন্ট, রিপোর্ট, আর যদি টেষ্টের সময় হাতে ঘন সালফিউরিক এসিড পরে তাইলে তো মারদাংগা।

    চালিয়ে যাও বাচ্চু।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    সারাজীবন কোন লটারীতে না জেতা এই বোকাসোকা আমিই সেদিন মনে হয় সবচেয়ে বড় লটারীটা জিতে গেলাম!

    ভালো লাগল। আমি কখনোই জিততে পারিনি।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)
    [প্রথমে ভেবেছিলাম এক পর্বে শেষ করব। প্রথম পর্ব লেখার পর ভাবলাম ২ পর্বে অবশ্যই শেষ করব। এখন দেখি ২ পর্বেও শেষ হয়না। ~x( কাহিনী দেখি হিন্দি সিরিয়ালের মত এগুচ্ছে! ধুর! নিজেই নিজের ব্যাঞ্চাই :bash: ]

    😀
    কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ 😀 😀
    মিষ্টি গল্প 🙂 , সুন্দর করে আগাচ্ছে।
    বাস্তব জীবনেও যদি গল্পের মতই লটারী জেতা যেত :dreamy: ।

    জবাব দিন
  5. তাইফুর (৯২-৯৮)

    লটারী জেতার অভিনন্দন ভাইডি ...
    ল্যাবের ভিতর আর বাহিরের সিকোয়েন্স তাড়তাড়ি নামা ...
    সত্য কথন সিরিয়াল ভাল জমছে ...
    সাবাস


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  6. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    স্বাতী চিনেও না চেনার ভান করল কেন??? 😡
    ওর ব্যান চাই... :thumbdown:

    ফয়েজ ভাই, দেইখ্যা যান- স্বাতী আপুও নীল শাড়ি পড়ছে...সবুজ শাড়ি পড়ে নাই... 😛
    বুলু বুলু আপ আপ... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  7. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    বেশ বেশ!! আহ!!

    স্বপ্নটা হয়তো পুরোপুরি বিলীনই হয়ে যেত যদি কেমিস্ট্রি ল্যাবে আমরা দুইজন এক গ্রুপে না পড়তাম!

    এক গ্রুপে না পড়লে আমাদেরও হয়তো পরের পার্টটা আর পড়া হতো না... :-B

    জবাব দিন
  8. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    মিষ্টি রোদের সাথে বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়া বাতাসটাকে ঐদিনের চেয়ে বেশী আগে কখনও ভালো লেগেছে কিনা মনে করতে পারলাম না!........সারাজীবন কোন লটারীতে না জেতা এই বোকাসোকা আমিই সেদিন মনে হয় সবচেয়ে বড় লটারীটা জিতে গেলাম!


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  9. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    বললাম, এগিয়ে দেব? আলতো করে মাথা নাড়ল। মিষ্টি রোদের সাথে বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়া বাতাসটাকে ঐদিনের চেয়ে বেশী আগে কখনও ভালো লেগেছে কিনা মনে করতে পারলাম না!

    মুগ্ধ আমি!!! ফিলিংস আইসা পরসে 🙂

    জবাব দিন
  10. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ভাগ্য ভালো, কয়েকদিন সিসিবিতে আসি নাই...
    পুরা সিরিজ একটানে পড়তে পারবো...
    আমি যে কি বুদ্ধিমান! B-)

    পাংখা...পাংখা :boss:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।